রুমকির সামনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা । ওর ভালোর জন্যই ওর সাথে দেখা করা কমিয়ে দিয়েছি । তাই ওর সাথে অনেকদিন দেখা হয়না । মাঝে আমার পরাশুনার একটু বেগ বেড়েছে । মানে বেগ বাড়াতে একরকম বাধ্য হয়েছি । বাবা যা বকেন । বড্ড ভয় লাগে তাকে । থাকনা , বাবাই তো । ভালোই তো চান আমার । কিন্তু তিনি তো জানেন না রুমকিকে না দেখে আমার দিন কীভাবে কেটেছে । প্রতিটি মুহূর্ত এক একেকটি বছরের মত লেগেছে আমার কাছে । তবে আজ অপেক্ষার পালা শেষ । প্রায় একমাস পর আজ পাগলিটার সাথে দেখা করবো । কলেজের প্রতিটি মুহূর্তে আমার বেখেয়ালি খুব একটা কারও নজরে আসেনি । এ ক্ষেত্রে বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি । কলেজ থেকে সাইকেলে বাসায় আসার প্রতিটি মুহূর্ত আমার আনন্দে নেচে উঠার মত জোগাড় । বাসায় পৌঁছেই কোনরকমে ড্রেস চেঞ্জ করে ওর বাসার উদ্দেশ্যে দৌড় লাগালাম । পিছন থেকে মা ডাকছে কিছু খেয়ে যাওয়ার জন্য । আমার আর কী ওদিকে মনোযোগ আছে ??
ওর বাসার সামনে পৌঁছে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম । বাসায় তালা ঝুলছে । সেই মুহূর্তে আমার অবস্থা যে কী তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । দ্রুতই আবার বাসায় ফিরে এলাম । এখনো মোবাইল নেইনি । তাই মায়ের মোবাইল নিয়ে রুমকির বাবার মোবাইলে ফোন দিলাম । কিছুক্ষণ রিং হতেই ও পাশ থেকে আওয়াজ এলো , হ্যালো । বিধ্বস্ত আওয়াজ । আমার বুকের গভীরে মনের অজান্তেই ধুঁক করে উঠলো । আমি তবুও আমার সকল অনুভূতি গোপন করে বললাম , হ্যালো , আংকেল , ভালো আছেন ?? আন্টি আর রুমকি কেমন আছে ?? আপনারা বাসায় নেই । আমি আপনাদের বাসায় গিয়েছিলাম । কিন্তু বাসায় তালা ঝুলছিল । তাই মনে হলো ফোন করে আপনাকে জিজ্ঞেস করি সব ভালো আছে তো ?? একনাগাড়ে সব কথা বলে ফেললাম । হঠাৎ করে নিজেকে অনেক নার্ভাস লাগছে । নার্ভাস না বলে দুশ্চিন্তা বলা ভালো । এরপর আংকেল যা বললো তার কথার সারমর্ম হলো আংকেল , আন্টি এবং রুমকি গ্রামের বাসায় যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে । দুর্ঘটনায় আন্টি মারাত্তক ভাবে আহত হয়েছেন । এখন হাসপাতালের আই সি ইউ ইউনিটে ভর্তি । আংকেল মোটামুটি অরক্ষিত আছেন । রুমকির ডানহাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ডাক্তার বলেছে হাতটি কেটে ফেলতে হবে ।
আমার হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নীচে ছিটকে পড়লো । ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো আওয়াজ আসছে । কিন্তু আমার শরীরের সব অঙ্গ হঠাৎ যেন একসাথে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । এ মুহূর্তে আমি একজন নিঃসাড় , নির্জীব একটি প্রাণী , একজন মানুষ ।