কুরবান চৌধুরী হাম্বা টিভি থেকে দেশের সর্ববৃহৎ কোরবানির হাট থেকে আজ আমাদের সর্বশেষ আপডেট জানাবেন। মূলত তিনি কোরবানির মূল হিরো এবং হিরোইন, মানে গরু, ছাগল এমনকি উট এদের সাথেই সবাসরি কথা বলবেন। হাম্বা টিভি আউল ফাউল কোন প্রতিবেদন দেয় না। আসুন এই এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ টা দেখে নি।
*** প্রতিবছরের মতন এই “গবলেট হাটেই” বসেছে দেশের সবচেয়ে বড় গরু ছাগলের সমাবেশ। দেশ- বিদেশের মানে ইন্ডিয়া থেকে আগত বিপুল পরিমাণ ছেলে মেয়ে, মধ্যম সব ধনী, গরীব, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই বাজারে সমাবেত হয়েছে। আসুন আমরা দেরী না করে এই সব আত্মত্যাগী মহান কুরবান যোদ্ধা দের সাথে কথা বলি। তাদের কে জিজ্ঞেস করি, তাদের কার কি কোয়ালিটি আছে কোরবানির পশু হবার জন্য।
আমার পাশেই দেখা যাচ্ছে একটা বিশাল কাল গরু।
গরু ভাই, আপনার নাম কি? এখানে এসে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
আমার নাম গমীম গসমান। তুই মনে লয় আমারে চিনতে পারস নাই, কুরবানি হইতে আসছি, আর আমারে গিগাস প্রতিক্রিয়া কি! একবার যদি এইখান থেকে ছুটতে পারি, তয় আমার লিডারের কসম রাইতে তোর বাসার সামনে গিয়া চিনাই দিয়া আমুনে আমি কে!! আমার তিনমনি লাথি না খাইতে চাইলে এক্ষণ ফুট !
জি প্রিয় দর্শক দেখতেই পারছেন, গসমান কিