somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনে অন্ধকার নেমে আসলো একটি সংবাদ মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে অন্ধকার নেমে আসলো একটি সংবাদ
মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা


একটি সংবাদ একটি জীবনকে অন্ধকার করে দিল। আগত আরেকটি জীবনের ভবিষ্যতও অন্ধকারে নিমজ্জিত। আমি মনিয়া পারভীন মনীষার কথা বলছিলাম। পাবনার মেয়ে মনীষা মা-বাবার বড় সন্তান। দু’বছর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ শুক্রবার নতুন স্বপ্ন, নতুন সংসার ও নতুন আশা নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের মেধাবী ছাত্র ও খিলগাঁও থানার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির সাথে। সংসার জীবনের মাস না ঘুরতেই অপ্রত্যাশিত মনীষা জানতে পারল তার স্বামী জনিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই মনীষা বুঝতে পারল তার স্বামী অন্য ৮/১০ জনের মতো স্বাভাবিক চলতে পারে না। তার প্রতিটা মুহুর্ত আতঙ্কে কাটতে হয়। একবছর পর কোরবানী ঈদের কয়েকদিন আগে আবারও জনিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অনেক কষ্টে সেবার জনিকে ঈদের আগেই জামিনে মুক্ত করেছিলো। এসব এখন স্মৃতি। সর্বশেষ জনি মনীষার কাছে মোবাইল করে বলেছিল, তোমাকে আর খিদমাহ হাসপাতালে দেখাবো না আমি আল বারাকাত হাসপাতালের ডা: নাজনীন ম্যাডামের সাথে কথা বলেছি তিনি তোমাকে দেখবে। ডেলিভারীর সময় তোমার কোনই কষ্ট হবে না। তুমি অপেক্ষা করো, আমি আসছি। এই তার শেষ কথা। আমি কতোদিন, কতো মাস, কতো বছর অপেক্ষা করবো জনি তোমার জন্য। তুমি কি সত্যিই আসবে? জনি আর ফিরে আসবেনা। পুলিশের নির্মম বুলেট জনিকে ঝাঝড়া করে ফেলেছে। সারা শরীরে ২০টির অধিক বুলেটের চিহ্ন রয়েছে। গত সোমবার ছোটভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দেখে ফিরে আসার পথে ডিবি পুলিশ জনিসহ দুইজনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর সোমবার রাত পৌনে তিনটার দিকে খিলগাঁও জোরাপুকুর খেলার মাঠের নির্জন পাশে গুলি করে হত্যার পর কথিত বন্ধুক যুদ্ধের কাহিনী প্রচার করেছে। জনির বাবা ইয়াকুব আলী একজন সাধারণ রিকসা-গ্যারেজের মালিক। তিনি খবর শুনলেন তার ছেলে ঢাকা মেডিকেলে তখনও তিনি জানে না তার প্রিয় ছেলে আর নেই। তিনি ঢাকা মেডিকেলে পৌছে জানতে পারে মর্গে তার সন্তানের লাশ পড়ে আছে। প্রিয় সন্তান হারিয়ে বাবা নির্বাক হয়ে যায়। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। অন্যরা জনির মা মরিয়ম খাতুন নীলু ও স্ত্রীকে খবর দেয়। মা হাসপাতালে ছুটে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মূর্চা যায় আর চিৎকার বলে আমার ছেলে কি দোষ করেছে। ওকে কেন মারা হলো? আমাদের বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ? আমাদেরও মেরে ফেলেন। আল্লাহ ওদের বিচার করবে। স্বজনদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। চারপাশের সবার চোখে নিজেদের অজান্তে জল চলে আসে। রাতে যখন জনির লাশ তার জন্মস্থান খিলগাঁও তিলপা পাড়ায় নিয়ে আসা হয় তার আগেই তিলপা পাড়ার চারদিকে পুলিশ আর পুলিশ, জলকামান, দাঙ্গা পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার শত শত ব্যক্তিবর্গ। মনে হয়, তিলপা পাড়ায় কোন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর বীর যোদ্ধারা রণ প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ করতে