আজ ৭ জানুয়ারি। ফেলানী হত্যা দিবস। ২০১১ সালের এই দিনে এশিয়ার বধ্যভূমিখ্যাত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক নারকীয় হত্যাকান্ড। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তার নিথর দেহ কাঁটাতারের সঙ্গে পাঁচ ঘন্টারও বেশী সময় ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নির্মম ভাবে ফেলানীকে হত্যা করে। মেয়েটির প্রাণ বায়ু বের হয়ে যাওয়ার আগে সে পানি পানি করে চিৎকার করেছে কিন্তু তাকে কেউই পানি দিতে এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত এক বুক পিপাসা নিয়ে তার আত্মা দেহ ত্যাগ করে।
এর পর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে সারা দেশ। প্রতিবাদ উঠে সাধারন মানুষের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনের চাপে এবং বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়।
এরপর গত ১৩ অগাস্ট ভারতের কোচবিহার জেলায় সোনারি বিএসএফ ছাউনিতে অমিয় ঘোষের বিচার শুরু হয়। ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
পাঁচ বিচারকের এই আদালত রায়ে বলে, বিএসএফ ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের হাবিলদার অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আদালত পায়নি।
এভাবে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
কিন্তু সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যা মামলার রায়ে বিএসএফ'র অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে বিএসএফের নিজস্ব আদালত ।
বিএসএফ এর সীমান্ত হত্যা এটিই প্রথম ছিলো না। এর আগেও নিয়মিত ভাবে তারা গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করতো। কিন্তু ফেলানীর এই হত্যা পূর্বের সব হত্যাকাণ্ডের বর্বরতাকে হার মানিয়ে যায়।
ফেলানীর এই হত্যা আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে যায় আমরা কতটুকু স্বাধীন। আমাদের স্বাধীনতার অর্থ কতটা নিরর্থক। আমরা প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত বাহিনীর হাতে কতটা অসহায়।