ফাগুনে আগুন, চৈতে মাট বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি। এটা আমাদের সমাজের কৃষকের জন্য প্রয়োজনীয় খনার বচন। ফাগুন মাসে বাঁশে আগুন দিতে হলেও শিমুল-পলাশের মত কিছু কিছু গাছে এমনিতেই আগুন লেগে যায়। ফাগুন মাসে শুধু গাছেই আগুন লাগে না মানুষের মনেও আগুন লাগে সে আগুন কখনো সৃষ্টির আবার কখনো ধ্বংসের।
ঋতুরাজ বসন্তের শুরু হয় ফাগুন মাস দিয়ে। ফাল্গুন মাস পরিবর্তনের মাস এই মাসে গাছের পাতা ঝরে যায় আবার এই মাসে বাতাস তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করে। এই মাসে কোকিল ডাকে। কোন কোন মানুষও এই মাসে কোকিল হয়ে তাঁর সাথী খোঁজা শুরু করে দেয়।
পৌষ-মাঘ মাসে সূর্যের কোন প্রভাব না থাকলেও ফাল্গুন মাস থেকে সূর্যের খরতাপ বাড়তে থাকে সাথে সাথে তাঁর প্রভাবও বাড়ে। কুয়াশার মায়াজাল ফাগুনের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। সাথে সাথে ঠাণ্ডা মাটি ও ধরনী উত্তপ্ত হতে শুরু করে যা চৈত্র মাসে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। মাটি থেকে ঝিঁঝিঁ পোকা বের হয়ে গগন ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে অবশেষে গাছে গাছে তাদের খোলস পরে থাকে। ঝিঁঝিঁ পোকার মত ফাগুন মাসে সাপও গর্ত থেকে বের হয়ে আসে এবং খোলস পাল্টায়।
গ্রাম বাংলায় ওয়াজ-মাহফিল, গানের আসর, নাতক-যাত্রা, মেলা-প্রদর্শনী ইত্যাদি অনুষ্ঠান ফাগুন মাসেই বেশি হয়। এসব অনুষ্ঠান মানুষের মনে বিভিন্ন আঙ্গিকে দোলা দেয়। এই দোলা থেকে একেক মানুষ একেক ভাবধারায় গড়ে ওঠে। এই মাসে খাবারের স্বাদ পরিবর্তন হয়। বাংলার মানুষ এই মাসেই পান্তাভাত খাওয়া পুনরায় শুরু করে।
‘যদি বর্ষে ফাল্গুনে/ চীনা কাউন দ্বিগুণে', ‘ফাল্গুনে গুড় আদা বেল পিঠা/ খেতে বড় মিঠা'। কৃষির সাথে ফাল্গুনের ভালো যোগসূত্র রয়েছে। কৃষকের নিকট ফাগুন মাস ফসল বিক্রির মাস আর আড়ৎদারের নিকট ফসল সংরহের মাস। সরিষা, বিভিন্ন প্রকার ডাল, খেজুরের গুর, মধু এই মাসেই বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়। এই ফাল্গুন মাসেই আম-কাঁঠাল-লিচু গাছে মুকুল আসে। পলাশ, শিমুল, কাঞ্চন, পারিজাত, মাধবী, গামারী আর মৃদুগন্ধের ছোট ছোট বরুণ ফুলে। এছাড়া গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়াসহ হাজারো নামের বর্ণালী ফুল এই মাসেই পরিপূর্ণ বিকশিত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৯