somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ রয়েছো নয়নেতে…।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাহানারা বেগম তার বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়ছেন। বিছানার পেছন থেকে হুট করে এক যুবক উদয় হয়ে বলে উঠল,


-সেই আবার শরৎচন্দ্র পড়ছো। এই এক বই আর কত বার পড়বে তুমি!?


জাহানারা বেগম চমকে উঠলেন। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলেন শিহাব দাড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ থমকে চেয়ে রইলেন তার দিকে। এরপর বললেন,


-তুমি এ অবেলায় এলে। এতক্ষনে আসার সময় হলো?

-হ্যাঁ এতক্ষনে আসার সময় হলো। তার আগে বলো এই এক বই আর
কত কাল ধরে পড়বে।

-কেন পড়ি তুমি জানো না?

-শরৎচন্দ্র তোমার পছন্দ।

-তা পছন্দ। তবে তার কোন গল্প টা আমি প্রায়ই পড়ি সেটাও তো জানো।

-না জানিনা।

-জানো না?!

-না জানি না। বলো…

-বলবনা। জানবেনা কেন!

-“পরিণীতা”

-এইতো বেশ জানো। তবে না জানার ভান করো কেনো? বুড়ো বয়সে ঢং!

-আমি বুড়ো?

জাহানারা বেগম বেশ কিছুক্ষন শিহাবের দিকে চেয়ে রইলেন। আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন,

-তা নও। কিন্তু…

-কিন্তু কি?

-কিছু না। ভালোলাগছে না।

-কি হলো আবার!?

-এই যে তুমি ২৯ বছরের টগবগে যুবক আর আমি…

-আর তুমি কি?

-দেখতে পাচ্ছো না?

শিহাব জাহানারার চুলে হাত বুলালেন। হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

-চুল পেকেছে আরও দুটো তোমার। বেশ বুড়ি হচ্ছো।

-হ্যাঁ বুড়ি। কী সুন্দর আমাকে ৫২ বছরের বুড়ির বেশে দেখছো আর নিজে…

-হুম্ম….আমার কিন্তু একটা চুলও পাকা নেই।এই দ্যাখো... দ্যাখো দ্যাখো।

-দেখার কী আছে। ২৯ এ তোমার কেনই বা চুল পাকতে যাবে। ভাললাগে এই বুড়ির সাথে এসে প্রেম করতে?

-বুড়িটা জাহানারা। আমার সেই জাহান! আমার তো বেশ লাগে!

-হুম্ম, এজন্যে এসে আমার নতুন পাকা চুল খুঁজে খুঁজে বের করছো।

-করলে যে তুমি বেশ ক্ষেপে যাও। তাতে যে আমার তোমায় আরও বেশ লাগে! হা হা হা...

-যাও তোহ্.. পড়তে দাও আমায়।

-সেই তো এক বই। পড়তে হবে না ছাড়ো। আর আমি তো এখন এসে পরলাম। আমার জন্যই তো পড়ো নাকি।

-হ্যাঁ... তোমার জন্যই পড়ি। তোমায় খুব মনে পড়লেই পড়তে ইচ্ছে করে।

-তোমার এই ইচ্ছে টা বড় অদ্ভুত সেটা জানোতো?

-অদ্ভুত?

-তা নয়তো কি? এই কাহিনির সাথে তোমার-আমার প্রেমের এমন কী মিল আছে?! শুধু এতটুকুই তো যে গল্পের ললিতা-শেখরের মতো তুমি আমিও কাছাকাছি থাকতাম। দুজন-দুজনার প্রেমে হাবুডুবু খেতাম। আর একটু মিল বলতে ললিতা বড় হয়েছে তার মামার কাছে আর তুমি তোমার চাচার কাছে। আর কি মিল আছে কোন? নেই।

-হুবহু পুরোটা মিলতে হবে নাকি?

-সবচেয়ে বড় কথা, তোমায় বিয়ে করেছি আমার বাপের জীবদ্দশায়। হ্যাঁ বাবাকে জানাতে একটু-আধটু ভয় যে প্রথমে পাইনি তা নয়। তবে বলেছিতো? বিয়ে করে ঘরে এনে তুলেছি তো তোমায় বলো। ঐ আহাম্মক শেখরের মতো না যে বাপ মরার পর ললিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

-তা মন্দ বলোনি। তবুও... আমার ভাললাগে পড়তে।

জাহানারা আবারও তাকিয়ে রইলেন শিহাবের দিকে। শিহাব এবার জিজ্ঞেস করলো,

-কি দেখছ?

-দেখছি আর ভাবছি...

-কি সেটা?

-ভাবছি তুমি বুড়ো হলে কেমন হতে। কিন্তু কি আশ্চর্য! তোমায় আমি ২৯ এর বাইরে দেখিই না! চেষ্টা করলেও পারিনা। খুব নিজের বয়স আটকে রেখেছো!

-হা হা হা...

-হাসছো!?? কেন শুনলে না সেদিন আমার কথা বলতো। একটু যদি শুনতে তাহলে আর এভাবে আমায় একা একা বুড়ি হতে হতো না। একা একা থাকতে হতো না। দুজন এক সঙ্গে থাকতাম আজও...এখনও...এই মুহূর্তে...

-আছি তো।

-এভাবে থাকা? একে এক সাথে থাকা বলে!?সেদিন যদি অবেলায় অমন করে বাড়ি থেকে না বেরোতে তাহলে...তাহলে আর......

-আর এক্সিড্যান্ট টা হতো না। আর আজ তুমি আমায় দেখতে ৬১’র এক বৃদ্ধ বেশে। মাথায় তোমার চেয়ে আরও বেশি পাকা চুলে। তাই তো?

-তার দুদিন পর আমাদের রিনির ১ম জন্মদিন ছিল শিহাব।

-মৃত্যু কে বাঁধা দিতে পারে এমন সাধ্য কার আছে বলো, বিধাতা ছাড়া? থাকি না...আমায় রাখলে না হয় এই ২৯ এরই বেশে... তোমার মাঝে। চিন্তা করো না। আবার মিলবো দুজন। সত্যি বলছি...

-সেই তো রয়ে...

হঠাৎ দরজায় কড়া নেড়ে দাঁড়ালো রিনি। যার বিধায় জাহানারা বেগম আর কথাটি শেষ করতে পারলেন না। রিনি জিজ্ঞেস করলো,

-কার সাথে কথা বলছিলে মা?

জাহানারা বেগম ক্ষণিক অপ্রস্তুরতা কাটিয়ে বললেন,

-কই নাতো। কার সাথে আর কথা বলবো!? বই পড়ছিলাম রে মা।

-অহ...। মনে হলো যেন কারোর সাথে... আচ্ছা মা শোনো আমার ফিরতে ফিরতে অনেক দেড়ি হয়ে যেতে পারে। তুমি অপেক্ষা না করে খেয়ে ঘুমিয়ে নিয়ো কেমন। আসছি এখন।

রিনি চলে গেলো। এরপর আশেপাশে আর কোথাও শিহাবকে দেখতে পেলেন না জাহানারা বেগম। তারপর মলিন এক হাসি হেসে বিছানায় হেলান দিয়ে আবারো শরৎচন্দ্রের বই এর পাতা খুলে বসলেন।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৭
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×