আসুন একটু কল্পনা করা যাক। মনে মনে বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মানুষকে বাছাই করুন। এবার ধরুন উনি শাহবাগ মোড়ে উসাইন বোল্ট স্পিডে নীলক্ষেতের দিকে দৌড়াচ্ছেন। তাও আবার জামা-কাপড় ছাড়া (আস্তাগফিরুল্লাহ)। আর জোরে জোরে চিৎকার করে বলছেন, “পাইছিরে পাইছি, পাইছিরে পাইছি”।
এটা কল্পনা করা অনেকের পক্ষেই কষ্টকর। অনেকেই আবার একই ঘটনা বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্পনা করে দেখছেন কাকে বেশি স্যুট করে। কেউ কেউ আবার ভাবছেন, “গেল গেল, দেশের যুব সমাজ গেল। প্রথমে নিজের মাথা খেল, তারপর এখন কলাকারদের ইজ্জতে হাত দিল”।
কিন্তু আসল ঘটনা হল আজ থেকে প্রায় সোয়া দুই হাজার বছর পূর্বে এইরকমই একটি ঘটনা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল গ্রিসের মানুষদের (নাকি দুর্ভাগ্য)। পার্থক্য হল লোকটির নাম ছিল আর্কিমিডিস। আর তিনি চিৎকার করছিলেন ইউরেকা, ইউরেকা বলে।
আর্কিমিডিস। জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৭ সনে। জন্মস্থান গ্রিসের ছোট সুন্দর একটি দ্বীপ সিরাক্যুজ-এ। ছোটবেলায় জ্ঞেনার্জনের খাতিরে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় যান এবং সেখানে ইতিহাসখ্যাত বহু পণ্ডিতের সান্নিধ্যে আসেন। মৃত্যু খ্রিষ্টপূর্ব ২১২ সনে। ৭৫ বছরের সুদীর্ঘ জীবনে গনিতবিদ, পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, যন্ত্রকৌশলবিদ, আবিষ্কারক সহ বহু তকমায় ভূষিত হয়েছেন। তবে, মজার ব্যাপার হল কবিতা, শিল্প, সঙ্গীতেও তার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল।
তার লিখা কোন বই বা কাজের প্রমান সরাসরি পাওয়া যায়নি। তার সম্পর্কে আমরা যা জানি তার পুরোটাই অন্যান্য লেখকদের লেখা থেকে। তার বহু আবিষ্কারের মধ্যে একটি আবিষ্কার ‘আর্কিমিডিস স্ক্রু’, যা এখনও অনেক উন্নয়নশীল দেশে সেচ কাজে ব্যবহার করা হয়।
আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারনে রোমানরা সিরাক্যুজ আক্রমণের জন্য সৈন্য পাঠায়। এসময় সিরাক্যুজের রাজা হিরো (heiro) দেশরক্ষার দায়ভার আর্কিমিডিসের হাতে দেন। সত্তরোর্ধ আপনভোলা একজন বিজ্ঞানীর কাছে এতবড় গুরুভার দেয়ায় সেসময় অনেকেই হায় হায় করে উঠেছিল। কিন্তু আর্কিমিডিস সেসবের তোয়াক্কা না করে দেখানো শুরু করলেন একের পর এক বিজ্ঞানের যাদু। শত্রু বাহিনীর জাহাজের বিশাল বহর। আর্কিমিডিস লিভার কপিকলের সাহায্যে বড় বড় পাথর সেসব জাহাজের দিকে ছুড়ে মারতে লাগলেন। আয়নার সাহায্যে সূর্যের আলো একত্রিত করে জাহাজের মাস্তুলে আগুন ধরিয়ে দিলেন। এইভাবে বিজ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগের মাধ্যমে বিশাল রোমান বাহিনীকে তিন বছর পর্যন্ত দ্বীপে প্রবেশ থেকে আঁটকে রাখলেন।
দ্বীপের বেশকিছু মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কারনে অবশেষে তিন বছর পর রোমানরা সিরাক্যুজ দখলে নিতে সক্ষম হয়।
অনেক লেখকের লেখা থেকে জানা যায় , দ্বীপ দখলের সময় আর্কিমিডিস মাটিতে একটি অংক কষছিলেন। এক রোমান সেনা তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। অন্যমনস্ক থাকায় তিনি আসল ঘটনা বুঝতে ব্যর্থ হন এবং অংক করার সময় তাকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেই রোমান সেনা তাকে হত্যা করে।
রোমান সেনাপতি মারসেলাস তার মত গুণী ব্যক্তির মৃত্যুতে অনুতপ্ত হন। এবং পরিপূর্ণ মর্যাদার সাথে তাকে সমাধিস্থ করেন। তার প্রতি শ্রুদ্ধা রেখে তার কবরের পাশে স্মৃতিফলকে একে দেয়া হয় তার সবচেয়ে প্রিয় গানিতিক সমস্যার সমাধান “A Cylinder and A Sphere”।