বীরমুক্তিযোদ্ধা আওরঙ্গজেব’র সাথে না ফেরার দেশে চলে গেলেন যুবদল নেতা নুরুজ্জামান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জামালউদ্দিনসহ ৬ জন। শুধু শোক নয় এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান
............মঞ্জুর হোসেন ঈসা
মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব। তাঁর সাথে যুবদলের রাজপথের ত্যাগী কর্মী ও কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক নুরুজ্জামান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ দপ্তর সম্পাদক জামালউদ্দিন সহ ৬ জন নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করলেন। তাদের মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। তাদের নামাজের জানাযায়ও হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন এবং সকলেই শোকে শোকাহত হবেন। কিছুদিন পর হয়তো বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক সভা ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। বড়জোর বীরমুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উল্লাহ আওঙ্গের নামে একটি স্মৃতি সংসদ গঠিত হতে পারে। বছরে একদিন সেই স্মৃতি সংসদের থেকে তার স্মরণে স্মরণীকা প্রকাশ ও আলোচনা সভা হতে পারে। হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতা থেকে জাতীয়তাবাদী দলের পরীক্ষিত ও নির্ভিক রাজপথের সাহসী ছাত্ররাজনীতির সোনালী অতীত নুরুজ্জামান ও জামাল উদ্দিনসহ অন্যান্যরা। তাদের কেউ খবর রাখবে না। খবর রাখার প্রয়োজনও হবে না। কিন্তু তাদের পরিবারই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। দল করতে করতে এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল নিজের ও পরিবারের দিক খেয়াল করার সময় পায়নি। বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু অর্থ প্রয়োজন সেটুকুর মধ্যেই তৃপ্ত থাকতো নুরুজ্জামান ও জামাল উদ্দিন। মাঠ পর্যায়ের কোন নেতাকর্মীদের সাথে নুরুজ্জামান ও জামালউদ্দিনের দেখা হলেই তাদের এক গাল মিষ্টি হাসি আর ভালবাসামাখা দুটি কথা এখনও যেন কানে ভাসছে। বিশ্বাস করতে পারছি না চোখ ও কান নুরুজ্জামান ও জামালউদ্দিন নেই। আমরা চাই তাদের শোকে শোকাহত না হয়ে দলগত ভাবে তাদের পরিবারের পাশে বিএনপি দাঁড়াবে। নুরুজ্জামান এবং জামালের পাশে যদি জাতীয়তাবাদী দল দাঁড়ায় তাহলে ঈদের পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সেই আন্দোলনে তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই ও সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে। আর যদি না দাঁড়ায় গত সাড়ে চার বছরে বিএনপি যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে সেই আন্দোলন সংগ্রামে আ’লীগের কোন রাজনৈতিক ক্ষতি হয়নি, বরং তারা বিএনপির আন্দোলনকে নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তামাশা করে বক্তব্য রেখেছেন। এছাড়াও গত সাড়ে চার বছরে আ’লীগ তাদের দুঃশাসনে এবং তাদের সীমাহীন নির্যাতনে সম্প্রতি যে ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে সেই নির্বাচনে জনগনই বিএনপির পক্ষে স্বত্বঃস্ফূর্ত ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। তাই আমরা আশা করব বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে তৃণমুল নেতাকর্মীরা এখনও অনেকে জেলে মানবেতর জীবন যাবন করছে। তাদের জামিনের ব্যাপারেও দলীয়ভাবে তেমনকোন ভূমিকা নেই। তাদের পরিবার কিভাবে ঈদ করবে সে ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী যারা কিংবা যারা স্থানীয় প্রতিনিধি তাদের কোন আগ্রহ নেই। তাদের আগ্রহ আগামী সংসদ নির্বাচনে কিভাবে নিজের নমিনেশনটা কনফার্ম হবে। তাই এখনই সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তৃণমুল নেতাকর্মীদের ব্যাপারে একটি শক্ত নির্দেশনা দলীয় ফোরামে তুলে ধরা। যাতে করে যারা নির্যাতিত ও মৃত্যু মুখে পতিত হবে তাদের পাশে কেউ না কেউ আছে এই বিশ্বাস যেন দলীয় নেতাকর্মীরা করতে পারে। আমরা আশা করব এম নুরুজ্জামান ও জামালসহ যারা এই মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের পরিবারের পাশে বিএনপি দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খানবাড়ী এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গতকাল শনিবার জিপ ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাবেক সাংসদ বিএনপির নেতা হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ নিহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে গাড়িতে থাকা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আরও পাঁচজন নিহত হন।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ডামুড্যা উপজেলার আতলাকুড়ি গ্রামের জামাল উদ্দিন মুন্সী, শরীয়তপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের হযরত আলী, গোসাইরহাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ধিপুর গ্রামের নূর উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, ডামুড্যা উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি পূর্ব ডামুড্যা গ্রামের ইয়াছিন হালদার। দুর্ঘটনায় আরও ছয়জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জিপচালক জালালের অবস্থা গুরুতর।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হেমায়েত উল্লাহর স্ত্রী তাহমিনা খান সন্তানদের নিয়ে দ্রুত মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানায় আসেন। হেমায়েত উল্লাহর ছোট ভাই শহীদ খান বলেন, ‘তাঁর ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। নির্বাচনী এলাকা শরীয়তপুর-১ আসনের পূর্ব ডামুড্যায় স্থানীয় বিএনপির একটি ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে শরীয়তপুরে আসছিলেন হেমায়েত উল্লাহ। বিকেল চারটার দিকে আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর খবর পাই। তাঁর মৃতদেহ রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসভবনে নেওয়া হয়েছে।’
মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হেমায়েতের পাজেরো জিপটি খানবাড়ী এলাকায় পৌঁছলে জিপের পেছনের একটি চাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাতাস বের হয়ে চাকা বসে যাওয়ায় জিপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা গাঙচিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সামনে গিয়ে পড়ে। বাসের আঘাতে জিপের বাঁ পাশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সাবেক সাংসদ আওরঙ্গসহ চারজন নিহত হন। শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান নূর উদ্দিন। আর ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মারা যান নুরুজ্জামান। দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
লৌহজং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, শ্রীনগর থানায় আওরঙ্গসহ অন্যদের মৃতদেহ রাখা হয়েছে। পরে স্বজনেরা এসে তাঁদের শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, সাবেক সাংসদের জিপে গাড়িচালকসহ সাতজন ছিলেন। বেঁচে যাওয়া একমাত্র গাড়িচালক জালাল গুরুতর আহত হন। বাসের যাত্রীদের মধ্যে পাঁচজন সামান্য আহত হন। তাঁদের নাম জানা যায়নি।
হেমায়েত উল্লাহ শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের হাবিব উল্লাহ খানের ছেলে। তিনি ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে ২০০৫ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-গোসাইহাট-ভেদরগঞ্জের আংশিক) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন।
সড়ক দুর্ঘটনায় হেমায়েত উল্লাহর মৃত্যুতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত ২৭ জুলাই ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদী এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় বরগুনা-২ আসনের সাংসদ গোলাম সবুর (৫৫) নিহত হনমুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খানবাড়ী এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গতকাল শনিবার জিপ ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাবেক সাংসদ বিএনপির নেতা হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ নিহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে গাড়িতে থাকা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আরও পাঁচজন নিহত হন।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ডামুড্যা উপজেলার আতলাকুড়ি গ্রামের জামাল উদ্দিন মুন্সী, শরীয়তপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের হযরত আলী, গোসাইরহাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ধিপুর গ্রামের নূর উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, ডামুড্যা উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি পূর্ব ডামুড্যা গ্রামের ইয়াছিন হালদার। দুর্ঘটনায় আরও ছয়জন আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জিপচালক জালালের অবস্থা গুরুতর।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হেমায়েত উল্লাহর স্ত্রী তাহমিনা খান সন্তানদের নিয়ে দ্রুত মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানায় আসেন। হেমায়েত উল্লাহর ছোট ভাই শহীদ খান বলেন, ‘তাঁর ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। নির্বাচনী এলাকা শরীয়তপুর-১ আসনের পূর্ব ডামুড্যায় স্থানীয় বিএনপির একটি ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে শরীয়তপুরে আসছিলেন হেমায়েত উল্লাহ। বিকেল চারটার দিকে আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর খবর পাই। তাঁর মৃতদেহ রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসভবনে নেওয়া হয়েছে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় হেমায়েত উল্লাহর মৃত্যুতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাবেক এমপি আওরঙ্গের তৃতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর পৌনে ১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদল সভাপতি আলাল, জিয়া সেনার সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা সহ বিএনপি যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, তাতীদলের নেতৃবৃন্দ। জানাজা পড়ান জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা হাফেজ আব্দুল মালেক। শনিবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদেনীমণ্ডল এলাকায় জিপগাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গসহ ছয়জন নিহত হন।
উল্লেখ্য, সাবেক এমপি হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ ১৯৯১ সালে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে বিজয়ী হন । ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ওই আসন থেকে তিনি জয়লাভ করেন। এরপর ২০০৮ সালে শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি পরাজিত হন।