..
...
আঁতেল মেয়ে এবং বাঁচাল ছেলের গল্প....
লেখকঃনিলয় আহসান নিশো
..
...
গল্পটি একটা মেয়ে আর একটা ছেলের...
২জন ২জনের সম্পুর্ন বিপরীত.....
একজন উত্তরমেরু হলে অপরজন নিঃসন্দেহে দক্ষিন মেরু...
..
...
মেয়েটি.....
অনেক বেশি চুপচাপ,শান্ত ভদ্র আর বেশ লাজুক।মেয়েটার সব থেকে বেশি আকর্ষন টা হল মেয়েটার সরলতা।অনেক বেশি চুপচাপ,দরকার না থাকলে মেয়েটার পেটে বোম মেরেও একটা কথা তার মুখ থেকে বের করা সম্ভব না কারো পক্ষে...
মেয়েটার তাকানোর ভঙিটা অসাধারণ। খুব গভীর ভাবে মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।অনেক গভীর মায়াভরা বেশ ঠাগর ঠাগর তার চোখ গুলো... ওর চোখে একবার তাকালে নেশা ধরে যায়।
কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলে না....সারাক্ষণ বই পড়ে আর চুপচাপ থাকে...সোজা কথা মানে এক কথায় বলতে গেলে...
#পারফেক্ট_আঁতেল_মেয়ে...
..
...
ছেলেটি.....
অনেক বেশি চঞ্চল,অশান্ত বলতে গেলে অভদ্র ও বটে।লাজ লজ্জার বালাই নাই।বয়স বাড়লেও বুদ্ধি বাড়ে নি, ফাজলামি ইতরামিতে সবার থেকে এগিয়ে।সারাক্ষন কথা বলতেই থাকে প্রয়োজন থাকুক আর না থাকুক। তাকে এক মিনিট চুপ করিয়ে রাখা ৩য় বিশ্বযুদ্ধ আটকানোর সমান কথা।
ছেলেটির বন্ধু বান্ধবির অভাব নেই।এবং সবার আড্ডার মধ্যমণি হল ছেলেটি এবং সবার অনেক পছন্দের....
পড়ালেখায় মন নেই সব সময় কারো না কারো পিছে লেগেই থাকে।শিক্ষক দের নিয়ে মজা করা, বন্ধু বান্ধবী দের কে পঁচা নামে ডাকা তার নিত্য সময়ের কাজ এক কথায় বলতে গেলে …
#পারফেক্ট_বাঁচাল_ছেলে...
..
...
গল্পটা এদের দুজনের ই...
তাদের মুখেই মানে তাদের ডায়রির পাতা থেকেই শুনি তাদের গল্প টা.....
..
"তাদের কিছু ভাবনার কথা...
সাথে ডায়রির পাতা...."
..
...
ছেলেটির ডায়রি...
আজ দু-মাস পর কোচিং এ আসলাম।আমাকে ২মাস পর কাছে পেয়ে আমার বন্ধু বান্ধবিরা অনেক খুশি।সবাই এটা সেটা বলছে মজা করছে।কেউ ট্রিট দিতে চাইছে কেউ ট্রিট দিতে বলছে।ভাল লাগছে সবার সাথে এত দিন পর দেখা হয়ে।
হঠৎ চোখ পড়লো স্যারের সোফায় একটা মেয়ে বসে আছে।বসে বসে স্যারের শিট গুলো পড়ছে। আগে কখনো দেখিনি মেয়েটাকে।একেবারে নতুন।আমার বান্ধবী কে জিজ্ঞেস করতেই বললো, ও নতুন এসেছে আমার কোচিং এ।তোকে চিনে না। আমিও একটু মজা করার জন্য মেয়েটাকে বেশ সিনিয়র এর মত করে ডাকলাম,
এই মেয়ে শোন,
মেয়েটি বেশ ভড়কে গেল, আর আমি আবার ডাকতেই উঠে এল আমাদের আড্ডার কাছে।
আমি নাম জিজ্ঞেস করতেই আস্তে করে নাম টা বললো,
আমার প্রথম বারের মত কারো নাম বলার ভঙ্গি টা ভাল লাগলো।
আমি আর কিছু না বলাতে মেয়েটা আবার গিয়ে সোফায় বসে স্যারের শীটে চোখ বুলাতে লাগলো।
আর আমি মেয়েটার মায়াভরা মুখ টা কল্পনা করতে লাগলাম।
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
নতুন কোচিং এ কোচিং করছি আজ প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। কেউ কখনো আমার সাথে সেঁধে কথা বলতে আসে নি।আজকে নতুন একটা ছেলে কোচিং এ এসেছে।আসলে নতুন না পুরাতন আগে কোচিং করতো। মাঝ খানে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল।আজ আবার এসেছে।
আসার সাথে সাথে আড্ডা বাজি শুরু করছে।আর ক্লাসের সব ছেলে মেয়ে গুলো ও তার সাথে তাল মেলাচ্ছে।
ছেলেটা মনে হয় একটু বাঁচাল আর বেয়াদব টাইপের।
তাই না হলে কি একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কি কেউ এইভাবে কথা বলে?
তবে হ্যা, বাঁচাল হলেও ছেলেটা অনেক সুন্দর করেই কথা বলে....আমি সোফায় বসে চুপ চাপ করে তাদের আড্ডার কথা শুনছিলাম....
..
...
ছেলেটির ডায়রি.....
আজ বেশ কয়েকদিন মেয়েটি আমাদের সাথেই ক্লাস করছে।
সবাই যখন আড্ডায় ব্যস্ত মেয়েটি তখনো নোট নিয়েই ধ্যানরত। কারো সাথেই দরকার ছাড়া কথা বলে না।এটা কিভাবে সম্ভব সেটা এই মেয়েকে না দেখলে কখনোই জানা হতো না আমার।সারাক্ষন নোট আর বই নিয়ে চুপচাপ পড়ে থাকা কিভাবে সম্ভব???
যাক সে কথা.... এই মেয়েটি এত গুলো ক্লাস করলো আমার সাথে অথচ আমার সাথে কথা বলতে আসলো না??
যেখানে সব ছেলে মেয়েই আমার সাথে আড্ডা দিতে উন্মুখ সেখানে এই মেয়ে নির্বিকার...
তবুও কেন জানি ভালই লাগছে মেয়েটাকে...
মেয়েটার সাধারণত্ব কে....
কেমন যেন টানছে আমাকে....
..
...
মেয়েটির ডায়রি...
ছেলে মানুষ আড্ডাবাজ হয় জানতাম।কিন্তু একটা ছেলে সব কিছু ছেড়ে সবসময় আড্ডার উপরে থাকে কি করে সেটা এই ছেলেকে দেখার আগে আমার ভাবনার ও বাইরে ছিল।
সব সময় আড্ডা আর হুই হুল্লোড় করে কেমনে থাকতে পারে একজন মানুষ?
আচ্ছা মানুষের আড্ডা দেবার জন্য কতজনের সঙ্গ লাগে?
৫জন, ৭জন, ১০জন কিন্তু পুরো ক্লাসের সবাইকে নিয়ে উনি আড্ডা দিবেন।
ফালতু লাগে...
আর এই মেয়ে গুলো যে ওই বাঁচাল টার মধ্যে কি দেখে বুঝি না।বাঁচাল টা একবার ডাকলেই হইছে...
ভাল লাগে না আমার এক দম বাঁচাল টাকে...
আমার একদম ভাল লাগে না বাঁচাল টাকে...
কেন ভাল লাগবে শুনি?
কই আমাকে তো তার সাথে আড্ডা দিতে ডাকে না??
আমাকে ডাকবে কেন উনি হুহ...??
ফালতু ছেলে একটা....হুহ
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
বেশ কিছুদিন হল মেয়েটাকে একটু একটু ডিস্টার্ব করছি..
কখনো মেয়েটার পাশে বসে কখনো বা পিছনে বসে।
কখনো মেয়েটির সুদীর্ঘ খোলাচুল টেনে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকা, কখনো মেয়েটির ওরনায় কোনায় নষ্ট কলম বেধে দেয়া অথবা কখনো মেয়েটির দিকে সাদা কাগজ চিরকুটের মত করে ছুড়ে মেরে... সব থেকে মজার হল আমি মেয়েটির চুল টেনে দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি আর মেয়েটি বুঝতে পারে না কে তার চুল টান দিছে...
আর সেই সময়ে ফর্সা মেয়ের রেগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ খানা দেখে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখি...
সত্যি বলতে...
মেয়েটির রাগে লাল হয়ে যাওয়া গাল আর ঘেমে থাকা নাক টা না দেখলে এখন ক্লাস পানসে লাগে..
ইচ্ছে করেই মেয়েটাকে রাগাচ্ছি... যদিও আগে কখনোই কোন মেয়ের সাথে এমন করতে ইচ্ছে হয়নি...
ভাল লাগছে আঁতেল মেয়েটির রাগী মুখ টা...
টানছে আমায়......
..
...
মেয়েটির ডায়রি...
বাঁচালললললললললললললল......
