( "Is Hijab an insult or honour to women???" শিরোনামে আমার এক ভারতীয় ভাইয়ের ইংরেজিতে করা নোট আমি বাংলায় রুপান্তর করেছিলাম। সেই লেখায় এক সংশয়বাদী Srinivas Das ভাইয়ের মন্তব্য এবং আমার কিছু পাল্টা মন্তব্য ছিল , যা আজ অনেকদিন পর মনে পড়ল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। )
Srinivas Das ভাই এর মন্তব্য
রেপ হওয়ার জন্য যদি মেয়েদের ছোট পোশাককে বা হিজাব না পরাকে দায়ী করেন, তবে ডেঙ্গু বা মালেরিয়ার জন্য দায়ী মশারী, মশা মোটেই নয় । নিজেকে বদলান, অজুহাত নয় !
আমার রিপ্লাই
জৈবিক আকাঙ্খা জাগ্রত হয় সেক্স হরমোন নির্গমনের মধ্য দিয়ে, পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরোন হরমোন আর নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন। টেস্টোস্টেরোন হরমোন পুরুষের যৌনতা, ডোমিনেন্স, এগ্রেসিভনেস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার মনে হতেই পারে এতে নারীর পোষাকের কি দোষ, তারা যেমন ইচ্ছা পোশাক পরিধান করতেই পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিন্তু উল্টো কথা বলে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের শুধুমাত্র স্বাভাবিক উপস্থিতি ছেলেদের টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা ৭.৮% বাড়িয়ে দেয় এমনকি মেয়েটি দেখতে কদাকার হলেও। নারীর মাত্র ৫ মিনিটের উপস্থিতি পুরুষের লালায় টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। 'Men with elevated testosterone levels show more affiliative behaviours during interactions with women' শিরোনামে আরেকটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ফিমেল ইন্টারএকশনের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বেড়ে গেলে ছেলেদের বিহেভিওরাল পরিবর্তন আসে। কথায় মুগ্ধতা, চিত্তাকর্ষক আচরণ, নিজেকে মেলে ধরা, একান্তে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা ইত্যাদি দিকগুলো বেশি ফুটে উঠে। গবেষণাটিতে দেখানো হয়েছে ইন্ট্রাসেক্সচুয়াল কম্পিটিশনে ছেলেদের টেস্টোস্টেরোনের মাত্রা বাড়ার ফলে মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ আগের থেকে বেশী বৃদ্ধি পায়।
জ্বি এই বিজ্ঞানঈ কিন্তু ছেলেদের সেক্স হরমোন বৃদ্ধির জন্য মেয়েকে দায়ী করছে। শুধুমাত্র একটা মেয়ের স্বাভাবিক উপস্থিতিই কিন্তু একটা ছেলেকে এতটা এগ্রেসিভ করে তুলছে। তাহলে চিন্তা করুন মেয়েটা যদি উন্মুক্ত পোশাক পড়ে তাহলে ছেলেটার টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কি পরিমান বৃদ্ধি পাবে?
আমাদের ইসলাম কিন্তু বিজ্ঞানের মত নারীকে দোষারোপ করছে না। বরং নারীকে পোশাক দিয়ে সম্মানিত করেছে। আর নারীর শালীনতা ঠিক থাকার পরও যদি কোন পুরুষ তাকে অসম্মানিত করে তবে পুরুষের শাস্তির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দেখুন আমাদের ইসলাম ছেলেদের এই টেস্টোস্টেরন আর মেয়েদের এই ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নিয়ন্ত্রনের জন্য কি সুন্দর সমাধান দিয়েছে। সমস্যায় পড়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছে কোর'আন।
"Say to the believing men that they should lower their gaze and guard their modesty: that will make for greater purity for them: And Allah is well acquainted with all that they do. "
"And say to the believing women that they should lower their gaze and guard their modesty; that they should not display their beauty and ornaments except what (must ordinarily) appear thereof; that they should draw their veils over their bosoms and not display their beauty (part)"
---The Quran-24:30-31(part)
দেখেছেন আয়াতে প্রথমেই পুরুষকে তার দৃষ্টিকে অবনত করতে বলা হয়েছে। কারন আল্লাহ জানেন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। একইসাথে নারীকেও তার দৃষ্টি অবনত করতে বলা হয়েছে এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আপনার প্রশ্ন থাকতে পারে ছেলের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই কি তাকে মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে? দেখেছেন এই প্রশ্নটায় চিন্তা করা হচ্ছে সমস্যায় পড়ার পর সমাধান কিভাবে হবে সেটা নিয়ে অথচ এই সমস্যায় যাতে কেউ না পড়ে তার ব্যবস্থা আল্লাহ কোর'আনে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। প্রত্যেকটা পুরুষ যদি নিজের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং প্রত্যেকটা নারী যদি তার সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকে তবেতো সেখানে কোন উত্তেজনা সৃষ্টিকর পরিস্থিতিই সৃষ্টি হবে না কি বলেন??
Srinivas Das ভাইয়ের রিপ্লাই
শ্রদ্ধেয় Mamun Rejwan, আমার আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহন করুন । আপনি সত্যিই অভূতপূর্ব এক বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা দিয়েছেন ( আমি বিজ্ঞানের ছাত্র) । এর পূর্বে কেউ আমার সোজা কথার সোজা উত্তর দেয়নি, শুধু ঘুরিয়ে আমাকেই প্রশ্ন করে গেছে । কেউ আবার আমার আমার করে আমাতে আটকে আছে । আপনাকে জানিয়ে রাখা ভালো যে আমি আংশিক নাস্তিক আবার আংশিক আস্তিক অর্থাৎ আমার ঈশ্বর বিশ্বাস একটু ভিন্ন প্রকৃতির । আসলে আমি মনে করি হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের উপর কিছু সঙ্কার ( ঘোমটা, হিজাব) চাপিয়ে দিয়েছে তা একবিংশ শতাব্দীতে গ্রহণযোগ্য তা আছে বলে মনে করি না । পূর্বে ধর্মীয় শাসন ছিল আইনের শাসন তেমন ছিল না কিন্তু এখন আইনের শাসন আছে । আপনি বলতেই পারেন এখন ধর্ষণ বেশিই হচ্ছে ! আমি বলবো না কারণ পূর্বে সংবাদ মাধ্যম ছিল না, তখন ও ধর্ষণ হতো এবং বেশিই হতো, মানুষ সে ভাবে জানতে পারতো না । আর যে সব কুলাঙ্গার নিজেদের আয়ত্তে রাখতে পারে না তারা নিজের মায়ের বক্ষদেশ কল্পনা করলেও তাঁদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । যাইহোক , আমার কিছু প্রশ্ন আছে ? তথাকথিত ধর্ম সংক্রান্ত । আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে সঠিক পথ দেখাতে পারেন । অনুমতি দিলে আমি অগ্রসর হতে পারি । ভালো থাকুন ।
আমার রিপ্লাই
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই। আমিও একজন বিজ্ঞানের ছাত্র এবং অবশ্যই বিশ্বাসী। তবে আমার একটা ধারনা আছে কেউ যদি সত্য গ্রহনের নিমিত্তে সত্য অনুসন্ধানে নামে সে অবশ্যই সঠিক সত্যের সন্ধান পাবে। আর কেউ যদি কোন একটা ব্যবস্থার ভূল খুঁজে বের করার জন্য সত্য অনুসন্ধানে নামে সে কখনও শুদ্ধ সত্যটা গ্রহন করতে পারবে না। এবার আসি হিজাব প্রথা নিয়ে আপনার মন্তব্যের ব্যাপারে। হিন্দু ধর্মে নারীদের শালীনতা রক্ষার্থে কি বলা হয়েছে এ ব্যাপারে আমি একেবারেই অজ্ঞ। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে আপনার মতামতটা ছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পর্দা প্রথা নারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আপনাকে শুধু একটা উদাহরণ দিতে পারি এ ব্যাপারে। "Yvonne Ridley নামটা শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই। Yvonne Ridley নামের এই মহিলাটি অত্যন্ত ক্ষমতাশীল ব্রিটিশ নাগরিক । যিনি খুব প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য সানডে টাইমস, দ্য অবজারভার, দ্য ডেইলি মিররসহ আরও বেশ কয়েকটি নামকরা পত্রিকা সিনিয়র সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন ২০০৪ সালে এই একবিংশ শতাব্দীতেই ৪৫ বছর বয়সে।## ইসলাম গ্রহনের পরেরদিন থেকে নিয়মিত রাত দুইটা তিনটা বাজে জিমের বারে মিনি স্কার্ট পড়ে আনন্দ ফুর্তি করা রিডলিকে আর কখনও বোরকা ছাড়া বাইরে দেখা যায় নি। ##" । এখন প্রশ্ন থাকবে মিনি স্কার্ট পরে, সম্পূর্ণ ব্যাক্তি স্বাধীনতা উপভোগ করা এই মহিলা ইসলামের হিজাবে কি এমন পেলেন যে, নিম্নোক্ত উক্তিটি করে বসলেন... " ওয়াল স্ট্রিটের একজন সফল ব্যবসায়ী ঠিক যেমন স্যুটের বাইরে শুধু গেঞ্জি পরে অফিসে যেতে পারেন না ঠিক তেমনি বোরকাও মুসলমান নারীদের আলাদা পরিচয় বহন করে।" ----Yvonne Ridley । আর আরেকটা বিষয় যেটা আপনি উল্লেখ করেছেন পূর্বে ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল কিন্তু এখন আইনীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত। হয়তোবা কোর'আন সম্পর্কে আপনার ধারনা ভুল হওয়ার দরুন আপনি এই কথাটি বলেছেন। কোর'আন শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়। এটি মানব জাতির জীবন ব্যবস্থা, এখানে মানব জাতি বলতে এ পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে এবং যত মানুষ আসবে সকলের কথা বলা হয়েছে। কোর'আনে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয় আলোকপাত করা হয়নি বরং আইনী ব্যবস্থা, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছু নিয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনি জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই কোর'আনের আইন অনুসরন করে চলতে পারেন। যাকাত ব্যবস্থা অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আরও একটি উদাহরন দেই। "Harvard Law School", আইন নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য বিশ্ববিখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের ফ্যাকাল্টি লাইব্রেরীর প্রবেশ ফটকে ন্যায় বিচারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশ হিসেবে কুর'আনের একটি আয়াহ লাগায়। সূরা নিসা অধ্যায়:৪ আয়াত:১৩৫। আয়াহ'টি হল:- "O ye who believe! stand out firmly for justice, as witnesses to Allah, even as against yourselves, or your parents, or your kin, and whether it be (against) rich or poor: for Allah can best protect both. Follow not the lusts (of your hearts), lest ye swerve, and if ye distort (justice) or decline to do justice, verily Allah is well-acquainted with all that ye do." । আমি চেষ্টা করব আপনার উত্তর দেওয়ার। তবে আমি যে, দিতে পারব সব উত্তর বিষয়টা এরকম না কারন আমিও ছাত্র। তবে চেষ্টা করব নিজে না পারলেও অন্য কারও থেকে জেনে হলেও।
এখানেই শেষ নয় । আরও আছে , থাকবে , চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৪৮