সমুদয় প্রশংসা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, লালন-পালনকর্তা আল্লাহ তা’আলার জন্য। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর শান্তি ও বারাকাহ বর্ষণ করেন, রাহ়মাতুল্লিল ‘আলামীন শেষ নবী মুহ়াম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ (সা.) এবং ন্যায়নিষ্ঠভাবে কিয়ামাত পর্যন্ত যাঁরাই তাঁর পথ অনুসরণ করবেন তাঁদের সবার ওপর।
আজকে আলোচনার জন্য আমি যে বিষয়টা বেছে নিয়েছি সেটা হচ্ছে, ফিক্হ সংক্রান্ত বিষয়ে মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে সহনশীল মনোভাবের গুরুত্ব।
ফিক্হ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে উম্মাহর মধ্যে যে মতপার্থক্য রয়েছে মুসলিমদের কাছে এটা কোনো গোপন বা আশ্চর্যের বিষয় নয়। সেই সাহাবাদের সময় থেকেই এই মতপার্থক্য চলছে। এ ধরনের এমন কিছু বিষয় সবসময়ই ছিল যেটা নিয়ে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত।
অনেক মুসলিমকেই আমরা দেখি, ফিকহ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তারা খুবই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য এটা বিপজ্জনক। কঠোর অবস্থান গ্রহণের এই মনোভাবকে দুটো প্রধান শ্রেণিতে (Extreme) ভাগ করা যায়। এর সঙ্গে তৃতীয় আরেকটা শ্রেণিও রয়েছে; এটাও ব্যাখ্যা করা হবে [বি ইজ়নিল্লাহ]।
প্রথম শ্রেণি হচ্ছে কোনো স্বীকৃত মাজ়হাব-এর এমন অন্ধ অনুসরণ যেখানে এর অনুসরণকারীরা কখনো এটা কল্পনাই করতে পারেন না যে তাদের মাজ়হাব ভুল হতে পারে। ফলে আমরা দেখি যে, জ্ঞানের গভীরতা ও ইসলামিক অধ্যয়নের ব্যাপ্তি থাকা সত্ত্বেও একজন লোক মাজ়হাব-এর প্রত্যেকটা অভিমতের প্রতিই দৃঢ়ভাবে আসক্ত থাকেন। এমনকি তাদের মাজ়হাব-এর যে বিষয়গুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে সেগুলোর প্রতিও তারা সমভাবে আসক্ত থাকেন। এ ধরনের কঠোর মনোভাব উম্মাহর মধ্যে অনেক বিরোধ সৃষ্টি করে। আমরা যদি এভাবে আমাদের অভিমতের প্রতি একগুঁয়ে আসক্তি চালিয়ে যাই, আমাদের মতপার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনায় না বসি, তাহলে এই মতপার্থক্যগুলোই উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হবে।
দ্বিতীয় শ্রেণির লোকেরা সব মাজ়হাব পরিত্যাগ করেন। মুসলিমদের উচিত শুধু আল-কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করা—এই নিয়ে তারা তর্কে নামেন। তারা দাবি করেন, ফিক্হের সকল বিষয়ে কেবল একটাই মত রয়েছে। অধিকন্তু এই একটা মতই তারা সমগ্র উম্মাহর ওপর চাপিয়ে দিতে চান। কেউ যদি তাদের মত ভিন্ন অন্য কোনো মতের অনুসরণ করে, তখন তাদের গায়ে এরা বিপথগামী তকমা লাগিয়ে দেন। অথচ এটা কখনোই পূর্বসূরী ন্যায়নিষ্ঠদের পথ ছিল না। এটা সালাফদের পথ ছিল না। এটা চরমপন্থা।
ইসলামের প্রাথমিক প্রজন্মের (Early Generation) ন্যায়নিষ্ঠ অনুসারীরা ফিক্হি মতপার্থক্যের বিষয়গুলো কীভাবে সামাল দিতেন সেটা বোঝার আগে, প্রথমে কিছু পরিভাষা সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন। বাংলায় আমরা ইসলামিক আইন নিয়ে কথা বলি। কিন্তু আরবিতে ইসলামিক আইনের জন্য রয়েছে দুটো স্বতন্ত্র শব্দ: শারী’আহ ও ফিক্হ। আল-কুরআন ও সুন্নাহয় প্রাপ্ত যেসব মূলনীতি কিংবা বিধানের ব্যাপারে সামগ্রিকভাবে ঐকমত্য রয়েছে সেটাই শারী’আহ। এগুলো নির্দিষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়। যেমন, মানুষ হত্যা হারাম, শির্ক সবচেয়ে বড় গুনাহ, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ইত্যাদি। এগুলোর ব্যাপারে সমগ্র উম্মাহ অভিন্নমত পোষণ করে, এগুলো অবশ্যস্বীকার্য। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে কেউ মতপার্থক্যের দাবি তুলতে পারে না।