হ্যা বাঁচাল টা ইদানীং আমার পাশে, পিছনে বসা শুরু করছে। আমাকে ডিস্টার্ব ও করছে। আমার চুল ধরে টান দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবে আমি বুঝতে পারবো না...আমার ওরনায় নষ্ট কলম বেধে দেয়, চিরকুট ছুড়ে মারে...
হ্যা চিরকুট...
আমি ভেবেছিলাম কিছু লিখে দিয়েছে.. তা না... সাদা কাগজ ছুড়ে মেরে অন্য দিকে তাকায় ভাবে আমি বুঝবো না...
কাপুরুষ....
কিছু লিখার সাহস নেই চিরকুটে যেই ছেলের তাকে কাপুরুষ ছাড়া আর কি বলবো..
আচ্ছা আমি তো সব জানি আর বুঝতেছি যে সব বাঁচাল টাই করতেছে...
তাহলে আমি এসব সহ্য করছি কেন?
আমাকে আগে কেউ এমন করলে তো আমি কমপ্লেইন করতাম...
বাঁচাল টার নামে কমপ্লেইন করতে ইচ্ছে করছে না কেন??
আর বাঁচাল টার এসব আজগুবি কাজ আমার ভাল লাগছে কেন??
না... এসব তো চলবে না...
এবার কিছু করলে খুব করে বকে দিবো...
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
দিনের পর দিন....আঁতেল মেয়েটিকে জালাতন করা টা বাড়িয়েই যাচ্ছি... এক অন্য রকম মজা পাচ্ছিলাম...কিন্তু ভুল টা সেদিন করে ফেললাম... নষ্ট কলম টা ওর ওরনায় বেধে দিয়েছি মাত্র, হঠাত করে সে ওরনা টা ঝাড়তেই কলমটা গিয়ে ওর চোঁখে লাগে।স্যার জিনিস টা লক্ষ করে...
আর বলে কে বেধেছে ওরনায় কলম... আমি তখনো আঁতেল মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মেয়েটি অনেক ব্যথা পেয়েছে তাই চোখ চেপে ধরে আছে... কে যেন পাশে থেকে বলে দিল এটা আমার কাজ....
স্যার আমাকে কি কি যেন বলেছিল আমার মাথায় কিছুই ঢুকে নি...মেয়েটি একটু পর ক্লাস শেষ করে চুপচাপ বেড়িয়ে যায়...
সেদিন প্রথম আমার অনেক খারাপ লেগেছিল....
তার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর ক্লাসে যাবো না & আঁতেল টাকেও আর বিরক্ত করবো না......
ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম....
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
আজ বাঁচাল টার জন্য চোখে কলমটা লেগেছে। বাঁচাল টা একদিন পর পর ওরনায় কলম বাঁধতো।তাই আজকে বাঁচাল টার কলম বাধার কথা ছিল না.. আমি ভেবেছি আজকে কাগজ ছুড়বে না হয় চুল টান দিবে.. আমি চুল খুলেও রেখেছিলাম...কিন্তু গাধার মাথায় কখনো কি বুদ্ধি হয়? গাধা টা আজকে ওরনায় কলম বেঁধেছে আর স্যার ও দেখে ফেলেছে আমার ওরনার কলম চোখে লাগাটা। আমি তো চাইলেও গাধাটার নাম স্যার কে বলতে পারতাম না তাই চুপ চাপ চোখে ওরনা চেপে ছিলাম...
তবুও কে জানি গাধা টার নাম স্যার কে বলে দিয়েছে...
আমার বিরক্ত লেগেছে.. আমি কি বলতে বলেছি কাউকে?
আসার সময় প্রথম বারের মত গাধা টার মলিন মুখ দেখলাম.. অসহায় চাহনি....
গাধা টার এই চাহনী টাই মাথা টা খারাপ করে...
কেমন যেন একটা চাহনী থাকে গাধা টার চোখে....
ঘোর লাগে... নেশা নেশা লাগে তাকালে... বার বার তাকাতে ইচ্ছে করে.....
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আজ এক সপ্তাহ হল...
ক্লাসে যাই নি... আর যাবো ও না.... আঁতেল মেয়েটাকে আর বিরক্ত করতে চাই না....
আমার জন্য হয়তো ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতো না...
আঁতেল টার নিষ্পাপ চাহনী আর মায়া মায়া মুখ টা ভীষণ মিস করছি......
জানিনা কেন এমন হচ্ছে.....
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
আজিব তো......
বাঁচাল টা হটাত উধাও হয়ে গেল... ক্লাসে আসে না এক সপ্তাহ ধরে....এতদিন ক্লাসে নাই... কেউ বিরক্ত করছে না। ভাল লাগছে না কিচ্ছু...
বাঁচাল টাকে মিস করছি অনেক.....
কি হয়েছে বাঁচাল টার... কেন আসছে না গাধা টা ক্লাসে...
গাধা টার নাম্বার টা কৌশলে স্যারের নোটবুক থেকে তুলে নিয়েছি....
একটা কল দিবো কি???
না কেন কল দিবো...
কি বলবো...
থাক... আর কয়েক দিন দেখি...
এসে যাবে হয়তো....
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আচ্ছা আমি যে ক্লাসে যাই নি আজ ১০দিন হল...
আঁতেল টা টের পায় আমার অনুপস্থিতি?
পায় না হয়তো... কিভাবে পাবে আতেল টার ধ্যান জ্ঞান তো সবসময় বই আর নোটের মধ্যেই আবদ্ধ....
থাকুক আতেল টা ভালই....
..
...
মেয়েটির ডায়রি.....
আজ ১০দিন গাধা টা ক্লাসে আসলো না... কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছি না গাধা টা কেন আসেনা..
কিচ্ছু ভাল লাগছে...
গাধা টার বেঞ্জ টা ফাকাই থাকে...
কেউ বসে না....
আর পারবো না.... আজকে আমি নিজেই খোজ নিয়ে দেখি....
..
...
বিকেল ৫:৫৬ মিনিট....
আতেল মেয়ে টা গাধাটার নাম্বারে মেসেজ দিল....
.
ক্লাসে আসেন না কেন?
.
বাঁচাল টা আগে থেকেই আতেল মেয়েটার নাম্বার নিয়ে রেখেছিল।সাহস হয়নি কল দেবার....
আতেল মেয়েটির মেসেজ পেয়ে ছেলে টা খুশিতে পাগল...
মানে আতেল টা তার অনুপস্থিতি টের পেয়েছে......
.
ছেলেটি উত্তর দিচ্ছে....
:আপনি কিভাবে জানলেন আমি ক্লাসে যাই নি...
মেয়েটি জিভে কামড় দিয়ে) ইয়ে মানে স্যার আজকে আপনাকে খুজতেছিল তাই শুনলাম...
:আমি আর ক্লাসে যাবো না....
:কেন?
:আমি গেলে মনোযোগী শিক্ষার্থীদের মনোযোগ এ ব্যাঘাত হয়... তাই যাবো না আর...
:আপনি কি পরোক্ষ ভাবে আমাকে বলছেন?
:বললেই বা কি?
: বললে সমস্যা আছে... কিছু বললে সরাসরি বলতে হবে..
:হ্যা আমি গেলে আপনার সমস্যা হয়...তাই যাবো না...
:আমি কি বলেছি আপনি থাকলে আমার সমস্যা হয়?
:না বললেও বুঝা যায়..
:বেশি বুঝতে হবে না আর হ্যা ক্লাসে একটু আস্তে কথা বললেই হয়।
:আমি চাই না আমার জন্য কারো সমস্যা হোক... তাই যাবো না আর..
:আমি বলেছি যে আপনার জন্য আমার সমস্যা হয় না তাই আপনি ক্লাসে আসেন।আর আমাকে বিরক্ত করার জন্য একটা ছেলের যে এবিলিটি থাকা দরকার সেটা আপনার নাই...
:তবুও আমি ক্লাসে আসতে পারবো না যে। আমি স্যার কে না করে দিছি।
:একটা কথা বলি?
:বলেন...
:আপনি ভাল করেই জানেন আমি বেশি কথা বলি না...
তাই শেষ বারের মত আমি আপনাকে রেকুয়েষ্ট করে বলছি ক্লাসে আসেন... আশা করি আমার রেকুয়েষ্ট রাখবেন...
বাই....
:আচ্ছা গেলে আপনাকে জানিয়ে যাবো...
:আপনার ইচ্ছা.....
..
...
পরের দিন ক্লাসে....
ঠিক ১২দিন পর........
ক্লাস শুরুর পর বাঁচাল টা ক্লাসে ঢুকে.....
আতেল মেয়েটি তাকায় না...
শব্দ শুনেই বুঝতে পারে গাধা টা তার কথা রেখেছে....
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
আজ ১২দিন পর গাধা টাকে দেখলাম....
ক্লাসে আজকে চুপচাপ ছিল গাধা টা... আমার কেন জানি এভাবে ভাল লাগে নি গাধা টাকে... গাধাটাকে চুপচাপ থাকলে মানায় না...ক্লাস শেষ হবার পরেও গাধাটা মোবাইল টিপছিল বসে বসে এই সুযোগে আমি গাধা টার বেঞ্চ এর পাশে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন ধরে গাধা টাকে দেখলাম.. গাধা উপরে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায়.. আমি চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে আসি.....
