সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি স্মরণে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি
মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
আজ ১০ ফেব্র“য়ারি। ২০১২ সালের এই দিনে শিশু মেঘ তার বাবা-মা’র সাথে আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিল। একদিন পরেই তার জীবনে সবচেয়ে বড় অন্ধকার নেমে আসবে সে জানতো না। তার পৃথিবী অন্ধকার করে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে যাবে তার প্রিয় মা-বাবা তাও বুঝতে পারলো না। ২০১২ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসভবনে নৃশংস ঘটনা ঘটলো। শিশু মেঘের সামনে নির্দয়ভাবে হত্যা করলো প্রতিভাবান দু’জন তারকা সাংবাদিকদের। একজন সাগর অন্যজন রুনি। হত্যার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনীদের বের করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘন্টা এখন ৩৬ মাসে পরিণত হল। কিন্তু ৪৮ ঘন্টা শেষ হলো না। যারা সেই সময় সোচ্চার ছিল সাগর-রুনির হত্যার বিচারের দাবিতে তাদের অনেকেই এখন মুখে কুলুপ এঁটেছে। কোন কথা বলছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই বলছি আপনিতো গণমাধ্যমে মেঘের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আজ থেকে মেঘের সব দায়-দায়িত্ব আমার। মাঝে মধ্যে আপনার প্রিয় নাতিকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার দৃশ্য দেখা যায় কিন্তু ৩ বছর পার হয়ে গেলো একদিনও মেঘকে নিয়ে মাথায় রাখেননি। তবে কি সেদিনের ঘোষণা ছিল শুধুমাত্র লোক দেখানো। যারা মেঘকে হত্যা করেছে তাদের ব্যাপারে প্রেসক্লাবের রাজপথে সব সাংবাদিকরা এককাতারে চলে এসেছিল। তখন নির্মল সেন বেঁচে ছিলেন। তিনি একদিন সাংবাদিক সমাবেশে বলেছিলেন আমার আনন্দ হচ্ছে অনেকদিন পর সবদলের সবমতের সাংবাদিকদের সাগর-রুনির হত্যার বিচারের দাবিতে একসাথে দেখতে পাচ্ছি। তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার সাথে সাথে সাংবাদিকদের ঐক্যতে যেন কবর রচিত হয়েছে। সোচ্চার সাংবাদিকের কেউ কেউ সরাসরি আপনার বিশেষ পুরস্কারে আর বিশেষ দায়িত্বে পুরুস্কৃত হয়ে এখন নীরব, পাথর হয়ে আছে। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নিজেদেরকে খুচরা মূল্যেই মনে হয় বিক্রি করে ফেলেছে। মেঘের চোখ থেকে এত অশ্র“ ঝরেছে এখন আর মেঘ কাঁদে না। সে জানে তার বাবা-মা’র হত্যার বিচার হবে না। শিশু মেঘ বেশ বুঝতে পেরেছে তার কাছে যারা শান্তনার বাণী নিয়ে এসেছিল সবাই তার সাথে মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছে। মাঝে মধ্যেই মেঘ তার বাবা-মায়ের কবরে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে এই বুঝি আকাশ থেকে তারা হয়ে তার মা-বাবা তার কাছে ফিরে এলো। কিন্তু তারা তো আর ফিরে আসবে না। মেঘের মত প্রতিদিন অনেক অসহায় শিশু তার মা-বাবাকে হারাচ্ছে। কেউ হারাচ্ছে ভয়ংকর পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রিয়জন আবার কেউ বা হারাচ্ছে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে নৃশংস মৃত্যু। দেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। এখনও শীতলক্ষ্মায় লাশের মিছিল দেখা যায়। গ্রাম থেকে শহরে বিভিন্ন জায়গায় ছোপছোপ রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়। রক্তের দাগ পিচঢালা পথে এখন প্রতিদিনের করুণ চিত্রে পরিণত হয়েছে। শত শত পরিবার স্বজনহারা হয়ে আর্তচিৎকার করছে। আমার সন্তানকে আমার প্রিয়জনকে ফিরিয়ে দাও। কিন্তু কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। আপনিতো সাংবিধানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় রয়েছেন। আপনার শপথে স্পষ্ট ছিল জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেবেন। কিন্তু জনগণ যখন কুকুরের মত লাশ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে তখন আপনার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা যেসব ভাষায় কথা বলেন মনে হয় তারা ভিনদেশের মন্ত্রী-এমপি। এদেশের নাগরিকই না। এদেশের জন্য, এদেশের মাটির জন্য, এদেশের মায়ের জন্য তাদের কোন কমিটমেন্ট নেই। এভাবে আর কতদিন। আর কত মেঘ তার মা-বাবাকে হারালে আপনার হৃদয়ে ভালবাসার সৃষ্টি হবে। আর কত মেঘ আর্তচিৎকার করে বলবে আমার মা-বাবার হত্যার বিচার চাই, বিচার চাই, বিচার চাই? আপনি কবে মেঘের মত অসহায় শিশুদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে মেঘকে যেমন ফাঁকি দিয়েছেন এখন দেশকেও ফাঁকি দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে জাতি আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করেছিল আপনি সেই প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতো সে চিৎকার করে আপনাকে থামিয়ে দিতো। তিনিও তো না ফেরার দেশে চলে গেছেন। যেমন চলে গেছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এখন খামোশ বলার কেউ নেই। তাই তো চলছে গাড়ী যাত্রাবাড়ী। থামাবারও কেউ নেই। সবাই সংলাপ সংলাপ করছে। কিন্তু বাস্তবে সংঘাত ছাড়া আর কিইবা জাতির কপালে জুটছে। আর কত রক্ত চাই, আর কত লাশ চাই, আর কত মেঘের মত মা-বাবা হারালে দেশের শান্তি ফিরে আসবে। প্লিজ, শেষবারের মতই বলছি। শিশু রাসেলের কথা ভাবুন। আপনার অনেক প্রিয় আদরের ছোট ভাই। ভাবুন, বঙ্গবন্ধুর কথা। তাদের কথা ভেবে তাদের আত্মার শান্তির জন্য হলেও জাতির এই গভীর সংকট থেকে দেশকে মুক্তি দিন। মুক্তি দিন মেঘকে। কারণ মেঘ জানে নতুন কেউ আসলে ঠিকই তার বাবা-মা’র হত্যার বিচার হবে। সাগর-রুনির আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি আর মেঘকে বলছি মেঘ তুমি আমাদের ক্ষমা করো না।