মেয়েটিকে প্রথম দেখা কোন এক বাসেই । পুরান ঢাকা হতে নিউ মার্কেট যেই বাসগুলা যায় , তার মধ্যেই একটি হবে । মেয়েটি সিটি কলেজের ছাত্রী । তবে কোন ক্লাসের ছাত্রী তা জানা যায়নি । মেয়েটি বাসের কোন নির্দিষ্ট ছিটে নয় , যখন যেই ছিট খালি পায় তাতেই বসে যায় । বেলালের সবই ভালো লাগে । এক আজব ধরনের মায়া কাজ করে মেয়েটির মুখে , প্রতিটি অঙ্গেই । বলা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায় ।
মেয়েটির দুটি চোখ , হ্যাঁ , টানাটানা দুইটি চোখ খালি নিজের দিকে টানে । বেলাল আরও কয়েকদিন মেয়েটিকে দেখার পরেই এই সত্যটা বুঝতে পারলো । বেলাল একদিন খেয়াল করলো যে মেয়েটিও ওর দিকে তাকায় । এটা কি মনের ভুল ? মনে তো হয়না । তবে কেন তাকায় মেয়েটি ? প্রশ্ন , অমীমাংসিত একটি প্রশ্ন । বেলাল প্রায় প্রতিদিনই মেয়েটির জন্য বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করে এখন । অনেকটা নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । যদি কোনদিন মেয়েটা না আসে , তাহলে মনের মধ্যে কি যেন থেমে যায় । এই কি যেনটা হয়তো কর্মতৎপরতা বা অন্য কিছুও হতে পারে । বেলালের জানা নেই এটাও ।
বেলাল মনে মনে ভাবে , মেয়েটিকে আমার চাই । যে করেই হোক । ভালবাসা কখনো নিয়ম মানে না । এভাবেই একদিন দেখে যে বাস মোটামুটি ফাঁকা । মেয়েটি একটি ছিট খালি পেয়ে বসে পড়লো । তার পাশের ছিটটাও খালি হয়ে গেলো অতিদ্রুত । বেলাল জলদি গিয়ে ছিটটা দখল করলো । মেয়েটাকে দেখে মনে হলো একটু অপ্রস্থুত হয়ে পড়েছে । বেলাল হঠাৎ মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে বসলো , আপনার নামটা কি জানতে পারি ? অনেকক্ষণ চুপ থেকে মেয়েটি জবাব দেয় , মালা । মালা , বাহ বেশ সুন্দর নাম তো ।
কিছুক্ষণ পর বেলাল সাহস করে একটা কথা বলেই ফেলে , আপনার বাড়ির ঠিকানাটা দিন তো । মালা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো , কেন ? আপনার বাসায় বিয়ের প্রস্থাব পাঠাবো । হঠাৎ-ই যেন বেলালের সব ভয়-জড়তা ভেঙ্গে গেছে । মালা হঠাৎ স্থবির হয়ে গেলো । একদম চুপচাপ পরিবেশ এর কিছুক্ষণ পর । নিরবতা বেলালই ভাঙ্গলো । কি হলো , দিলেন না ? মালা এরপর বললো , আপনাকে তো আমি চিনি না , তবে কেন আমি আপনাকে আমার বাসার ঠিকানা দেবো ? মালার কণ্ঠে বলিষ্ঠ ভাব । বেলাল তবুও একবিন্দু চমকালো না । জানে , তাকে কিছু একটা করতেই হবে ।
মালা বললো , আপনি কি জানেন যে আমি বিবাহিত ? যেন সব ঘটনার দফা-রফা করে দিতে চাচ্ছে সে । বেলালের কাছে কথাটা পুরোপুরি অবাস্থব ঠেকলো । বেলাল বললো , আমি জানি যে আপনি মিথ্যা বলছেন । ব্যাপারটা আমি কোনক্রমেই মানবো না । মালা এরপর অসহায়ের মত বলে উঠলো , না , না , সত্যি আমি বিবাহিত । আমার বিয়ের বয়স ৩ বছর । আমার স্বামী ফ্রান্সে থাকে । আর কয়েকদিন পরেই আমাকেও নিয়ে যাবে । দরকার হলে আমি আপনাকে আমার মোবাইলে থাকা বিয়ের ছবিগুলা দেখিয়ে দেই । একনাগাড়ে কথাগুলো বললো মালা । বেলালের মাথায় হঠাৎ করে আগুন চড়েছে । তাই মালা ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করতেই বেলাল মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে নাম্বারটি টুকে নিলো । সেই দিনের মত ঘটনা ওখানেই শেষ ।