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আজ প্রথমবার...সে আমাকে এত কাছে থেকে এত সময় ধরে দেখেছে.. আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বুঝতেছিলাম সে আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে আর হয়তো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে মাথা তুলতেই তার চোখে চোখ পড়ে যায়...সে চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যায়... তবে সেই চাহনিতে একটা প্রশ্ন ছিল...
অস্পষ্ট প্রশ্ন....
প্রশ্নটা হয়তোবা এমন.....
"কেন এমন করলে?
"কেন আসো নি?
"কেন হারিয়ে গেছিলে?
"আর যেও না, অনেক কষ্ট হয়েছে.....
..
...
তারপর আবার...
আগের মতই ক্লাস চলছে...
চলছে ছেলেটির আড্ডাবাজী আর মেয়েটির পিছে লাগা...
ইতোমধ্যে সামনে চলে আসে মেয়েটির জন্মদিন...
ছেলেটি আগে থেকেই মেয়েটির সব পছন্দ অপছন্দ জেনে রেখেছিল....
আর মেয়েটির সব থেকে পছন্দের ফুল ছিল কদম...
তাই ছেলেটি ঠিক করলো মেয়েটির জন্মদিনে প্রথম মেয়েটির সাথে কথা বলবে সরাসরি আর কদম ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিবে.....
..
...
অতঃপর চলে এলে সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত দিনটি....
.
মেয়েটির জন্মদিনে তাদের ক্লাস ছিল...
যথারিতি মেয়েটি ক্লাসে এসে চুপচাপ বসে ক্লাস করছে..
ইতোমধ্যে প্রায় ক্লাসের সবাই মেয়েটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। কিন্তু মেয়েটি ছেলেটির থেকে উইশ এর জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু ছেলেটি নির্বিকার ভাবে বসে ক্লাস করছে।
মেয়েটিও ইচ্ছে মত গালি দিচ্ছে ছেলেটিকে মনে মনে।
(কুত্তা, হাতি, গাধা, বিলাই,গুইসাপ, ভেড়া, ছাগল আমার জন্মদিনের নাম করে হলেও আমার সাথে কথা বলতে পারে না?)
ক্লাস শেষ......
..
...
আজকে ক্লাসে সবার প্রথমে বাঁচাল টা বের হয়ে যায়।
মেয়েটির অনেক রাগে ক্ষোভে অভিমানে যাষ্ট কাঁদোকাঁদো অবস্থা....
সবার শেষে মেয়েটি বের হয়ে আসে। মেইন রোডের আগেই একটা চা এর দোকানের পাশে থেকে হঠাৎ মেয়েটির নাম ধরে কে জানি ডাক দেয়...
মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে বাঁচাল ছেলেটি মুচকি মুচকি হাসছে......
বাঁচাল টা বলা শুরু করে....
.
:বাসায় যাচ্ছো?
মেয়েটির রাগে যাষ্ট ছেলেটির চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিল) বাসায় ই তো যাবো ক্লাস শেষ করে...
:আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবা?
: (সম্ভব হলে তোমাকে এখন বিষ খাওয়াতাম আমি) আমি চা খাই না..... তুমি খাও আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।
:শুনলাম আজ নাকি তোমার জন্মদিন। তাই আজকে অন্তত আমার সাথে বসে এক কাপ চা খেতেই পারো..
: (তোমাকে আমি খুন করবো) আচ্ছা চল খাওয়াচ্ছি...
:ধন্যবাদ...
..
...
:তা কেমন কাটলো তোমার জন্মদিন...
যার উইস এর জন্য জন্মদিনেও ক্লাস করতে এসেছিলাম সেই জানে না আজ আমার জন্মদিন ছিল আর কেমন কাটবে জন্মদিন... জঘন্য...) এই তো ভালই...
: তাই??
শুনো....
.
"তোমার কাছে পাহাড় নদী...
সাগর আছে থেমে....
তুমি চাইলে আকাশ এসে...
মাটিতে যায় নেমে...
.
নীল নয়নের নীলিমায় বিমোহিত আমি আজ....
তোমার জন্মদিনে এক আকাশ অভিনন্দন......"
.
বলতে বলতে ছেলেটি ব্যাগ থেকে তাজা তিনটি কদম ফুল বের করে মেয়েটির হাতে দেয় আর বলে...
.
:ঢাকা শহরে এই কদম ফুল ছাড়া সব ফুল পাওয়া যায়। শুধু এই কদম ফুল ই পাওয়া যায় না। অনেক কষ্ট করে যোগাড় করেছি তোমার জন্য.... এগেইন শুভ জন্মদিন...
.
মেয়েটি এত খুশি এত খুশি এত খুশি যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।কিন্তু মুখের এক্সপ্রেশন এমন রেখেছে যে অন্য দশটা নরমাল উইশের মতই।আমি যে এত খুশি হয়েছি সেটা গাধা টাকে বুঝতে দেয়া যাবে না) সেম টু ইউ...
:সেম টু ইউ মানে?
:আরে গাধা আজকে তোমার ও জন্মদিন...
:আরে তাই তো.. আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম...থ্যাংকস...
:চা শেষ করো উঠি....বাসায় যেতে হবে...
:ওকে শেষ....
.
: তুমি চাইলে আমাকে বাসা পর্যন্ত রেখে আসতে পারো....
বলেই মেয়েটি হাটা শুরু করলো....
:আমি কেন বাসায় রেখে আসবো নিজেই তো যেতে পারে (বিড়বিড় করে)
আরে রে রে আমাকে সাথে যেতে বলছে....
এই দাড়াও আমি আসছি.....
বলেই মেয়েটির পিছে দৌড়....
: গাধা তো গাধাই থাকবে.....
..
...
রাতে দুজন ডায়রি লিখছে.....
..
...
মেয়েটির ডায়রি.....
আজকে গাধা আমার সাথে কথা বলেছে। আমাকে বার্থডে উইশ করেছে।আচ্ছা পৃথিবীতে কোন ছেলে কখনো কি কোন মেয়ের জন্য ৫৫কি.মি. দূর থেকে কদম ফুল সংগ্রহ করে বার্থডে উইশ করেছিল???
আমার গাধা টা আমাকে করেছে।
হা গাধা টা আমার... গাধা টা আমাকে আমার প্রিয় কদম ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে বার্থডে উইশ করেছে।আমার সারা জীবনে বেষ্ট বার্থডে উইশ ছিল এটাই। আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম কিন্তু গাধা টাকে বুঝতে দেই নি। যদি বুঝে ফেলে তাহলে তো গাধা টা বুঝে যাবে আমি গাধা টার উপর ক্রাশড। গাধা টা অনেক কিউট।
গাধা টা এমনিতেই অনেক কথা বলে কিন্তু আজকে আমার সাথে বাসা অব্দি এসেছিল সারা রাস্তায় চুপচাপ ছিল আর লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিল কয়েক বার ধরা পড়ে গেছে।আর ধরা পড়বেই বা না কেন বলেন?
আমিও তো গাধা টা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম....
হ্যা এই গাধা টার হাত ধরেছিলাম আমি আজকে। অনেক আপন মনে হয়।হ্যা এই গাধা টার হাত টা ধরেই
এই জীবন টা কাটিয়ে দেবার ভরসা পাই......
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আজকে আমি চাইলে সবার প্রথমে ওকে উইশ করতে পারতাম কিন্তু করলাম না কারন শুধু উইশ করলে তো হবে না। ওর সাথে অনেক কথা বলতে হবে।তাই সবার শেষে উইশ টা করলাম। সে অনেক খুশি হয়েছিল কিন্তু এক্সপ্রেশন টা লুকিয়ে রেখেছিল আমি চোখ দেখে বুঝেছি।আনন্দে চক চক করছিল চোখগুলো। আর হ্যা আমারো জন্মদিন ছিল আজকে। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম নিজের জন্মদিনের কথা।কিন্তু ওর জানা ছিল আমাকে উইশ করেছে।শেষে আমাকে যখন কৌশলে ওর সাথে যাবার অফার করলো আমি তো বুঝতেই পারি নি।পরে বুঝতে পেরে ভো দৌড দিলাম... আর আমার আঁতেল টার মুখে সেই ভুবন ভুলানো হাসি টা দেখলাম।.....
প্রথম বারের মত... আর হ্যা আমার আঁতেল টা হাসলে অসম্ভব সুন্দর লাগে।ওর সাথে ওর বাড়ি অব্দি গেলাম। অনেক কথা বলার জন্য ঠিক করে রেখেছিলাম ওকে বলার জন্য কিন্তু ওকে দেখতে দেখতেই রাস্তা শেষ হয়ে গেল কখন টের ই পাই নি....
আমার সম্বিৎ ফিরলো তখন যখন ও আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে আমার কানে কানে বললো.....
"আমার হাত টা ছেড়ো না কখনো"
আমি কিছু বলতে পারি নি, তবে বাঙলা ব্যাকরণ এর একটা বাগধারা কে আজ বড্ড বেশি সত্যি মনে হচ্ছিল
আর সেটা হল....
