সম্প্রতি সৌদি আরবে আট বাংলাদেশী মুসলিম ভাইকে ইসলামী দণ্ডবিধান তথা কিসাস হিসেবে শিরোচ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ে এক শ্রেণীর মিডিয়া বুঝে না বুঝে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার প্রয়াস পাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় আইন যা মূলত কুরআনের আইন- এর আওতায় এদের শিরোচ্ছেদ কার্যকর করা হয়েছে। উপযুক্ত সাক্ষী-প্রমাণ ও দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর্ব শেষে এ শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টাও সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে জাতিকে ব্রিফ করেছেন।
তারপরও সাধারণ মুসলিম ভাই-বোনদের ইসলামের দণ্ডবিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করার তথা ইসলাম থেকে তাদের শ্রদ্ধা তুলে নেবার একটি অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অপ্রপ্রচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে ইসলামের শান্তিময় যৌক্তিক এবং পরিপূর্ণ মানবিক এই কিসাস বিধান সম্পর্কে কিছু লিখা জরুরী মনে হয়েছে। আশা করি এটি পড়লে মুসলিম ভাই-বোনদের মধ্যে ঈমানের দৃঢ়তা আসবে এবং সকল সন্দেহ-সংশয় কেটে যাবে। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
প্রথমেই বুঝতে হবে ‘কিসাস’ জিনিসটা কী? আল কুরআনের পরিভাষায় ‘কিসাস’ শব্দের অর্থ হলো প্রাণের বদলে প্রাণ। কেউ একজনকে অন্যায়ভাবে খুন করেছে বলে তা বিচারে প্রমাণিত ব্যক্তিকে সমমানের শাস্তি প্রদান ইসলামের বিধান। এ মর্মে পবিত্র কুরআনের যে আয়াতে মৃত্যুদণ্ডের বিধানটি বর্ণিত হয়েছে তা হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ذَٰلِكَ تَخۡفِيفٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَرَحۡمَةٞۗ فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١٧٨ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٧٩ ﴾ [البقرة: ١٧٨، ١٧٩]
‘হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও রহমত। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৮-১৭৯}
প্রাণনাশের বদলায় প্রাণদণ্ডের মধ্যে রয়েছে জীবনের নিরাপত্তা। কারণ, যৌক্তিকভাবেই তার কার্যকারিতা প্রমাণিত। যেমন ধরা যাক, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে এরশাদ শিকদার নামে এক ব্যক্তিকে তার জীবনে ৬০টি হত্যাকাণ্ড ঘটাবার অপরাধে দেশের বিচার বিভাগ তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে এবং সেটি কার্যকরও করা হয়। এক্ষেত্রে যদি প্রথম হত্যাকাণ্ডের পরেই পবিত্র কুরআনের দণ্ডবিধি মোতাবেক বিচার করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো, তাহলে ৫৯টি নিরপরাধ মানুষের প্রাণ রক্ষা পেত। কিন্তু কুরআনের এ নিরপেক্ষ অপরাধ-দণ্ডবিধি সমাজে চালু নেই বলেই সব সমাজে অপরাধপ্রবণতা আজ ক্রমবর্ধমান। এই আইনের বিকল্প হিসেবে মানব রচিত অপরাধ-দণ্ডবিধিসমূহ অপরাধ নির্মূল এবং তা হ্রাসে আজ পর্যন্ত তেমন কার্যকর ও সফল প্রমাণিত হয়নি। বস্তুত এ কারণেই যখন প্রতি বছর সারা বিশ্বের অপরাধমূলক ঘটনার পরিসংখ্যান বের হয় তখন দেখা যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবে হত্যাকাণ্ডসহ অপরাধমূলক ঘটনাবলীর সংখ্যা সবচেয়ে কম।
বিশ্বের যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ডকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করে, তাদের কাছে জিজ্ঞাসা, সংশ্লিষ্ট খুনি অন্যকে হত্যা করে কোন মানবিক কাজটি করেছিল? তার এই বর্বরতাপূর্ণ অপরাধের শাস্তি হিসেবেই তো সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদ ও মাত্রায় কারাদণ্ড প্রদানের বিধান করা হয়েছে। যারা কুরআনের আইনের বিপরীতে হত্যা বন্ধের বিকল্প ব্যবস্থা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তারা লক্ষ্য অর্জনে তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রা সেসব দেশে দ্রুত বেড়েই চলেছে।