ফিক্হ-এর ব্যাপারটায় আসা যাক। আরবি ফিক্হ শব্দের মানে অনুধাবন করা। যেমন, মা’আউইয়াহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত একটা হাদীসে নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন।” সঠিক বুঝ বা অনুধাবনের জন্য এখানে ফিক্হ—“ইউফাকিহ হু” —শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং ফিক্হ শব্দের অর্থ সঠিক অনুধাবন। ইসলামিক পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে, আল-কুরআন ও সুন্নাহ অনুধাবনের মাধ্যমে বিধি-বিধান নিষ্পন্ন করা অথবা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে শারী’আহর বাস্তবিক
প্রয়োগ ঘটানো।
ফিক্হ ও শারী’আহর মধ্যে দুটো প্রধান পার্থক্য রয়েছে:
১) ফিক্হের পরিবর্তন হতে পারে—প্রমাণ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ব্যক্তিগত বিশেষ পরিস্থিতি সাপেক্ষে ফিক্হের পরিবর্তন হতে পারে।
২) ফিক্হি ব্যাপারে মতপার্থক্যের অবকাশ রয়েছে।
সাহাবিদের সময় থেকেই ফিক্হি বিষয়ে মতপার্থক্য চলে আসছে—বিভিন্ন ধরনের মতপার্থক্য। কিছু আছে সম্পূরক মতপার্থক্য। এ ধরনের মতপার্থক্যগুলো নিয়ে কোনো তর্ক করাই উচিত না। যেমন, তাশাহুদ পড়ার সময় বিভিন্নভাবে আঙুল তোলার নিয়ম রয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী তাশাহুদ পড়ার সময় তর্জনী বা শাহাদাত আঙুল কিবলা অভিমুখে উদ্দেশ করে সোজা রাখতে হবে। অন্যান্য বর্ণনা অনুযায়ী কিবলা অভিমুখে উদ্দেশ করে ওপরে-নীচে নাড়াতে হবে। কে আঙুল সোজা রাখল আর কে নাড়াল, সেটা কোনো ব্যাপার না, কারণ দুটোই অনুমোদিত, একটা করলেই হলো। এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে তর্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ দুটো নিয়মই গ্রহণযোগ্য। অনুরূপভাবে ইসলামে এ ধরনের অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো পালনের জন্য একাধিক গ্রহণযোগ্য নিয়ম রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় সম্পূরক পার্থক্য (Complementary Differences)। এগুলোকে কোনো তর্কের বিষয় বানানো একেবারেই উচিত না। যেহেতু এসব ক্ষেত্রে একাধিক অনুমোদিত উপায় রয়েছে, সেহেতু এসব বিষয়ে প্রত্যেকেই যেটা পছন্দ মনে করেন সেটা অনুসরণ করার স্বাধীনতা তার রয়েছে।
তবে কিছু কিছু বিষয়ে এমন কিছু মতপার্থক্য রয়েছে যেগুলো একটা আরেকটার বিপরীত। এ ধরনের বিষয়গুলোতে একজন ‘আলিমগণ একজন আরেকজনের সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমত প্রদান করে থাকেন। যেমন, কোনো কোনো ‘আলিম মনে করেন নারীদের মুখমণ্ডল আবৃত করা অবশ্যকর্তব্য (ওয়াজিব), অন্যদিকে অন্যান্য ‘আলিমগণ মনে করেন, মুখমণ্ডল আবৃত করা বাঞ্ছনীয় (মুস্তাহ়াব)। এ দুটো মতের একটা অবশ্যই সঠিক, আরেকটা ভুল। দুটো মতই সঠিক হতে পারে না। অনুরূপভাবে কোনো কোনো ইসলামিক বিশেষজ্ঞের মত সবধরনের বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ। আবার কেউ কেউ বলেন অনুমোদিত। এক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য: কেউ সঠিক, কেউ ভুল।
এসব ক্ষেত্রে মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে সহনশীল ও সৎ মন নিয়ে বিষয়গুলোকে নিরূপণ করা। একসাথে বসে মতপার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটা অভিন্নমতে (Common Conclusion) আসার চেষ্টা করা। অনেক সময় এই মতপার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করার পরেও স্কলারগণ অভিন্ন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না। এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের কর্তব্য, একজন মানুষের ভিন্নমত পোষণ করার অধিকারকে শ্রদ্ধা করা। পূর্বসূরী ‘আলিমগণ বিভিন্ন মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে যেভাবে সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, আমাদেরও অনুরূপ সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত। সহনশীলতা মানে এই না যে, আপনার পাশের লোক যেটা বলছেন আপনি সেটা সঠিক বলে বিশ্বাস করছেন, বরং আপনি আপনার বিশ্বাসই বজায় রাখছেন, কিন্তু একইসঙ্গে অপরের ভিন্নমত পোষণ করার অধিকারকে শ্রদ্ধা করছেন।
ফিক্হের যেসব বিষয়ে পার্থক্যগুলো পরস্পর বিরোধী, আলোচনার সময় এসব ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধৈর্য ধারণ করা অবশ্যকর্তব্য। আমাদের উচিত একটা ঐক্যমতে (ইজমা’) পৌঁছার চেষ্টা করা। যদি কোনো মতানৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব না হয়, এর মানে এই না যে আমরা এর ফলে কাউকে অশ্রদ্ধা করব কিংবা উম্মাহর মধ্যে ফাটল ধরানোর কাজে লিপ্ত হব।
তৃতীয় আরেক ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে, তবে এ ধরনের মতপার্থক্য নিষিদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে কেউ একজন এমন কোনো মত উদ্ভাবন করে যেটা প্রাথমিক প্রজন্মের ‘আলিমদের ঐকমত্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। যেমন, সমগ্র উম্মাহ এবং প্রাথমিক প্রজন্মের উম্মাহর সকল ‘আলিম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক (ফার্দ) সালাওয়াত-এর ব্যাপারে একমত। অনুমানসিদ্ধভাবে কেউ যদি বলে যে, কোনো বাধ্যতামূলক সালাওয়াত নেই, কিংবা কেবল দুই ওয়াক্ত কিংবা চার ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক সালাওয়াত রয়েছে, তাহলে সেটা হবে ইসলাম থেকে বিচ্যুত কোনো সিদ্ধান্ত। এ ধরনের মতপার্থক্যে জড়ানো একেবারেই অননুমোদিত। উম্মাহ যখন কোনো একটা ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাবে তখন সেখানে মতপার্থক্যের কোনো সুযোগ নেই। কেননা নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মাহ কখনো মিথ্যার ওপর ঐকমত্য হবে না।” এটা অবিশ্বাস্য ও অযৌক্তিক যে, ১৪৩৪ বছর ধরে সব ‘আলিম কোনো একটা বিষয়ে ভুল মত দিয়েছেন, আর আজকে হঠাৎ করে কেউ একজন সেই ব্যাপারে সঠিক বুঝ অর্জন করে ফেলেছেন। তার এই অনুধাবনের মধ্যে অবশ্যই কোনো গলদ রয়েছে। এটা ‘আধুনিকতাবাদী’-দের মতামত। এরা ‘আলিমদের ঐকমত্যকে অগ্রাহ্য করে নিজেরাই এমন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, যে-সিদ্ধান্ত সমগ্র উম্মাহর ঐকমত্য বিরোধী। এটা বিচ্যুতি।
মতপার্থক্য তিন ধরনের, সেটা আবার আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি,
১) সম্পূরক মতপার্থক্য। এসব ক্ষেত্রে সবাই ইচ্ছেমত যে কোনো একটা অনুসরণ করতে পারেন।
২) পরস্পর বিরোধী মতপার্থক্য। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের আলোচনা করা উচিত। এসব মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে সবারই নিজের নিজের মতকে সঠিক ও অন্যের মতকে ভুল বলার স্বাধীনতা রয়েছে, কিন্তু এখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।
৩) সর্বশেষে রয়েছে সেসব মতপার্থক্য যেগুলো অননুমোদিত। এটা হচ্ছে কেউ যখন উম্মাহর প্রতিষ্ঠিত ঐকমত্যের বিরুদ্ধে যায়।
বিদ্বানদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মতপার্থক্যই দেখা যায়।
এতখানি পড়ার পর অনেকে বলতে পারেন যে, “যেহেতু আল্লাহ একজনই, আল-কুরআন একটা, দীন-ও
একটাই, সেহেতু এখানে কোনো মতপার্থক্য থাকতে পারে না।” হ্যাঁ, অবশ্যই আল্লাহ একজন, আল-কুরআন একটা, দীন-ও একটাই, কিন্তু সেই দীন-এর অনুধাবনের ক্ষেত্রে মানুষ ভিন্নমত প্রকাশ করে। আর এই পার্থক্যটা নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় থেকেই ছিল। এ ব্যাপারে একটা সুবিদিত ঘটনা রয়েছে। একবার নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের বানি কুরায়দাতে যেতে বললেন, এবং সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত ‘আস্র-এর সালাত আদায় না-করতে বললেন। সাহাবারা সবাই বানি কুরায়াদার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেন। চলতে চলতে একসময় ‘আস্র-এর সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাঁরা এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসলেন। এক দল বললেন, “নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বানি কুরায়দা না-পৌঁছানো পর্যন্ত ‘আস্র-এর সালাত আদায় না-করতে বলেছেন। সুতরাং আমারা সেখানে পৌঁছেই ‘আস্র-এর সালাত আদায় করব, তখন যদি মাগরিব-এর সালাতের সময় হয়, তারপরেও। অন্য দল বললেন, “তিনি এটা বলেছেন, কিন্তু এটা দিয়ে তিনি এই কথা বুঝাননি। তিনি বলতে চেয়েছেন যে, আমরা যেন দেরি না করে যত শীঘ্র সম্ভব বানি কুরায়দাতে পৌঁছাই। তা সত্ত্বেও যথাসময়েই আমাদের ‘আস্র পড়তে হবে।” অবশেষে একটা দল সময় থাকতেই ‘আস্র-এর
সালাত আদায় করে পুনরায় যাত্রা শুরু করল এবং অন্য দল বানি কুরায়দা পৌঁছানো পর্যন্ত ‘আস্র-এর সালাত বিলম্ব করল। নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো দলকেই কিছু বললেন না। কেন? কারণ উভয় দলই সুন্নাহ অনুসরণ করেছে, যদিও তাদের অনুধাবনে পার্থক্য ছিল। এই ঘটনা কোনো হ়াদীস় বা কুরআনের আয়াত নিয়ে ‘আলিমদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অনুধাবনের একটা দৃষ্টান্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রাথমিক প্রজন্মের ইসলামিক বিশেষজ্ঞগণ ছিলেন সহনশীল। ঘটনাগুলো উম্মাহর মধ্যে যেন কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য তারা এগুলোকে আর বাড়তে দিতেন না।
সাহাবাদের সময়ে মতপার্থক্যের আরেকটা দৃষ্টান্ত:
হ়াজ্জ-এর সময়, উস়মান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর শাসনামলে, যুহ্র ও ‘আস্র-এর সালাত পড়তেন চার রাকা’আত করে। যদিও পূর্ববর্তী খুলাফা’ ও নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিয়ম ছিল, তাঁরা যখন হ়াজ্জ-এ যেতেন তখন যুহ্র ও ‘আস্র-এর সালাত পড়তেন দুই রাকা’আত করে আর এখন উস়মান পড়লেন চারা রাকা’আত। আব্দুল্লাহ বিন মাস’ঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, “উস়মান যেটা করছে এটা সঠিক মত নয়। দুই রাকা’আত আদায় করাটাই সঠিক মত।” তাঁর এই মত সত্ত্বেও আব্দুল্লাহ বিন মাস’ঊদ, উস়মানের (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) সঙ্গে কোনো বিতণ্ডা না করে চার রাকা’আত সালাতই আদায় করলেন। তাঁর ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “আপনি যখন জানতেনই যে উস়মান ভুল করছেন তখন কেন তাঁর অনুসরণ করলেন?” তিনি বললেন, “অনৈক্য অনিষ্টকর।” অনৈক্য অনিষ্টকর। চার রাকা’আত না কি দুই রাকা’আত এ ধরনের ব্যক্তিগত মতপার্থক্যের চেয়ে উম্মাহর মধ্যে ঐক্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আবু বাক্র ও উমারও (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন, কিন্তু এ ধরনের মতপার্থক্য কখনোই তাদের পরস্পরের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্যান্য অনেক সাহাবাদের মধ্যেও অনুরূপ দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁরা ফিক্হি বিষয় নিয়ে মতভেদ করতেন, কিন্তু এই মতভেদগুলোকে কোনোভাবেই নিজেদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার সুযোগ করে দিতেন না। মতপার্থক্য কখনোই তাঁদের পরস্পরকে বিপথগামী অভিহিত করার পথে ধাবিত করেনি। বরং তাঁরা বলতেন, “আমি সঠিক, আর তিনি ভুল, কিন্তু আল্লাহই ভালো জানেন।” তারপরও তাঁরা একে অপরকে সম্মান করতেন, দ্বীনী ভাইয়ের মতো ব্যবহার করতেন। শুধু সাহাবারাই নন, তাঁদের পর যেসব ইসলামিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন তাঁরাও একই পথ অনুসরণ করেছেন। ইমাম মালিক যখন তরুণ ছাত্র ছিলেন, তখন তাঁর দুজন শিক্ষক একটা মতপার্থক্যের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তাঁদের একজন একটা ফাতওয়া দিলেন। অপর শিক্ষক মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, “মালিক, এ ব্যাপারে তোমার মত কী?” মালিক বললেন, “আমি আমার শিক্ষকদের সামনে কিছু বলতে পারি না। আমার চেয়ে আপনাদের জ্ঞান অনেক বেশি; আপনাদের সামনে কথা বলার কোনো যোগ্যতাই আমার নেই।” তাঁর শিক্ষক বললেন, “না, আমি তোমার মতামত শুনতে চাচ্ছি।” ইমাম মালিক তাঁর সেই শিক্ষকের সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমত ব্যক্ত করলেন। সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁর অপর শিক্ষক বললেন, “মালিকের মতের সাথে আমি একমত।” খেয়াল করুন, ইমাম মালিক তাঁর শিক্ষকের ফাতওয়ার সঙ্গে সহমত ছিলেন না। কিন্তু তাঁর শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের দরুন তিনি তাঁর মতামত প্রকাশই করতে চাচ্ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, আমার শিক্ষক যখন বলে ফেলেছেন সেখানে আমি আর কিছু বলতে পারি না। আজকাল আমরা বিভিন্ন তরুণ-যুবক ছাত্রদের দেখি, কোনো শিক্ষক যদি কোনো ফাতওয়া দেন, আর সেটা যদি সেই ছাত্রদের অনুধাবন থেকে ভিন্ন হয়, তৎক্ষণাৎ তারা বিভিন্ন ফোরামে, সামাজিক যোগাযোগের সাইটে যেয়ে—যেমন ফেসবুক—শিক্ষকদের বিপথগামী আখ্যায়িত করে, তাদের তীব্রভাবে নিন্দা করে, ভুল ভাবে তাদের উদ্ধৃত করে, বিরুদ্ধ সমালোচনা করে। এগুলোর সঙ্গে ইসলামের প্রাথমিক যুগের তুলনা করুন। সেই সময়ে ছাত্ররা তাদের শিক্ষক ও ‘আলিমদের সঙ্গে সহমত পোষণ না করলেও তাঁদের শ্রদ্ধা করতেন। ইমাম মালিকের এই বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।
শুধু ইমাম মালিকই নন, ফিকহি ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আলোচনা-অনুধাবন পদ্ধতিতেও আমরা মতপার্থক্যের ব্যাপারে সহিষ্ণুতার প্রমাণ পাই। তাঁর সামনে যখনই কোনো ফিকহি ব্যাপার উত্থাপিত হতো, তিনি তখন তাঁর ছাত্রদের নিয়ে বসতেন, ছাত্রদের প্রত্যেকের মতামত জানতে চাইতেন। তিনি ভিন্ন ভিন্ন মতগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁরা যদি কোনো অভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেন, তাহলে তিনি সেটা অভিন্ন মত হিসেবে লিখে রাখতেন। আর যদি অভিন্ন মতে পৌঁছাতে না পারতেন, তাহলে ছাত্রদের ভিন্ন মত পোষণ করার অধিকারকে তিনি সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। ইমাম আবু হানিফা এখানে তাঁর চেয়ে বয়স্ক কোনো ব্যক্তির ভিন্ন মত পোষণ করার অধিকারকে শ্রদ্ধা করছেন না, তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন মত পোষণ করার অধিকারকেও এখানে তিনি শ্রদ্ধা করছেন না; তিনি এখানে শ্রদ্ধা করছেন তাঁর ছাত্রদের ভিন্ন মত পোষণ করার অধিকারকে। এটাই ছিল সালাফদের পথ।
ইমাম মুহ়াম্মাদ ইবনু হাসান আশায়বানির (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) মতো স্কলারগণও মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে অনুরূপ শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতেন। আবু হানিফার অধীনে মুহ়াম্মাদ ইবনু হাসান পড়াশোনা করেছেন। হানাফি মাজ়হাব-এর অন্যতম ‘আলিম হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। এরপরও তিনি মদীনায় যেয়ে ইমাম মালিকের অধীনে তিন বছর পড়াশোনা করেছেন। আবু হানিফার ফিক্হের সঙ্গে ইমাম মালিকের ফিক্হের অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ইমাম মালিকের মুয়াত্তার একজন বর্ণনাকারী ছিলেন তিনি। ইমাম মুহ়াম্মাদ অনেক ক্ষেত্রেই মালিকি মাজ়হাব আবার অনেক ক্ষেত্রে হানাফি মাজ়হাব-এর সঙ্গে সহমত পোষণ করতেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি উভয় মাজ়হাব থেকে ভিন্নমত পোষণ করতেন। তা সত্ত্বেও উভয় শিক্ষকের প্রতিই তাঁর ছিল পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা। আর মুহ়াম্মাদ ইবনু হাসানের প্রতিও তাঁর উভয় শিক্ষকদের ছিল পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
ইমাম আল-শাফি’ইর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) ব্যাপারটাও অনুরূপ। তিনি ইমাম মালিকের কাছে পড়াশোনা করেছেন। ইমাম মালিকের ক্লাসেই তিনি মাঝে মাঝে তাঁর শিক্ষকের বিপরীতে ভিন্ন মত ব্যক্ত করতেন। ইমাম আল-শাফি’ই যখন ইমাম মালিকের কাছে পড়াশোনা করছিলেন তখন তিনি ছিলেন কিশোর, এরপরও ইমাম মালিক তাঁর মতের বিপরীতে কিশোর বয়সী আল-শাফি’ইর মত প্রদানের অধিকারকে শ্রদ্ধা করতেন। ইমাম মালিক বয়সের দিক দিয়ে আল-শাফি’ইর থেকে অনেক বড় হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার অনুজের এই অধিকারকে ঠিকই শ্রদ্ধা করতেন। ইমাম আল-শাফি’ই শুধু ইমাম মালিকের কাছেই শিখেননি, তিনি ইমাম মুহ়াম্মাদ ইবনু হাসান আশায়বানির কাছ থেকে হানাফি ফিক্হও শিখেছেন। আরও অন্যান্য ফিকহি মতাবলম্বনকারী শিক্ষকদের কাছ থেকেও তিনি শিখেছেন, এদের মধ্যে অনেকে এমনও ছিলেন যারা এমনকি ফিক্হের মূলনীতিতে ভিন্নমত পোষণ করতেন। কিন্তু এরপরও তিনি কাউকেই বিপথগামী বলেননি। তাঁরা কেউ ভুল পথে আছেন এমন কথাও তিনি বলেননি কখনো। বরং ফিকহি ব্যাপারে তাঁর মতের বিপরীতে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকারকে তিনি সম্মান করতেন। এটাই ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের ‘আলিমদের পথ।
একবার একটা ফিকহি বিষয়ে ইমাম আল-শাফি’ই তাঁর এক ছাত্রের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। বিষয়টা নিয়ে তিনি আর তাঁর ছাত্র সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে ছিলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি লক্ষ্য করলেন যে তাঁর ছাত্র রেগে যাচ্ছে। ছাত্রের চোখে-মুখে রাগ ও হতাশার ছায়া দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। এটা দেখে ইমাম আল-শাফি’ই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তাঁর ছাত্রটির দিকে হাত বাড়ালেন করমর্দনের জন্য। তিনি বললেন, “মতপার্থক্য রেখেও আমরা কি দ্বীনী ভাই থাকতে পারি না?” তাঁর কথাটা আবার শুনুন। একজন ইমাম তাঁর ছাত্রকে বলছেন—কোনো সমসাময়িক স্কলার বা শিক্ষককে নয়; তিনি তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী ছাত্রকে বলছেন, “মতপার্থক্য রেখেও আমরা কি দ্বীনী ভাই থাকতে পারি না?” ফিকহি বিষয়ে ভিন্নমতের ক্ষেত্রে সকল মুসলিমের এ কথাটা মাথায় রাখা উচিত। মতপার্থক্য রেখেও আমরা কি দ্বীনী ভাই থাকতে পারি না?” আজকাল এমন লোকদের আমরা দেখি, যারা রুকূ’-এর আগে-পড়ে হাত ওঠানো, গোড়ালির নিচে প্যান্ট পড়া কিংবা কোন কোন ধরনের নাশীদ অনুমোদিত বা নিষিদ্ধ, এ ধরনের বিষয়গুলোতে যদি আপনি তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন তাহলে সে হয়তো আপনার সঙ্গ ত্যাগ করবে। যে মুহূর্তে আপনি তাদের মতের বিপরীত কোনো অভিমত প্রদান করবেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা আপনাকে পরিত্যাগ করবে, আপনার গায়ে বিপথগামী তকমা লাগাবে। আপনাকে তারা আহ্ল আল-সুন্নাহ ওয়াল-জামা’আহ-র বলয় থেকে ছুঁড়ে ফেলতে চাইবে। এটা কখনোই সালাফ আর সালিহীনদের পথ ছিল না; এটা কখনোই প্রাথমিক প্রজন্মের ‘আলিমদের পথ ছিল না। তাঁদের পথ ছিল সহনশীলতা। তাঁদের পথ ছিল ইজতিহাদ করে কোনো ব্যক্তি যদি ভিন্ন কোনো মতে পৌঁছাতেন, সেই মতকে শ্রদ্ধা করা—এমনকি তাঁরা যদি সেই ব্যক্তির মতকে ভুল মনে করতেন তবুও।
সঙ্গীতের ব্যাপারে ইমাম আল-শাওকানি (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর বইতে যেভাবেফিক্হ নিয়ে আলোচনা করেছেন সেটা সত্যিই বেশ অনুপ্রেরণামূলক। তিনি লিখেছেন, “আমি আমার জীবনে কখনো গান শুনিনি। আমি বিশ্বাস করি এটা নিষিদ্ধ। কিন্তু আমার বইতে আমি বিভিন্ন মতপার্থক্য তুলে ধরছি; এগুলোর প্রমাণ সহ। যাতে করে লোকজন অন্যান্যদের অবিশ্বাসী না বলে, পার্থক্যগুলো সহ্য করতে পারে এবং বুঝতে পারে যে অন্যান্যদের এই দৃষ্টিভঙ্গি কোথা থেকে এল।” ভেবে দেখুন। তিনি এই মত পোষণ করতেন যে, সঙ্গীত নিষিদ্ধ। তিনি তাঁর নিজের মত প্রমাণের জন্য এবং কেন তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন শুধু এ ব্যাপারেই বেশ ভালো একটা বই লিখে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি এটাকে ন্যায্য মনে করেননি; তিনি ভাবলেন অন্যান্য মতগুলোর প্রতিও সুবিচার করা উচিত। এজন্য তিনি দলিল-প্রমাণ সহ অন্যান্য মতগুলো উপস্থাপন করলেন যাতে করে সঙ্গীতের বিষয়টিতে মানুষজন একটা পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করতে পারেন।
আমরা কি আজ ফিক্হের ব্যাপারে অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করি? অথচ এটাই ছিল প্রাথমিক প্রজন্মের ‘আলিমদের পদ্ধতি। এই পদ্ধতি অনুসরণ এবং মতপার্থক্যগুলোকে এভাবে বিবেচনা করাই আমাদের জন্য বাঞ্ছনীয়। নবী মুহ়াম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেন যে, “যারা মানবজাতির প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তাদের দয়া করবেন না।” লক্ষ্য করুন, হ়াদীস়টাতে একটা সার্বিক ও ব্যাপক শব্দ—মানবজাতি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রেই এটা প্রয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে জ্ঞান অন্বেষণকারী শিক্ষার্থী ও ‘আলিমের বেলায় কত বেশি সদয় হওয়া উচিত? তাঁদের সঙ্গে ব্যবহারে কত বেশি দয়াপরবশ, সহিষ্ণু ও সংগত হওয়া উচিত? এঁদের সঙ্গে সর্বোচ্চ সদাচার করা উচিত নয় কি? কেবল আমাদের অভিমত ভিন্ন অন্য কোনো মত পোষণ করার কারণেই কাউকে চরমপন্থি বা বিপথগামী বলা উচিত না। কারও অভিমত ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যদি সেটা মতপার্থক্যের মধ্যে গ্রহণযোগ্য গণ্ডির ভেতরে থাকে, তাহলে—আমি এই মতের সঙ্গে একমত নই, এটা সরাসরি না-বলে—আমাদের অবশ্যই সেই মতকে শ্রদ্ধা করতে হবে, সহ্য করতে হবে। আমরা আমাদের ভাইকে বলতে পারি, “আপনি যেটা বলছেন আমি সেটার সঙ্গে একমত নই। এটা আমার অভিমত। আমি মনে করি আপনার মতটা ঠিক নয়, তবে আল্লাহই ভালো জানেন।” এরপরও আপনি তার সঙ্গে ভাইসুলভ, বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন। গ্রহণযোগ্য মতপার্থক্যগুলোকে উম্মাহর ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেবেন না।
আশা করি, আলোচনাটি কিছু পরিমাণে হলেও ফলপ্রসূ হয়েছে। এখান থেকে লোকজন ফিক্হ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনা করার সময় কীভাবে উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে কিছু দিকনির্দেশনা নিতে পারবে। ফিক্হের ব্যাপারে আলোচনার জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে, তবে, শেষ পর্যন্ত আহ্ল আস-সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহর আকীদা একটাই।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি ইসলামের সঠিক অনুধাবনের ওপর রেখে তিনি যেন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেন, এক সুতোয় গেঁথে দেন আমাদের হৃদয়কে। সকল বিষয়ে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করেন এবং সমগ্র উম্মাহর মধ্যে ঐক্যের বন্ধন গড়ে তোলেন।মুল লেখা