"মেঘ না চাইতেই জল"...
আমি ওর কথায় শুধু মাথা নেড়ে সায় দিয়েছি। বাধ ভাঙা আনন্দে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না....
হ্যা আজ থেকে আঁতেল টা আমার....
ওকে বলতে পারি নি..
কিন্তু এখানে বলছি...
আমি আমার আঁতেল টাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি...
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আমার আঁতেল...
..
...
এভাবেই শুরু গল্প টার......
..
...
কয়েক মাস পর.....
আঁতেল মেয়েটি তার বাঁচাল ছেলেটিকে নিয়ে ক্যাম্পাসে বসে...
চলুন শুনে আসি কি কথা হচ্ছে....
.
:শুনো আমাদের বিয়েই টা আমরা আমাদের জন্মদিনেই করবো তাহলে তোমার জন্মদিন আমার জন্মদিন আর বিবাহ বার্ষিকী সব এক দিনে... সব এক সাথে পালন করবো তারিখ ভুলবার ভয় নাই....
:তাই হবে আমার পাগলী... ব্যাপার টা খারাপ বলো নাই...
:আচ্ছা শুনো আমাদের প্রথমে ছেলে হবে তোমার মতই কিউট & বুদ্ধিমান..
:নেভার... আমাদের প্রথমে মেয়ে হবে এবং সেটা তোমার মতই বিউটি উইথ ব্রেইন...
: নো.. আমাদের ছেলে হবে...
:আচ্ছা বাবা ছেলে মেয়ে সব হবে.... যত ইচ্ছা নিও... খাটুনি আমার কষ্ট তোমার... বলে হাসতে শুরু করলো...
:ফাজিল….. বলেই মেয়েটি ছেলেটিকে মারতে শুরু করলো...
আর ছেলেটি উঠে পালাতে লাগলো....
..
...
এভাবেই খুনশুটি ভরা আড্ডা আর ক্লাস লেখাপড়া সব সুন্দর ভাবেই চলছিল দুজনের....
প্রতিটা দিন নতুন কিছু স্বপ্ন বোনা আর খুনশুটিতে জীবন টাকে যেন স্বর্গ মনে হচ্ছিল দুজনের.....
যতক্ষন না মেয়েটির বাবা তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে.....
..
...
মেয়েটির বাবা তার মেয়েরর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে মেয়েটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে....
:আমি যা শুনলাম সেটা কি সত্যি?
:কি শুনেছেন সেটা তো আমি জানিনা?
:আমি শুনলাম তুমি কোন ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছো, সম্পর্কেও নাকি জড়িয়েছো। কি করে ছেলেটি?
:জ্বি আমার সাথেই মানে আমরা একসাথেই এক ডিপার্টমেন্টেই পড়ি।
: মানে ছেলে মাত্র অনার্স পড়ছে তোমার সাথে?
:জ্বি...
: এসব বাদ দাও সামনে মাসে আমি তোমার বিয়ে দিচ্ছি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ঢাকাতেই ভাল জব করে।
:আব্বু আমার লেখা পড়া টা শেষ করতে দাও।
:বিয়ের পরেও লেখাপড়া শেষ করতে পারবে।
:কিন্তু আব্বু আমি ওকে ভালবাসি... আব্বু মাত্র একটা বছর সময় দাও প্লিজ
:মা আমি ওই ছেলের জন্যই তোমার বিয়ে টা তাড়াতাড়ি দিচ্ছি।তোমার সেম ব্যাচের একটা ছেলের সাথে আমি তোমার বিয়ে কখনোই দিবো না। তুমি বিয়ের প্রস্তুতি নাও...
:আম্মুওওওও........
..
...
:বাবুনি...
আব্বু আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেলছে।পরের মাসে আব্বুর বন্ধুর ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারি নি। তুমি কিছু কর...
.
:আমার অনার্স শেষ করার আগে কি করতে পারি বল?
তুমি আমাদের অনার্স শেষ করা পর্যন্ত বিয়ে টা আটকাও প্লিজ..
.
:আমি কিছু করতে পারছি না বাবুনি...শুধু শুনে রাখো আমি শুধু তোমাকেই বিয়ে করতে চাই। আমাকে কেউ পেলে সেটা শুধু তুমি ই পাবা।অন্য কেউ পাবে না আমাকে।
.
:আমিও তোমাকে না পেলে জীবন রেখে লাভ নাই আমার।
..
...
এক মাস পর.....
..
...
আঁতেল মেয়েটির বিয়ে.....
বাড়ির ছোট মেয়ে সবার আদরের ছিল। বিয়ে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে। তাই মেয়ের বাবা অনেক খুশি।অনেক জাকজমকপুর্ন ভাবে বিয়ে টা দিচ্ছেন।
পুরো বাড়ি বিয়ের সাতদিন আগে থেকেই সাজানো।
চারিদিকে অনেক হইহুল্লোড়....
কিছুক্ষন আগে মেয়েটিকে পার্লার থেকে সাজিয়ে এনে ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বউয়ের সাজে মেয়েটিকে অপ্সরীর মত লাগছিল।সবার চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। যেই দেখছে বউয়ের সৌন্দর্য এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
.
বরপক্ষ এসে গেছে...
বিয়ে বাড়িতে বাড়তি উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়ে গেল। সবাই বর দেখা নিয়েই ব্যস্ত। কি আনন্দ সবার মাঝে।সবার আদর আপ্যায়ন শেষে কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
ছেলের পক্ষের মতামত নিয়ে মেয়ের কাছে সবাই গেল মেয়ের মত নিতে।
মেয়ের তিন কবুল শুনা হলেই বিয়ে শেষ।
মেয়ের বাবা কাজি আর বিয়ের সাক্ষিরা সবাই মিলে মেয়ের রুমে গিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়.....
মেয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েছে মুখ দিয়ে ফেনা উঠছে....
বিয়ে বাড়ি মুহুর্তেই নিঃশব্দ হয়ে যায়... মেয়ের বাবা আর ভাই মিলে ধরা ধরা করি মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার রা তাকে মৃত বলে ঘোষনা দেয়....
..
...
মেয়ের বাবা প্রচন্ড আক্রশে ফেটে পড়ে....
থানায় গিয়ে ওই ছেলে কে তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে মামলা দায়ের করে.....
এবং পুলিশ কে রাজনৈতিক চাপ দিয়ে রাতের মধ্যেই ওই ছেলেকে জেল হাজতে আনার ব্যবস্থা করেন...
.
পুলিশ রাতেই মধ্যেই ছেলের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু ছেলের বাড়িরর পরিবেশ বেশ থম থমে। তাই পুলিশ সরাসরি বাড়ির ভিতরে যায়।গিয়ে দেখে বাড়ির সবাই মিলে লাশ নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করছে।পুলিশ গিয়ে ভাল করে সবাই কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে
"যে ছেলেটিকে তারা ধরতে এসেছে ছেলেটি মেয়েটির বিয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে বিষ পান করে আত্বহত্যা করেছে....
আর বিয়ের আগেই মেয়েটি বিষ পান করে আত্বহত্যা করেছে... "
ইন্সপেক্টর হাসছে এই কান্ড দেখে...
তখন কনস্টেবল তাকে জিজ্ঞেস করে স্যার হাসছেন কেন?
আর ছেলে তো মরে গেছে
এখন আমাদের কি হবে?
কিচ্ছু হবে না এইরকম রাজনৈতিক নেতাদের কে আমি ভাল করেই চিনি.. এরা এক বারের বেশি ফোন করে না..
কিন্তু স্যার চার্জশীট এ কি লিখবো?
লিখে দেন...
"এক থা রাজা...
এক থি রানী....
দোনো মার গায়ে....
খতম কাহানী...."
..
...
........................................সমাপ্ত........................................
..
...
কিছু কথা: সেম এজ রিলেশন গুলো অনেক অনেক অনেক বেশি কিউট হয়। অনেক বেশি খুনশুটি আর ভালবাসায় ভরা থাকে রিলেশন গুলো।অনেক আবেগ আর ভালবাসায় প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে উঠে এই সম্পর্ক গুলো। কিন্তু সেম এজ এর রিলেশন গুলোকে বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো টা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। বলছি না সেম এজ এর রিলেশন ভবিষ্যৎ নেই।তবে বলছি সেম এজ এর রিলেশন টা সংসার পর্যন্ত গড়ায় গড়ে ২%....
আর এমন অকাল পরিনতি হয় ৯৮% সম্পর্ক গুলোর।
প্রণয়ের যদি পরিনয় না হয় তাহলে অন্য জনের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েটা হয় প্রতিরাতে ধর্ষিতা।
সেম এজ কাপলদের জন্য রইলো অশেষ ভালবাসা।
ভালোবাসায় ভরে উঠুক সব কাপলদের জীবন....
..
...
উৎসর্গ: চুপচাপ মায়াভরা মুখের ডাগর ডাগর চোঁখের মেয়েটিকে......
..
...
..
...
আঁতেল মেয়ে এবং বাঁচাল ছেলের গল্প....
