somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেলাল জোয়ার্দারের জীবনের গল্প – ২

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ এটি একটি সিরিজ গল্প ]

বেলাল জোয়ার্দারের জীবনের গল্প – ১

করিম জোয়ার্দারের বাসায় আছেন অনেক দিন হল । শহরের হাওয়া আর জলবায়ু তাকে ক্লান্ত করে তুলেছে । এতদিন যে ঢাকাতে থাকতে হবে তা আগে জানতেন না । কিন্তু কি আর করার, ভাইটি তাকে যেতেই দিচ্ছে না । ওদিকে বউমা মানে নাজমা জোয়ার্দার মানে করিম জোয়ার্দারের স্ত্রী তো আরও লক্ষ্মী । কখন কি লাগবে, একটু পর পর এসেই জিজ্ঞেস করে যায় । তার আর রুস্তমের থাকার জায়গা করে দেওয়ার জন্য তাদেরকেও কষ্ট করতে হচ্ছে । ছোট ফ্লাট । মাত্র দুইরুম আর একটি ডাইনিং । তিনি আর রুস্তম এক রুম দখল করে আছেন তাও এক সপ্তাহ হয়ে গেল । তাই তো করিম জোয়ার্দারের বাসার চারজন কষ্ট করে ঐ এক রুম আর ডাইনিংয়েই নিজেদের সয়িয়ে নিয়েছে । না, এভাবে তো চলে না । এরা রাজী না হলেও বেলাল জোয়ার্দার সিদ্ধান্ত নিলেন, আর না । দুইদিনের মধ্যেই তিনি গ্রামে ফিরে যাবেন । কিন্তু কথাটা তার ছোট ভাই আর বউমাকে কিভাবে বলবেন তাই নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন । আবার এদিকে এতদিন ধরে রুস্তম বায়না করছে শহরে এসে সে শহর ঘুরে দেখতে পারলো না । তাকে যাবার আগে শহর ঘুরাতেই হবে । আসলেই তো । তার না হয় শখ না থাকতে পারে কিন্তু রুস্তম তো এখনও ছোট মানুষই । এতদিন আলসেমী করে বাইরে বের হননি বেলাল জোয়ার্দার কিন্তু আজ তার মনে হল রুস্তমকে নিয়ে একটু বাইরে বের হওয়ার দরকার । করিম জোয়ার্দার অনেকদিন আগে থেকেই বেলাল জোয়ার্দারকে ঢাকা শহর ঘুরাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল । এমনকি সে অফিস থেকে তিনদিনের ছুটিও নিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেলাল জোয়ার্দার রাজী হয়নি বলে আর বের হওয়া হয়নি । কিন্তু আজ নিজেও অনুভব করছেন একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা উচিৎ ।

রুস্তম মিসেস নাজমা জোয়ার্দারকে রান্নাঘরে সাহায্য করছিল । বেলাল জোয়ার্দার রুস্তমকে ডাক দিলেন । রুস্তম বেলাল জোয়ার্দারের ডাকে সাড়া দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল । বেলাল জোয়ার্দার হাসিমুখে রুস্তমকে বাইরে যাবার কথা বলতেই সে রাজী হয়ে গেল । বেলাল জোয়ার্দার নাজমা জোয়ার্দারকে বাইরে যাবার কথা বলতেই সে চিন্তিত হয়ে গেল । আসলে এই চিন্তা যুক্তিযুক্ত । বেলাল জোয়ার্দার ঢাকা শহরে তেমন কোন জায়গা চিনেন না । তাছাড়া একা একা যেন তিনি বের না হন এই কথা করিম জোয়ার্দার নাজমা জোয়ার্দারকে বলে গেছেন । কিন্তু বেলাল জোয়ার্দার সবসময় এক কথার মানুষ । এখন নাজমা জোয়ার্দার তাকে বাইরে যাবার জন্য মানা করলে জানা কথা যে তিনি শুনবেন না । কি আর করার । নাজমা জোয়ার্দার নিজে যতটুকু ঢাকা শহর চিনেন ততটুকুই বেলাল জোয়ার্দারকে ব্যাখ্যা করে চিনিয়ে দিলেন । এদিকে রুস্তম মনে মনে খুবই খুশি । হোক না, এতদিন পর । অবশেষে সে বাইরে কোথাও অচেনা জায়গায় ঘুরতে যেতে তো পারবে ।

কিছু হালকা খাবার খেয়ে দুইজন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন । বেলাল জোয়ার্দার মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন রুস্তমকে নিয়ে তিনি জাতীয় জাদুঘর, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, নভোথিয়েটার এই কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখাবেন । তিনি ঢাকা শহর ভালো করে না চিনলেও এতটুকু জানেন যে ঢাকা শহরে যদি বাসে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায় তাহলে সহজেই যাওয়া যাবে । করিম জোয়ার্দারের বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড প্রায় দুই কিলোমিটার । তাই বাসা থেকে বেরিয়েই গেটের সামনে দাড়িয়ে তিনি রুস্তমকে বললেন রিকশা ডাকতে । তার কথামত রুস্তম প্রায় দৌড়িয়েই রিকশা ডাকতে গেল । আশেপাশে কোন রিকশা নেই । তাই রুস্তমকে একটু দূরেই যেতে হল ।

প্রায় বিশ মিনিট পর রুস্তম প্রায় দৌড়িয়েই বেলাল জোয়ার্দারের কাছে আসলো কিন্তু রিকশা ছাড়াই । বেলাল জোয়ার্দার রুস্তমের দিকে তাকিয়ে দেখলেন রুস্তম মারাত্মক আকারে জখম । তার মাথায়, হাতে, পায়ে প্রায় সবজায়গায় মারের চিহ্ন । রুস্তম দৌড়িয়ে এসেই বেলাল জোয়ার্দারের পায়ের কাছে এসে ধপাস করে পড়ে গেল । কিছু বুঝে উঠার আগেই রুস্তমের এরূপ অবস্থা দেখে বেলাল জোয়ার্দারের মন আশংকায় কেপে উঠলো । আজ আর বাইরে যাওয়া হবে না তাদের, এই কথা এতক্ষণে বুঝে গেছে বেলাল জোয়ার্দার । জলদি রুস্তমকে নিয়ে আবার বাসার ভিতরে ঢুকে গেল সে । তাদের আবার বাসায় ফিরা দেখে এবং রুস্তমের এই অবস্থা দেখে নাজমা জোয়ার্দার দরজায় দাড়িয়েই প্রায় কেঁদেই দিলেন । বাসায় একটা টেলিফোন কিংবা মোবাইল নেই যে করিম জোয়ার্দারকে খবর দেয়া যায় । রুস্তমকে বিছানায় শুয়ে দেয়া হল । সে এখনও অজ্ঞান । তার জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে গেল নাজমা জোয়ার্দার ।

এদিকে বেলাল জোয়ার্দার ঘটনা কি ঘটতে পারে, সেই ব্যাপারে ভাবতে লাগলো ।


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×