[ এটি একটি সিরিজ গল্প ]
বেলাল জোয়ার্দারের জীবনের গল্প – ১
বেলাল জোয়ার্দারের জীবনের গল্প – ২
শেষ পর্যন্ত রুস্তমকে হাসপাতালে নেয়াই লাগলো । ডাক্তার বলেছে মাথায় নাকি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে সে । এই তিনদিন হয়ে গেলো কিন্তু এখনও জ্ঞান ফিরেনি তার । রুস্তম এমনিতে খুব শক্ত শরীরের মানুষ । সহসা সে অসুস্থ হয়না । সর্বশেষ সে কবে অসুস্থ হয়েছিল তা ঠাউর করা মুশকিল বটে । রুস্তমকে নিয়ে আসলে এই তিনদিন অনেক দৌড়াদৌড়ি করছে সবাই । করিম জোয়ার্দার তো অফিসে ছুটিই নিয়ে নিয়েছে এক সপ্তাহের জন্য । একদিক থেকে তার জন্য ভালোই হয়েছে বেলাল জোয়ার্দার মানে তার প্রিয় এই বড় ভাইটির সাথে তার যে এত সময় কাটানোর ইচ্ছা, তার কিছুটা হলেও পূরণ হবে । কিন্তু রুস্তমের এই অবস্থা নিয়ে সবাই চিন্তিত । বিশেষ করে মিসেস নাজমা জোয়ার্দার এই তিনদিন হাসপাতালে এতটা দৌড়াদৌড়ি করছেন যে বাসায় বাচ্চাগুলোকে ভালো করে দেখাশুনাও করতে পারছেন না । আসলে রুস্তম মিসেস নাজমা জোয়ার্দারের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে এই কয়দিনে । রুস্তম মিসেস নাজমা জোয়ার্দারকে নিজের বড় বোন বলে ডেকেছে । তাইতো ভাইয়ের এমন কষ্টে বোন ভালভাবে ঘরে শান্তিতে থাকতে পারছে না । বেলাল জোয়ার্দারের যে আরও দুইজন চাচাতো বোন এবং দুইজন চাচাতো ভাই ঢাকায় থাকে তারা সবাই রুস্তমকে দেখতে কাল হাসপাতালে এসেছিল । অবশ্য কালই সবাই চলে গেছে । ডাক্তার এও বলেছে সম্ভবত আজকেই রুস্তমের জ্ঞান ফিরে আসবে ।
বিকেলের দিকে রুস্তমের জ্ঞান ফিরলো । তবে ভালভাবে হুশ ফিরেনি । সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঠিকি কিন্তু তাকানোর ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে কাউকে চিনতে পারছে না । জ্ঞান ফেরার পর ডাক্তার এসে একবার দেখে গেছে । কয়েকটি ঔষুধ লিখে দিয়ে গেছে । এই তিনদিন যেহেতু রুস্তম কোন ভারি খাবার খেতে পারেনি তাই ডাক্তার বলে গেছে খাবার খাওয়ার পর এই ঔষুধগুলো খেতে । রুস্তমকে এখনকিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই । করিম জোয়ার্দার একবার অবশ্য ভেবেছিল পুলিশকে খবর দেয়া যায় কিনা কিন্তু ভালভাবে সবকিছু না জেনে পুলিশকে ডাকা বোকামি হবে, সেইটা করিম জোয়ার্দারকে বুঝিয়ে বলেছিল বেলাল জোয়ার্দার । এইটি একটি প্রাইভেট হাসপাতাল । অনেক খরচ । এই তিনদিনে প্রায় পঁচিশ হাজার টাকার মত খরচ হয়ে গেছে । খাবার খরচ বাদেই । রুস্তমকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে বেলাল জোয়ার্দারের ইচ্ছাতে । অবশ্য কেউ অন্য কিছুই বলেনি মানে সরকারি হাসপাতালে নেয়ার কথা বলেনি ।
পরেরদিন সকাল ১১ টার নাগাদ পুরোপুরি হুশ ফিরে পেল রুস্তম । সবাই বিশেষ করে মিসেস নাজমা জোয়ার্দার তাকে তড়িঘড়ি করে আসল ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করলো । কিন্তু রুস্তম যা বললো তাতে তো সবার আক্কেলগুড়ুম । আসলে আর দশ-পনের দিন পরেই ঈদ-উল-আযহা মানে কুরবানির ঈদ । তাই এখন থেকেই সবাই গরু-ছাগল-উট-দুম্বা কিনায় ব্যস্ত । তো রুস্তম যখন রিকশা ডাকতে রিকশাস্ট্যান্ডে পৌছায় তখন দেখে সেখানে কোন রিকশা নেই । তাই সে একটু সামনে এগিয়ে যাবার চিন্তা করে । কিন্তু একটু সামনে যেতেই সে দেখতে পায় যে একটি রাগী গরু দড়ি ছিঁড়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে । এমনকি গরুর সাথের লোকজনও গরুকে সাম্লাতে হিমসিম খাচ্ছে তথা ব্যর্থ হচ্ছে । গরুর ভয়তে রুস্তম পিছন দিকে দৌড় মারতে উদ্যত হয় কিন্তু পিছন ঘুরতেই হঠাৎ একটি ইটের সাথে তার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে । এরপর কি হয়েছে তার আর মনে নেই । এই কথা শুনে বেলাল জোয়ার্দার ছাড়া বাকী সকলেই জোরে হেসে উঠলো । শুধু বেলাল জোয়ার্দার মিটমিট করে হাসতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো কি তেজি গরু রে বাবা, গ্রামের ছেলেকেই নাকানিচুবানি খাওয়ালো । তারমানে সবাই ব্যাপারটা যতটা সিরিয়াস ভেবেছিল আসলে ততটা সিরিয়াস নয় । সবাই যেন হাফ ছেড়েই চিন্তা থেকে বাচলো ।
(চলবে)
পরিশেষে আমার পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই ঈদ-উল-আযহার অনেক অনেক শুভেচ্ছা ...... এই ঈদ আপনার জিবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি আর সাফল্য ... ঈদ মোবারক