এক জীবনে প্রেমের খেলা খোলা আকাশের বোকা বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছি তেত্রিশটি। আমার এসব প্রেমলীলা আকাশের বায়ুকে দূষণ করছে। নীল আকাশের ডানা মেলা পাখি গুলো এখন নাক ছিটকায় আর কুহু কুহু গলায় আমাকে বলে, শালা তুই কাইকর।এক জীবনে ভালো হবি কবে!
মাধবীলতা! ওর জীবনটা বুড়িগঙ্গা নদীর ঘোলা পানিতে ভেসে বেড়ানো কচুরিপানার মতো। দেখতে দিব্বি মাধুকরী! নাক না ওঠা ইলিশের প্রথম সন্তানের মত। তাকে দেখলে বুড়ো জেলেগুলো ডুবে মরে, মাঝিগুলো বেঁচেও মরে! ঠোঁটের দেড় ইঞ্চি নিচে ছোট্ট কালো জিরার মত দেখতে একখানা তিল। হয়তো কায়দা করে শাহবাগের কোন দোকান থেকে কিনে জাদুকরী ভাবে লাগিয়েছে।
আমার নাম কাইকর। খোলা আকাশে প্রেম উড়ানো মানব আমি। আমার উড়ানো প্রেমের গন্ধ এখন আকাশে বাতাসে! নগরীর আট-দশটা সহজ সরল আলাভোলা টাইপের দেখতে মানুষ আমি। আমাকে দেখে ভদ্র সমাজের অভদ্র মানুষ ভদ্র হয়ে যায়।
মাধবীলতার সঙ্গে সম্পর্কটা হয় মরুভূমিতে পানি আসার মত! এক লাল-নীল সন্ধ্যায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ছাদের কার্নিশে বসে মিছেমিছি বিশাল সাইজের সাদা থালার মতো দেখতে চাঁদের সঙ্গে কথা বলছি। কিছুটা ছিটগ্রস্ত মানুষের মত। কিছু প্রেমিক পাখি পাশের বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময় আমাকে ভদ্র গলায় অভদ্রভাবে বলে যায়, "তোর মত চারাল মানব দেশে একটাও নাই রে শালা। তোর জন্য হালকা প্রেম করেও শান্তি পাচ্ছি না কোথাও! সব জায়গায় গন্ধ। আকাশের শহরটাকে তুই কান্নায় ভাসিয়ে দিচ্ছিস। তুই শালা মরলে চোর হবি।" আমি শুনে ফিক করে দাঁত বের করে হেসে দেই। পাশের বেঞ্চে বসা ছিল সুন্দরী রমণী মাধবীলতা। সমস্ত কিছুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে সে আমাকে পাগল বলে ডাকে মানুষের ভিড়ে। আমি সহজ সরল একটা কষে হাসি দিয়ে তার চোখের দৃষ্টির মাঝ-বরাবর গিয়ে দাঁড়াই।
সে আমাকে বিনয়ী গলায় অনুরোধ করে তার পাশে গিয়ে বসতে। আমি তার মনকে ছিনিয়ে নেবার জন্যে দুটো কোলড্রিংস অর্ডার করি।
দুটো কোল্ড্রিংসের পাশাপাশি দুটো মানব মানবী। দুটো মন, দুটো দেহ ও দুটো ইন্দ্রিয়।শহরের সহজ-সরল হাসিটার প্রেমে খুব সহজেই সবাই আকৃষ্ট হয়। মাধবীলতাও হয়েছে।
প্রথমে কোল্ড্রিংসের মধ্যে বসানো চিকন পাইপে ঠোঁট। পরে হাতে-হাত, চোখে-চোখ ও মনে-মন। কিছু সময়ের জন্য ব্যস্ত নগরীর কোলাহল নিস্তব্ধ। মিহি বাতাসের সঙ্গে নতুন এক প্রেমের গন্ধ। আরো কিছুটা আকাশের বাতাসকে দূষিত করার জন্যে!
শহরে নতুন করে নতুন প্রেমের জন্ম। নতুন ভোরের আশায়। আমার ও মাধবীলতার প্রেমটা কলমি ডগার মত তাড়াহুড়া করে বড় হতে শুরু করে। কিছু মিথ্যে আশায়, কিছু স্বপ্নের আশায়।
মাধবীলতা রোজ বিকেলে আমায় কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। কোকিল কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনায়। আমি পাগলের মত তা শুনি। কোন কিছুর অপেক্ষায়!
আমাদের সম্পর্কের একশোতম দিনে মাধবীলতাকে নিয়ে আমার গোপন কুঠুরিতে যায়। যেখানে মাঝেমধ্যে অন্ধকারে দিন নেমে আসে! বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু উপহার দেবার জন্যে শাহবাগ থেকে লাল চুড়ি, লাল টিপ ও লাল বেনারসি শাড়ি কিনি তার জন্যে। মাধবীলতা হাসিমুখে তা পড়ে এসে দাঁড়ায় আমার সামনে। তাকে দেখতে শেষ বিকেলের শেষ সময় সূর্যের মতো লাগে।
আমি অমানুষ। আক্ষরিক অর্থেই অমানুষ। হঠাৎ করে মাধবীলতাকে সলিড রডের একখানা হাতুড়ি দিয়ে কপালে পরা লালটিপের মাঝ-বরাবর কষে দুটো বাড়ি দেই। সে অজ্ঞান হয়ে পাকা মেঝেতে দুমড়ে পরে। আমি এক অট্টহাসি দিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করি। শেষ সময়টায় ধারালো ময়লা লোহার কাঁচি দিয়ে তার হাত পায়ের নখ ক্যাচ ক্যাচ করে কেটে ফেলি। কিছু রাতের পাখি দু ফোটা চোখের জল ফেলে মন কষ্টে উড়ে যায় খোলা আকাশে। আমি একটু হাসি....।
মাধবীলতার চোখ দুটো আমার দিকে প্রহসনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আমি আবারো হাসি হো হো করে। এভাবে যে কত প্রেমের ভবলীলা সাঙ্গ করে খোলা আকাশের বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছি তার হিসেব কষা কঠিন। আমি কাইকর। এক বহুরূপী অমানুষ।
বোকা শহরের কত রমণী যে, বোকা হাসির লুকানো ফাঁদে পা দেয় তার হিসেব মিলাতেও নগরীর মাঝ বরাবর একখানা বিশাল সাইজের যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর বসাতে হবে।
"আলাভোলা সহজ সরল হাসির মাঝে লুকানো থাকে বিশাল সাইজের এক ভন্ড। এই শহরের ভন্ড। "
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