আমরা ছোটবেলা থেকেই রূপকথার গল্পগুলো হয় বইয়ে পড়েছি না হয় দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর মুখ থেকে শুনেছি । আসলে এই রূপকথার গল্পগুলো পুরোটাই অবাস্তব এবং কল্পনার জগতে সীমাবদ্ধ হলেও এগুলো কিন্তু বেশ মজর এবং শুনতে ও পড়তে ভালোই লাগে । ছোটবেলায় সবার মাঝেই এই ভাবনা আসে , ইস ! যদি এই জগতে একবার ঢুকা যেত তাহলে কেমন মজা হত । সে এক আজব চিন্তাভাবনা । তবে পুরোপুরি মজার বিষয় এটি একটি ।
আজ আমি আপনাদের শুনাব জনের কথা । পুরো নাম জন রেক্সেমা । বাবা রেস্তেম রেক্সেমা আর মা নাইমুন রেক্সেমার একমাত্র সন্তান এই জন রেক্সেমা । পুরোপুরি বাবা-মায়ের চোখের মণি সে । এবার ক্লাস সিক্সে উঠেছে । বয়স বার কিংবা তের বছর । জনের পড়াশুনায় অনেক মনোযোগ যার প্রায় অর্ধেক বিজ্ঞানের প্রতি । সে যখনই সময় পায় তখনই বিজ্ঞান বই পড়ে । ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেনের সব বিজ্ঞান বই তার এই বয়সেই পড়া হয়ে গেছে । তাই তো আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেসব বিজ্ঞানীদের নাম বড় হয়েই জানতে পারে জন তাদের নাম ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছে । তার প্রিয় কাজ কিছু আবিস্কার করার চেষ্ঠা করা । এই জন্যই সে টিভির রিমোট থেকে শুরু করে কম্পিউটারের যাবতীয় জিনিস খুলে খুলে নতুন নতুন কিছু জানার চেষ্ঠা করে । অন্য কেউ হলে এতকিছু নষ্ট করার জন্য বাবা-মায়ের বকুনি খেত । কিন্তু জন এইদিক থেকে সম্পূর্ণই নিরাপদ । তাকে বরং আরও উৎসাহ দেয়া হয়। জনের বাবা-মায়েরও ইচ্ছা ছেলেকে বড় বিজ্ঞানী করে গড়ে তোলার । ইদানিং জনের একটি বদঅভ্যাস হয়েছে । সে প্রায় মাঝেই মাঝেই বিজ্ঞান বই পড়তে পড়তে এর মাঝে ঢুকে যায় মানে বিজ্ঞানের জগতে ঢুকে যায় । কখনো সে ঐ জগতে এক ঘণ্টা থাকে কখনো আবার তিন কিংবা চার ঘণ্টা থাকে । একবার সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা ছিল সে । অনেকের কাছেই মনে হতে পারে এ কি সম্ভব নাকি ? কিন্তু সত্যি, জনের সাথে এমনটাই ঘটেছে । একদিনের ঘটনা আজকে আপাদের সাথে শেয়ার করবো । অবশ্য জনের কথাতেই ।
একদিন জন বিজ্ঞান বই পড়তে পড়তে বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করলো । প্রবেশ করা মাত্রই সে দেখলো সে এক বিরাট মাঠে দাড়িয়ে আছে । অনেক বড় আর সবুজ মাঠ । এরপর সে খেয়াল করলো মাঠের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে একটি বিরাট নদী । কিন্তু নদীটা ভালভাবেই খেয়াল করে সে বুঝলো নদীতে পানি নেই । পানির বদলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন পরমাণু । তারা একে অন্যের সাথে জড়িয়ে আছে । জন আর দাড়িয়ে না থেকে নদীর পাড় ঘেঁষে হাঁটা শুরু করলো । হাঁটতে হাঁটতে সে অনেকদূরে এসে দেখতে পেল একটি মেয়েকে । কিন্তু মেয়েটির চারপাশে আর কেউই নেই । জন মেয়েটির আর কাছাকাছি গিয়ে দেখলো মেয়েটি কাঁদছে । জন মেয়েটির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল । জন যখন মেয়েটির একেবারে কাছাকাছি গেল তখন মেয়েটিও জনকে খেয়াল করলো কিন্তু তার মাঝে কোন প্রকার ভাবান্তর দেখা গেল না । জন এক্সকিউজ মি দিয়ে কথা বলা শুরু করলো । মেয়েটি এইবার জনের দিকে তাকাল । মেয়েটি জনের থেকে বয়সে বড় এবং বেশ সুন্দরী । জন মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করলো । মেয়েটি তার নাম বললো ক্লোরিন (Cl) । নামটি শুনে জন অবাক হয়ে গেল । জন ক্লোরিনকে আবার জিজ্ঞেস করলো সে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছে কেন ? তখন ক্লোরিন একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার দুঃখের কথা জনকে বলা শুরু করলো । জনকে ক্লোরিন জানালো যে তার বাবা আর্গন (Ar) তার প্রেমিক সোডিয়ামের (Na) সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছেন । এমনকি সোডিয়ামের মা নিয়ন-ও (Ne) ক্লোরিনের সাথে সোডিয়ামের সাথে বিয়ে দিবেন বলেছে । মানে তিনিও রাজী । জন বুঝতে পারলো না তাহলে সমস্যা কোথায় ? তাহলে ক্লোরিন কাঁদছে কেন ? জন বুঝতে না পেরে ক্লোরিনকে জিজ্ঞেস করলো তাহলে তোমাদের বিয়েতে সমস্যা কোথায় ? তবুও তুমি কাঁদছ কেন ? তখন ক্লোরিন বললো আমাদের সমাজে একজন ঘটক সাহেব আছেন । ইলেকট্রন (e) মশাই । আমাদের শাস্ত্রমতে কোন বিয়ের সময় যদি ঘটক সাহেব অসুস্থ থাকেন তাহলে সেই বিয়ে মানে হল অমঙ্গল । আবার ইলেকট্রন মশাইয়ের কি রোগ হয়েছে তা কোন ডাক্তারই বের করতে পারছেন না । কোন ওষুধেই সে সুস্থ হচ্ছে না । এভাবে তার বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন সময় থেকে দুই বছর পার হয়ে গেছে । আর কতদিন লাগবে কে জানে ? কিন্তু সোডিয়ামকে ছাড়া সে এতদিন থাকবে কিভাবে ? জন কেন জানি কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলো ইলেকট্রন মশাই কোথায় আছেন বাসায় না হাসপাতালে ? ক্লোরিন তাকে জানালো এতদিন পরমাণুর হাসপাতালে ছিলেন এখন নিজ বাসায় আছেন মানে পরমাণুর কক্ষপথে । তার স্ত্রী প্রোটন (p) তাকে দিনরাত সেবা করছে । জনের কেমন জানি জানতে ইচ্ছে হল যে নিউট্রন (n) তাহলে এখানে কে ? সে ক্লোরিনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো । তার এই হঠাৎ জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও ক্লোরিন অবাক হলনা । সে উত্তর দিল, ও নিউট্রন । সে তো ইলেকট্রন মশাই ও প্রোটনের ছেলে । প্রচণ্ড দুষ্ট । এত দুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মায়ের যক্ষের ধন সে । বয়স কম তো তাই সবসময় মায়ের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে সে । ইলেকট্রন মশাই সবসময় পরমাণুর কক্ষপথে থাকলেও প্রোটন-নিউট্রন দুই মা ছেলে অধিকাংশ সময়ই নিউট্রনের নানাবাড়ি থাকে । মানে নিউক্লিয়াসে গিয়ে থাকে । সেখানে তারা বেশ আরামেই থাকতে পারে । নিউট্রনের মা তার নানা-নানির একমাত্র সন্তান । তাছাড়া নিউট্রনের নানা-নানি তো অনেক আগেই মারা গেছেন । তাই তাদেরও কোন অসুবিধা হয়না । কিন্তু সেখানে ইলেকট্রন মশাই যেতে চান না । কেন, কে জানে । তাছাড়া ইলেকট্রন মশাই অনেক গরীব তাই তিনি কিছু বলতেও পারেন না এই ব্যাপারে । ক্লোরিনের সব কথা খুব মনোযোগ দিয়েই শুনলো জন । তার গল্প শুনতে ভালোই লাগছে ।
হঠাৎ মনে হল জনকে ধরে কেউ ঝাকি মারছে । অনেক অনেকক্ষণ এভাবে ঝাকি মারার পর জন হঠাৎ তার সৎবিৎ ফিরে পেল । তার মা মিসেস নাইমুন রেক্সেমা এতক্ষন ধরে ওকে ডাকছিলেন । শেষে ও যখন উঠলো না তখন ঝাকাতে শুরু করেন । ওহ, তাহলে কি সপ্ন দেখছিল ? কিন্তু সপ্ন তো এমন হয়না । জন অনেকটা বিরক্তিভরেই তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ধুৎ, মা, তুমি আমাকে ঝাকালে কেন ? তার মা, মিসেস নাইমুন রেক্সেমা বললো তোমার এক বন্ধু এসেছে অনেকক্ষণ আগেই । তুমি ঘুমাচ্ছিলে বলে আমি এতক্ষন তোমাকে ডাকিনি । কিন্তু ছেলেটাকে আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখা যায় ? যাও, ফ্রেশ হয়ে ওর কাছে যাও । তাছাড়া তোমাকে না বলেছি এই দিনের বেলায় ঘুমাবেনা । তোমাকে তো অনেকবার বলেছি দিবালোকের হয় অবাস্তব এবং ভ্রম । তার মা বলেই সেখান থেকে চলে গেল কিন্তু এদিকে জন ভাবছে অন্য কথা । তার সপ্ন তো অবাস্তব আর ভ্রম নয় । সে তো এই সপ্নই হোক কিংবা বাস্তব কিছুই হোক, এর মাধ্যমে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে জানতে পেরেছে । সে ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশরুমের দিকে যেতে থাকলো । যেতেই যেতেই সে ভাবতে লাগলো শেষ পর্যন্ত কি ক্লোরিন এবং সোডিয়ামের বিয়েটা হয়েছে ?