একা একা মার্কেট করতে আমার ভালো লাগে না । না, এইজন্য না যে আমি খুব একাকী বোধ করি, এই কারণে যে আমি কনফিউজড হয়ে যাই । যা দেখি, তাই ভালো লাগে । এর একটা উদাহারণ দিই । গত রোজার ঈদের দুই সপ্তাহ আগে এরকম বাসা থেকে একা একা মার্কেটে গিয়েছিলাম । উদ্দেশ্য দুইটি প্যান্টের কাপড়ের পিস কেনা । আম্মু সাথে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি আম্মুকে না করেছি । কেন, আমি বড় হইছি না ? এখন থেকে যা কিনি, সব একা একাই কিনবো । তো এই চিন্তা করেই দোকানে যাই । আর গিয়ে কাপড়ের যেই পিস দেখি, সেটাই ভালো লাগে । কিন্তু নিতে তো হবে দুই পিস, সব তো আর নেব না । তো একটা কালো কালারের তেলা একটা কাপড়ের পিস নিলাম আর আরেকটা কোনরকম । আমার হিসেবমতে, অনেকটা বিশ্বজয় করে নেবার মত ব্যাপার এটি । তো বাসায় এসে সেই কাপড়ের পিস দেখে আম্মু আর বোনগুলোর সে কি হাসাহাসি । আমি অবশ্য জেদ করেই ঐ কাপড় আর না বদলিয়ে ঐটা দিয়ে প্যান্ট বানাই । কিন্তু দুই মাস পরেই দেখি, প্যান্ট ছেঁড়াও সারা । তো সেবারের মত সিদ্ধান্ত নিলাম এবার থেকে আম্মুকে নিয়েই যাবো, বড় হয়েছি তো কি হয়েছে । আম্মুর কাছে তো আমি সেই ছোটই । কিন্তু এবারও কুরবানির ঈদের আগে আম্মুর একটু ব্যস্ততার কারণে একা একা মার্কেট করতে বের হলাম । আসলে কাহিনী কিন্তু এটা না, কাহিনী আরও মজার ।
মার্কেটে এসেই ঢুকলাম একটি কাপড়ের দোকানে । উদ্দেশ্য ভালো কোন পাঞ্জাবী থাকলে দেখা । ঐ দোকানে শুধু ছেলেদের না, মেয়েদের কাপড়ও পাওয়া যায় । তো পাঞ্জাবী দেখতে দেখতেই হঠাৎ চোখ পড়লো দুইটি মেয়ের দিকে । তারা দোকানের কাছে কোন একটি কাপড়ের দাম জিজ্ঞেস করছিল । দোকানী হয়তো দাম বেশি বলেছে, এই কারণেই মেয়ে দুইটি দেখলাম ঐ দোকান থেকে বেরিয়ে গেল । মেয়ে দুইটির পিছু নেবার ইচ্ছা জাগলো মনে । তো যেই ভাবা, সেই কাজ । এভাবে তাদের পিছন পিছন প্রায় আট-দশ দোকান ঘুরে ঘুরে যখন হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আবিস্কার করলাম যে আসলে ওদের কিছুই কেনার ইচ্ছা নেই । খালি দাম শুনে বাজার যাচাই করাই হল উদ্দেশ্য । হঠাৎ মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসলো । ওদের সাথে কথা বলার । যেই ভাবা, সেই কাজ ।
- এই যে শুনছেন ? (আসলে যেই মেয়েটিকে দেখে বেশি ভালো লেগেছে, তার সাথেই কথা বলতে এগিয়ে গেলাম)
- (মেয়ে দুইটিও হঠাৎ আমার ডাক শুনে অবাক হয় কিন্তু ঐ মেয়েটিই ডাকে উত্তর দেয়), জি, আমাদের বলছেন ?
- হ্যাঁ, বিশেষ করে আপনাকে ।
- আমাকে, মানে, বুঝলাম না তো । আমি তো আপনাকে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়েনা । আচ্ছা, আমরা কি পূর্বপরিচিত ?
- না, পূর্বপরিচিত না । কিন্তু কথা বললে এখন পরিচিত হওয়া যাবে সহজেই ।
- কিন্তু অপরিচিত কারও সাথে কথা বলাটা কি ঠিক হবে ?
- আচ্ছা, ওসব বাদ দেন । একটা কথা সরাসরি জিজ্ঞেস করি, আপনার কি রিলেশন আছে ?
- সরি, আমি আপনাকে বলবো কেন এই কথা ?
- আহা, বলুন না, প্লিজ ।
- (মেয়েটি অত্যন্ত বিরক্তির সাথেই যেন উত্তর দিল) না, নেই ।
- ওহ, তাইলে তো আমার কাজ হয়ে গেছে ।
- কাজ হয়ে গেছে মানে ?
- মানে, আপনাকে আমার ভালো লেগে গেছে । আমার সাথে রিলেশন করবেন ?
- (মেয়েটি এবার যেন টাশকি খাইয়া পইড়া যায় এমন) সরি, কি বললেন ?
- কেন, শুনতে পাননি ? মানে আপনাকে দেখে লাভ এট ফাস্ট সাইট হয়ে গেছে । আপত্তি না থাকলে আমরা তো রিলেশন করতেই পারি ।
- (এবার মেয়েটি একটু সহজ হয়ে) কিন্তু আগে তো আমাদের নিজেদের পরস্পরকে চেনার দরকার, তাই না ? তাছাড়া, কিছু মনে করবেন না, কেন জানি আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমাদের সমবয়সী হবেন । আর তা হয়ে থাকলে আমি একেবারেই নট ইন্টারেস্টেড ।
- আমি একটি নামকরা সরকারী ইউনিভার্সিটিতে থার্ড ইয়ারে আছি । আমার বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী । আর ভাইবোন সব মাশাল্লাহ । এই তো আমার পরিচয় । চলবে না ?
- কি থার্ড ইয়ারে, সরি ভাইয়া, কিন্তু আপনাকে দেখলে না সেটা মনে হয়না ।
- (এবার আমার টাশকি খাওয়ার পালা) সত্যি ? হয়তো । আমি জানি না ।
এতক্ষণ পর মুখ খুললো পাশে থাকা মেয়েটি ।
- ভাইয়া, আপনি যেন কোন ইউনিভার্সিটির কথা বললেন ? আরে, ঐ ইউনিভার্সিটিতে তো আমার ভাইয়াও পড়ে, তাও আবার থার্ড ইয়ারেই তো ।
- (আমি এবার ভীষণ অবাক হয়ে, অনেকটা ঢোক গিলতে গিলতে) ওহ, তাই । কে, বল তো ? কোন ডিপার্টমেন্ট ?
- ঐ যে অমুক , তমুক ডিপার্টমেন্টে পড়ে । আর আপনি তো চিনবেন । ভাইয়া তো তার ডিপার্টমেন্টে ফাস্ট বয় ।
(হঠাৎ ধরা খেয়ে অবস্থা খারাপ আমার, এবার আমার পালানোর পালা) ইয়ে মানে । আপুরা । আমি তো মজা করছিলাম । তোমরা কিছু মনে করোনি তো ? যাই, হ্যাঁ, আবার হয়তো দেখা হবে । বাই । বলেই পিছন ফিরে জোরে হাঁটা শুরু করলাম ।
পিছনদিক থেকে কেন জানি মনে হল যে মেয়েদুটির হাসির শব্দ শুনতে পেলাম ।