নাহ, এই ম্যাচ নিয়ে আমার কোন আবেগ নেই। ভারতীয় হিসেবে নেই, বাঙালি হিসেবেও নেই। তবু হয়তো সন্ধ্যে বেলা টিভির সামনে বসব এবং ভারতের জয় চাইব, কারণ ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশীদের আবেগ বিরক্তিকর।
আমার ফ্রেন্ডলিস্টে প্রতি চারজনে একজন বাংলাদেশি। তাঁরা কাল রাত থেকে উন্মাদের মতো আচরণ করছেন। 'মাইর্যা ফেলুম, কাইট্যা ফেলুম' টাইপ চলতি লবজে ওয়াল ভরিয়ে ফেলছেন। রাতে দুঘন্টার একটা স্প্যানে নিরানব্বই শতাংশ মানুষ জাতীয় পতাকার রঙ-এ নিজের প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করেছেন, ফ্রিকুয়েন্সিতে নিশ্চিত যা গিনেস রেকর্ড। তাঁরা খাচ্ছেন না, ঘুমোচ্ছেন না, দু:স্বপ্ন দেখছেন, আর তাল ঠুকছেন কখন ম্যাচ শুরু হয়। উইকেট পড়লে খিস্তিয়ে ভারতের ভূত ভাগিয়ে দেবেন।
আমার প্রশ্ন কেন? মানে এত উন্মাদনা কীসের? আজ জিতুন বা হারুন, একইভাবে আপনারা ভারতের কনজুমার থেকে যাবেন। আপনাদের ব্যবসা, বৈদেশিক নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একইভাবে দিল্লির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা এদ্দিন হয়ে আসছে। মায় টিভিতেও আপনারা তাই দেখবেন যা স্টার জলসা আর জি বাংলা দেখাবে। জিতলে আপনাদের সাপ্রেসড ইগো স্যাটিসফায়েড হতে পারে, বাড়তি কিচ্ছু ছেঁড়া যাবে না। তবু আপনারা পাগল হয়ে যাচ্ছেন।
আপনাদের অধিনায়ক মাশরফির একটা সাক্ষাতকার নিয়ে খুব প্রশংসা হচ্ছে এখানে। সাক্ষাতকারে মাশরফি বলেছেন ক্রিকেটটা বিনোদনমাত্র, জাতীয়তাবাদের হাতিয়ার নয়। তিনি একথা বলেছেন, বলতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ ক্রিকেট নিয়ে আপনাদের চণ্ডনীতির মাশুল তাঁকে গুণতে হচ্ছে। কদিন আগেই গ্যালারিতে সাকিবের স্ত্রীর সংগে অশালীন আচরণ করা হয়েছিল, যার ঘা এখনও দগদগে। সৌম্য সরকার বা লিটন রান না পেলে তাঁদের ভারতের দালাল বলে গালিগালাজ করা হচ্ছে। টাকা-আনা-পাইয়ের হিসেব আর বিজ্ঞাপনের খতিয়ান দিয়ে শুনিয়ে দেওয়া হচ্ছে লুটে তো নিচ্ছ, খেলে পরিশোধ কর। এই পরিবেশ অস্বাভাবিক, অসুস্থ। উন্মাদের সংখ্যা কাঁটাতারের এপারেও কম নয়। খারাপ খেললে এখানেও ধোনির বাড়িতে ইঁট পড়ে, রাস্তায় আগুন জ্বলে, ঘরে ঘরে অরন্ধন হয়। কিন্তু সেটা এমন সামগ্রিক জহরব্রত নয়। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই আপনারা ফুঁশে উঠছেন, চিল্লাচ্ছেন, খিস্তাচ্ছেন। কেন!?
সত্যি আর ভালো লাগে না দাদা। একদমই ভালো লাগে না। এই উপমহাদেশের মানচিত্রে বহু রক্তের দাগ, বহু যুদ্ধের স্মৃতি। ছেঁড়া সীমানায় ভাইয়ের লাশ লুকিয়ে টিভির সামনে বসি আমরা। পাশবিক উল্লাসে টুকরো করে ফেলতে চাই পড়শি মানুষকে। কিন্তু এভাবে আর কদ্দিন! ক্লান্ত লাগে না? হতাশ হন না? এই প্রজন্মের হাত ধরে আমাদের উঠে দাঁড়ানোর কথা ছিল, তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্য আর বঞ্চনা ঠেলে আমাদের উঠে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু আমরা পারছি কই? আমাদের আড্রিনালিন ক্রিকেট মাঠেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। সেটাই কী চান? বেশ, ফুরিয়ে যাক তাহলে, দেশ যাক ভাড়মে। আসুন ক্রিকেট খেলি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