এরপর চলতে লাগলো মোবাইলে ক্রমাগত জ্বালাতন । মালাও এই কথা কাউকে জানাতে পারছিলো না । নাম্বারও পরিবর্তন করা সম্ভব না কারণ ফ্রান্স দূতাবাসে ঐ নাম্বার দেয়া । কি যে করা যায় । বেলাল প্রতিদিন প্রায় ১০০ বার কল দিয়ে মালাকে জ্বালাতে লাগলো । শেষ পর্যন্ত কাহিনীতে একটা মোড় নিলো ।
বেলাল একদিন মালাকে মোবাইলে বলেই ফেললো , হয়তো তোমার বিয়ে হয়েছে ৩ বছর কিন্তু আমার বিয়ে হয়েছে ৮ বছর । এমনকি আমার এই সংসারে একটি মেয়েও আছে । মালার এবার টাশকি খাওয়ার পালা । তবে আপনি এতদিন এসব কেন করলেন , মালার সোজাসুজি প্রশ্ন । কারণ আমি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালবেসে ফেলেছি , বেলালের উত্তর । মালা প্রায় সংঙ্গে সঙ্গেই ফোনের লাইন কেটে দিলো ।
কয়েকদিন পর আরেকটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো । জরুরী মনে করে মালা ফোনটি ধরলো । ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ । আমি আপনার পায়ে পড়ি , আপনি আমার স্বামীকে ছেড়ে দিন । ওনাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিন । আপনি একজন নারী হয়ে কেন আরেকজন নারীর সুখের সংসার ভাঙ্গছেন ? ওপাশ থেকে সব একনাগাড়েই বলে চললো । মালা বুঝলো যে এই নারী বেলালের স্ত্রী । মালা তাকে বললো , আসলে আপনি যা বললেন তা ১০০ % মিথ্যা কথা । সত্য কথাটুকু আপনি আপনার স্বামীর কাছ থেকে জেনে নিন একটু কষ্ট করে ।
ঘটনা এটুকুই । এর কয়েকদিন পরেই মালার স্বামী ফ্রান্স থেকে দেশে আসে । বেলালের সাথে আর মালার দেখা হয়নি । সম্ভবত স্বামীর সাথে মালাকে দেখে সে আর কোন পদক্ষেপ নেয়নি । আবার এও হতে পারে যে তার বিবেক তাকে শেষ পর্যন্ত কাবু করেই ফেলেছে ।
আমাদের আধুনিক সমাজের বাস্তবতা এখন এমন কয়েকটি ঘটনা । এদের সংখ্যা নেহায়েৎ-ই কম হবে যারা মালার মত এমন নিরাপদে এমন ঘটনা থেকে ফিরে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে । কিন্তু অনেকের ভাগ্যেই এমনটা ঘটে না । এই যারা এইসব কাজগুলো করে তারা কেন জানি ভুলে যায় তাদের মা, বোন, স্ত্রী, মেয়ে সবাই তো মেয়ে । জানি না, কেন তারা নির্বোধ পশুর চেয়ে অধম হয়ে এই ঘৃণ্য কাজগুলো করে । আমরা সমাজের সভ্য মানুষগুলো হয়তো এদের শুধু ধিক্কারই দিতে পারি, আর কিছু নয় ।
[(সম্পূর্ণ গল্পটাই সত্য কাহিনী , একজনের জীবনে এই ঘটনা ঘটেছে এবং সে আমাকে নিজমুখে সম্পূর্ণ কাহিনীটুকুই বলেছে)]