বেশ কিছুদিন হল সিয়ামকে পড়াতে আসছেন না তার স্যার সাব্বির। স্যারের বাসায় খোঁজ নেওয়ার জন্য বিকালে রওনা হল সিয়াম। শহরতলীর একটা বিল্ডিং এর চিলেকোঠায় থাকে সাব্বির। ইঠাৎ করেই জরুরী কাজে তাকে বাড়ি যেতে হয়েছে। গতকাল রাতে ফিরেছে।
দড়জায় নক হতেই খুলে দেখে সামনে সিয়াম দাড়িয়ে ।
দশম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম। পড়ার চেয়ে কম্পিউটার নিয়েই বেশি বেস্ত থাকে সে। স্যারের সাথে তার বন্ধুর মত সম্পর্ক। স্যার হিসেবে সাব্বিরকে ভালই লাগে সিয়ামের। তবে যেদিন একটু কড়া শাসন করে সে দিন তার মুড অফ থাকে।
সাব্বির অনার্সে পড়ে। বাড়ির আর্থিক অবস্থা তেমন সুবিধার নয়। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়ে নেয় টিউশনি করে। রান্না বান্নার কোন ঝামেলা নেই তাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে টেনশন নেই । সকালের নাস্তা বাদে দুইবেলা সিয়ামদের বাসায়ই খেয়ে নেয়।
স্যার আপনি গত কয়েকদিন পড়াতে যাচ্ছেননা দেখে আমিই চলে আসলাম। মনে হয় অসুখে পড়েছেন। ইস্ আপনের অসুখ না হয়ে আমার হওয়ার দরকার ছিল।
কেন ?
না মানে। কয়দিন রেস্টে থাকতাম আর কম্পিউটার টিপতাম।
স্যার আপনার কম্পিউটারে ধুলা পড়েছে। অনেক দিন ব্যবহার করেননা। আপনার পিসিতে গেইম নেই?
না নেই।
মুভি ?
আছে তোমার পছন্দ হবেনা।
হিন্দি নতুন একটা ছবি এসেছে স্যার। ফটাফাটি ছবি। দেখেছেন ?
না।
স্যার আপনার কম্পিউটারটা একটু দেখি।
ঠিক আছে তুমি থাক আমি একটু বাহিরে থেকে আসছি।
কম্পিউটার অন করে সে ভাইরাস নামক ফোল্ডার খুঁজতে লাগলো। তার বন্ধু রোহান বলেছে-বেশিরভাগ কম্পিউটারে ভাইরাস নামক ফোল্ডারে পর্ণ থাকে। ভাইরাস নাম দেখলেই সবাই এড়িয়ে যায়। তাই এমন ফোল্ডারে নিরাপদ মনে করে গোপন জিনিস রাখে অনেকে। নিজের পিসিতেও কিছু এডাল্ট ভিডিও রেখেছে সিয়াম। বাসায় কেউ না থাকলে বেশ উপভোগ করে। তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল কাংখিত জিনিস না পেয়ে।
সাব্বির ফিরে এসে দেখে কম্পিউটার বন্ধ। কি ব্যাপার ভাললাগছেনা- কম্পিউটার বন্ধ যে ? এমন মনমরা হয়ে বসে আছ কেন ?
আপনার পিসিতে কিছু নেই।
তুমি কি বিশেষ কিছু খঁজছিলে ?
না । মানে স্যার.....................................।
তোমার মত সবাইকে ভাবা ঠিক নয়। কম্পিউটার মানেই বিনোদন নয়। কাজের জিনিস। যারা কাজ করেনা তারাই কম্পিউটারে বিনোদন নিয়ে পড়ে থাকে।
তোমার বাবাকে বলব তোমার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে ? তিনি যেন এন্টিভাইরাসের ব্যবস্থা করেন।
স্যারের কথা শুনে সিয়াম লজ্জা পেল এবং কিছুটা চমকে গেল। মুখে শুকনা হাসি ফুটিয়ে বলল- আমার কম্পিউটারে খারাপ কিছু নেই। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি।
থাম । এখন বাসায় যাও। আমি একটু পরে আসছি।
বাসায় ফেরার পথে বন্ধু রোহানের সাথে দেখা।
রোহান বলল-চল আমাদের বাসায় কেউ নাই। তোকে নতুন জিনিস দেখাবো।
না রে দোস্ত। একটু পড়ে স্যার আসবে। আমি যেতে পারবনা।
অনেক জোড়াজোড়ির পরও সিয়াম রোহানের সাথে না গিয়ে বাসায় চলে এল।
সে বাসায় এসে তার কম্পিউটারের সমস্ত এডাল্ট ভিডিও ডিলেট করে দিল।
বাসার কেউ টের পেলে তাকে কম্পিউটার ছাড়া করবে এমনকি বাবা গায়েও হাত তুলতে পারে। এখন তার মনে কোন পাপবোধ নেই।
স্যারের পড়া আজ মনোযোগ দিয়ে পড়েছে। তার মধ্যে একটা পরিবর্তন এলো ।
রাতে তার ভাল ঘুম হলো। তার কম্পিউটার এখন ভাইরাস মুক্ত। তার আর কোন ভয় নেই।
সত্য ঘটনার ছয়া অবলম্বনে।
ছবি : নেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