গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে গিয়েছিলাম মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় ঝিটকা বাজারের পাশে বালতা ইউনিয়নের শিকদারপাড়া গ্রামে। এই গ্রামেই তৈরি হয় বিখ্যাত হাজারি গুড় (খেজুরের গুড়)। আমার সাথে ছিলেন মুন্নু গ্রুপের আই.টি ম্যানেজার হাসান পারভেজ ভাই।
প্রায় দেড় শ’ বছর আগে হাজারি গুড়ের উৎপাদন শুরু করেছিলেন স্থানীয় গাছি মিনহাজউদ্দিন আবেদিন হাজারি। গাছ থেকে রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে জ্বাল দেয়া ও গুড় বানানো পর্যন্ত বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। সেই থেকে আজো অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রেখে খেজুরের রস দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি এই হাজারি গুড় বাজারজাত করে যাচ্ছেন এখানকার গাছিরা। সারা দেশে খেজুরের গুড় পাওয়া গেলেও হাজারি গুড়ের জন্য বিখ্যাত মানিকগঞ্জের ঝিটকা গ্রাম। এখানকার উৎপাদিত হাজারি গুড়ের চাহিদা দেশব্যাপী। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকায় এই গুড়ের সুনাম রয়েছে। ঝিটকা বাজারে হাজারি গুড়ের হাট বসে প্রতি শনিবার।
এই গুড়ের মুল্য ২৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর ৮০০ টাকার নিচে প্রকৃত হাজারি গুড় পাওয়া যাবে না। প্রকৃত গুড়ের রং সাদা এবং হাতে নিয়ে চাপ দিলে একদম গুরা হয়ে যায়।
বর্তমানে ঝিটকা গ্রামের হাজারি পরিবারের ১৫-২০ জন গাছি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরির সাথে সম্পৃক্ত। এই পরিবারের দেখাদেখি ঝিটকা গ্রামের অন্য গাছিরাও হাজারি গুড় উৎপাদন করে থাকেন। তবে প্রকৃত হাজারি গুড় তৈরি মূলমন্ত্র একমাত্র তার পরিবারের সদস্যরাই জানেন বলে জানা যায়।
সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত। বছরের অন্য সময় ঝিটকা গ্রামের মানুষজন অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও শীত মওসুমে সবাই গুড় তৈরি কাজে ব্যস্ত থাকে। রস সংগ্রহ, জ্বাল দেয়া ও গুড় বানানো এ কাজে পরিবারের সবাই সহযোগিতা করে থাকে বলে জানা যায়। অন্য যেকোনো খেজুরের গুড়ের তুলনায় হাজারি গুড়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- হাতে নিয়ে ঘষা দিলেই সাথে সাথে তা ফাঁকি হয়ে যায় তার প্রমাণ করলেন একজন বিক্রেতা।
কথিত আছে ব্রিটিশ আমলে রানি এলিজাবেথ ভারতবর্ষ সফরকালে রানির খাবার টেবিলে দেওয়া হয়েছিল এই গুড়। রানি কৌতূহলবশত হাতে নাড়াচাড়া করে একটু চাপ দিতেই গুড়ের দলা ভেঙে হাজার টুকরা—এই হলো হাজারি গুড়। এই গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রানে মুগ্ধ হয়ে রানী হাজারি নামে একটি সীলমোহর প্রদান করেন। আর সেই থেকে এর নাম হয় হাজারি গুড়।
তবে বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে এবং নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে না। পাশাপাশি এই গুড় তৈরির কারিগর বা গাছীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে এবং নুতন প্রজন্মের এই কাজের প্রতি আগ্রহ নেই। তাই অদুর ভবিষ্যতে হয়তো হারিয়ে যাবে হাজারি গুড়।
বিস্তারিত দেখুন শাইখ সিরাজের প্রতিবেদনে >> https://www.youtube.com/watch?v=OG6Hnwxppsk
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:১৯