আসলে মানবাধিকার বা মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা তাদের উদ্দেশ্য নয় যারা কারণে অকারণে মানুষেরই সৃষ্টিকর্তা এবং মানুষের ওপর সবচে দয়াবান সত্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধানকে কথায় কথায় নানা কুযুক্তি দিয়ে ‘অমানবিক’ বলার মতো অমনুষত্ব দেখায়। মানুষের প্রতি যদি সত্যিই তাদের দরদ থাকত তাহলে খোঁড়া অজুহাতে আফগান ও ইরাকে হামলা করে এই তথাকথিত মানবতাবাদী পশ্চিমারা লাখ লাখ নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করত না। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে ন্যক্কারজনকভাবে সমর্থন করত না। নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের হামলাকে সমর্থন করত না। তারা এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে প্রকারান্তরে জায়নবাদী ইসরাইলকেই সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে।
কিসাস দণ্ডাদেশ বা মৃত্যু দণ্ডাদেশ প্রকাশ্যে কার্যকর করার ক্ষেত্রেও অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকেও নিষ্ঠুর বা অমানবিক বলে থাকে। আসলে তারা অপরাধের শাস্তি বিধানে ইসলামী আইনের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। মূলত ইসলামের শাস্তি আইনের লক্ষ্য শুধু অপরাধীকে শাস্তি দেয়াই নয়, বরং যাতে এ ধরনের অপরাধ ভবিষ্যতে আর সংঘটিত না হয়, এজন্য মানুষকে সাবধান করাও ইসলামী আইনের লক্ষ্য। দণ্ডাদেশ বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রকাশ্যে কার্যকর হলে এবং হাজার হাজার মানুষ তা দেখার সুযোগ পেলে মানুষ এ শাস্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সাবধান ও সংশোধন হতে পারে। এবং তার ফলে এ ধরনের অপরাধ সমাজ থেকে হ্রাস পেতে পারে। যিনার মতো একটি ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তির কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَٱجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢ ﴾ [النور : ٢]
‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের আযাব প্রত্যক্ষ করে।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ০২}
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি পরম অনুগ্রহশীল এবং তিনি চান না যে, তাঁর বান্দারা কোনো অন্যায় অবিচার ও পাপ কাজে দণ্ডিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তাই তিনি এ জাতীয় চরম শাস্তি থেকে তাদের রক্ষার নানান বিকল্প ব্যবস্থাও রেখেছেন। কোনো খুনির এই প্রান্তিক শাস্তির বেলায়ও তাই দেখা যায় তিনি এই বিধান করেছেন যে, নিহত ব্যক্তির অভিভাবকরা যদি খুনি থেকে রক্তমূল্য হিসেবে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয় অথবা রক্তমূল্য ছাড়াই তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে এটারও তিনি অবকাশ রেখেছেন। কিন্তু নিহত ব্যক্তির অভিভাবকরা যদি রক্তমূল্য না নিয়ে খুনিকে মাফ না করে, তাহলে তাকে কুরআনের ‘কিসাস’ আইন মোতাবেক মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং অপরাধের তারতম্য হিসেবে জরিমানা প্রদান অথবা বিভিন্ন মেয়াদে সে কারাদণ্ড ভোগ করে।
সব ধরনের বৈষম্যবোধের ঊর্ধ্বে মানবস্রষ্টা মহান আল্লাহ তাঁর সব বান্দার শাস্তি-নিরাপত্তা বিধানে খুন ও যাবতীয় অপরাধ দমনে যেসব বিধান প্রদান করেছেন, ন্যায়বিচারের দিক থেকে তা অতুলনীয় ও অনন্য। যে কোনো মুসলমান এমন কি ন্যায়বিচারকামী যে কোনো মানুষই বিনাবাক্যে তা তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে ভাষা, বর্ণ, গোত্র, অঞ্চল ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে এ আইনের ব্যাপারে বিরূপ মানসিকতা পোষণ ও তার ব্যাপারে সমালোচনা নিঃসন্দেহে ঈমানী চেতনারই পরিপন্থী নয়, সাধারণ মানবিক চেতনারও তা পরিপন্থী। বিচারে বৈষম্য বিলোপ করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَايْمُ اللهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ ابْنَةَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا».
‘নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী কওমের লোকেরা ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোনো বংশীয় লোক চুরি করত, তারা তাকে ছেড়ে দিতো (শাস্তি প্রদান করত না)। আর তাদের মধ্যে গরীব কেউ যখন চুরি করতো, তার ওপর তারা হদ কায়েম করত। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করত, তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ [বুখারী : ৩৪৭৫]
অপরাধীদের সঙ্গে আত্মীয়তা, ভাষা, বর্ণ, গোত্র, অঞ্চলের সম্পর্কজনিত কারণে এই দণ্ডাদেশ ও তা কার্যকরকরণে কারও অন্তরে দুঃখ-কষ্টের অনুভব অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে দণ্ডের শিকার আপনজন কেউ হলে সেখানে মনস্তাত্ত্বিক কারণেই এমন মানসিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু অভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যদি চিন্তা করা যায় যে, অপর কোনো দেশের, কোনো ভাষা বা গোত্রের কেউ আমার কোনো আপনজন ও দেশের কোনো ভাইকে এভাবে খুন করলে, তখন বিষয়টি আমরা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব, সেই অবস্থাটা সামনে নিয়ে ভেবে দেখতে হবে।
মানব সভ্যতার বর্তমান চরম উত্কর্ষের যুগেও অপরকে হত্যার মতো এই বর্বরতা কেন? যারা খোদায়ী নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিধানের সমালোচনা করে অথচ মানবাধিকার মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবিক মূল্যবোধের বড় বড় নীতিকথা উচ্চারণ করে, তারা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যখন অন্যায় অসত্য অভিযোগে কোনো দেশের ওপর অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় কিংবা কোথাও পরোক্ষ গৃহযুদ্ধের উস্কানি দিয়ে কোনো দেশে হাজারও মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চালায় অথবা নিজেরাই ড্রোন হামলা করে মুহূর্তের মধ্যে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ হাজারও নিরাপরাধ মানুষ নির্বিচারে হত্যা করে, তখন তারা কিংবা তাদের মতাবলম্বীদের কেউ প্রাণদণ্ডের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের কোনো ন্যায় বিধান সম্পর্কে বিরূপ মানসিকতা দেখালে, সেটা সর্বোতভাবেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার উপযোগী। বলা বহুল্য, সারা বিশ্বময় বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তি ও তাদের স্থানীয় দোসররা যেই সার্বিক অভিযান চালাচ্ছে, তার একমাত্র কারণ হলো, বিশ্বে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের বস্তুবাদী জীবন-দর্শনের সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে। গোটা মানবগোষ্ঠী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় ইসলামের খোদায়ী বিধানের দিকেই ধাবিত হয়ে তখন ওই সব শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করবে। তাই যেখানে, যেই দেশে মানব রচিত আইনের ফলে প্রায়ই অন্যায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে হাজারো মায়ের কোল খালি হচ্ছে, শত শত নারী বিধবা হচ্ছে, গুম করা লাশ টুকরো টুকরো করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে এবং প্রকাশ্যে নির্মমভাবে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে কিসাসের একটি আইনের প্রয়োগে আরও অগণিত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি ওঠার কথা, সেক্ষেত্রে এর বিরূপ সমালোচনা যেমন উদ্দেশ্যমূলক তেমনি নিঃসন্দেহে বিবেকবোধহীন ও ইসলামবিদ্বেষ প্রসূত।
সম্প্রতি সৌদি আরবে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে ৮ বাংলাদেশীর প্রাণদণ্ডের বিষয়টি নিয়ে শান্ত ও স্থির মস্তিষ্কে আমাদের ভেবে দেখা উচিত। সৌদি আরবের যে কেইসে একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আরও দু’জন সৌদি নাগরিককেও একইভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে ওই বিচারের ব্যাপারে বৈষম্য চিন্তার সুযোগ আছে বলে মনে করা যায় না। বরং এ ধরনের সমালোচনা আমাদের মতো দেশে, যেখানে হত্যা, গুম ক্রমবর্ধমান গতিতে অগ্রসরমান, সেখানে সম্পূর্ণভাবেই বেমানান। তাতে এটাই প্রমাণিত হবে যে, আমরা কুরআনের আইনের প্রতি অনাগ্রহীই নই, বরং সাধারণ ন্যায় নীতিবোধ থেকেও বঞ্চিত। আমাদের দেশের কিছু যুবকের ভুল ও অপরাধের কারণে এই প্রান্তিক শাস্তির শিকার হওয়ায় আমরা বৈষয়িক দিক থেকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত এবং মানবিক কারণে ব্যথিত। কিন্তু নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আল-কুরআনুল কারীমের কিসাস বিধানের ওপর অটল থেকে মানবতাকে হত্যা প্রবণতার হাত থেকে রক্ষার যে আইনানুগ চর্চা হয়েছে তার প্রতি আমরা আপত্তি ও ক্ষোভ জানাতে পারি না।
ইসলামী রাষ্ট্র কি মৃত্যুদণ্ড বাতিল করতে পারে ?
