লালাভ চোখে সূর্য না ওঠা ভোর বেলার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। কিছুটা ছিটগ্রস্ত পাগলের মত! চার দেয়ালে লাগানো কিছু ইট-পাথরের দল আমার দিকে প্রহসনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আমিও সবকটি হলুদ দাঁত বের করে চোখের জল ফেলছি বুঝে বা না বুঝে! কিছু কথা ও কিছু ব্যথা মাঝেসাজে পালতোলা নৌকাও গভীর সাগরের তলদেশে ডুবিয়ে দেয় আচমকা।
আমার নাম কাইকর। গতরাতে খুব করে বিদেশী মদের সাথে দেশী সিগারেট টেনেছি একমনে বা আনমনে। একটান সিগারেটের সাথে এক পেগ মদ। আমি নিয়ম করে এসব খাইনা। যখন খুব রাতে ড্রাকুলা (বা অন্যকিছু যাই বলেন) তা সাজতে ইচ্ছা হই তখন এসব ঢকঢক করে গিলি।
মাধবীলতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল হাফ দেড়-মাসের। সম্পর্কটাকে বলা যায় লিভ টুগেদার। ঘড়ির কাটার মতো নিয়ম করে আমরা দু'জন মাসের একটা বিশেষ সময়ে নিজেদের নতুন করে নতুনভাবে আবিষ্কার করার বৃথা চেষ্টা করতাম। সে প্লেটোনিক লাভ বিশ্বাস করে না( যাকে বলা হয় দেহের ঊর্ধ্বে যেই ভালবাসা) তার কথায় ভালবাসার অর্থ হলো - চার দেয়ালের মধ্যে আটকানো শরীর দেয়া-নেওয়া। তবেই তো সেটা প্রকৃত প্রেম।
আমি খারাপ মানুষ। আক্ষরিক অর্থেই খারাপ মানুষ। যতটা খারাপ হলে মানুষ হয়ে মানুষের রক্ত পান করা যায়! গতরাতে আমি ও মাধবীলতা চার পেগ হুইস্কি ও গাঁজায় দম দিয়ে নতুন করে নতুন ভাবে নিজেদের আবার আবিষ্কার করছিলাম। ঠিক তখনই মাধবীলতা আমাকে খুব করে বিচ্ছিরি ভাবে বিচ্ছিরি গলায়, এই খানকির পোলা। তুই শালা আগের মতো তেমন পারিস না।যা ভাগ অমানুষ। আমি বরং আরো একটু গাঁজায় দম দিয়ে পিনিক শেষে ঘুমিয়ে পড়ি। ওর মুখে এসব অকথ্য গালিগালাজ শুনে আমার পালতোলা নৌকা গভীর সমুদ্রের তলদেশে ডুব দেয়!
আমি তখন নতুন আঙ্গিকে নতুন রূপে রূপ নেই। মাধবীলতা কে খুন করবার নেশা আমার মাথায় ঢুকে। বাথরুমের পরিত্যক্ত জায়গার জল এনে তাকে মদ হিসেবে খাইয়ে দেই। সালমান খানের ছবিওয়ালা গাম-গন্ধযুক্ত শরীরের গোপন একটা অংশ ঢাকার কাপুড় তার মুখের মধ্যে গুজে দিয়ে মাথার চুল পায়ে এনে শক্ত করে লাইলুনের সুতো দিয়ে বাধি। সে কিছুটা ছুটবার বৃথ্যা চেষ্টা করে।
বাসার ময়লা পরিত্যক্ত লোহার খাচকাটা করাত দিয়ে তার পায়ের মাঝ বরাবর ফেসাই। পায়ের মধ্যে দিয়ে গুরি গুরি বৃষ্টির মতো মানবিক লাল রক্ত ফস ফস করে বের হই। আমি দেখে হাসি আর সে কাঁদে। তার চোখের পাশ দিয়ে জল না বেরিয়ে কিছু রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে। আমি আবারো হাসি কিছুটা পাগলের মতো।
কাজের মাঝে নাকী একটান সিগারেট কষে মেরে দিয়ে কাজ করলে মনে প্রশান্তি পাওয়া যায়। এটা আমার কথা না মাধবীলতার কথা। আমিও একটান সিগারেট কষে মেরে যত্ন করে তাকে কাটা আদর করি। শেষ সময়টাতে খুব জঘন্য ভাবে পরিত্যক্ত লোহার করাত দিয়ে গ্যাছ গ্যাছ করে তার হাত-পায়ের নখ কেটে ফেলি। পায়ের নখগুলো খোলা ফ্লোরের পিঠে একমনে কোমর দুলাই। আমি দেখে আবারও হাসি....... খুব করে, একমনে।
তার জান বেরবার ঠিক মিনিট দু'য়েক আগে খুব মন দিয়ে যত্ন নিয়ে তার চার হাত-পা কেটে আলাদা করি। চার হাত-পায়ের চারপাশ দিয়ে ঝরনার মতো করে লাল কি যেন পড়ছিল! সঠিক মনে নেই। আমি তা দেখে আবারো গো গো শব্দ করে হাসি..... শুধুই হাসি।
হুট করে জানালার এক কোণ দিয়ে ঝকঝকে সোনালী রোদ উঁকি দিল রুমের মধ্যে। আমি লালাভ চোখ নিয়ে মাধবীলতার শরীরের টুকরো অংশগুলো যত্ন করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিয়ে খুব করে কসকো সাবান দিয়ে ঘষে-টষে স্নান করি। গতরাতের স্মৃতি গুলো ভুলতে আমি আবার মদ গাঁজায় দম দিয়ে শুয়ে পড়ি নতুন ললনার আশায়।
~আব্দুল্লাহ আল মামুন ( কাইকর)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৫