somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

বাংলাদেশে ক্রিকেট: বিনোদন, নাকি অপচয়?

২৩ শে জুন, ২০২৪ রাত ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে বিনোদনের উৎসগুলি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন এবং হ্রাস পেয়েছে। এক সময়ে, বাংলা সিনেমা এবং উপন্যাস পড়া ছিল জনপ্রিয় বিনোদনের মাধ্যম। পরবর্তীতে, ক্রিকেট খেলা দেখা এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে এবং বিশেষ করে জাতীয় দলের খেলা দেখা একটি জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, ফুটবল বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি, যদিও এর ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। বাংলা নাটক এখনো কিছু নির্দিষ্ট দর্শকের কাছে জনপ্রিয়, তবে গল্পের মান এবং শালীনতার দিক থেকে এর মান হ্রাস পেয়েছে এবং এই শিল্প একটি হাইব্রিড সংস্কৃতির প্রভাবে পড়েছে।

বাংলাদেশে ক্রিকেট বর্তমানে প্রধান বিনোদনের উৎস হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এক সময়ে যেখানে ক্রিকেট সংক্রান্ত খবর পত্রিকার শুধুমাত্র বিনোদন পাতায় স্থান পেত, সেখানে এখন ক্রিকেট নিজেই একটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট এখন শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, বরং এটি জাতীয় পরিচয় এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। মানে আমি যদি বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচে ইংল্যান্ড কে সমর্থন করি তাহলে আমার জাতীয় পরিচয় আর বাংলাদেশী থাকবে না! আমাদের মধ্যে ঐক্য নষ্ট হয়ে যাবে!

বর্তমানে এই ধারণা রাখা হয় যে, ক্রিকেট খেলা না দেখলে বা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে না সমর্থন করলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন না এমন বিবেচনায় নেওয়া হয়। হ্যালো! ক্রিকেট স্রেফ একটি খেলা এবং বিনোদনের মাধ্যম মাত্র, এটি কারো জাতীয়তাবাদের পরিচয় নির্ধারণ করে না। ব্যক্তিগত পছন্দ এবং জাতীয়তাবাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।

বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা উপমহাদেশের অন্যান্য সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে অনন্য। বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তার অস্কার জয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সম্মান অর্জন করেছে। একটি বাংলা সিনেমার গড় দৈর্ঘ্য হল ২ ঘন্টা ১০-২০ মিনিট, যা দর্শকদের একটি সম্পূর্ণ গল্প উপভোগ করার সুযোগ দেয়। অন্যদিকে, একটি বাংলা উপন্যাস পড়তে গড়ে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে, যা পাঠকদের গভীর এবং বিস্তারিত অভিজ্ঞতা প্রদান করে। যদিও বাংলা উপন্যাস পড়ার অভ্যাস হ্রাস পেয়েছে, তবুও এর মূল্য অপরিসীম। আবার বাংলা নাটকের গড় দৈর্ঘ্য ৫০ মিনিট, যা দর্শকদের একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রাণবন্ত বিনোদন প্রদান করতে সক্ষম।

এখন ক্রিকেটের বিভিন্ন ফরম্যাটের কথা বললে: ১. টেস্ট ক্রিকেট: এটি সবচেয়ে দীর্ঘ ফরম্যাট, যা ৫ দিন পর্যন্ত চলে এবং প্রতিদিন প্রায় ৬ ঘন্টা খেলা হয়। ২. ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল (ODI): প্রতিটি দল ৫০ ওভার করে খেলে এবং একটি ম্যাচ শেষ হতে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা সময় লাগে। ৩. টি-২০ ক্রিকেট: সবচেয়ে ছোট ফরম্যাট, প্রতিটি দল ২০ ওভার করে খেলে এবং একটি ম্যাচ ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় নেয়।

অন্তর্জালের বিস্তারের ফলে আমরা এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সিনেমা, সিরিজ, এবং খেলাধূলা ঘরে বসেই দেখতে পারি। এই সুবিধা আমাদের বিনোদনের জগতকে আরও বিস্তৃত করেছে। তবে, সব বিনোদনের মাধ্যমের মধ্যে ক্রিকেটের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। নিয়মিত সিনেমা বা সিরিজ না দেখা সত্ত্বেও, ক্রিকেট নিয়ে যে উন্মাদনা এবং সময় নষ্ট করা হয়, তা বিদ্যমান। ক্রিকেট খেলা দেখার জনপ্রিয়তা কবে থেকে শুরু হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা বলা কঠিন, কিন্তু একটি খেলা বা বিনোদনের উৎস কি কারো জাতীয়াবাদ নির্ধারণ করতে পারে?

বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলাকে ঘিরে একটি উগ্র সরলীকরণের প্রবণতা বিদ্যমান। ক্রিকেট খেলাকে যদি কেউ শুধুমাত্র বিনোদন বা একটি খেলা হিসেবে দেখেন, তাহলে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া কোনো আপদের কারণ হওয়া উচিত নয়। একইভাবে, পাকিস্তানের ক্রিকেট দলকে সমর্থন করলে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে অভিহিত করাও উচিত নয়। অথবা, ইংল্যান্ড দলকে সমর্থন করে বলে কেউ উপনিবেশিক চিন্তায় বিশ্বাস করেন এমন নয়। এছাড়াও, বাংলাদেশের উচ্চ-চাপের কোনো ম্যাচে অন্য কোনো দেশের জার্সি পরলে অপমান করা হতে পারে, এবং এমনটি অতীতে ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।

হ্যাঁ, আপনি হয়তো প্রশ্ন তুলবেন, আমার ইচ্ছা, আমি সারাদিন ক্রিকেট খেলা দেখবো। সমস্যা নাই, আপনি সারাদিন ধরে ক্রিকেট খেলা দেখুন। আপনার জীবন, আপনারই তো ইচ্ছা, কিন্তু এই ইচ্ছা খুব বিলাসবহুল ইচ্ছা নয় কি? এবং সবারপক্ষে এমন বিলাসবহুল ইচ্ছা এফোর্ড করা কি সম্ভব?

দুটো প্রশ্ন

১. কেন এমন মনে হয় যে, দেশ যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায় ঠিক তখনই এদেশে ক্রিকেট খেলা শুরু হয়ে যায়!
২. আপনি তো ব্যক্তিজীবনে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে রাখেন না বা হতেও পারবেন বা হয়তো আপনার সে বয়সও নাই। তারপরেও দিনের পর দিন সময় নষ্ট করে এই ক্রিকেট খেলা দেখে কি শিক্ষা পান? একটি সিনেমা, সিরিজ, উপন্যাস সামান্য হলেও কিছু চিন্তার খোরাক সামনে রাখে। কিন্তু ক্রিকেট আপনাকে ঠিক কি উপহার দেয়?

কই! আমরা রোজরোজ কি সিনেমা বা সিরিজ দেখি? আমরা নিয়মিত কি কোন মাল্টিপ্লেক্সে যাই? আমরা নিয়মিত কি কোন উপন্যাস বা বই পড়ি? আমরা নিয়মিত কি কোন পিডিএফ পড়ি? আমরা নিয়মিত কি কোন পডকাস্ট শুনি? আমরা নিয়মিত কি বাংলা নাটক দেখি? আমরা সারাদিন ধরে কি ফুটবল খেলা দেখি? আমরা সারাদিন কি কোন স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে চোখ রাখি?

ডাটা কিনে নিজের পকেটের টাকা নষ্ট করে এবং নিজের সময় নষ্ট করে এরচেয়ে অবান্তর ঠিক কি হতে পারে! একজন ফুটবলপ্রেমীর যুক্তিও মাথায় ঢোকে কারণ তার হাতে গড় সময় ৯০ মিনিট। এর মধ্যে কোন এক দল জিতে যায়, ফুরে যায়। কিন্তু এই ক্রিকেট আপনার প্রোডাক্টিভিটি তে ব্যাপক সমস্যা কি তৈরি করছে না? আর ক্রিকেট দিয়ে জাতীয়তাবাদ নির্ধারণ করা! মানে যখন ক্রিকেট খেলা ছিলো না তখন আমরা বাংলাদেশী ছিলাম না। দেখুন, আমি ক্রিকেট খেলা দেখতে নিষেধ করছি না কিন্তু একজন সুস্থ মানুষ দিনের পর দিন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কীভাবে নষ্ট করতে পারে? কেন এখানে ইউরোপীয়ানরা নাই? চিন্তা করুন।

ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)
Also Read It On: বাংলাদেশে ক্রিকেট: বিনোদন, নাকি অপচয়?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২৪ রাত ২:২২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×