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ذَٰلِكَ تَخۡفِيفٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَرَحۡمَةٞۗ فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١٧٨ ﴾ [البقرة: ١٧٨]
‘হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে হালকাকরণ ও রহমত। সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৮}
কোনো বৈধ কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা অপরাধের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ مِنۡ أَجۡلِ ذَٰلِكَ كَتَبۡنَا عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ وَلَقَدۡ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا بِٱلۡبَيِّنَٰتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ فِي ٱلۡأَرۡضِ لَمُسۡرِفُونَ ٣٢ ﴾ [المائدة: ٣٢]
‘এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের উপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর যমীনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৩২}
অতএব যখন কোনো ইসলামী রাষ্ট্র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তখন তা তার একটি দায়িত্বই পালন করে মাত্র। ইসলামী রাষ্ট্র বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের অধিকার নেই একটি জাতি বা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যে বিধান পালন করে, তা বাতিল করে দেয়।
ওপরের আয়াতে যেমনটি আমরা লক্ষ্য করলাম, ইসলাম হকদারের হক রক্ষার্থে ক্ষমা করার অধিকার কেবল হকদার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রেখেছে। এদিকে ইসলাম তাকে ক্ষমা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হত্যাকারী যথেষ্ট শিক্ষা পাবার পর দণ্ড কার্যকরের প্রাক্কালে তাকে ক্ষমা করা হয়। ইচ্ছাকৃত হত্যা বা পরিকল্পিত হত্যা ক্ষমা করার বিধানও ইসলাম দিয়েছে যা বাকারার ১৭৮ নং আয়াতে অতি চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ক্ষমা করার অধিকারী নিহতের হকদারগণ, আর কেউ নয়। সে ক্ষমা হতে পারে রক্তপণ দিয়ে, কিংবা রক্তপণ ছাড়াও যদি ক্ষমা করা হয় তাহলে তাও গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের প্রশাসন আগ থেকে তৎপর হলে যথেষ্ট রক্তপণ দিয়ে হয়ত সে সব হতভাগা যুবকদের প্রাণ রক্ষা করতে পারতো নিহতের হকদারদের রাজি করিয়ে। অতএব হত্যার শাস্তির এ ব্যবস্থার মধ্যে শাস্তি ও ক্ষমা পাওয়ার দুটো দিকই আজো কার্যকর রয়েছে।
এটিই কিন্তু ন্যায়সঙ্গত, এমনকি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও। কেননা রাষ্ট্রের জন্য অধিকাংশ জনগণ বা সকল নাগরিকের পছন্দের বাইরের কোনো আইন বাস্তবায়ন সঙ্গত নয়। আরও জোর দিয়ে বললে, রাষ্ট্রের জন্য কোনো চোর চুরিকৃত পণ্যসহ গ্রেফতার হবার পর সেই দ্রব্যের মালিককে চুরি যাওয়া সম্পদের মালিকানা ছেড়ে দিতে বাধ্য করার অধিকার নেই।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা তার কিছু নাগরিক কর্তৃক হামলা ঘটানোর অভিযোগের ভিত্তিতেই পুরো একটি দেশকে শায়েস্তা করার অনুমতি দেয় জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবার উদ্দেশ্যেই। যদিও এ অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত নয়। এর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কেবল আল্লাহ তাআলাই অবগত।
সুতরাং নিরপরাধ মানুষকে স্বেচ্ছায় হন্তারকের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড একটি কার্যকর প্রতিকার। আর বিনা অপরাধে অনেক নিরীহ ব্যক্তি হত্যার শিকার হওয়ার চেয়ে ন্যায়ানুগ বিচার ও যথোপযুক্ত তদন্ত-প্রমাণের পর কঠোর শর্তসাপেক্ষে ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে একজন অপরাধীকে হত্যার এখতিয়ার প্রদান করা অনেক উত্তম, যে অপরাধ স্বীকার করে নেয় খোদ অপরাধী বা তার দল।
আল্লাহ তা‘আলা এ বাস্তবতাকে সমর্থন করে বলেন,
وَلَكُمۡ فِي ٱلۡقِصَاصِ حَيَوٰةٞ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٧٩ ﴾ [البقرة: ١٧٨، ١٧٩]
‘আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৯}
অতএব কিসাস প্রকৃতপক্ষে অনেক নিরপরাধ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করে। অনেক সময় সীমালঙ্ঘনকারী ও অপরাধীরা যুলম বা সীমালঙ্ঘনবশত যাদের ওপর হাত ওঠায়। তেমনি তা অনেককে জীবন দান করে যারা অন্যের হত্যার ক্রোধ প্রকাশে অসংযত। কিসাস তাদেরকে সেই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পূর্বে শতবার ভাবতে বাধ্য করে যে এর পরিণাম শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডতে গিয়ে দাঁড়াবে।
এ শাস্তির দ্বারা ইসলাম শান্তিপ্রিয় নিরীহ ব্যক্তিদের অবৈধ হত্যার ঝুঁকি ও হুমকি থেকে সাহায্য করে। এ কাজটি পুরোপুরি অধিকাংশ রাষ্ট্রই করে থাকে। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো পর্যন্ত এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
তবে ইসলাম নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যার বৈধতা দেয় না। অনুমতি দেয় না অবৈধভাবে শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিকে ভীতি প্রদর্শনের। যেমন ইসলাম মনে করে অপরাধীদের সহযোগিতা প্রদান কাউকে নিজের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনও কমিয়ে দেয় না। সুতরাং ইসলাম বিশ্বময় শান্তি রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় একে অন্যকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٢ ﴾ [المائدة: ٢]
‘সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।’ {সূরা আল-মায়িদা: ০২}
কিছু দেশের শরীয়া বিধান বাস্তবায়নকে উগ্রতা বলে আখ্যায়িত করা হয় কেন?
ইসলামী রাষ্ট্র যেসব ইসলামী আইন প্রয়োগ করে তার কিছুকে ‘উগ্রতা’ বলে কেউ কেউ আখ্যায়িত করে। এরা কিন্তু আর দশটি দেশের মতোই সে দেশের জনগণ বা সংখ্যাগুরু নাগরিকের পছন্দ মতো আইন বাস্তবায়নকে জরুরী মনে করে। আর যখন ইসলামী রাষ্ট্রে অধিকাংশ জনগণ ইসলামকে তাদের বিশ্বাস ও বিধান হিসেবে গ্রহণ করে তখন কিন্তু সে আইনকে ভারসাম্যহীন বা বাড়াবাড়ি বলে অভিহিত করা কোনো মানুষের ধারণা প্রদান সমুচীন হতে পারে না। চাই সে ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানুক আর না জানুক। চাই এ ব্যক্তি মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধের মান রক্ষাকারী হোক কিংবা বল্গাহীনভাবে স্বাধীন হোক। সে ধরনের কথা বিশ্বের বিভিন্ন ভূখণ্ডের মুসলমানদের বাস্তবায়নের আলোকেও বলা সম্ভব নয়। কেননা এর উগ্রতা বা ভারসাম্যতা নির্ণীত হবে পবিত্র কুরআন, রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ ও কুরআন-সুন্নাহ বিষয়ে পারদর্শী মুসলিমদের মধ্যে যারা আলিম তাদের নির্ভরযোগ্য বক্তব্যের আলোকে। আর সমকালীন বিশ্বের সব মুসলিম দেশে যা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ইসলামের প্রাথমিক যুগের আরশিতে দেখলে তাকে বিচ্ছিন্ন গণ্য করা যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ, খেলাফতে রাশেদা এমনকি তার অব্যবহিত পরবর্তী যুগগুলোর সঙ্গেও রয়েছে এর অদূর সম্পর্ক।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সচেতন ইসলামী রাষ্ট্র সমকালের প্রেক্ষাপটে জীবনের বাস্তবতার প্রতি লক্ষ্য রাখবে, যা থেকে কিছুতেই বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব নয়। যার ফলে একজন মুসলমান তার সকল বিষয়ে এবং সকল অবস্থায় ইসলামের আদর্শ বিধান বাস্তবায়নে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। এ কারণে ইসলামী রাষ্ট্রের এবং তার সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ইসলাম পালনের স্তর অনুযায়ী ইসলামী রাষ্ট্রের আসমানী বিধান বাস্তবায়নে তারতম্য দেখা যায়। তবে কোনো অবস্থাতেই আসমানী বিধানকে বাতিল করা বা তার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের অবকাশ নেই যতক্ষণ তা অকাট্য বা প্রায় অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় এবং বাস্তবায়নের শর্তাদি উপস্থিত থাকে।
পরিশেষে কিসাস আইনের কল্যাণকারিতা উপলব্ধির জন্য আল্লাহ সব শ্রেণীর মানুষকে শুভবুদ্ধি দান করুন, এই কামনা করি। (আলী হাসান তৈয়ব)