লেখকঃনিলয় আহসান নিশো
..
...
গল্পটি একটা মেয়ে আর একটা ছেলের...
২জন ২জনের সম্পুর্ন বিপরীত.....
একজন উত্তরমেরু হলে অপরজন নিঃসন্দেহে দক্ষিন মেরু...
..
...
মেয়েটি.....
অনেক বেশি চুপচাপ,শান্ত ভদ্র আর বেশ লাজুক।মেয়েটার সব থেকে বেশি আকর্ষন টা হল মেয়েটার সরলতা।অনেক বেশি চুপচাপ,দরকার না থাকলে মেয়েটার পেটে বোম মেরেও একটা কথা তার মুখ থেকে বের করা সম্ভব না কারো পক্ষে...
মেয়েটার তাকানোর ভঙিটা অসাধারণ। খুব গভীর ভাবে মানুষকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।অনেক গভীর মায়াভরা বেশ ঠাগর ঠাগর তার চোখ গুলো... ওর চোখে একবার তাকালে নেশা ধরে যায়।
কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলে না....সারাক্ষণ বই পড়ে আর চুপচাপ থাকে...সোজা কথা মানে এক কথায় বলতে গেলে...
#পারফেক্ট_আঁতেল_মেয়ে...
..
...
ছেলেটি.....
অনেক বেশি চঞ্চল,অশান্ত বলতে গেলে অভদ্র ও বটে।লাজ লজ্জার বালাই নাই।বয়স বাড়লেও বুদ্ধি বাড়ে নি, ফাজলামি ইতরামিতে সবার থেকে এগিয়ে।সারাক্ষন কথা বলতেই থাকে প্রয়োজন থাকুক আর না থাকুক। তাকে এক মিনিট চুপ করিয়ে রাখা ৩য় বিশ্বযুদ্ধ আটকানোর সমান কথা।
ছেলেটির বন্ধু বান্ধবির অভাব নেই।এবং সবার আড্ডার মধ্যমণি হল ছেলেটি এবং সবার অনেক পছন্দের....
পড়ালেখায় মন নেই সব সময় কারো না কারো পিছে লেগেই থাকে।শিক্ষক দের নিয়ে মজা করা, বন্ধু বান্ধবী দের কে পঁচা নামে ডাকা তার নিত্য সময়ের কাজ এক কথায় বলতে গেলে …
#পারফেক্ট_বাঁচাল_ছেলে...
..
...
গল্পটা এদের দুজনের ই...
তাদের মুখেই মানে তাদের ডায়রির পাতা থেকেই শুনি তাদের গল্প টা.....
..
"তাদের কিছু ভাবনার কথা...
সাথে ডায়রির পাতা...."
..
...
ছেলেটির ডায়রি...
আজ দু-মাস পর কোচিং এ আসলাম।আমাকে ২মাস পর কাছে পেয়ে আমার বন্ধু বান্ধবিরা অনেক খুশি।সবাই এটা সেটা বলছে মজা করছে।কেউ ট্রিট দিতে চাইছে কেউ ট্রিট দিতে বলছে।ভাল লাগছে সবার সাথে এত দিন পর দেখা হয়ে।
হঠৎ চোখ পড়লো স্যারের সোফায় একটা মেয়ে বসে আছে।বসে বসে স্যারের শিট গুলো পড়ছে। আগে কখনো দেখিনি মেয়েটাকে।একেবারে নতুন।আমার বান্ধবী কে জিজ্ঞেস করতেই বললো, ও নতুন এসেছে আমার কোচিং এ।তোকে চিনে না। আমিও একটু মজা করার জন্য মেয়েটাকে বেশ সিনিয়র এর মত করে ডাকলাম,
এই মেয়ে শোন,
মেয়েটি বেশ ভড়কে গেল, আর আমি আবার ডাকতেই উঠে এল আমাদের আড্ডার কাছে।
আমি নাম জিজ্ঞেস করতেই আস্তে করে নাম টা বললো,
আমার প্রথম বারের মত কারো নাম বলার ভঙ্গি টা ভাল লাগলো।
আমি আর কিছু না বলাতে মেয়েটা আবার গিয়ে সোফায় বসে স্যারের শীটে চোখ বুলাতে লাগলো।
আর আমি মেয়েটার মায়াভরা মুখ টা কল্পনা করতে লাগলাম।
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
নতুন কোচিং এ কোচিং করছি আজ প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। কেউ কখনো আমার সাথে সেঁধে কথা বলতে আসে নি।আজকে নতুন একটা ছেলে কোচিং এ এসেছে।আসলে নতুন না পুরাতন আগে কোচিং করতো। মাঝ খানে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল।আজ আবার এসেছে।
আসার সাথে সাথে আড্ডা বাজি শুরু করছে।আর ক্লাসের সব ছেলে মেয়ে গুলো ও তার সাথে তাল মেলাচ্ছে।
ছেলেটা মনে হয় একটু বাঁচাল আর বেয়াদব টাইপের।
তাই না হলে কি একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কি কেউ এইভাবে কথা বলে?
তবে হ্যা, বাঁচাল হলেও ছেলেটা অনেক সুন্দর করেই কথা বলে....আমি সোফায় বসে চুপ চাপ করে তাদের আড্ডার কথা শুনছিলাম....
..
...
ছেলেটির ডায়রি.....
আজ বেশ কয়েকদিন মেয়েটি আমাদের সাথেই ক্লাস করছে।
সবাই যখন আড্ডায় ব্যস্ত মেয়েটি তখনো নোট নিয়েই ধ্যানরত। কারো সাথেই দরকার ছাড়া কথা বলে না।এটা কিভাবে সম্ভব সেটা এই মেয়েকে না দেখলে কখনোই জানা হতো না আমার।সারাক্ষন নোট আর বই নিয়ে চুপচাপ পড়ে থাকা কিভাবে সম্ভব???
যাক সে কথা.... এই মেয়েটি এত গুলো ক্লাস করলো আমার সাথে অথচ আমার সাথে কথা বলতে আসলো না??
যেখানে সব ছেলে মেয়েই আমার সাথে আড্ডা দিতে উন্মুখ সেখানে এই মেয়ে নির্বিকার...
তবুও কেন জানি ভালই লাগছে মেয়েটাকে...
মেয়েটার সাধারণত্ব কে....
কেমন যেন টানছে আমাকে....
..
...
মেয়েটির ডায়রি...
ছেলে মানুষ আড্ডাবাজ হয় জানতাম।কিন্তু একটা ছেলে সব কিছু ছেড়ে সবসময় আড্ডার উপরে থাকে কি করে সেটা এই ছেলেকে দেখার আগে আমার ভাবনার ও বাইরে ছিল।
সব সময় আড্ডা আর হুই হুল্লোড় করে কেমনে থাকতে পারে একজন মানুষ?
আচ্ছা মানুষের আড্ডা দেবার জন্য কতজনের সঙ্গ লাগে?
৫জন, ৭জন, ১০জন কিন্তু পুরো ক্লাসের সবাইকে নিয়ে উনি আড্ডা দিবেন।
ফালতু লাগে...
আর এই মেয়ে গুলো যে ওই বাঁচাল টার মধ্যে কি দেখে বুঝি না।বাঁচাল টা একবার ডাকলেই হইছে...
ভাল লাগে না আমার এক দম বাঁচাল টাকে...
আমার একদম ভাল লাগে না বাঁচাল টাকে...
কেন ভাল লাগবে শুনি?
কই আমাকে তো তার সাথে আড্ডা দিতে ডাকে না??
আমাকে ডাকবে কেন উনি হুহ...??
ফালতু ছেলে একটা....হুহ
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
বেশ কিছুদিন হল মেয়েটাকে একটু একটু ডিস্টার্ব করছি..
কখনো মেয়েটার পাশে বসে কখনো বা পিছনে বসে।
কখনো মেয়েটির সুদীর্ঘ খোলাচুল টেনে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকা, কখনো মেয়েটির ওরনায় কোনায় নষ্ট কলম বেধে দেয়া অথবা কখনো মেয়েটির দিকে সাদা কাগজ চিরকুটের মত করে ছুড়ে মেরে... সব থেকে মজার হল আমি মেয়েটির চুল টেনে দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি আর মেয়েটি বুঝতে পারে না কে তার চুল টান দিছে...
আর সেই সময়ে ফর্সা মেয়ের রেগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ খানা দেখে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখি...
সত্যি বলতে...
মেয়েটির রাগে লাল হয়ে যাওয়া গাল আর ঘেমে থাকা নাক টা না দেখলে এখন ক্লাস পানসে লাগে..
ইচ্ছে করেই মেয়েটাকে রাগাচ্ছি... যদিও আগে কখনোই কোন মেয়ের সাথে এমন করতে ইচ্ছে হয়নি...
ভাল লাগছে আঁতেল মেয়েটির রাগী মুখ টা...
টানছে আমায়......
..
...
মেয়েটির ডায়রি...
বাঁচালললললললললললললল......