ছুটে এসেছে। কিন্তু সেখানে জনির লাশ। রাস্তার দুইপাশ থেকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে পথ আটকে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারেনি। ওখানেই সংক্ষিপ্ত যানাজা শেষে তিলপা পাড়া কবরস্থানে জনিকে দাফন করা হয়। এই খবরে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সকলে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কেন এই নির্মম হত্যা? আমিও ফেইসবুকে জনির জন্য একটি স্ট্যাটাস লিখছিলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা আমাকে মোবাইল ফোন করে বলল, ভাইয়া আপনিতো জানেন ক’দিন আগে আমার মা মারা গেছে। এরপর থেকে আমি ঘর থেকে বের হই না। এমনকি কারও সাথে কথাও বলি না। কিন্তু জনির হত্যা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। কাল সকালে আমি জনির বাসায় যাবো আপনিও আসেন। আমি বললাম ঠিক আছে, সকাল ১০টায় আমরা যাচ্ছি। রাতে আর ঘুম হলো না। সারারাত এপিঠ-ওপিঠ করে কাটিয়ে দিলাম আর ভাবলাম, জনির অনাগত সন্তানের কি হবে? ও পৃথিবীতে আসার আগেইতো এতিম হয়ে গেল। জন্মের পর থেকে কোনদিনও কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না। ওর কি দোষ ছিল। ওতো নিষ্পাপ, এখনও পৃথিবীর মুখ দেখেনি। কিন্তু কেন নির্মম বুলেট ওর পিতৃ পরিচয় কেড়ে নিল? সকালে ঘুম থেকে উঠেই ৮টার সময়ই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। বের হতে হতে ফোন করলাম বন্ধুদলের সভাপতি শরীফ মোস্তফাজামান লিটুকে। বললাম, আমি রাজারবাগ চলে এসেছি। আপনিতো খিলগাঁও-এ থাকেন। যাবেন জনিদের বাসায় লিটু ভাই সাথে সাথে বলল, আমি আসছি। সকাল ১০.৩০ মিনিটে খিলগাঁও এর শান্তিপুরের চৌধুরী ভিলার নিচতলায় জনির মামা মোজাম্মেলকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করলাম। ঘরের ভিতরেই জনির বাবা ইয়াকুব, জনির মা মরিয়ম খাতুন নীলু, একমাত্র ছোট বোন তুলি এবং জনির স্ত্রী মনিয়া পারভীন মনীষা বসে আছে আর তাদের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমরা উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে তাদের কান্না ও চিৎকারে আমাদেরও চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসল। জনির বাবা ইয়াকুব বললেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমিও অংশগ্রহণ করেছি। আমার সন্তান সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ছিল না। তার অপরাধ সে শুধু বিএনপি’র ছাত্রদল করতো। এই অপরাধে বারবার জনিকে জেলে যেতে হয়েছে। আমার অন্য ছেলে মনিরুজ্জামান কোন অপরাধ না করে শুধুমাত্র জনির ভাই হওয়ার কারণে এখনও জেলে রয়েছে। আমার দুই সন্তান ছিল মানিক-জোড়া। আজ জনি নেই, আমি জনিকে ফিরে পাবো না। কিন্তু আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আমার বৌমাকে কি জবাব দেব, কি শান্তনা দেব। আমার বৌমার গর্ভে যে সন্তান আসছে তার কি হবে? এভাবে বললেন আর কাঁদলেন। জনির মা মরিয়ম খাতুন নীলু কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার ছেলের মুখ দেখলে আমি ভাল হয়ে যায়। সেই সন্তানকে ঘাতকরা কেড়ে নিয়েছে। ও কোন অপরাধ করতে পারে না। বিএনপি করার অপরাধেই আমার সন্তান খুন হলো। ঠিক সেই মুহুর্তেই পাশ থেকে জনির বাবা চিৎকার করে বললেন, আমার ছোট ছেলেও বিএনপি করবে। প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাবো। তারপরেও এই দু:শাসনের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবো। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমার আর হারাবার কিছু নেই। এক সন্তানকে হারিয়েছি, আরেক সন্তান কারাগারে। বৌমা সাত মাসের অন্ত:স্বত্তা। আপনারাই বলুন, আমার জনির কি অপরাধ? এলাকার সবার কাছ থেকে শুনুন, কেউ যদি বলতে পারে আমার ছেলে কারও সাথে বেয়াদবি করেছে কিংবা কোন অন্যায় করেছে তাহলে আমি কোন বিচার চাই না। ঠিক সেই সময় জনির স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, আর কতো স্ত্রী বিধবা হলে সরকার শান্ত হবে? আর কতো মায়ের কোল খালি করতে চায়, আর কতো শিশু সন্তানকে এতিম করতে চায়? আমি কারও কাছে বিচার চাই না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। তাদের কথা আর কান্না যেন থামেই না। কেঁদেই চলেছে, আর বলেই চলেছে, প্রতিবাদের অগ্নিমশাল জ্বলে উঠেছে জনিদের পরিবারে। সবকিছু হারিয়েও এখনও অনঢ়। দু:সাহসী, প্রতিবাদী একটি পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে যখন বের হয়ে আসলাম তখন নিজেকে ধিক্কার দিলাম আমরা কেন এখনও নিশ্চুপ রয়েছি। যারা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি তাদের বক্তব্য এখন কোথায়? কলম যোদ্ধাদের কলম থেমে গেছে কেন? মানবাধিকার নিয়ে যারা ঝড় তোলে তারা কোথায়? কেউতো জনিদের বাসায় যায়নি। অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কোন আশ্বাস ও সহানুভূতি দেখাইনি। এখনই সময় দু:শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। এখনই সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। জনির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থণায় করেছি কাপুরুষ হয়ে যেন মরতে না হয়। জনির মতো যেন গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য শহীদ হয়ে যেতে পারি।জীবনে অন্ধকার নেমে আসলো একটি সংবাদ
মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা

একটি সংবাদ একটি জীবনকে অন্ধকার করে দিল। আগত আরেকটি জীবনের ভবিষ্যতও অন্ধকারে নিমজ্জিত। আমি মনিয়া পারভীন মনীষার কথা বলছিলাম। পাবনার মেয়ে মনীষা মা-বাবার বড় সন্তান। দু’বছর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ শুক্রবার নতুন স্বপ্ন, নতুন সংসার ও নতুন আশা নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের মেধাবী ছাত্র ও খিলগাঁও থানার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির সাথে। সংসার জীবনের মাস না ঘুরতেই অপ্রত্যাশিত মনীষা জানতে পারল তার স্বামী জনিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই মনীষা বুঝতে পারল তার স্বামী অন্য ৮/১০ জনের মতো স্বাভাবিক চলতে পারে না। তার প্রতিটা মুহুর্ত আতঙ্কে কাটতে হয়। একবছর পর কোরবানী ঈদের কয়েকদিন আগে আবারও জনিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অনেক কষ্টে সেবার জনিকে ঈদের আগেই জামিনে মুক্ত করেছিলো। এসব এখন স্মৃতি। সর্বশেষ জনি মনীষার কাছে মোবাইল করে বলেছিল, তোমাকে আর খিদমাহ হাসপাতালে দেখাবো না আমি আল বারাকাত হাসপাতালের ডা: নাজনীন ম্যাডামের সাথে কথা বলেছি তিনি তোমাকে দেখবে। ডেলিভারীর সময় তোমার কোনই কষ্ট হবে না। তুমি অপেক্ষা করো, আমি আসছি। এই তার শেষ কথা। আমি কতোদিন, কতো মাস, কতো বছর অপেক্ষা করবো জনি তোমার জন্য। তুমি কি সত্যিই আসবে? জনি আর ফিরে আসবেনা। পুলিশের নির্মম বুলেট জনিকে ঝাঝড়া করে ফেলেছে। সারা শরীরে ২০টির অধিক বুলেটের চিহ্ন রয়েছে। গত সোমবার ছোটভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দেখে ফিরে আসার পথে ডিবি পুলিশ জনিসহ দুইজনকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর সোমবার রাত পৌনে তিনটার দিকে খিলগাঁও জোরাপুকুর খেলার মাঠের নির্জন পাশে গুলি করে হত্যার পর কথিত বন্ধুক যুদ্ধের কাহিনী প্রচার করেছে। জনির বাবা ইয়াকুব আলী একজন সাধারণ রিকসা-গ্যারেজের মালিক। তিনি খবর শুনলেন তার ছেলে ঢাকা মেডিকেলে তখনও তিনি জানে না তার প্রিয় ছেলে আর নেই। তিনি ঢাকা মেডিকেলে পৌছে জানতে পারে মর্গে তার সন্তানের লাশ পড়ে আছে। প্রিয় সন্তান হারিয়ে বাবা নির্বাক হয়ে যায়। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। অন্যরা জনির মা মরিয়ম খাতুন নীলু ও স্ত্রীকে খবর দেয়। মা হাসপাতালে ছুটে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মূর্চা যায় আর চিৎকার বলে আমার ছেলে কি দোষ করেছে। ওকে কেন মারা হলো? আমাদের বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ? আমাদেরও মেরে ফেলেন। আল্লাহ ওদের বিচার করবে। স্বজনদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। চারপাশের সবার চোখে নিজেদের অজান্তে জল চলে আসে। রাতে যখন জনির লাশ তার জন্মস্থান খিলগাঁও তিলপা পাড়ায় নিয়ে আসা হয় তার আগেই তিলপা পাড়ার চারদিকে পুলিশ আর পুলিশ, জলকামান, দাঙ্গা পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার শত শত ব্যক্তিবর্গ। মনে হয়, তিলপা পাড়ায় কোন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর বীর যোদ্ধারা রণ প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ করতে ছুটে এসেছে। কিন্তু সেখানে জনির লাশ। রাস্তার দুইপাশ থেকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে পথ আটকে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারেনি। ওখানেই সংক্ষিপ্ত যানাজা শেষে তিলপা পাড়া কবরস্থানে জনিকে দাফন করা হয়। এই খবরে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সকলে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কেন এই নির্মম হত্যা? আমিও ফেইসবুকে জনির জন্য একটি স্ট্যাটাস লিখছিলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা আমাকে মোবাইল ফোন করে বলল, ভাইয়া আপনিতো জানেন ক’দিন আগে আমার মা মারা গেছে। এরপর থেকে আমি ঘর থেকে বের হই না। এমনকি কারও সাথে কথাও বলি না। কিন্তু জনির হত্যা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। কাল সকালে আমি জনির বাসায় যাবো আপনিও আসেন। আমি বললাম ঠিক আছে, সকাল ১০টায় আমরা যাচ্ছি। রাতে আর ঘুম হলো না। সারারাত এপিঠ-ওপিঠ করে কাটিয়ে দিলাম আর ভাবলাম, জনির অনাগত সন্তানের কি হবে? ও পৃথিবীতে আসার আগেইতো এতিম হয়ে গেল। জন্মের পর থেকে কোনদিনও কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না। ওর কি দোষ ছিল। ওতো নিষ্পাপ, এখনও পৃথিবীর মুখ দেখেনি। কিন্তু কেন নির্মম বুলেট ওর পিতৃ পরিচয় কেড়ে নিল? সকালে ঘুম থেকে উঠেই ৮টার সময়ই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। বের হতে হতে ফোন করলাম বন্ধুদলের সভাপতি শরীফ মোস্তফাজামান লিটুকে। বললাম, আমি রাজারবাগ চলে এসেছি। আপনিতো খিলগাঁও-এ থাকেন। যাবেন জনিদের বাসায় লিটু ভাই সাথে সাথে বলল, আমি আসছি। সকাল ১০.