কোতয়ালী দরজা, বাংলাদেশের সীমানা থেকে
কোতওয়ালী দরজা এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রাচীন একটি নিদর্শন। কোতওয়ালী দরজাকে গৌড়ের সিংহ দ্বার বলা হয়। যা প্রাচীন গৌড়ের উপনগরী হতে মূল রাজধানীতে অনুপ্রবেশের একটিমাত্র মূল প্রবেশ পথ ছিলো । নগর পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ কোতওয়াল এর অনুকরণে এর নামকরণ করা হয়। এখানে নগরপুলিশ গৌড় নগরীর দক্ষিণ দেয়াল রক্ষা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।বালিয়াদীঘি ডানে রেখে সোজা উত্তর পশ্চিমে ভারত সীমানার মধ্যে অবস্থিত এই কোতওয়ালী দরজা। এটি সীমান্তের জিরো লাইন থেকে দেখা যায়।এটির ৩০ ফুট উঁচু এবং ১৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি খিলান পথ ছিলো। ফটকটির র্পর্ব পশ্চিমে শত্রুর উপর কামানের গোলা ছুড়ার জন্য বেশ কিছু ছিদ্র ছিলো। কোতওয়ারী দরজার মধ্যবর্তী রাস্তা ১৭ ফুট এবং ৪ ইঞ্চি। বর্তমানে খিলান ভেঙ্গে পড়েছে। এইট সম্পূর্ণরূরে গৌড়িয়া ইটের তৈরি।নগর রক্ষা দূর্গের ফটকগুলোর স্থাপত্য রীতির চেয়ে এই ফটকটির স্থাপত্য রীতি অনেক পূর্বের। ভিতরে এবং বাইরে প্রতিটি সম্মুখভাগে ৬ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট দুইটি করে মোট চারটি অর্ধবৃত্তাকার বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলোর প্রতি পার্শ্বে অলংকৃত স্তম্ভের উপর স্থাপিত সুচালো খিলানযুক্ত গভীর কুলাঙ্গী রয়েছে। সে তোরণ অভ্যন্তরে সশস্ত্র পুহরীদের আবাস কক্ষগুলি বিভিন্ন প্রকার নকশাযুক্ত কারুকাজ এবং পোড়া মাটির অলংকরণে সুসজ্জিত ।
এখানে কোন শিলালীপি না থাকায় কোতওয়ালী দরজা নির্মানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বেশ কিছু মত প্রচলিত আছে। তবে এসব মতের সবগুলোই বেশ গ্রহনযোগ্য। নিম্নে ৩ টি আলাদা মত এবং উদ্দেশ্য দেয়া হলোঃ
জেনারেল ক্যানিং হ্যামের মতে এটি সুলতান আলাউদ্দীন খলজীর মৃত্যুর পর গৌড় লখনৌতিতে দিল্লীর আধিপত্য কায়েমের সময় নগর রক্ষা প্রাচীর অভ্যন্তরে এই বিশাকায় তোরণটি নির্মিত হয়। এই মত সমর্থন করলে তোরনটি সম্ভবত ১২২৯ খ্রিঃ বা ৬২৭ হিজরী সনের কিছু পর নির্মিত হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়।
অন্যদিকে ডঃ দানির ধারণা মতে বাংলার সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুত শাহের আমলের প্রথমার্ধে পান্ডুয়া হতে গৌড়ে রাজধানী স্থানান্তর হওয়ার পর রাজধানীর নগর দ্বার হিসেবে এটি নির্মিত হয়।
আরেকদিকে এম আবিদ আলী খানের মতে ফটকটি গৌড়ের প্রাপ্ত সর্ব প্রাচীন মুসলিম লিপির তারিখের ১২৩৪ খ্রিঃ সুলতান ইলতাতমিশ এবং মুহাম্মদ আলাউদ্দীন খলজীর মৃত্যুর ১৩১৫ খ্রিঃ মধ্যবর্তী কোন সময়কার নির্মিত।
দারাসবাড়ি মসজিদের ইতিহাস
