[ এটি একটি সিরিজ গল্প ]
বেলাল জোয়ার্দারের জীবনের গল্প – ১
করিম জোয়ার্দারের বাসায় আছেন অনেক দিন হল । শহরের হাওয়া আর জলবায়ু তাকে ক্লান্ত করে তুলেছে । এতদিন যে ঢাকাতে থাকতে হবে তা আগে জানতেন না । কিন্তু কি আর করার, ভাইটি তাকে যেতেই দিচ্ছে না । ওদিকে বউমা মানে নাজমা জোয়ার্দার মানে করিম জোয়ার্দারের স্ত্রী তো আরও লক্ষ্মী । কখন কি লাগবে, একটু পর পর এসেই জিজ্ঞেস করে যায় । তার আর রুস্তমের থাকার জায়গা করে দেওয়ার জন্য তাদেরকেও কষ্ট করতে হচ্ছে । ছোট ফ্লাট । মাত্র দুইরুম আর একটি ডাইনিং । তিনি আর রুস্তম এক রুম দখল করে আছেন তাও এক সপ্তাহ হয়ে গেল । তাই তো করিম জোয়ার্দারের বাসার চারজন কষ্ট করে ঐ এক রুম আর ডাইনিংয়েই নিজেদের সয়িয়ে নিয়েছে । না, এভাবে তো চলে না । এরা রাজী না হলেও বেলাল জোয়ার্দার সিদ্ধান্ত নিলেন, আর না । দুইদিনের মধ্যেই তিনি গ্রামে ফিরে যাবেন । কিন্তু কথাটা তার ছোট ভাই আর বউমাকে কিভাবে বলবেন তাই নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন । আবার এদিকে এতদিন ধরে রুস্তম বায়না করছে শহরে এসে সে শহর ঘুরে দেখতে পারলো না । তাকে যাবার আগে শহর ঘুরাতেই হবে । আসলেই তো । তার না হয় শখ না থাকতে পারে কিন্তু রুস্তম তো এখনও ছোট মানুষই । এতদিন আলসেমী করে বাইরে বের হননি বেলাল জোয়ার্দার কিন্তু আজ তার মনে হল রুস্তমকে নিয়ে একটু বাইরে বের হওয়ার দরকার । করিম জোয়ার্দার অনেকদিন আগে থেকেই বেলাল জোয়ার্দারকে ঢাকা শহর ঘুরাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল । এমনকি সে অফিস থেকে তিনদিনের ছুটিও নিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেলাল জোয়ার্দার রাজী হয়নি বলে আর বের হওয়া হয়নি । কিন্তু আজ নিজেও অনুভব করছেন একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা উচিৎ ।
রুস্তম মিসেস নাজমা জোয়ার্দারকে রান্নাঘরে সাহায্য করছিল । বেলাল জোয়ার্দার রুস্তমকে ডাক দিলেন । রুস্তম বেলাল জোয়ার্দারের ডাকে সাড়া দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল । বেলাল জোয়ার্দার হাসিমুখে রুস্তমকে বাইরে যাবার কথা বলতেই সে রাজী হয়ে গেল । বেলাল জোয়ার্দার নাজমা জোয়ার্দারকে বাইরে যাবার কথা বলতেই সে চিন্তিত হয়ে গেল । আসলে এই চিন্তা যুক্তিযুক্ত । বেলাল জোয়ার্দার ঢাকা শহরে তেমন কোন জায়গা চিনেন না । তাছাড়া একা একা যেন তিনি বের না হন এই কথা করিম জোয়ার্দার নাজমা জোয়ার্দারকে বলে গেছেন । কিন্তু বেলাল জোয়ার্দার সবসময় এক কথার মানুষ । এখন নাজমা জোয়ার্দার তাকে বাইরে যাবার জন্য মানা করলে জানা কথা যে তিনি শুনবেন না । কি আর করার । নাজমা জোয়ার্দার নিজে যতটুকু ঢাকা শহর চিনেন ততটুকুই বেলাল জোয়ার্দারকে ব্যাখ্যা করে চিনিয়ে দিলেন । এদিকে রুস্তম মনে মনে খুবই খুশি । হোক না, এতদিন পর । অবশেষে সে বাইরে কোথাও অচেনা জায়গায় ঘুরতে যেতে তো পারবে ।
কিছু হালকা খাবার খেয়ে দুইজন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন । বেলাল জোয়ার্দার মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন রুস্তমকে নিয়ে তিনি জাতীয় জাদুঘর, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, নভোথিয়েটার এই কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখাবেন । তিনি ঢাকা শহর ভালো করে না চিনলেও এতটুকু জানেন যে ঢাকা শহরে যদি বাসে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায় তাহলে সহজেই যাওয়া যাবে । করিম জোয়ার্দারের বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড প্রায় দুই কিলোমিটার । তাই বাসা থেকে বেরিয়েই গেটের সামনে দাড়িয়ে তিনি রুস্তমকে বললেন রিকশা ডাকতে । তার কথামত রুস্তম প্রায় দৌড়িয়েই রিকশা ডাকতে গেল । আশেপাশে কোন রিকশা নেই । তাই রুস্তমকে একটু দূরেই যেতে হল ।
প্রায় বিশ মিনিট পর রুস্তম প্রায় দৌড়িয়েই বেলাল জোয়ার্দারের কাছে আসলো কিন্তু রিকশা ছাড়াই । বেলাল জোয়ার্দার রুস্তমের দিকে তাকিয়ে দেখলেন রুস্তম মারাত্মক আকারে জখম । তার মাথায়, হাতে, পায়ে প্রায় সবজায়গায় মারের চিহ্ন । রুস্তম দৌড়িয়ে এসেই বেলাল জোয়ার্দারের পায়ের কাছে এসে ধপাস করে পড়ে গেল । কিছু বুঝে উঠার আগেই রুস্তমের এরূপ অবস্থা দেখে বেলাল জোয়ার্দারের মন আশংকায় কেপে উঠলো । আজ আর বাইরে যাওয়া হবে না তাদের, এই কথা এতক্ষণে বুঝে গেছে বেলাল জোয়ার্দার । জলদি রুস্তমকে নিয়ে আবার বাসার ভিতরে ঢুকে গেল সে । তাদের আবার বাসায় ফিরা দেখে এবং রুস্তমের এই অবস্থা দেখে নাজমা জোয়ার্দার দরজায় দাড়িয়েই প্রায় কেঁদেই দিলেন । বাসায় একটা টেলিফোন কিংবা মোবাইল নেই যে করিম জোয়ার্দারকে খবর দেয়া যায় । রুস্তমকে বিছানায় শুয়ে দেয়া হল । সে এখনও অজ্ঞান । তার জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে গেল নাজমা জোয়ার্দার ।
এদিকে বেলাল জোয়ার্দার ঘটনা কি ঘটতে পারে, সেই ব্যাপারে ভাবতে লাগলো ।
(চলবে)