৩০ মিনিটে খিলগাঁও এর শান্তিপুরের চৌধুরী ভিলার নিচতলায় জনির মামা মোজাম্মেলকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করলাম। ঘরের ভিতরেই জনির বাবা ইয়াকুব, জনির মা মরিয়ম খাতুন নীলু, একমাত্র ছোট বোন তুলি এবং জনির স্ত্রী মনিয়া পারভীন মনীষা বসে আছে আর তাদের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমরা উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে তাদের কান্না ও চিৎকারে আমাদেরও চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসল। জনির বাবা ইয়াকুব বললেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমিও অংশগ্রহণ করেছি। আমার সন্তান সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ছিল না। তার অপরাধ সে শুধু বিএনপি’র ছাত্রদল করতো। এই অপরাধে বারবার জনিকে জেলে যেতে হয়েছে। আমার অন্য ছেলে মনিরুজ্জামান কোন অপরাধ না করে শুধুমাত্র জনির ভাই হওয়ার কারণে এখনও জেলে রয়েছে। আমার দুই সন্তান ছিল মানিক-জোড়া। আজ জনি নেই, আমি জনিকে ফিরে পাবো না। কিন্তু আল্লাহর কাছে বিচার চাই। আমার বৌমাকে কি জবাব দেব, কি শান্তনা দেব। আমার বৌমার গর্ভে যে সন্তান আসছে তার কি হবে? এভাবে বললেন আর কাঁদলেন। জনির মা মরিয়ম খাতুন নীলু কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার ছেলের মুখ দেখলে আমি ভাল হয়ে যায়। সেই সন্তানকে ঘাতকরা কেড়ে নিয়েছে। ও কোন অপরাধ করতে পারে না। বিএনপি করার অপরাধেই আমার সন্তান খুন হলো। ঠিক সেই মুহুর্তেই পাশ থেকে জনির বাবা চিৎকার করে বললেন, আমার ছোট ছেলেও বিএনপি করবে। প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাবো। তারপরেও এই দু:শাসনের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবো। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমার আর হারাবার কিছু নেই। এক সন্তানকে হারিয়েছি, আরেক সন্তান কারাগারে। বৌমা সাত মাসের অন্ত:স্বত্তা। আপনারাই বলুন, আমার জনির কি অপরাধ? এলাকার সবার কাছ থেকে শুনুন, কেউ যদি বলতে পারে আমার ছেলে কারও সাথে বেয়াদবি করেছে কিংবা কোন অন্যায় করেছে তাহলে আমি কোন বিচার চাই না। ঠিক সেই সময় জনির স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন, আর কতো স্ত্রী বিধবা হলে সরকার শান্ত হবে? আর কতো মায়ের কোল খালি করতে চায়, আর কতো শিশু সন্তানকে এতিম করতে চায়? আমি কারও কাছে বিচার চাই না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। তাদের কথা আর কান্না যেন থামেই না। কেঁদেই চলেছে, আর বলেই চলেছে, প্রতিবাদের অগ্নিমশাল জ্বলে উঠেছে জনিদের পরিবারে। সবকিছু হারিয়েও এখনও অনঢ়। দু:সাহসী, প্রতিবাদী একটি পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে যখন বের হয়ে আসলাম তখন নিজেকে ধিক্কার দিলাম আমরা কেন এখনও নিশ্চুপ রয়েছি। যারা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি তাদের বক্তব্য এখন কোথায়? কলম যোদ্ধাদের কলম থেমে গেছে কেন? মানবাধিকার নিয়ে যারা ঝড় তোলে তারা কোথায়? কেউতো জনিদের বাসায় যায়নি। অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কোন আশ্বাস ও সহানুভূতি দেখাইনি। এখনই সময় দু:শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। এখনই সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। জনির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে এই প্রার্থণায় করেছি কাপুরুষ হয়ে যেন মরতে না হয়। জনির মতো যেন গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য শহীদ হয়ে যেতে পারি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×