"মাঝবয়েসী প্রেম """
_______--মুস্তফা সুজন
সেই শৈশবে বয়স হয়ত অনুর্ধ্ব ১২ ;
হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্টে
প্রকৃতি চেনার দ্বারপ্রান্তে উপনিত।
বাবা সরকারী চাকরী করতো সে কালে ;
বাসায় এসেই বললো , সামনের মাসে তার চাকরীর স্থানান্তর!।
মাসের শেষেই গন্তব্য হলো বগা বন্দর।
নতুন বাসা নতুন সব পরিবেশ।
একই ফ্লাটে পাশে প্রতিবেশি আছে কিনা জানা হয়নি ;
এর মধ্যেই আমার স্কুল গমনাগমন শুরু হয়েছে।
বাবা কখন যেন বলেছিলো ,
পাশের বাসার হামিদ কাকার মেয়ে মোহনাও এখানে পড়ে ;
বয়সের ওজন কম, এত খোঁজ রাখার সময় হয়নি হয়ত ;
সে দিন মা ও বললো মোহনার নাকি এক রোল!
তোকে কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়ে পড়তে হবে।
মোহনাটা কে? কেমন দেখতে?
আর কেনই বা অপরিচিতার সাথে চ্যালেঞ্জ করবো?
বড্ড মেধাবী মেয়ে ও তোর সহপাঠীই তো!
বয়েই গেলো তাতে;
একদিন দরজা খুলতেই
বললো আমি মোহনার আম্মু ;
কিছুটা অবাক হলাম ;
তোমার আম্মা ডাকলো আমায় ;
প্লিজ ভিতরে আসুন না!
লক্ষ্য করলাম সাথে মোহনাই হবে হয়ত!
আলাপ চারিতার মাঝপথে
আমি মোহনা "
হ্যাঁ! আমি'''''''''''
আমি কাব্য!
ঐ মডেল স্কুলেই তো পড়ি'
তবে আমিও তো!
আমরা তবে সহপাঠী হয়েই আছি?
মোহনা বিদ্যুৎ চমকে হাসলো,
বয়সের লঘিষ্ঠতায় এর রহস্য খোঁজা দুঃসাধ্য
কি আশ্চর্শ!
ও যেন আমাকে অনেক আগে থেকেই চেনে। চোখে মুখে যেন এক স্বস্তির ছাপ ;
বললাম কি যেন বলতে চাও তুমি?
না ; বলছিলাম স্কুল পথে চলার কাউকে পেলাম।
রোজ আমাকে ডেকে নেবে তো?
সময় মত তৈরী থাকলে সমস্যা হবেনা হয়ত ।
একই ফ্লাটের প্রতিবেশি হিসেবে বেশ সখ্যতা পরিবারদ্বয়ে
তবে কেন অনুরোধ? যাওয়া যাক না একসাথেই ;
কাব্যকে লুকিয়ে দেখা হচ্ছে একদিন
পড়ছে কিনা কে জানে;
আড়ালে কে রে দাঁড়িয়ে
আংটি আমি """!আমি মোহনা
বাইরে কেন ঘরেই এসোনা।
এসে একটু কাছে বসোনা।
হঠাৎ চমকে মোহনা বললো,
কাব্য তোমার ব্যাগেই তো আমি রেখেছিলাম আমার কলম আর ফুলের মালা!
থাকনা ফুলের মালাটা সযত্নে রেখে দিবো মেরে তালা!
এ চেনা পথেই হাটছি দুজন।
সময়ের নিজস্ব স্রোতে আমরা এখন মোহনায় মিলিত
মোহনা হাজার দিনের পরিচিত
আমার স্মৃতিতে ;
কবে যেন শৈশবের খোলস ছেড়েছি এর মধ্যে টেরই পাইনি।
এখন আমি কিশোর সহজ সমীকরণে সেও কিশোরী।
জীবনাচরণে কিছু ভিন্নতা নতুনত্ব এসেছে বৈকী।
বয়ঃসন্ধিক্ষণে তুমি আমি!
ইদানিং রহস্যময় ভাবে কিছু লক্ষ্য করছি ;
একটা শূন্যতাকে অনুভব করছি বুকের পাজরে,
লালন করছি স্বপ্নে বিভোর সেই অনুভূতিগুলো।
মোহনা তোমারও কি একই অভিজ্ঞতা?
