কোটা প্রথা বাতিল করো নইলো মোদের গুলি কর
আর নয় প্রহসন কোটা প্রথার হবে মরণ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোটা মুক্ত ভাবনা
স্লোগানগুলো বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী তুলে ধরেছে। বিসিএস সহ সকল প্রকার কোটা প্রথা বাতিলের দাবীতে সারা দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন উত্তাল ঠিক সেই মুহুর্তে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ এই আন্দোলন কি নিয়ে শুরু হয়েছে নানার কথা।আর সেই প্রেক্ষিতে আমার কিছু মতামত তুলে
কোটা বিরোধী এই আন্দোলনের ভবিষৎ কোন দিকে যাবে তা বলা কঠিন তবে এইটুকু বলতে পারি এটা নিয়ে সম্মানিত মুক্তিযুদ্ধের স্কপক্ষের শক্তি ও বিপক্ষের শক্তি মধ্যে বেশ দরকষাকশি হবে। অপবাদ উঠবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে তোলা হবে নতুন প্রজন্মের বিরুদ্ধে। মাঠে নেমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরবেন তরুন প্রজন্মের কাছে। অরাজনৈতিক এই আন্দোলনকে গিলে ফেলবে রাজনীতি নামক এক ভয়ার্ত শব্দ। কেড়ে নেবে আন্দোলন প্রাণ যাবে অনেকের।
গত কয়েকদিনের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবারে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উত্তাল হাওয়া সরকার নিশ্চয় ভালো চোখে দেখবে না। যার ফলাফল ইতিমধ্যে ঢাকায় পড়তে শুরু করেছে ক্রমে ক্রমে অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও যে পড়বে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
একটি অংশ ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সমাবেশগুলোতে ইতিরকম বেয়াদবী শুরু করা হয়েছে। স্বাধীনতার এইসব অগ্রপথিকদের নিয়ে বাঙ্গ রচনা মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের তরুণরা করছে?
হ্যা আমি মানছি সাধারন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো ফায়েদা লুটানোর জন্য মহাব্যস্ত। তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অস্তিতিশীল পরিবেশ সৃষ্ঠি করতে চায়। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে আতুড় ঘরে কবর দিতে চায়। আমি ঐসব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করছি ‘‘ প্লিজ সাধারন শিক্ষার্থীদের এই দাবীকে নিজেদের ক্রেডিট ভেবে ভ্রষ্ট পথে পা বাড়াবেন না। আপনাদের আন্দোলন করার অনেক সুযোগ রয়েছে কিন্তু এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই। রাস্তায় তারা নেমেছে নিজের অসহায়ত্বে দয়া করে তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোটা প্রথা বাতিলের এই আন্দোলনকে নিজেদের ঘরের ফসল ভেবে কর্তন করতে যাবেন না।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলছি, আপনাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনকে কখনো অন্যর হাতে ছেড়ে দিবেন না। এটা গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর নয়। নিজেরে বিবেকের তাড়ণায় মেধার মূল্যায়নের এই পথ সূদূর এবং প্রাসঙ্গিক।
কোটা ব্যবস্থা মেধাবীদের জন্য গলার কাঁটা হেয়ে গেছে সেই সাথে দেশের সম্ভবণাময় এই প্রজন্ম অন্ধকারের ধোঁয়াশা জাল ভেদ করে আলোর পথ জয় করতে চায় আশা করি খুব শিগগির করবে। একসময় আমরা বলবো যে ‘একদা বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা নামক একটা জীবন্ত স্বপ্ন ভক্ষক ছিল”।।। আশা করি সেই দিন আর বেশি দূরে নেই এই সুযোগ আর সময় দেয়া ঠিক হবে না। দেশের সকল বিবেকবান আবেগের স্ফুলঙ্গ জ্বলে উঠেক গড়ে উঠুক নয়া দিগন্ত।
নারী শিক্ষায় উৎসাহ দেয়ার জন্য একসময় একটা রীতি ছিল কোঠা ব্যবস্থা। একই রকম কারণ ছিল অনগ্রসরমান পাহাড়ী জনপদের লোকজনের জন্য কোঠা ব্যবস্থা। কিন্তু এভাবে তো আর চলতে পারে না। কোঠা ব্যবস্থা যখন প্রর্বতন করা হয়েছিল তখন নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক কম। সেইক্ষেত্রে মেনে নিলাম নারী শিক্ষায় অগ্রসরের জন্য এটি একটি ভাল উদ্যেগ। কিন্তু এভাবে আর কতকাল চলতে দেয়া যায়?
সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে নারীর সংখ্যা আর পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান ( পুরুষ ৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার ও নারীর সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার)।
তাহলে কোঠা ব্যবস্থার আর প্রয়োজন আছে কি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো জানেন না দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর মেধা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। সর্বক্ষ্রেত্রে নারীর জয়জয়কার। বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দেখলে দেখা যায় ছেলে-মেয়ে সমান। মেয়েরা যদি পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিযোগী হতে পারে তবে চাকুরি ক্ষেত্রে নয় কেন?
তারপরও নারী দূর্বল সেই অজুহাতে কোঠা ব্যবস্থা চালু রেখে পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সঙ্কোচিত করার অর্থটা কি? রোকেয়ার প্রজ্বলন শিখা নারীরা ঠিকই পেয়েছে আর কোঠা ব্যবস্থার যাঁতাকলে পুরুষদের অবস্থা প্রায় ওষ্ঠাগত।
শুধু কি তাই?
এরপর আবার চালু আছে সম্মনীয় মুক্তিযোদ্ধা কোঠা। নানা দেশ স্বাধীন করেছে আর নাতি চাকুরি পেয়ে তা মূল্যায়িত হয়েছে। বা বেশ তো ভাল কথা কিন্তু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি এইসব পাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিল নাকি স্বাধীন, সার্বভৗম, দারিদ্রমুক্ত একটি সোনার দেশ চেয়েছিল?
আজকে যেভাবে কোঠা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করা হচ্ছে এইভাবে একটি দেশের মেধার মূল্যায়ন হতে পারে না। দেশের সর্ববচ মেধাভিত্তিক পরীক্ষা বিসিএসেও যে কোঠা বাবার আছড় পরেছে তা আজকের প্রিলিমিনারী ফলাফল দেখলে বুঝা যায়।
কোঠার ঠেলায় মেধা যে লুপ্ত প্রায় তা জাতি কি করে বুঝবে? হে বঙ্গমাতা এক আলোয় মানুষ করে তবে কেন এতো বৈষম্য? ছিন্ন হউক কোঠাব্যবস্থা ফিরে আসুক মেধার বার্তা।।।
(লেখাটি দেখে অনেক আপু হয়তো নারী বিদ্বেষী ভাবছে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে এটা কোন নারী বিদ্বেষী লেখা নয়। একান্ত কিছু অসলগ্ন বিষয় তুলে ধরেছি মাত্র)
স্বাধীন বাংলাদেশে সনদপ্রাপ্ত প্রায় ২ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সকল ক্ষেত্রে ৩০% কোটা আছে , কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিল তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কি কোন কোটা আছে?
হ্যা মানছি এই জয় ছিনতাই করতে অনেক কষ্ট হবে তবে কষ্ট যতই কঠিন হোক তার জয় আসবে গলা টিপে হত্যা করা হবে কোটা ব্যবস্থা।
মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ হয়তো আমরা শোধ করতে পারবো না কিন্তু তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কলুষিত করতেও পারবো না। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তারা কখনো কোন প্রতিদানের আশায় যুদ্ধ করেননি। তারা যুদ্ধ করেছেন এই দেশের মেধার মূল্যায়নের জন্য যখন পাকিস্তান এই দেশের মেধাবীদের কোন মূল্যায়ন করছিল না, চাকুরি ক্ষেত্রে যখন বৈষম্য তৈরি করছিল ঠিক তখনই তাদের মুক্তিযুদ্ধের পথে হেটে চলা শুরু হয়। নিশ্চয় তারাও চাইবে না যে তাদের কারণে ফের মেধাবীরা বৈষম্যের শিকার হবেন না? শুভ বুদ্ধির উদয় হোক সরকারের। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন শুধু কোটা পদ্দতি নয় এর বিকল্পে হিসেবে অন্য কিছু করা যায় কি না তা ভাবা দরকার। ঢালাও ভাবে কোন অভিযোগ নয় সুচিন্তিত মতামত ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে কোটা প্রথা বিলুপ্তির পথ সুগম হোক এই কামণা রইলো।