দারাসবাড়ি মসজিদ বা দারাসবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছোট সোনা মসজিদ এবং কোতোয়ালী দরজার মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরের সন্নিকটে অবস্থিত এটি বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্য কীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। মসজিদটির অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে। সোনামসজিদ স্থল বন্দর থেকে মহানন্দা নদীর পাড় ঘেঁষে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ রাইফেলস এর সীমান্ত তল্লাশী ঘাঁটি, এই ঘাটিঁর অদূরে অবস্থিত দখল দরওয়াজা। দখল দরওয়াজা থেকে প্রায় এক কি্লোমিটার হেঁটে আমবাগানের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে একটি দিঘী পার হয়ে দক্ষিণ পশ্চিমে ঘোষপুর মৌজায় দারাসবাড়ি মসজিদ এবং দারাসবাড়ি মাদ্রাসা অবস্থিত।
ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের সময় মুনশী এলাহী বখ্শ কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি আরবী শিলালিপি অনুযায়ী,১৪৭৯ সাল বা হিজরী ৮৮৪ সুলতান শামস উদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তারই আদেশক্রমে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এই মসজিদের নাম দারুস বাড়ী ছিল না। তখন ফিরোজপুর নামে মসজিদ ছিল। ১৫০২ সালে যখন সুলতান হোসেন শাহ্ কর্তৃক দারুসবাড়ী বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয় তখন অত্র অঞ্চলের নাম দারুসবাড়ী নামে প্রসিদ্ধ লাভ করে। ফিরোজপুর জামে মসজিদ নাম হারিয়ে দারুসবাড়ী নাম ধারন করে।
দর্স অর্থ পাঠ। সম্ভবতঃ একসময় মসজিদ সংলগ্ন একটি মাদ্রাসা ছিল। জেনারেল ক্যানিংহাম তার নিজের ভাষাতে একে দারাসবাড়ি বা কলেজ বলেছেন।দীর্ঘদিন মাটিচাপা পড়েছিল এই মসজিদটি। সত্তর দশকের প্রথমভাগে খনন করে মসজিদটিকে উদ্ধার করা হয়। মসজিদটি দীর্ঘকাল আগে পরিত্যাক্ত হয়েছে বর্তমানে চারপাশে গাছগাছালির ঘের। পরিচর্যার অভাবে এই মসজিদটি বিলীয়মান। এর সংলগ্ন সমসাময়িক আরেকটি স্থাপনা হলো দারাসবাড়ি মাদ্রাসা। দিঘীর এক পারে মসজিদ এবং অন্য পারে মাদ্রাসা অবস্থিত। আকারে এটি ছোট সোনা মসজিদের চেয়েও বড়।
ইট নির্মিত এই মসজিদের অভ্যন্তরের আয়তক্ষেত্র দুই অংশে বিভক্ত। এর আয়তন প্রায় ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি, ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। পূর্ব পার্শ্বে একটি বারান্দা যা প্রায় ১০ ফুট ৭ ইঞ্চি। বারান্দার খিলানে ৭টি প্রস্ত্তর স্তম্ভের উপরের ৬টি ক্ষুদ্রাকৃতি গম্বুজ এবং মধ্যবর্তীটি অপেক্ষাকৃত বড় ছিল। উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে উত্তর দক্ষিণে ৩টি করে জানালা ছিল। উত্তর পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজের জন্য প্রস্তরস্তম্ভের উপরে একটি ছাদ ছিল। এর পরিচয় স্বরূপ এখনও একটি মেহরাব রয়েছে। এতদ্ব্যতীত পশ্চিম দেওয়ালে পাশাপাশি ৩টি করে ৯টি কারুকার্য খচিত মেহরাব বর্তমান রয়েছে। এই মসজিদের চারপার্শ্বে দেওয়াল এবং কয়েকটি প্রস্তর স্তম্ভের মূলদেশ ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখানে প্রাপ্ত তোগরা অক্ষরে উৎকীর্ণ ইউসুফি শাহী লিপিটি এখন কোলকাতা জাদুঘরে রক্ষিত আছে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩৭