ডায়েরীর পাতাগুলো ক্রমশই উল্টে যাচ্ছি , কালো মলাটের এ ডায়রী খানার কম করে হলেও ১৯ বছর পেরিয়েছে । হলদেটে মলিন বিবর্ন পৃষ্ঠা গুলো যতই উল্টে যাচ্ছি, আমি আমার চিরো চেনা পুরনো সেই অতীতগুলোর পানে হারীয়ে যাচ্ছি। সে আমার শৈশব, কৈশরে ফেলে আসা যত সোনালী অতীত। এক যায়গায় এসে থমকে গেলাম-
তখন সদ্য এস.এস.সি পাশ করছি উদিয়োমান কৈশরের শেষ প্রহরে পা দিয়েছি সবে। সেদিন ছিলো রোববার, বাসায় একা আমি । রাত দশটা নাগাদ তুমি আসলে, অতঃপর বসলে। আমায় বললে একটা অংক কষে দিতে পারবে? আমি বিস্মিত ছোখে তোমার পানে তাকিয়ে বললাম- একিরে ভূতের মুখে রাম নাম! তুমিই কিনা অংকের জাহাজ আর সে কিনা আমার মতাে কু-ছাত্রের কাছে অংক বুঝতে এসেছো? তুমি দৃঢ় নির্বিকার চোকে বললে পারবে কি না? আমি থতমত খেয়ে দেখতে চাইলাম। তুমি বইয়ের প্রতিটা পৃষ্ঠা পরম যন্তে উল্টালে। আমার কেনো যেনো মনে হলো তুমি আমায় অলক্ষ্যে মৃদু চোখে দখছো। তোমার সেদিনের এক্সপ্লেশনটা সত্যিই এখনো ভাবায় আমায়। তুমি সেদিন সত্যিই কি অত রাতে আমার কাছে অংক শিখতে এসেছিলে! একসময় পৃষ্ঠা উল্টানো শেষ করে বললে এই দেখ এইটা। অংকগুলো আমি পারতাম, তাই তোমায় বুঝাতে বেগ পেতে হয়নি । তুমি অল্পতেই বুঝে নিলে । এতটা অল্পতে যে আমার কাছে মনে হয়েছিল তুমি আসলে অংকগুলো আগে থেকেই পারতে। আমি আজো এই ১৭ বছর পরওে তোমার সেদিনের সেই উত্তর গুলো খুজে বেড়াই। তুমি যখন একা অংক কষছলিে আমি তোমার পানে আনমনে তাকিয়ে ছিলাম। তোমার হরিনীর মতাে ডাগর চোখ, ভেযা গোলাপি ঠোট, থুতনির নিচের তিলটা আমায় বেশ আকর্ষন করছিলো। একবার ইচ্ছে করছিলো তোমার গালে আলতো করে একটা চুমু খাই । কিন্তু তুমি ঠিক কিভাবে নিবে সে ভাবতেই ইচ্ছেটা দমে যায়। সময়টা আজ থেকে প্রায় ১৭ বছররে পুরনো , শুনেছি তুমি দুটো সন্তানের মা । আর দেখো এই আমি দিব্যি মাষ্টার মশাই হিসেবে স্কুলে বাচ্ছাদের অংক কষেই বেড়াচ্ছি। দুর্ভাগ্য আমার নিজের সংসারের হিসেবটা আজো মিলেতে পারিনি।
(গল্পটা আমার “জীব্ন প্রবাহ” গ্রন্থ থেকে নেয়া)