somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেলাল জোয়ার্দারের জীবনের গল্প – ১

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ এটি একটি সিরিজ গল্প ]

(এই গল্পটি মূলত মোঃ বেলাল জোয়ার্দারের । আগে বেলাল জোয়ার্দারের একটু পরিচয় দেই । বেলাল জোয়ার্দার জমিদার বংশে জন্মেছিলেন আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে । তার দাদার দাদা ছিলেন এই বংশের সর্বশেষ জমিদার । জমিদার প্রথা এরপর বিলুপ্ত হয়ে গেল । কিন্তু এই বংশের লোকদের জমিদার ভাব এখনও রয়ে গেছে । তাছাড়া যেই বাড়িতে বেলাল জোয়ার্দার থাকেন সেটিও রাজবাড়ি । এই বাড়িও জমিদার আমল থেকেই দাড়িয়ে আছে । একটু পুরানো হয়ে গেলেও বাড়িটি এখনও বেশ শক্তপোক্ত হয়েই দাড়িয়ে আছে । জমিদার বংশ বলে গ্রামের সবাই এই বংশের লোকদের খুব সম্মান করে । বেলাল জোয়ার্দার বিয়ে করেছিলেন এই গ্রামেরই দর্জি মোহন শেখের মেয়ে, আঁখিকে । পুরো নাম জাহানারা শেখ আঁখি । বিয়ের পর অবশ্য নাম হয় জাহানারা জোয়ার্দার আঁখি । পত্নীসুখ বেশিদিন সহ্য হয়নি বেলাল জোয়ার্দারের । তাইতো বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় মারা যায় আঁখি । এরপর আর বিয়ে করেননি বেলাল জোয়ার্দার । অবশ্য বিয়ের দুই বছরের মাথায় একটি ছেলে হয়েছিল । নাম রেখেছিলেন মোঃ হাসান জোয়ার্দার । ছেলেটির বয়স এখন আটাশ বছর । তিন বছর আগেই চলে গেছে ইটালিতে । তার নাকি এ দেশে ভালো লাগে না । থাক, কি আর করার, তাই একটু টাকা-পয়সা খরচ করে পাঠিয়ে দেয়া হল বিদেশে । ছেলেটা অবশ্য ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছে । যাওয়ার আগে অবশ্য বিয়ে করেছে এই গ্রামেরই জালাল হোসেনের মেয়ে, সখিনাকে । বউকেও পরের বছর নিয়ে গেছে ইটালিতে । তারা দুজন সেখানে ভালোই আছে । এই হল পরিচয় । এবার শুরু করবো ঘটনা বলা । )

গল্পের শুরুর স্থান হল রাজধানী শহর, ঢাকা । বেলাল জোয়ার্দারের আপন কোন ভাইবোন নেই । তার বাবার সে একমাত্র সন্তান । কিন্তু তার দুই চাচার মোটমাট পাঁচজন ছেলে-মেয়ে ঢাকা শহরেই থাকে । অবশ্য সবাই বেলাল জোয়ার্দারের থেকে ছোট । তারা সবাই এখন ঢাকাতেই স্থায়ী । বেলাল জোয়ার্দার অবশ্য এসে উঠেছেন তার সবচেয়ে ছোট চাচাত ভাই করিম জোয়ার্দারের বাসায় । করিম জোয়ার্দার বেলাল জোয়ার্দারের থেকে বয়সে প্রায় পনের বছর ছোট । দুই ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার তার । বেলাল জোয়ার্দার এই প্রথম ঢাকাতে এলেন । এসেই উঠেছেন তার বাসায় এতে করিম জোয়ার্দার অনেক খুশি । তার বিয়েতেও তার এই বড় ভাই আসেনি । এই বড় ভাইটি তার অনেক প্রিয় । ছোট বেলা থেকেই করিম জোয়ার্দারের স্বপ্ন ছিল একদিন সে বেলাল জোয়ার্দারের মত হবে । সবাই তাকে দেখলেই সম্মান করবে । আসলে বেলাল জোয়ার্দারের স্বভাব-চরিত্রই এরকম । অনেকদিন পর দুই ভাইয়ের মধ্যে কথোপকথনঃ

