পূজার বন্ধে হঠাৎ একটি বই চোখে পড়ে। তাও অনলাইনে। বইটির নাম- দ্যা টু ফেসেস অব আমেরিকান ফ্রিডম। আক্ষরিক বাংলা করলে দাঁড়ায়- আমেরিকান স্বাধীনতার দুই সুরত। প্রকৃত অর্থে আমেরিকান স্বাধীনতার দ্বিচারিতাও বলা যায়। বইটির লেখক আজিজ রানা। বোস্টন কলেজের আইন ও সরকার বিভাগের একজন অধ্যাপক। হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি করেছেন। এ বইটি মুলত: তার পিএইচিডি থিসিস। বইটি প্রকাশও করেছে হার্ভার্ড প্রেস। ২০১০ সালে। বইটি মূলত: ব্রিটিশ উপনিবেশীকরণের সময়কাল থেকে হালনাগাদ আমেরিকান আইনি ও রাজনৈতিক ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি দেখার একটি সংক্ষিপ্ত প্রয়াস। চারশো আটাশ পৃষ্ঠার এ বইটির যে জায়গাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে, তাহলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ধারণার দুই বিপরীত চিত্রের মুখোশ উন্মোচন। লেখক বলছেন, ঐতিহাসিক পরিক্রমায় দেখলে দেখা যাবে, আমেরিকার স্বাধীনতার দু’টি দিক রয়েছে। দু’টি ভিন্ন রূপ রয়েছে। এর একদিকে রয়েছে সাম্য ও স্বাধীনতা। অপরদিকে রয়েছে অন্যকে অধীন করে রাখা। পরাজিত করে রাখার প্রবণতা। সারা পৃথিবীতে আজ যে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিরামহীন যুদ্ধ’ পরিস্থিতি- লেখকের মতে এ পরিস্থিতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে আমেরিকার এ স্বাধীনতার দুই বিপরীত ধারণার। দুই বিপরীত চিত্রের। অর্থাৎ সাম্যের ধারণার বদলে অন্যকে অধীন করে রাখার ধারণাটাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বা পাচ্ছে। বইয়ের একেবারে শুরুতেই তিনি একটি পরিসংখ্যানও হাজির করেছেন। আমেরিকান অভিজ্ঞতায় স্বাধীনতা ও সাম্রাজ্য- শিরোনামের সূচনা অধ্যায়ে লেখক বলছেন, বর্তমানে আমেরিকা সারা দুনিয়াজুড়ে এক অতুলনীয় ক্ষমতা উপভোগ করছে। এ ক্ষমতা অর্থনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিক। ২০০৯ সালের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তিনি বলছেন, আমেরিকার সামরিক ব্যয় সারা পৃথিবীর সামরিক ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক সদস্য ছাড়াই পাঁচ লক্ষের বেশি সামরিক সদস্য বিশ্বের ১৫০টি রাষ্ট্রের (বিশ্বের মোট রাষ্ট্রের শতকরা ৮০ ভাগ) ৭১৬টি কেন্দ্রে নিয়োজিত রয়েছে। লেখক বলছেন, আমেরিকা এদের মূলত নিয়োজিত করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং আমেরিকার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দুর্বল রাষ্ট্রগুলির তালিকা তৈরির জন্য। ( দেখুন: পৃষ্ঠা-২)। লেখক বইটি শেষ করেছেন একটি বিপ্রতীপ কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যাশা দিয়ে। যেখানে তিনি বলছেন, আমেরিকার স্বাধীনতার ঐতিহ্যে যে মানবিকতা ও সাম্যের ধারণা রয়েছে, খুব ভালো হতো, সেটি যদি মূলধারায় আসতো। সেটি যদি বিশ্বব্যাপী সবার কাছে সমাদৃত করা যেত। লেখক আজিজ রানার এ প্রত্যাশা নিয়ে নৃবিজ্ঞানী তালাল আসাদের একটি মন্তব্য দিয়ে শেষ করতে চাই। আসাদ তার এক সাক্ষাতকারে বলেন, আজিক রানার প্রত্যাশার সাথে একমত হতে পারলে খুব খুশী হতাম। কিন্তু পুরোপুরি একমত হওয়া যাচ্ছে না। তার কারণ আমেরিকার ইতিহাসের সাথে বিশ্ব পুঁজিবাদের বিকাশেরও একটি যোগসূত্র রয়েছে। সুতরাং অন্যকে অধীন করার যে ধারণা তা বিশ্ব পুঁজিবাদ বিকাশের ইতিহাসের সাথে যোগসূত্রের ভিত্তিতেই দেখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫৪