মানুষকে অতিমাত্রায় বুদ্ধিমান হিসাবে তৈরী করিয়া সৃষ্টিকর্তা যে ভুল করিয়াছিলেন নিশ্চয় তিনি তাহার জন্য এখন পস্তাইতেছেন। কেননা ইহাতে চেক এন্ড ব্যালেন্সের যে সার্বজনীন নীতি তাহার ব্যত্যয় ঘটিয়াছে।
কথাগুলি আপাত দৃষ্টিতে রূঢ় মনে হইলেও ইহাই বাস্তব সত্য। বাল্যকালে দেখিয়াছি শৌল মাছ, টাকি মাছ বা অন্যান্য প্রজাতির মসৎ সমূহ হাজার হাজার পোনার ডিম প্রসব করিয়াও মাত্র গুটি কয়েক পোনাকে পরিপূর্ণ মসৎ হিসাবে আকৃতি দান করিতে সমর্থ হইয়াছে। বাকী পোনা গুলি অন্যান্য মস্যের খাবারে পরিণত হইয়াছে। তদ্রূপ অন্যান্য প্রাণীকূলের মধ্যেও একই পরিক্রমা বিদ্যমান।যেমন ছাগল ঘাস খায়, বাঘে ছাগল খায়, আবার অন্যান্য দূর্বল প্রাণী খাইতে খাইতে যখন প্রাণীকূলের পরিমাণ কমিয়া আসে তখন খাবারের অভাবে বাঘ ইন্তেকাল করিয়া থাকে। অতপরে বাঘ বা অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর সেইসব বাসি-পচা দেহ খাইয়া বৃক্ষকূল সবুজ হইয়া ওঠে। এভাবেই চক্রাকারে অন্যান্য প্রাণীকুল ও বৃক্ষ সম্প্রদায়ের মধ্যে একই নীতি পরিলক্ষিত হইলেও মনুষ্যকূলের নিকট এই নীতির প্রয়োগ ঘটে নাই। ইহাতে পৃথিবীর ভারসাম্যহীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে।
মানুষ বৃক্ষ কাটিয়াছে কিন্তু বৃক্ষ রোপণে উদ্যোগী হয় নাই, মানূষ নদী ভরাট করিয়াছে কিন্তু জীবনের জন্য অপরিহার্য পানি প্রবাহের ব্যাপারে যত্নবান হয় নাই, মানুষ পাহাড় কাটিয়াছে কিন্তু পাহাড়ের কারণে যে বৃষ্টিপাত হয় সেই ব্যাপারে কর্নপাত করে নাই, মানুষ অতিরিক্ত সন্তান প্রসব করিয়াছে সত্যি কিন্তু তাহাদের সুরক্ষা দিবার নিমিত্তে অতিরিক্ত আবাসন সৃষ্টি করিয়াছে ইহাতে আবাদী জমির বিনাশ, নদী ভরাট, পাহাড় কাটা ইত্যাদি পরিবেশ বিনাশী কর্মও করিয়াছে। ইহাতে মসৎ,পাখি ও বৃক্ষকূল তাহাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ হইতে বঞ্চিত হইয়াছে। মানুষ অতিরিক্ত সন্তান প্রসব করিয়া তাহাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিয়াছে ইহাতে ব্যঘ্র ও সিংহকূলের খাবারের সংকট আরও বেশী করিয়া ঘনীভূত হইয়াছে।
মানুষের অতিমাত্রায় বুদ্ধিমান হওয়ার কারণে তথাকথিত মানব সভ্যতার আপাত দৃষ্টিতে প্রভূত উন্নতি হইয়াছে বলিয়া মনে করিলেও মূলত ইহাতে পৃথিবীর ভয়াবহ ক্ষতি হইয়াছে, মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আনবিক শক্তির ব্যাবহার শুরু করিয়াছে, ইহাতে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাইয়া পৃথিবীতে জলচ্ছ্বাসের পরিমাণ বাড়াইয়া দিয়াছে, তাপমাত্রার পরিমাণ বাড়িয়া পৃথিবী ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হইয়া যাইতেছে। অতিরিক্ত মানুষ বিনাশের উপায় নাই বলিয়া পৃথিবীতে খাদ্যাভাব বাড়িতেছে আর ইহাতে মানুষ হিংস্র হইয়া অন্যের অনিষ্ট করিতেছে, দেশ দখল করিতেছে, অন্যের সম্পত্তি গ্রাস করিতেছে।
এহেন অবস্থায় মহামারী, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও অন্যান্য সরাসরি উপলক্ষ্য তৈরী করিয়া এই অতি বুদ্ধিমান মানব জাতির ধ্বংস করিয়া স্বল্পমাত্রার বা নির্বোধ মানব জাতি সৃষ্টি করা ছাড়া সৃষ্টিকর্তার এই বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে টিকিয়ে রাখার আর অন্য কোন উপায় নাই। মনে রাখা প্রয়োজন কুকুরের লেজ চুঙ্গার মধ্যে যতই সোজা থাকুক চুঙ্গার বাহিরে আসিলেই ইহা আবার বক্রাকৃতি ধারণ করিবেই, সুতরাং মানুষ এইটা করিলে সেইটা হইতে পারে সেই জন্য আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি করিয়া কোন ফায়দা নাই।
১২ ই মে ২০১৬
যুক্তরাজ্য।
(বিঃ দ্রঃ অতিমাত্রায় বুদ্ধিমান কেহ এই লেখায় হতাহত হইলে লেখক দায়ী নহে। হেহেহে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ ভোর ৪:৩৮