- (প্রথমে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে) অনেক দিন পর আপনাকে দেখে কি যে ভালো লাগছে, ভাইয়া ।
বেচে থাক, বেচে থাক । হুম, তোদের কাছে আসতে হঠাৎ মন চাইল, তাই চলে এলাম ।
- ঠিকি করেছেন । থাকেন তো একা একা । আমাদের কাছে থাকলে থাকবেনও ভালো ।
আরে না, না, কই একা থাকি ? রুস্তম আছে না ? ও তো একাই যথেষ্ট আমার দেখাশুনা করার জন্য ।
- এসেছেন নিজের ইচ্ছায়, এখন যেতে পারবেন আমাদের ইচ্ছায় ।
আরে, না, না, বেশিদিন থাকবো না । তোদের কথা খুব করে মনে পড়লো । তাই আসলাম । চলে যাব অল্প কয়েকদিন পরেই ।
- না, না, তা হবে না । আপনার বউমা তো শুধু বলে আমি কেন আপনাকে নিয়ে আসি না ? বাচ্চাগুলার যদি এই স্কুল-কলেজের ঝামেলা না থাকতো তাইলে মনে হয় আমরা আপনার কাছে গিয়েই থাকতাম ।
কি বলিস এইসব ? তোরা আমার কাছে গিয়ে থাকবি কেন ? ঐটা তো বদ্ধ গ্রাম । ধূলা-বালি, কাদা, ময়লা, গোবর, খালি গন্ধ আর গন্ধ । তোরা শহরের মানুষ ওখানে বেড়াতে যাস, ওইটুকুই । থাকতে পারবি না । ঐটা আমাদের মত গ্রাম্য মানুষদের জন্য ।
- তা, আপনি যাই বলেন । আপনার কাছে থাকতে পারলে ঐসব কোন ব্যাপারই না । ভাইয়া, হাসানের খবর কি ? হাসান আর সখিনা কি ফোন দেয় ?
হুম, তা দেয় । গ্রামে কি আর ভালো নেটয়ার্ক পাওয়া যায় ? বাজারে গিয়ে কথা বলে আসতে হয় । প্রতি শনিবার আর রবিবার এক ঘণ্টা করে কথা হয় ওদের সাথে । গত সপ্তাহে আমি তোর নাম্বার দিয়েছি ওকে । এই সপ্তাহে তোর নাম্বারেই ফোন দিবে ।
- ভালো করেছেন, কাজের মত কাজ করেছেন । আপনার বউমার সাথে তো হাসানের কোনদিন কথাই হয়নি । এ যাত্রায় হবে । তাছাড়া বাচ্চাগুলাও যখন শুনেছে যে ওদের একজন কাকা বিদেশে থাকে তখন তারাও কাকার সাথে কথা বলতে চায় । ভালোই হবে । আচ্ছা, আপনি উঠেন । হাত-মুখ ধুয়ে আসেন । (রুস্তমের দিকে তাকিয়ে) এই তুইও যা, হাত-মুখ ধো । ভাইয়া তো আবার তোকে ছাড়া খায় না । একসাথেই খাবার দিচ্ছি ।


বেলাল জোয়ার্দার ভাইয়ের কথা শুনে হাসতে লাগলেন । আসলেই কোনদিন তিনি মুখ ফুটে না বললেও তার এই ভাইটি তার কাছে অনেক প্রিয় । নিজের আপন কেউও হয়তো এত প্রিয় হত না । ওদিকে আবার তিনি রুস্তমের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সেও হাসছে । অনেক তৃপ্তির সেই হাসি । যেন গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ শহরের মানুষের কাছে সম্মানটুকু আদায় করে নিয়েছে ।

(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×