বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনীতিবীদদের লেখা আত্মজীবনীর মধ্যে সেরা। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কি সেরা? কদিন আগে কবি অসীম সাহার সাথে আমি সম্পূর্ণই একমত হলাম যে, নির্মলেন্দু গুণের ‘আমার কণ্ঠস্বর’ অসাধারণ, অনন্য। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা জ্যোতি বসুর ‘যতদূর মনে পড়ে’ কিংবা তসলিমা নাসরিনের আত্মজৈবনিক গ্রন্থগুলো, গাফফার চৌধুরীর ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’ আবুল মনসুর আহমেদের ‘আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর’ হুমায়ূন আহমেদের ‘আমি’ কিংবা কাঠ পেন্সিল-বলপয়েন্ট-ফাউন্টেইন পেন ইত্যাদি (এগুলোর ও আরোকিছুর সংকলনই আমি)। লেখার সততা ও উপস্থাপনার প্রাঞ্জলতা মিলিয়েই বলতে হবে সেরা কোনটি? সুনীলের গদ্য বাংলাভাষার মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। নির্মলেন্দু গুণও ভাল গদ্য লিখেন। তার বোহেমিয়ান ও বৈচিত্রময় জীবন বাংলাসাহিত্যে আর কারো নেই- শরৎচন্দ্রেরও নয়, বিভূতিভূষণেরও নয়। এতোটা অকপটে আর কেউ লিখেনও নি। অন্যকে দোষারূপ নয়, নিজের জীবনের ত্রুটি -বিচ্যুতি এতোটা খোলামেলাভাবে বাংলা সাহিত্যে আর কেউ লিখেন নি। তাই তাঁর ‘আমার কণ্ঠস্বর’ কেই এগিয়ে রাখি। বঙ্গবন্ধু আর সুনীলও খোলামেলাভাবেই লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জীবনের কারণেই তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এতোটা মহৎ। জ্যোতি বসু শুধু প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের কথাই মূলত লিখেছেন। ফলে এর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। তাঁর মতো এতো দীর্ঘকাল এতো সাবলিলভাবে সরকার খুব কমলোকই চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো জ্যোতি বসুর গ্রন্থটিও রাজনীতিবীদদেরসহ সবার জন্য পড়া বাঞ্ছনীয়। সুনীল আকর্ষণীয়, তার এই বইটিও আকর্ষণীয়। এরপরেই রাখতে হয় আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা' এবং আবুল মনসুর আহমেদের ‘আমর দেখা রাজনীতির ৫০ বছর’। হুমায়ূন তসলিমার বইগুলো সাহিত্যপ্রেমিদের মুগ্ধ করেছে বটে। হুমায়ূন পড়ে মজা পেয়েছে পাঠক, তসলিমা এগুলো লিখে হয়েছেন বিতর্কিত কিন্তু তার সাহসকে শ্রদ্ধা করার পাঠকও দেশে কম নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