উত্তর আসল না সে দিন!
জানো মোহনা তোমার মুখে কাব্যবাবু ডাকে হৃদয়ে ঢেউ খেলে যায়।
অজস্র অনুভূতি আচড়ে পরে হৃদয়পৃষ্ঠে।
এক অদ্ভুত ভালোলাগা যেন বিচলিত করে আমার সত্তাকে।
কাব্যবাবু এ বয়সেই সরষে বোনা!
বুনতে দাও না এবার, দেখি তাতে দোষের কি
বলি বাবু চিন্তা কেন ঘুমাও নাকে মেখে ঘি।
শৈশব কৈশোর পাড়ি দিয়ে,
কত ফাগুন কত চৈত্র বর্ষা গেলো আমাদের হাত ধরে
একবার ও ফিরে দেখা হয়নি স্মৃতির আলপনা।
কত স্মৃতি ছেপেছি তার অন্ত নেই হয়ত।
সে দিন কলেজের প্রথম দিনে তোমার আবেদনময়ী আহবান আমি বুঝতে পেরেছি
লুকিয়ে লুকিয়ে আমার মত অনুভূতি তোমারও?
তবে কেন বলবে ভালোবাসিনি?
তুমিই আমার সেই সুহাসিনী।।
অনুভূতির হাটে হৃদয়ের বেচা কেনা নাই বা হলো
অদল বদল হলে কি দোষ বলো?
অমন করে বলো না!
কাব্য বাবু তুমি তো জানো আমি """""
তুমি অপ্সরী মায়াবিনী সুহাসিনী আমার নয়নে,
এ ভাবনায় বিভোর থাকি শয়নে স্বপণে।
ভালোবাসি!
হাজারো ফাগুনে তুমি আমি এক সাথে,
হতভাগা কপাল বুঝি
বাবা বলে চলো বাসা খুঁজি
মোহনা চলে যাচ্ছি এখান থেকে অনেক দূরে
তুমি বিনে আমার যাবে যে হৃদয় পুড়ে!
ভরসা রাখো প্রিয়া শক্ত করো হিয়া।
কথা দিলাম ভুলিবোনা আমি হেথা গিয়া।
একমাস পর একটা চিঠি আসছিলো মোহানার কাছে।
"""ভুলবনা তোমায় কোনদিন """
হাজার প্রতিক্ষা!
উত্তর আসেনি,
খোঁজ নিয়ে জানা হলো তারা সেখানে নেই আর ;
হায়রে আমার কপাল পুড়লো,
কিভাবে খোঁজ নিবো প্রিয়ার?.
কাব্যবাবু একবারও আমার খোঁজ নিলো না!
ফাগুন যায় ফাগুন আসে সে তো ফিরে আসে না!
দুর্ভাগ্যবশত একযুগে তাদের আর খোঁজ নেই
সমান অপরাধী দুজন।
প্রকৃতির নিয়মে দুজনই সংসারী
এখন তারা মাঝবয়সী!
শহরে আসলে কোথাও যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দর্শন হয় দুজনার।
কি দোষ ছিলো আমার কাব্যবাবু
কেন করলে অমন?
তবে কি দোষ আমার?
চিঠি দিয়েছি কত জানো?
জানতে পারলাম ও জায়গায় তোমরা নেই।
কত খুঁজেছি হদিস মেলেনি।
আজ কাল কবিতা লেখছি।
অশ্রুধারায় ঝড়েছে কত স্মৃতি!
কাব্যবাবু আবার চলোনা ফিরে যাই স্মৃতির মেলায়
বুনি নতুন স্মৃতি।
না এ হয়না মোহনা।
এখন আমরা মাঝবয়সী!
তবে কাব্যবাবু লিখোনা একটি মহাকাব্য ;
নাম দিও তার ""মাঝ বয়েসী প্রেম""
থাকনা মাঝবয়সী প্রেমের কথামালা মহাকাল ধরে।
পঁয়ত্রিশ উর্ধ্ব!
না হয় কলঙ্ক বইবো দুজন এ মাঝবয়সে!!!!