যুদ্ধপরাধের সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত বিচারের জন্য পুরো জাতি যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ঠিক তখন সমগ্র বাংলাদেশকে হতাশ করে হাসিনা সরকার বিচারের নামে প্রহসনের একটি নাটক মঞ্চায়ন করল। নাটকটি কয়েকটি পর্বে মঞ্চায়িত হয়ঃ
পর্ব ১
নিজ দলের যুদ্ধপরাধিদের না ধরে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করা অভিযোগ প্রমানের আগেই।
পর্ব ২
সরকারের পক্ষ থেকে ভুয়া সাক্ষী হাজির, সাক্ষ্যদানে বাধ্য করা, সাক্ষ্যদানের পরে সাক্ষির আবার তা অস্বীকার করা, সাক্ষীকে ভয়ভীতি দেখানো।
পর্ব ৩
বিচারের প্রক্রিয়াকে অযথা দীর্ঘায়িত করে ক্ষমতার মেয়াদ পার করা যাতে ইস্যুটিকে জিইয়ে রেখে মাঠ গরম করে অন্যসব ইস্যু থেকে জনগণের মনোযোগ ঘুরানো যায়।
পর্ব ৪
সরকারের ভয়ে সাক্ষী দিলেও পরে তা অস্বীকার করায় এবং সত্য সাক্ষ্য দিতে এলে আদালতের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক সাক্ষীকে অপহরন করা (এখন পর্যন্ত যার খোজ মেলেনি)।
পর্ব ৫
স্কাইপি কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিচারের নামে সরকার নির্দেশিত সাজানো নাটকের ঘটনা ফাঁস। যেখানে বিচারপতি পদন্নোতির বিনিময়ে ফাঁসির রায় দিতে সরকারের সাথে আতাত করে যা সে নিজের মুখে বলে। ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর সরকারের নির্দেশে অভিযুক্ত বিচারপতির পদত্যাগের হাস্যকর নাটক পুরো জাতি দেখে অবাক বিস্ময়ে।
পর্ব ৬
স্কাইপি কেলেঙ্কারির পর ট্রাইবুনাল সম্পর্কে দেশে বিদেশে যখন প্রতিবাদের ঝড় উঠল, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, মানবাধিকার গ্রুপ সরকারকে চাপ দিল সুষ্ঠ ও ন্যায়বিচার করার জন্য তখন সরকার শাহবাগে নতুন প্রজন্মের জাগরন মঞ্চের নামে নতুন নাটক মঞ্চায়নের এক অশুভ খেলা শুরু করল।
পর্ব ৭
শাহবাগে প্রজন্ম চত্তর থেকে বিচারের আগেই ফাঁসির দাবী জানানো হয়, একটি নির্দিষ্ট দলের লোকদের ধরে ধরে জবাই করে সকাল বিকাল নাস্তা করার ঘোষণা দেওয়া, সকল মিডিয়ার একযোগে লাইভ কভারেজ দিতে থাকা, সরকারের পুলিশ-র্যা ব-স্পেসাল ক্যাডার বাহিনি দিয়ে পাহারা দেওয়া, ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার চক্র কর্তৃক শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া, সরকারের পক্ষ থেকে স্পেশাল বিরানির ব্যবস্থা, সরকারি দলের নেতা ও বাম নেতাদের প্রজন্ম মঞ্চ থেকে বক্তব্য দান এবং বিরোধী দল ও মতকে অব্যাহত হুমকি দান।
পর্ব ৮
অবশেষে সরকারের নির্দেশনায় পরিচালিত শাহবাগ আন্দোলনকারিদের দাবির প্রেক্ষিতে ট্রাইবুনাল দেলোয়ার হোসাইন সাঈদিকে ফাঁসির রায় দিল। এখানে মজার বিষয় হলো শাহবাগি নেতা ইমরান সরকার রায়ের আগের দিনই জেনেছিলেন কি রায় হবে। তাই তিনি আগাম ঘোষণা দিলেন যে পরেরদিন তারা সাঈদির ফাঁসির রায় উপলক্ষ্যে উৎসব করবেন এবং মিষ্টি বিতরন করবেন। (যদিও এই ইমরান সরকার হলো রাজাকারের নাতি, যার নানাকে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছিল।)
নাটকের এসব পর্বগুলি দেশপ্রেমিক জনগন ধৈর্য ধরে দেখার পর হঠাত তাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেল। প্রস্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনালের সাজানো রায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল পুরো বাংলাদেশ। জনতা নেমে এল রাজপথে। ব্যরিকেড দিল সড়ক মহাসড়কে। কি নারি কি পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ বনিতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। মুক্তিযুদ্ধের পর এভাবে আর কখনো মানুষ রাজপথে নেমেছে কিনা আমার জানা নেই।
জনতার বিক্ষোভ দমাতে না পেরে, টলটলায়মান ক্ষমতার মসনদ জোর করে ধরে রাখতে স্বৈরাচারীনি হাসিনা তার পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ও দলিয় গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তার বাবার রক্ষী বাহিনীর ষ্টাইলে সাধারন বিক্ষুব্ধ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ইতিহাসের নৃশংস এই গনহত্যায় নিহত হয় প্রায় ২০০ মানুষ, আহত হয় ২০০০০ এর ও বেশি। যুদ্ধ ছাড়া একদিনে পৃথিবীর কোন দেশে কোন সরকার তার দেশের এত মানুষকে হত্যা করেছে বলে ইতিহাসে নেই।
শুধু কি এখানেই শেষ, প্রতিদিনই এখন ১০-২০ জন প্রতিবাদি মানুষকে খুনি হাসিনার কিলার বাহিনী হত্যা করছে। বাংলাদেশ আজ পরিনত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে। মৃত্যু ভয়ে আজ কেউই এখানে ঘাতক হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন, বিচারের নামে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা পরিকল্পনা, দুর্নীতি ও মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
হুমকি/ভয় দেখিয়ে অথবা কোটি টাকা দিয়ে প্রায় সকল মিডিয়াকে সরকারের পক্ষে নিউজ করতে বাধ্য করছে। দুএকটি মিডিয়া সত্য সংবাদ পরিবেশনের কারনে সরকারি গুন্ডাবাহিনি কর্তৃক হামলার টার্গেটে পরিনত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
একি আমার প্রিয় মাতৃভূমি? এই বাংলাদেশই কি আমরা চেয়েছিলাম?? লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ আর কতদিন নরঘাতক হাসিনাকে শাসন ক্ষমতায় ধারন করবে???
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৯