তুই, তুমি কিংবা আপনি সম্বোধন বাংলা ভাষায় নির্দিষ্টতা নিয়ে আসে । অন্যান্য ভাষার চেয়ে হয়তো বাংলা ভাষার মধুরতা এই কারণেই অনেক বেশি । আমার খোলা চিঠির প্রেরককে আমি নিরপেক্ষ সম্বোধন হিসেবে আপাতত তুমি করেই বলছি, কারণ আমি চাই যেন এই চিঠিতে লিঙ্গ, সম্পর্ক এবং বহিঃপ্রকাশগুলো সব অস্পষ্ট থাকুক । ভাবার অবকাশ নেই যে এই চিঠির সূচনা কিংবা সমাপ্তি হয়তো রহস্য কিংবা কৌতূহলের ভরা-জমাট কিছু হবে । আমি জানি না তবে হয়তো আমার লেখায় যা আসবে পরবর্তীতে সেই কথাগুলো আমার ঐ অন্যতম প্রিয় মানুষটার কথা ভেবেই আসবে, এটার নিশ্চয়তা অনায়াসে দিতে পারি আমি । যাই হোক, ভণিতা না করে, আসল কোথায় আসি ।
তুমি হয়তো দেখে থাকবে যে আমি সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি ধীরে ধীরে । এখানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে কিছু ভুল, ঐসমস্ত ভুলের শাস্তি, পরিবেশ, আশেপাশে থাকা অবিবেচক কিছু মানুষ আর হয়তো সময় নিজেই । তুমি সবসময়ই নিজেকে খোলসবন্দী করে রাখতে পছন্দ করো । আশেপাশের অবিবেচক মানুষগুলোই তোমার অনেক প্রিয় । রাগ, দুঃখ, আবেগ, কষ্ট, কান্না ইত্যাদি বহিঃপ্রকাশগুলো তোমার কাছে বরাবরের মতই ঠুনকো । তুমি ভাবো, ভাবো বৃহত্তর কিছু, কিন্তু পরিধি বা সীমার বাইরে গিয়ে কিছু করার সাধ্য তোমার নেই । তুমি নিজেকে যাচাই করো প্রতিনিয়ত । যাচাই করো তাদের সাথে তুলনা করে, যারা তোমাকে অনেক আপন ভেবে অতিরিক্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটায় নিজ থেকে । তাই তো আপন-পর চেনার কষ্টটুকু না করে একাকী থাকতেই ভালোবাসো তুমি ।
আচ্ছা, এতটা সময় পেরিয়ে এসেও কি আমাকে তোমার কিছু বলার নেই ? কিছু প্রশ্নের উত্তর কি নেয়ার নেই ? যেই প্রশ্নগুলো আমি নিজেকেও নিজে করেছি অনেকবার, উত্তর সাজিয়েছি কিন্তু তুমি ফিরে আসোনি বলে সেই উত্তরগুলোর উপর ধূলা জমা হয়েছে । আমাকে তুমি অনেকবার ডেকেছ, জানি । কিন্তু সাধারণ অন্য কারও থেকে সেই ডাক কেমন যেন ব্যতিক্রম । আমি তাই শুনতে পাইনি । তাই হয়তো উত্তরও দেয়া হয়নি । আচ্ছা, অন্য কারও মন্তব্য শুনে নিজেকে দাড় করানো কি ঠিক ? নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্রোতে গাঁ ভাসিয়ে দেয়া কি ঠিক ? কেমন যেন সমীকরণ সব মিলে যাচ্ছে । আমার করে আসা পুরনো ভুলগুলো এখন তোমার অপেক্ষায় ।
তুমি কি জানো এখন কেন তোমার ডাকে আমি সাড়া দিচ্ছি না ? জানো কি, তোমার ছায়া থেকেও অনেক দূর দিয়ে হাঁটছি ? জানার সেই চোখটা তো তুমি ইচ্ছে করেই বন্ধ করে রেখেছ, জানবে কি করে ? আমি আর সেই আগের মত নেই । এখন আমার প্রচণ্ড ব্যাথা । ব্যাথাগুলো তৈরিও হয়েছে আস্তে আস্তে অনেক অনেক কষ্ট জমা হয়ে । তবে তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমার আজীবনের । অনেক আপন কেউ যখন রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখে, সেই কাঁটা চোখে ফুটে চোখ পরিস্কার করে দেয়, খুলে দেয় মতান্তরের দরজা । আমি এখন আর আগের মত নিঃশ্বাস নিতে পারি না । আমার আশেপাশেও এখন অনেক অপরিচিত লোকজন । তারা আমাকে কাছে ডাকে, কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার অনুমতি আমার হৃদয় আমাকে দেয়না । এক তোমার আপন হতে গিয়ে আমি বাকী সবাইকে হারিয়েছি । আর আজ ......... থাক, সে অনেক পুরনো কথা, তাই না ?
জানো হয়তো, আমার বুক ভেঙ্গে এখন শুধুই কান্না আসে । একটি ভুলের শাস্তি যে আপনকে হারানোর মত এত উচ্চ হতে পারে, তা আমার জানা ছিল না । এখন আর হৈ-হুল্লুড়ের মধ্যে আর আমার যাওয়া হয়না । অতীত বড়ই নিষ্ঠুর । এই অতীতকে পিছনে ফেলেই আমাকে আমার ভবিষ্যতের পিছনে ছুটতে হবে । তোমাকে বলা হয়নি কিন্তু পশ্চাদপদতার কারণগুলোকে আমি এখন উপেক্ষা করতে শিখে গিয়েছি । হ্যাঁ, আমি এখন একাকী বাঁচতে শিখে গিয়েছি । অনেকগুলো কথা যেগুলো তোমাকেই শুধু বলেছি আজ অনেকেই জানে । গোপনীয়তার যে সংজ্ঞাগুলো তোমার কাছে ঠুনকো, সেগুলোও আমাকে পরাজিত করতে পারেনি । পুরোপুরি মাথা উঁচু করে না হোক, কমপক্ষে মাথাটা না নুইয়ে এখন হাঁটতে পারি অনায়াসে ।
জানি, তোমাকে হয়তো আশেপাশে দেখতে পাবো না আর কয়েকদিন পরেই । আমার আসল সংগ্রাম শুরু হবে তখন থেকেই । নিজ সত্তা, পুরোপুরি নিজের সত্তা তৈরি করার যে নিরন্তর সংগ্রামের জন্য আমি ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করছি, সেটি আমি তোমার থেকে গোপনই রাখবো । আসলে জানোই হয়তো, সকলের চোখে ছোট হয়ে যাওয়ার যে কষ্ট হয়, তার থেকে বহু লক্ষগুণ কষ্ট বেশি হয় যখন আমরা নিজেদের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাই ।
লেখাগুলো যদি অজান্তে কোনদিন তোমার চোখে পড়ে, তাহলে পড়ো । একাকী, নির্জনে । তোমার চোখে আমি যেমনই হই না কেন, আমার চোখে তুমি ঐ মানুষটিই থেকে যাবে চিরদিন, যেরূপ তোমাকে দেখাবার মত তোমার কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল ।
ইতি
তোমারি চির শুভাকাঙ্ক্ষী
একজন ব্যক্তি, যাকে তুমি চিনতে