করাইল বস্তিতে থাকে এক মহিলা মাঝে মধ্যেই আমাদের বাসায় আসেন সাহায্যের জন্য। তার স্বামী গুরুত্বর অসুস্থ হওয়ায় কর্ম করে রোজগার করতে পারেন না এবং মহিলাও বেশ অসুস্থ। বয়স্ক এই দম্পতির কোন ছেলেমেয়ে নেই। পেট এবং স্বামীর চিকিৎসার দায়েই তাকে সাহায্যের হাত পেতে বেড়াতে হয় এই সমাজে। মহিলাকে প্রায় এক বছর ধরে হল আমি এবং আমার মা চিনি।
বেশ কয়েক মাস পর এই রোজায় এবছর এবারই প্রথম এসেছেন সাহায্যের জন্য। আমাদের বাসায় ঢুকে তিনি আমার মাকে একটি ভারতীয় মুদ্রার ৫ রুপী (রুপালী রঙের) এবং একটি নেপালীয় মুদ্রার ১ রুপী (সোনালী রঙের) দেখিয়ে বললেন যে, সাহায্য চাইবার কালে তাকে এই দুটি বৈদেশিক মুদ্রা এই বিল্ডিং এর উপর তালার এক ভদ্র মহিলা তাকে দিয়েছেন। দেয়ার আগে জোর দিয়ে বলেও দিয়েছেন যে বিদেশী টাকা দিলাম!
তিনি আমার মাকে জিজ্ঞ্যাসা করলেন যে এই বিদেশী টাকা দেশে কাজে লাগাতে পারবেন কীনা। যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে কাজে লাগাতে পারবেন না আর ব্যাংকে গিয়েও লাভ হবেনা এবং যার হিসাব-কিতাব সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি ভাবে অজ্ঞ, তখন তিনি আমার মাকে বললেন মুদ্রা দুটি তার কাছেই রেখে দিতে।
এসব কিছুই আমি এতক্ষণ রুমের একটু দূর থেকে বসে পরোক্ষ ভাবে শুনছিলাম শুধু। খুব বেশি ভাবাবেগ হয়ে উঠেনি তখনও। এরপরই মহিলা আমার মাকে সরল মনে উৎসুক হয়ে ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন যে, মুদ্রা দুটি সোনা-রুপার কীনা। কথাটা শুনে আমার হাসা উচিত না কাদা উচিত বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একটু পরে বুঝলাম যে মানুষের মাঝে মাঝে দুঃখে হাসি পায়। আমার এই মুহূর্তেও ঠিক এটাই হচ্ছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না, চেপে গেলাম। আরও যেটা বুঝলাম, যিনি ঐ বৈদেশিক মুদ্রা দুটি দিয়েছেন, হয় সেই ভদ্র মহিলা অতি চালাক আর না হয় ভীষণ বোকা (সার্বিক ভাবে বোকাই হবেন) এই দুটোর একটা।
যাই হোক…ব্যাপারটা আমার খুব বেশি পরিমাণে খারাপ লেগেছে। আমার অনুরোধ, আপনারা অসহায় কাউকে সাহায্যের জন্য কিছু না দিলে না দিন তবে এভাবে এমন কিছু দিবেন না যেটা তার কাছে জ্যাকপট পাওয়ার সমতুল্য মনে হতে পারে এবং পরে তা গুড ফর নাথিং হয়ে যায়। বিশেষ করে সময় টা যখন হয় এই রমজান মাস তখন এ ধরনের ঘটনা মোটেও কাম্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫১