আমরা জানি, জাপানের শিশুরা কখনো কাঁদে না। তাদের স্কুলে কোন পরীক্ষা নেই। বন্ধুকে প্রতিদ্বন্দ্বি কখনোই ভাবতে হয় না। তারা শিখে খেলতে খেলতে, আনন্দ করতে করতে। আর এজন্য জাপানের শিশুশিক্ষা ব্যবস্থাকে বলা হয় পৃথিবীর সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা। আর আমাদের? অসংখ্য শিশু বলাৎকারের শিকার হয় প্রতি বছর। মারধর চলতেই তাকে। আর প্রাইভেট, গাইড নোট চেপে আছে দানবের মতো। এই করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ। তাই এখনই সময় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার, কথা বলার।যাতে আগামী বছর থেকে একটি আধুনিক ও শিশুর জন্য প্রকৃত মানবিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু করা যায়। আজ দুটি দিক নিয়ে বলব-
১। আমাদের ক্লাস শুরুর পরপরই শুরু হয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেখানেই শুরু হয় নিপীড়নের সূচনা। প্রতিটি স্কুলেই খেলা শেষ হলেও পুরস্কার নেয়ার জন্য তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। অতিথি হিসেবে আসে মন্ত্রী, এমপি, নেতারা না হলে মস্ত কোন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ সাথে নেতা-পাতিনেতাতো থাকেই। শুরু হয় শিশুদের দাঁড়িয়ে থাকা। ওনারা অর্থহীন মিথ্যাচার আর রাজনৈতিক কথা বলতে বলতে শিশুদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে। দীর্ঘসময় এসব বাজে কথা শুনিয়ে তাদের হাতে খুবই নিম্নমানের পুরস্কার তুলে দেয়। আর অতিথিরা ভূরিভোজ সেরে বিদায় নেয়। বড়দের কুপ্রভাব সরলমতি ও ভালমনের শিশুদের মধ্যে বাজে অনেক ধারণা ঢুকিয়ে দিয়ে যায়। ওরাই শুরু করে শিশুদের নষ্ট করা। তাই স্কুলগুলোর জন্য প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এমন একটি দিন নির্ধারণ করে দিতে হবে যাতে সব স্কুলের খেলা একদিনেই হয়। এতে ওই নষ্ট মানুষরা আর সুযোগ পাবে না শিশুদের নষ্ট করতে। পুরষ্কারও হোক মজার মজার। প্রচলিত দৌড়-ফৌড় এর পরিবর্তে নিয়ে আসতে হবে মজার মজার মজার খেলা। যারা জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে তাদের জন্য থাকুক আলাদা ব্যবস্থা।
২। প্রাথমিক পর্যন্ত সকল ধরনের পরীক্ষাই তুলে দিতে হবে। গাইড, নোট, প্রাইভেট একেবারে আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রতিটি স্কুলেই রাখতে হবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ছবি আঁকবে, গান গাইবে, কবিতা/ছড়া লিখবে/পড়বে, মাটি দিয়ে মূর্তি গড়বে, অনলাইন জগতে ঢুকে কার্টুন দেখবে, আর লিখতে, পড়তে শিখবে। তারা পড়বে সেরা লেখক/গবেষকদের লেখা নিয়ে তৈরি সেরা পাঠ্য বই। সেখানে কোন জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক, রাজনৈতিক চেতনা ঢোকানো নিষিদ্ধ থাকবে। ছয় বছর পড়ে তারা হাই স্কুলে যাবে এবং সেখানে তারা দ্বাদশ ক্লাস পর্যন্ত পড়বে। পরীক্ষা দিবে তবে ফলাফল হতে পারে সর্বোচ্চ গ্রেড হিসেবে রোল নং হিসেবে নয়। রোল নম্বর হবে সিক্সে ভর্তির রোল। একই রোল যেমন আগামী বছর যে সবার আগে ভর্তি হবে তার রোল হবে ২০২২ ০১ এবং এটাই থাকবে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। কোন ফেল থাকবে না। দ্বাদশে গিয়ে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে তারা গ্রেড অর্জন করবে।