পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু ।
এই যে হিয়া থর থর কাঁপে আজি এমনতরো
এই বেদনা ক্ষমা করো ,
ক্ষমা করো প্রভু ।।
এই দীনতা ক্ষমা করো , প্রভু
পিছন-পানে তাকাই যদি কভু ।
দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায়
মালা পূজার থালায়
সেই স্লানতা ক্ষমা করো ,
ক্ষমা করো প্রভু ।।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্তের একটি উজ্জ্বল উধাহারণ । বাংলা সাহিত্তে তার মহত্ত্ব , সৃষ্টি , অবদান বাংলা সাহিত্যকে করেছে ধন্য । তাকে ধন্যবাদ দিলে তাকে খালি ছোটই করা হবে । বাংলা সাহিত্তের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তার সোনালী স্পর্শ পড়েনি । আসলে তিনি তার সাহিত্য প্রতিভা নিজের পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন ।
হে মোর চিত্ত , পুণ্য তীর্থে
জাগো রে ধীরে --
এই ভারতের মহামানবের
সাগরতিরে ।
(গীতাঞ্জলী)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ই মে (বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে । তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রপিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর । এই বংশ সাহিত্তের উন্নতি সাধন ছাড়াও ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লালিত এবং আত্মপ্রতিষ্ঠিত ব্যাবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জনহিতকর কাজেও সাফল্য অর্জন করেন ।
আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ-দহন লাগে
তবুও শান্তি তবুও আনন্দ তবুও অনন্ত জাগে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্দশ সন্তান । তাঁর মা সারদা দেবী সম্বন্ধে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায়নি । রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি , মেজো ভ্রাতা সত্তেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই.সি.এস ; অন্য ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার এবং বোনদের মধ্যে স্বর্ণকুমারী দেবী ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন । ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ ছিল সঙ্গীত , সাহিত্য ও নাট্যঅভিনয়ে মুখর । শুধু তাই নয় , বাইরের জগতের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল নিবিড় ।
আমার এ গান ছেড়েছে তাঁর সকল
অলংকার ,
তোমার কাছে রাখেনি আর সাজের
অহংকার ।
অলংকার যে মাঝে পড়ে মিলনেতে
আড়াল করে ,
তোমার কথা ঢাকে যে তাঁর মুখর
ঝংকার ।
তোমার কাছে খাটে না মোর কবির
গর্ব করা ,
মহাকবি তোমার পায়ে দিতে যে
চাই ধরা ।
জীবন লয়ে যতন করি যদি সরল
বাঁশি গড়ি ,
আপন সুরে দিবে ভরি সকল ছিদ্র
তাঁর ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে একজন কবি , সঙ্গীতজ্ঞ , কথাসাহিত্তিক । নাট্যকার , চিত্রশিল্পী , প্রাবন্ধিক , দার্শনিক , শিক্ষাবিদ ও সমাজ-সংস্কারক । মূলত কবি হিসেবেই তাঁর প্রতিভা বিশ্বময় স্বীকৃত । ১৯১৩ সালে তাঁকে সর্বপ্রথম একজন নন-ইউরোপিয়ান হিসেবে "গীতাঞ্জলী" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্তে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় । এশিয়ার বিদগ্ধ ও বরেণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করেন । তাঁর সাহিত্তের প্রধান ছদ্মনাম ছিল "ভানুসিংহ" ।
পউষের পাতা-ঝরা তপোবনে
আজি কী কারণে
তলিয়া পড়িল আসে বসন্তের মাতাল বাতাস
নাই লজ্জা , নাই ত্রাস
আকাশে ছড়ায় উচ্চহাস
চঞ্চলিয়া শীতের প্রহর
শিশির-মন্থর ।
সংক্ষেপে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ (নীচে)
জন্মঃ ১৮৬১ সালের ৭ই মে (বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখ)
মৃত্যুঃ ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট (বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ)
ছদ্দনাম বা সাহিত্যিক নামঃ গুরুদেব / ভানুসিংহ ।
জাতীয়তাঃ ভারতীয় ।
ধর্মঃ হিন্দু ।
সবচেয়ে বড় অর্জনঃ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ । (গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য) ।
স্ত্রীঃ মৃণালিনী দেবী (সাল ১৮৭৩ - ১৯০১) ।
ছাদের উপরে বহিয়ো নীরবে
ওগো দক্ষিন-হাওয়া
প্রেয়সীর সাথে যে নিমেষে হবে
চারি চক্ষুতে চাওয়া ।
ঝরনা , তোমার স্ফটিক জলের
স্বচ্ছ ধারা ,
তাহারি মাঝারে দেখে আপনারে
সূর্য তারা ।
বিশ্বমনস্ক কবি মৃত্যুর পূর্বে প্রত্যক্ষ করেছেন মানবসভ্যতার গভীর সঙ্কটকে । তথাপি তিনি মানুষের মহত্তে চির আস্তাবান ছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্ত জীবন , মানবাত্মা ও প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের কবি । মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন মহাজীবনের যতি হিসেবে । জীবন-মৃত্যু ও জগৎ-সংসার তার নিকট প্রতিভাত হয়েছে এক অখণ্ড রূপে ।
হে অচেনা
দিন যায় , সন্ধ্যা হয় , সময় রবে না
তীব্র আকস্মিক
বাধা বন্ধ ছিন্ন করি দিক
তোমারে চেনার অগ্নি দীপ্তশিখা উঠুক উজ্জ্বলি
দিব তাহে জীবন অঞ্জলি ।
রবীন্দ্রনাথ কেবল তাঁর কালের কবি নন , তিনি কালজয়ী । বাংলা কাব্যসাহিত্তের ইতিহাসে তাঁর আবির্ভাবে ছিল এক যুগান্তর । আজ এই মহান মানুষটির জন্মদিন । তাকে আমার আর সকল বাঙালীর পক্ষ থেকে জানাই জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা । আমার খুবই ছোট্ট ক্ষমতাবলে আমি আজকের এই দিনটি তাকেই উৎসর্গ করলাম ।