somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ৪র্থ পর্ব

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যুদ্ধের পরপরই রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে তোলা ছবিতে বুদ্ধিজীবীদের লাশ দেখা যাচ্ছে (সৌজন্যমূলক ছবি: রশীদ তালুকদার, ১৯৭১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রথম পর্ব
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ২য় পর্ব
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ৩য় পর্ব
১৯৭১ সাল এর বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস (পর্ব ২)
হত্যাকাণ্ডের যে বিবরণ পাওয়া যায়
ডিসেম্বরের ৪ তারিখ হতে ঢাকায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয় । ডিসেম্বরের ১০ তারিখ হতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হতে থাকে । মূলত ১৪ই ডিসেম্বর পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন হয় । অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখক সহ বাংলাদেশের চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরেরা জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যান । সেদিন প্রায় ২০০ জনের মত বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা হতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । তাদের চোখে কাপড় বেধে মিরপুর মোহাম্মদপুর ও নাখালপাড়া এবং রাজারবাগসহ অন্যান্য আরো অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । সেখানে তাদের উপর বিভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল । পরে তাদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল । এমনকি আত্মসমর্পণ এবং যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরেও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তার সহযোগীদের গোলাগুলির অভিযোগ পাওয়া যায় । এমনই একটি ঘটনায় ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখ স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান প্রাণ হারান । এর পেছনে সশস্ত্র বিহারীদের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় । নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ (শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস) হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে ।


জড়িত থাকা ব্যক্তিবর্গ গণ
পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী । আর তাকে তালিকা প্রস্তুতিতে সহযোগীতা এবং হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের পেছনে ছিল মূলত জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আল বদর বাহিনী । বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিলেন বদর বাহিনীর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ( অপারেশন ইন চার্জ ) এবং আশরাফুজ্জামান খান (প্রধান জল্লাদ)। ১৬ই ডিসেম্বরের পরে আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে তার একটি ব্যক্তিগত ডায়েরী উদ্ধার করা হয়েছে যার দুটি পৃষ্ঠায় প্রায় ২০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোয়ার্টার নম্বরসহ লেখা ছিল । তার গাড়ির ড্রাইভার মফিজুদ্দিনের দেওয়া সাক্ষ্য অনুযায়ী রায়ের বাজারের বিল এবং মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বদ্ধভূমি হতে বেশ কয়েকজন বুদ্ধজীবীর গলিত লাশ পাওয়া যায় যাদের সে নিজ হাতে গুলি করে মেরেছিল । আর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ৭১ সাল এর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন । তিনি অবজারভার ভবন হতে বুদ্ধিজীবীদের নাম ঠিকানা রাও ফরমান আলী এবং ব্রিগেডিয়ার বশীর আহমেদকে পৌঁছে দিতেন । তাছাড়াও আরো ছিলেন এ বি এম খালেক মজুমদার (শহীদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকারী) মাওলানা আবদুল মান্নান ( ডাঃ আলীম চৌধুরীর এর হত্যাকারী ) ।
হত্যার পরিসংখ্যান
বাংলাপিডিয়া হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা হলঃ
১। শিক্ষাবিদ - ৯৯১ জন ।
২। সাংবাদিক - ১৩ জন ।
৩। চিকিৎসক - ৪৯ জন ।
৪। আইনজীবী - ৪২ জন ।
৫। এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী ১৬ জন


১৯৭২ সালের জেলাওয়ারি শহীদ শিক্ষাবিদ এবং আইনজীবীদের একটি আনুমানিক তালিকা প্রকাশ করা হয় । সে মতে
নিহত বুদ্ধিজীবীদের তালিকাঃ
২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যারা হলেনঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

১। ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র)।
২।ডঃ মুনির চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)।
৩।ডঃ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)।
৪।ডঃ আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য)।
৫।ডঃ আবুল খায়ের (ইতিহাস)।
৬।ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য)।
৭।ডঃ সিরাজুল হক খান (শিক্ষা)।
৮।ডঃ এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা)।
৯।হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য)।
১০।রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য)।
১১।সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)।
১২।ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)।
১৩।এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)।
১৪।এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা)।
১৫।শরাফত আলী (গণিত)।
১৬।এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা)।
১৭।অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা)।
১৮এম এ সাদেক (শিক্ষা)।
১৯।এম সাদত আলী (শিক্ষা)।
২০।সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস)।
২১।গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস)।
২২।রাশীদুল হাসান (ইংরেজি)।
২৩।এম মর্তুজা (চিকিৎসক)।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা হলেনঃ
১ ।ডঃ হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)।
২। ডঃ শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)।
৩।মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)।

চিকিৎসক যারা হত্যার শিকার হনঃ

১।অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)।
২।অধ্যাপক ডাঃ আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)।
৩। অধ্যাপক ডাঃ শামসুদ্দীন আহমেদ।
৪।অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আলিম চৌধুরী
৫।ডাঃ হুমায়ুন কবীর।
৬।ডাঃ আজহারুল হক।
৭।ডাঃ সোলায়মান খান।
৮।ডাঃ আয়েশা বদেরা চৌধুরী।
৯।ডাঃ কসির উদ্দিন তালুকদার।
১০।ডাঃ মনসুর আলী।
১১।ডাঃ মোহাম্মদ মোর্তজা।
১২।ডাঃ মফিজউদ্দীন খান।
১৩।ডাঃ জাহাঙ্গীর।
১৪।ডাঃ নুরুল ইমাম।
১৫।ডাঃ এস কে লালা।
১৬।ডাঃ হেমচন্দ্র বসাক।
১৭।ডাঃ ওবায়দুল হক।
১৮।ডাঃ আসাদুল হক।
১৯।ডাঃ মোসাব্বের আহমেদ।
২০। ডাঃ আজহারুল হক সহকারী সার্জন ।
২১।ডাঃ মোহাম্মদ শফী দন্ত চিকিৎসক ।

আরো অন্যান্যরা হলেনঃ

১। শহীদুল্লাহ কায়সার সাংবাদিক ।
২। নিজামুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিক ।
৩। সেলিনা পারভীন সাংবাদিক ।
৪। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিক ।
৫। আ ন ম গোলাম মুস্তফা সাংবাদিক ।
৬। আলতাফ মাহমুদ গীতিকার ও সুরকার ছিলেন ।
৭। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত রাজনীতিবিদ।
৮। রণদাপ্রসাদ সাহা সমাজসেবক এবং দানবীর ।
৯। যোগেশ চন্দ্র ঘোষ শিক্ষাবিদ ও আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক।
১০। জহির রায়হান লেখক চলচ্চিত্রকার ।
১১। মেহেরুন্নেসা তিনি একজন কবি ছিলেন ।
১২। ডঃ আবুল কালাম আজাদ শিক্ষাবিদ ও গণিতজ্ঞ ।
১৩। নজমুল হক সরকার আইনজীবী ।
১৪। নূতন চন্দ্র সিংহ সমাজসেবক আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক ।
তথ্যসূত্রঃ বাংলা পিডিয়া, উইকি পিডিয়া, দেশের বিভিন্ন সংবাদ পত্র এবং অন্যান্য ওয়েব সাইট ।



সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×