হ্যা বাঁচাল টা ইদানীং আমার পাশে, পিছনে বসা শুরু করছে। আমাকে ডিস্টার্ব ও করছে। আমার চুল ধরে টান দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবে আমি বুঝতে পারবো না...আমার ওরনায় নষ্ট কলম বেধে দেয়, চিরকুট ছুড়ে মারে...
হ্যা চিরকুট...
আমি ভেবেছিলাম কিছু লিখে দিয়েছে.. তা না... সাদা কাগজ ছুড়ে মেরে অন্য দিকে তাকায় ভাবে আমি বুঝবো না...
কাপুরুষ....
কিছু লিখার সাহস নেই চিরকুটে যেই ছেলের তাকে কাপুরুষ ছাড়া আর কি বলবো..
আচ্ছা আমি তো সব জানি আর বুঝতেছি যে সব বাঁচাল টাই করতেছে...
তাহলে আমি এসব সহ্য করছি কেন?
আমাকে আগে কেউ এমন করলে তো আমি কমপ্লেইন করতাম...
বাঁচাল টার নামে কমপ্লেইন করতে ইচ্ছে করছে না কেন??
আর বাঁচাল টার এসব আজগুবি কাজ আমার ভাল লাগছে কেন??
না... এসব তো চলবে না...
এবার কিছু করলে খুব করে বকে দিবো...
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
দিনের পর দিন....আঁতেল মেয়েটিকে জালাতন করা টা বাড়িয়েই যাচ্ছি... এক অন্য রকম মজা পাচ্ছিলাম...কিন্তু ভুল টা সেদিন করে ফেললাম... নষ্ট কলম টা ওর ওরনায় বেধে দিয়েছি মাত্র, হঠাত করে সে ওরনা টা ঝাড়তেই কলমটা গিয়ে ওর চোঁখে লাগে।স্যার জিনিস টা লক্ষ করে...
আর বলে কে বেধেছে ওরনায় কলম... আমি তখনো আঁতেল মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মেয়েটি অনেক ব্যথা পেয়েছে তাই চোখ চেপে ধরে আছে... কে যেন পাশে থেকে বলে দিল এটা আমার কাজ....
স্যার আমাকে কি কি যেন বলেছিল আমার মাথায় কিছুই ঢুকে নি...মেয়েটি একটু পর ক্লাস শেষ করে চুপচাপ বেড়িয়ে যায়...
সেদিন প্রথম আমার অনেক খারাপ লেগেছিল....
তার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর ক্লাসে যাবো না & আঁতেল টাকেও আর বিরক্ত করবো না......
ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম....
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
আজ বাঁচাল টার জন্য চোখে কলমটা লেগেছে। বাঁচাল টা একদিন পর পর ওরনায় কলম বাঁধতো।তাই আজকে বাঁচাল টার কলম বাধার কথা ছিল না.. আমি ভেবেছি আজকে কাগজ ছুড়বে না হয় চুল টান দিবে.. আমি চুল খুলেও রেখেছিলাম...কিন্তু গাধার মাথায় কখনো কি বুদ্ধি হয়? গাধা টা আজকে ওরনায় কলম বেঁধেছে আর স্যার ও দেখে ফেলেছে আমার ওরনার কলম চোখে লাগাটা। আমি তো চাইলেও গাধাটার নাম স্যার কে বলতে পারতাম না তাই চুপ চাপ চোখে ওরনা চেপে ছিলাম...
তবুও কে জানি গাধা টার নাম স্যার কে বলে দিয়েছে...
আমার বিরক্ত লেগেছে.. আমি কি বলতে বলেছি কাউকে?
আসার সময় প্রথম বারের মত গাধা টার মলিন মুখ দেখলাম.. অসহায় চাহনি....
গাধা টার এই চাহনী টাই মাথা টা খারাপ করে...
কেমন যেন একটা চাহনী থাকে গাধা টার চোখে....
ঘোর লাগে... নেশা নেশা লাগে তাকালে... বার বার তাকাতে ইচ্ছে করে.....
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আজ এক সপ্তাহ হল...
ক্লাসে যাই নি... আর যাবো ও না.... আঁতেল মেয়েটাকে আর বিরক্ত করতে চাই না....
আমার জন্য হয়তো ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতো না...
আঁতেল টার নিষ্পাপ চাহনী আর মায়া মায়া মুখ টা ভীষণ মিস করছি......
জানিনা কেন এমন হচ্ছে.....
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
আজিব তো......
বাঁচাল টা হটাত উধাও হয়ে গেল... ক্লাসে আসে না এক সপ্তাহ ধরে....এতদিন ক্লাসে নাই... কেউ বিরক্ত করছে না। ভাল লাগছে না কিচ্ছু...
বাঁচাল টাকে মিস করছি অনেক.....
কি হয়েছে বাঁচাল টার... কেন আসছে না গাধা টা ক্লাসে...
গাধা টার নাম্বার টা কৌশলে স্যারের নোটবুক থেকে তুলে নিয়েছি....
একটা কল দিবো কি???
না কেন কল দিবো...
কি বলবো...
থাক... আর কয়েক দিন দেখি...
এসে যাবে হয়তো....
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আচ্ছা আমি যে ক্লাসে যাই নি আজ ১০দিন হল...
আঁতেল টা টের পায় আমার অনুপস্থিতি?
পায় না হয়তো... কিভাবে পাবে আতেল টার ধ্যান জ্ঞান তো সবসময় বই আর নোটের মধ্যেই আবদ্ধ....
থাকুক আতেল টা ভালই....
..
...
মেয়েটির ডায়রি.....
আজ ১০দিন গাধা টা ক্লাসে আসলো না... কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছি না গাধা টা কেন আসেনা..
কিচ্ছু ভাল লাগছে...
গাধা টার বেঞ্জ টা ফাকাই থাকে...
কেউ বসে না....
আর পারবো না.... আজকে আমি নিজেই খোজ নিয়ে দেখি....
..
...
বিকেল ৫:৫৬ মিনিট....
আতেল মেয়ে টা গাধাটার নাম্বারে মেসেজ দিল....
.
ক্লাসে আসেন না কেন?
.
বাঁচাল টা আগে থেকেই আতেল মেয়েটার নাম্বার নিয়ে রেখেছিল।সাহস হয়নি কল দেবার....
আতেল মেয়েটির মেসেজ পেয়ে ছেলে টা খুশিতে পাগল...
মানে আতেল টা তার অনুপস্থিতি টের পেয়েছে......
.
ছেলেটি উত্তর দিচ্ছে....
:আপনি কিভাবে জানলেন আমি ক্লাসে যাই নি...
মেয়েটি জিভে কামড় দিয়ে) ইয়ে মানে স্যার আজকে আপনাকে খুজতেছিল তাই শুনলাম...
:আমি আর ক্লাসে যাবো না....
:কেন?
:আমি গেলে মনোযোগী শিক্ষার্থীদের মনোযোগ এ ব্যাঘাত হয়... তাই যাবো না আর...
:আপনি কি পরোক্ষ ভাবে আমাকে বলছেন?
:বললেই বা কি?
: বললে সমস্যা আছে... কিছু বললে সরাসরি বলতে হবে..
:হ্যা আমি গেলে আপনার সমস্যা হয়...তাই যাবো না...
:আমি কি বলেছি আপনি থাকলে আমার সমস্যা হয়?
:না বললেও বুঝা যায়..
:বেশি বুঝতে হবে না আর হ্যা ক্লাসে একটু আস্তে কথা বললেই হয়।
:আমি চাই না আমার জন্য কারো সমস্যা হোক... তাই যাবো না আর..
:আমি বলেছি যে আপনার জন্য আমার সমস্যা হয় না তাই আপনি ক্লাসে আসেন।আর আমাকে বিরক্ত করার জন্য একটা ছেলের যে এবিলিটি থাকা দরকার সেটা আপনার নাই...
:তবুও আমি ক্লাসে আসতে পারবো না যে। আমি স্যার কে না করে দিছি।
:একটা কথা বলি?
:বলেন...
:আপনি ভাল করেই জানেন আমি বেশি কথা বলি না...
তাই শেষ বারের মত আমি আপনাকে রেকুয়েষ্ট করে বলছি ক্লাসে আসেন... আশা করি আমার রেকুয়েষ্ট রাখবেন...
বাই....
:আচ্ছা গেলে আপনাকে জানিয়ে যাবো...
:আপনার ইচ্ছা.....
..
...
পরের দিন ক্লাসে....
ঠিক ১২দিন পর........
ক্লাস শুরুর পর বাঁচাল টা ক্লাসে ঢুকে.....
আতেল মেয়েটি তাকায় না...
শব্দ শুনেই বুঝতে পারে গাধা টা তার কথা রেখেছে....
..
...
মেয়েটির ডায়রি....
আজ ১২দিন পর গাধা টাকে দেখলাম....
ক্লাসে আজকে চুপচাপ ছিল গাধা টা... আমার কেন জানি এভাবে ভাল লাগে নি গাধা টাকে... গাধাটাকে চুপচাপ থাকলে মানায় না...ক্লাস শেষ হবার পরেও গাধাটা মোবাইল টিপছিল বসে বসে এই সুযোগে আমি গাধা টার বেঞ্চ এর পাশে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন ধরে গাধা টাকে দেখলাম.. গাধা উপরে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায়.. আমি চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে আসি.....
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আজ প্রথমবার...সে আমাকে এত কাছে থেকে এত সময় ধরে দেখেছে.. আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বুঝতেছিলাম সে আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে আর হয়তো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে মাথা তুলতেই তার চোখে চোখ পড়ে যায়...সে চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যায়... তবে সেই চাহনিতে একটা প্রশ্ন ছিল...
অস্পষ্ট প্রশ্ন....
প্রশ্নটা হয়তোবা এমন.....
"কেন এমন করলে?
"কেন আসো নি?
"কেন হারিয়ে গেছিলে?
"আর যেও না, অনেক কষ্ট হয়েছে.....
..
...
তারপর আবার...
আগের মতই ক্লাস চলছে...
চলছে ছেলেটির আড্ডাবাজী আর মেয়েটির পিছে লাগা...
ইতোমধ্যে সামনে চলে আসে মেয়েটির জন্মদিন...
ছেলেটি আগে থেকেই মেয়েটির সব পছন্দ অপছন্দ জেনে রেখেছিল....
আর মেয়েটির সব থেকে পছন্দের ফুল ছিল কদম...
তাই ছেলেটি ঠিক করলো মেয়েটির জন্মদিনে প্রথম মেয়েটির সাথে কথা বলবে সরাসরি আর কদম ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিবে.....
..
...
অতঃপর চলে এলে সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত দিনটি....
.
মেয়েটির জন্মদিনে তাদের ক্লাস ছিল...
যথারিতি মেয়েটি ক্লাসে এসে চুপচাপ বসে ক্লাস করছে..
ইতোমধ্যে প্রায় ক্লাসের সবাই মেয়েটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। কিন্তু মেয়েটি ছেলেটির থেকে উইশ এর জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু ছেলেটি নির্বিকার ভাবে বসে ক্লাস করছে।
মেয়েটিও ইচ্ছে মত গালি দিচ্ছে ছেলেটিকে মনে মনে।
(কুত্তা, হাতি, গাধা, বিলাই,গুইসাপ, ভেড়া, ছাগল আমার জন্মদিনের নাম করে হলেও আমার সাথে কথা বলতে পারে না?)
ক্লাস শেষ......
..
...
আজকে ক্লাসে সবার প্রথমে বাঁচাল টা বের হয়ে যায়।
মেয়েটির অনেক রাগে ক্ষোভে অভিমানে যাষ্ট কাঁদোকাঁদো অবস্থা....
সবার শেষে মেয়েটি বের হয়ে আসে। মেইন রোডের আগেই একটা চা এর দোকানের পাশে থেকে হঠাৎ মেয়েটির নাম ধরে কে জানি ডাক দেয়...
মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে বাঁচাল ছেলেটি মুচকি মুচকি হাসছে......
বাঁচাল টা বলা শুরু করে....
.
:বাসায় যাচ্ছো?
মেয়েটির রাগে যাষ্ট ছেলেটির চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিল) বাসায় ই তো যাবো ক্লাস শেষ করে...
:আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবা?
: (সম্ভব হলে তোমাকে এখন বিষ খাওয়াতাম আমি) আমি চা খাই না..... তুমি খাও আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।
:শুনলাম আজ নাকি তোমার জন্মদিন। তাই আজকে অন্তত আমার সাথে বসে এক কাপ চা খেতেই পারো..
: (তোমাকে আমি খুন করবো) আচ্ছা চল খাওয়াচ্ছি...
:ধন্যবাদ...
..
...
:তা কেমন কাটলো তোমার জন্মদিন...
যার উইস এর জন্য জন্মদিনেও ক্লাস করতে এসেছিলাম সেই জানে না আজ আমার জন্মদিন ছিল আর কেমন কাটবে জন্মদিন... জঘন্য...) এই তো ভালই...
: তাই??
শুনো....
.
"তোমার কাছে পাহাড় নদী...
সাগর আছে থেমে....
তুমি চাইলে আকাশ এসে...
মাটিতে যায় নেমে...
.
নীল নয়নের নীলিমায় বিমোহিত আমি আজ....
তোমার জন্মদিনে এক আকাশ অভিনন্দন......"
.
বলতে বলতে ছেলেটি ব্যাগ থেকে তাজা তিনটি কদম ফুল বের করে মেয়েটির হাতে দেয় আর বলে...
.
:ঢাকা শহরে এই কদম ফুল ছাড়া সব ফুল পাওয়া যায়। শুধু এই কদম ফুল ই পাওয়া যায় না। অনেক কষ্ট করে যোগাড় করেছি তোমার জন্য.... এগেইন শুভ জন্মদিন...
.
মেয়েটি এত খুশি এত খুশি এত খুশি যে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।কিন্তু মুখের এক্সপ্রেশন এমন রেখেছে যে অন্য দশটা নরমাল উইশের মতই।আমি যে এত খুশি হয়েছি সেটা গাধা টাকে বুঝতে দেয়া যাবে না) সেম টু ইউ...
:সেম টু ইউ মানে?
:আরে গাধা আজকে তোমার ও জন্মদিন...
:আরে তাই তো.. আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম...থ্যাংকস...
:চা শেষ করো উঠি....বাসায় যেতে হবে...
:ওকে শেষ....
.
: তুমি চাইলে আমাকে বাসা পর্যন্ত রেখে আসতে পারো....
বলেই মেয়েটি হাটা শুরু করলো....
:আমি কেন বাসায় রেখে আসবো নিজেই তো যেতে পারে (বিড়বিড় করে)
আরে রে রে আমাকে সাথে যেতে বলছে....
এই দাড়াও আমি আসছি.....
বলেই মেয়েটির পিছে দৌড়....
: গাধা তো গাধাই থাকবে.....
..
...
রাতে দুজন ডায়রি লিখছে.....
..
...
মেয়েটির ডায়রি.....
আজকে গাধা আমার সাথে কথা বলেছে। আমাকে বার্থডে উইশ করেছে।আচ্ছা পৃথিবীতে কোন ছেলে কখনো কি কোন মেয়ের জন্য ৫৫কি.মি. দূর থেকে কদম ফুল সংগ্রহ করে বার্থডে উইশ করেছিল???
আমার গাধা টা আমাকে করেছে।
হা গাধা টা আমার... গাধা টা আমাকে আমার প্রিয় কদম ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে বার্থডে উইশ করেছে।আমার সারা জীবনে বেষ্ট বার্থডে উইশ ছিল এটাই। আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম কিন্তু গাধা টাকে বুঝতে দেই নি। যদি বুঝে ফেলে তাহলে তো গাধা টা বুঝে যাবে আমি গাধা টার উপর ক্রাশড। গাধা টা অনেক কিউট।
গাধা টা এমনিতেই অনেক কথা বলে কিন্তু আজকে আমার সাথে বাসা অব্দি এসেছিল সারা রাস্তায় চুপচাপ ছিল আর লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিল কয়েক বার ধরা পড়ে গেছে।আর ধরা পড়বেই বা না কেন বলেন?
আমিও তো গাধা টা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম....
হ্যা এই গাধা টার হাত ধরেছিলাম আমি আজকে। অনেক আপন মনে হয়।হ্যা এই গাধা টার হাত টা ধরেই
এই জীবন টা কাটিয়ে দেবার ভরসা পাই......
..
...
ছেলেটির ডায়রি....
আজকে আমি চাইলে সবার প্রথমে ওকে উইশ করতে পারতাম কিন্তু করলাম না কারন শুধু উইশ করলে তো হবে না। ওর সাথে অনেক কথা বলতে হবে।তাই সবার শেষে উইশ টা করলাম। সে অনেক খুশি হয়েছিল কিন্তু এক্সপ্রেশন টা লুকিয়ে রেখেছিল আমি চোখ দেখে বুঝেছি।আনন্দে চক চক করছিল চোখগুলো। আর হ্যা আমারো জন্মদিন ছিল আজকে। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম নিজের জন্মদিনের কথা।কিন্তু ওর জানা ছিল আমাকে উইশ করেছে।শেষে আমাকে যখন কৌশলে ওর সাথে যাবার অফার করলো আমি তো বুঝতেই পারি নি।পরে বুঝতে পেরে ভো দৌড দিলাম... আর আমার আঁতেল টার মুখে সেই ভুবন ভুলানো হাসি টা দেখলাম।.....
প্রথম বারের মত... আর হ্যা আমার আঁতেল টা হাসলে অসম্ভব সুন্দর লাগে।ওর সাথে ওর বাড়ি অব্দি গেলাম। অনেক কথা বলার জন্য ঠিক করে রেখেছিলাম ওকে বলার জন্য কিন্তু ওকে দেখতে দেখতেই রাস্তা শেষ হয়ে গেল কখন টের ই পাই নি....
আমার সম্বিৎ ফিরলো তখন যখন ও আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে আমার কানে কানে বললো.....
"আমার হাত টা ছেড়ো না কখনো"
আমি কিছু বলতে পারি নি, তবে বাঙলা ব্যাকরণ এর একটা বাগধারা কে আজ বড্ড বেশি সত্যি মনে হচ্ছিল
আর সেটা হল....
"মেঘ না চাইতেই জল"...
আমি ওর কথায় শুধু মাথা নেড়ে সায় দিয়েছি। বাধ ভাঙা আনন্দে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না....
হ্যা আজ থেকে আঁতেল টা আমার....
ওকে বলতে পারি নি..
কিন্তু এখানে বলছি...
আমি আমার আঁতেল টাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি...
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আমার আঁতেল...
..
...
এভাবেই শুরু গল্প টার......
..
...
কয়েক মাস পর.....
আঁতেল মেয়েটি তার বাঁচাল ছেলেটিকে নিয়ে ক্যাম্পাসে বসে...
চলুন শুনে আসি কি কথা হচ্ছে....
.
:শুনো আমাদের বিয়েই টা আমরা আমাদের জন্মদিনেই করবো তাহলে তোমার জন্মদিন আমার জন্মদিন আর বিবাহ বার্ষিকী সব এক দিনে... সব এক সাথে পালন করবো তারিখ ভুলবার ভয় নাই....
:তাই হবে আমার পাগলী... ব্যাপার টা খারাপ বলো নাই...
:আচ্ছা শুনো আমাদের প্রথমে ছেলে হবে তোমার মতই কিউট & বুদ্ধিমান..
:নেভার... আমাদের প্রথমে মেয়ে হবে এবং সেটা তোমার মতই বিউটি উইথ ব্রেইন...
: নো.. আমাদের ছেলে হবে...
:আচ্ছা বাবা ছেলে মেয়ে সব হবে.... যত ইচ্ছা নিও... খাটুনি আমার কষ্ট তোমার... বলে হাসতে শুরু করলো...
:ফাজিল….. বলেই মেয়েটি ছেলেটিকে মারতে শুরু করলো...
আর ছেলেটি উঠে পালাতে লাগলো....
..
...
এভাবেই খুনশুটি ভরা আড্ডা আর ক্লাস লেখাপড়া সব সুন্দর ভাবেই চলছিল দুজনের....
প্রতিটা দিন নতুন কিছু স্বপ্ন বোনা আর খুনশুটিতে জীবন টাকে যেন স্বর্গ মনে হচ্ছিল দুজনের.....
যতক্ষন না মেয়েটির বাবা তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে.....
..
...
মেয়েটির বাবা তার মেয়েরর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে মেয়েটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে....
:আমি যা শুনলাম সেটা কি সত্যি?
:কি শুনেছেন সেটা তো আমি জানিনা?
:আমি শুনলাম তুমি কোন ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছো, সম্পর্কেও নাকি জড়িয়েছো। কি করে ছেলেটি?
:জ্বি আমার সাথেই মানে আমরা একসাথেই এক ডিপার্টমেন্টেই পড়ি।
: মানে ছেলে মাত্র অনার্স পড়ছে তোমার সাথে?
:জ্বি...
: এসব বাদ দাও সামনে মাসে আমি তোমার বিয়ে দিচ্ছি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ঢাকাতেই ভাল জব করে।
:আব্বু আমার লেখা পড়া টা শেষ করতে দাও।
:বিয়ের পরেও লেখাপড়া শেষ করতে পারবে।
:কিন্তু আব্বু আমি ওকে ভালবাসি... আব্বু মাত্র একটা বছর সময় দাও প্লিজ
:মা আমি ওই ছেলের জন্যই তোমার বিয়ে টা তাড়াতাড়ি দিচ্ছি।তোমার সেম ব্যাচের একটা ছেলের সাথে আমি তোমার বিয়ে কখনোই দিবো না। তুমি বিয়ের প্রস্তুতি নাও...
:আম্মুওওওও........
..
...
:বাবুনি...
আব্বু আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেলছে।পরের মাসে আব্বুর বন্ধুর ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারি নি। তুমি কিছু কর...
.
:আমার অনার্স শেষ করার আগে কি করতে পারি বল?
তুমি আমাদের অনার্স শেষ করা পর্যন্ত বিয়ে টা আটকাও প্লিজ..
.
:আমি কিছু করতে পারছি না বাবুনি...শুধু শুনে রাখো আমি শুধু তোমাকেই বিয়ে করতে চাই। আমাকে কেউ পেলে সেটা শুধু তুমি ই পাবা।অন্য কেউ পাবে না আমাকে।
.
:আমিও তোমাকে না পেলে জীবন রেখে লাভ নাই আমার।
..
...
এক মাস পর.....
..
...
আঁতেল মেয়েটির বিয়ে.....
বাড়ির ছোট মেয়ে সবার আদরের ছিল। বিয়ে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে। তাই মেয়ের বাবা অনেক খুশি।অনেক জাকজমকপুর্ন ভাবে বিয়ে টা দিচ্ছেন।
পুরো বাড়ি বিয়ের সাতদিন আগে থেকেই সাজানো।
চারিদিকে অনেক হইহুল্লোড়....
কিছুক্ষন আগে মেয়েটিকে পার্লার থেকে সাজিয়ে এনে ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। বউয়ের সাজে মেয়েটিকে অপ্সরীর মত লাগছিল।সবার চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। যেই দেখছে বউয়ের সৌন্দর্য এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
.
বরপক্ষ এসে গেছে...
বিয়ে বাড়িতে বাড়তি উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়ে গেল। সবাই বর দেখা নিয়েই ব্যস্ত। কি আনন্দ সবার মাঝে।সবার আদর আপ্যায়ন শেষে কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
ছেলের পক্ষের মতামত নিয়ে মেয়ের কাছে সবাই গেল মেয়ের মত নিতে।
মেয়ের তিন কবুল শুনা হলেই বিয়ে শেষ।
মেয়ের বাবা কাজি আর বিয়ের সাক্ষিরা সবাই মিলে মেয়ের রুমে গিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়.....
মেয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েছে মুখ দিয়ে ফেনা উঠছে....
বিয়ে বাড়ি মুহুর্তেই নিঃশব্দ হয়ে যায়... মেয়ের বাবা আর ভাই মিলে ধরা ধরা করি মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার রা তাকে মৃত বলে ঘোষনা দেয়....
..
...
মেয়ের বাবা প্রচন্ড আক্রশে ফেটে পড়ে....
থানায় গিয়ে ওই ছেলে কে তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে মামলা দায়ের করে.....
এবং পুলিশ কে রাজনৈতিক চাপ দিয়ে রাতের মধ্যেই ওই ছেলেকে জেল হাজতে আনার ব্যবস্থা করেন...
.
পুলিশ রাতেই মধ্যেই ছেলের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু ছেলের বাড়িরর পরিবেশ বেশ থম থমে। তাই পুলিশ সরাসরি বাড়ির ভিতরে যায়।গিয়ে দেখে বাড়ির সবাই মিলে লাশ নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করছে।পুলিশ গিয়ে ভাল করে সবাই কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে
"যে ছেলেটিকে তারা ধরতে এসেছে ছেলেটি মেয়েটির বিয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে বিষ পান করে আত্বহত্যা করেছে....
আর বিয়ের আগেই মেয়েটি বিষ পান করে আত্বহত্যা করেছে... "
ইন্সপেক্টর হাসছে এই কান্ড দেখে...
তখন কনস্টেবল তাকে জিজ্ঞেস করে স্যার হাসছেন কেন?
আর ছেলে তো মরে গেছে
এখন আমাদের কি হবে?
কিচ্ছু হবে না এইরকম রাজনৈতিক নেতাদের কে আমি ভাল করেই চিনি.. এরা এক বারের বেশি ফোন করে না..
কিন্তু স্যার চার্জশীট এ কি লিখবো?
লিখে দেন...
"এক থা রাজা...
এক থি রানী....
দোনো মার গায়ে....
খতম কাহানী...."
..
...
........................................সমাপ্ত........................................
..
...
কিছু কথা: সেম এজ রিলেশন গুলো অনেক অনেক অনেক বেশি কিউট হয়। অনেক বেশি খুনশুটি আর ভালবাসায় ভরা থাকে রিলেশন গুলো।অনেক আবেগ আর ভালবাসায় প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে উঠে এই সম্পর্ক গুলো। কিন্তু সেম এজ এর রিলেশন গুলোকে বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো টা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। বলছি না সেম এজ এর রিলেশন ভবিষ্যৎ নেই।তবে বলছি সেম এজ এর রিলেশন টা সংসার পর্যন্ত গড়ায় গড়ে ২%....
আর এমন অকাল পরিনতি হয় ৯৮% সম্পর্ক গুলোর।
প্রণয়ের যদি পরিনয় না হয় তাহলে অন্য জনের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েটা হয় প্রতিরাতে ধর্ষিতা।
সেম এজ কাপলদের জন্য রইলো অশেষ ভালবাসা।
ভালোবাসায় ভরে উঠুক সব কাপলদের জীবন....
..
...
উৎসর্গ: চুপচাপ মায়াভরা মুখের ডাগর ডাগর চোঁখের মেয়েটিকে......
..
...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪২