টাইটানিক।
জাহাজটি তৈরি করার সময় অনেকেই জানতো, এটি ইতিহাস সৃষ্টি করবে। সৃষ্টি সে করেছেও, তবে সে ইতিহাস গর্বের নয়, কষ্টের।
প্রায় ৮৮৩ ফুট দৈর্ঘ্য, প্রস্থে ৯২ ফুট। ১৬ পার্টিশনের মধ্যে ৪ পার্টিশন ডুবে গেলেও যে জাহাজ অক্ষত দাড়িয়ে থাকে, প্রথম ভ্রমনেই সে তলিয়ে যাবে এতো বড় কল্পনাবিলাসী সে সময় কেউ ছিল না। আর তাই হয়তো ৬৫ টি লাইফবোট ধারন করার ক্ষমতা থাকা সত্তেও মাত্র ২০ টি লাইফবোট নিয়ে যাত্রা শুরু করে সে।
এপ্রিল ১০, সাল ১৯১২।
ইংল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করল সদ্য তৈরি জাহাজ আরএমএস টাইটানিক। গন্তব্য নিউইয়র্ক। তার বিশাল দেহের অনেক জায়গায় রং তখনো ঠিকমত শুকায়নি। তাতে কী, আগামি কয়েক দশক যে সমুদ্র দাপিয়ে বেড়াবে, সামান্য কাঁচা রং কেন তার বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
পুরো পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মত জিনিষের অভাব ছিলনা তার। ৮৪০ টি কামড়া, যার মধ্যে ৪১৬ টিই বিলাসবহুল, গরম পানির সুইমিংপুল, তুরকিশ বাথ, ব্যায়ামাগার, লাইব্রেরি, চোখ ধাঁধানো আসবাব, সুসজ্জিত বার সব কিছুই ছিল টাইটানিকের।
ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ডে প্রয়োজনীয় যাত্রা বিরতিটুকু সে সেরে নেয়।
১৪ই এপ্রিল, সকাল বেলা।
লাইফবোটের ব্যাবহার সম্পর্কে যাত্রীদের শিখানোর কথা সেদিন। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে আপাতভাবে অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়া এই শিখানোর কাজটি হয়ে উঠেনি। আর এই অপ্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকু না থাকার কারনে লাইফবোটের ধারনক্ষমতা ১১৭৮ জন হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৭০৫ জন আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়।
রাত ১১ টা ৪০। আচমকাই সমুদ্রে ভেসে বেরানো বরফের সাথে সংঘর্ষ হল টাইটানিকের। ১৬ পার্টিশনের মধ্যে ৬টি তেই পানি ঢুকতে শুরু করল। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও জাহাজের পুরুষগুলো সেদিন কাপুরুষতার পরিচয় দেয়নি। তারা সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী শিশু আর অল্প কিছু যুবককে উঠিয়ে দেয় লাইফবোট গুলোতে। আর, নিজেরা থেকে যায় মৃত্যু কূপে।
রাত ২ টা ৫ মিনিটে সর্বশেষ লাইফবোটটি পানিতে নামার পনেরো মিনিট পর অসংখ্য বীরপুরুষ নিয়ে তলিয়ে যায় কালজয়ী ট্রাজেডি টাইটানিক। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৫১৪ জনের। যার মধ্যে ১৩৫২ জনই পুরুষ।
উদ্ধারকারী জাহাজ পানিতে ভাসতে থাকা ৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছিল। তাদের মধ্যে কারও নাম রোজ ছিল না। কিন্তু লাইফবোটে অসংখ্য রোজ ছিল যাদের জ্যাক জাহাজেই রয়ে গেছে। আর এভাবেই কয়েক দশক যার সমুদ্র দাপিয়ে বেড়াবার কথা, কয়েকদিনেই ঘটল তার সলিল সমাধি।
তথ্যসুত্রঃ
1)http://en.wikipedia.org/wiki/RMS_Titanic
2)http://www.titanic-facts.com/titanic-facts.html
3)http://www.somewhereinblog.net/blog/Birendra007best/29573815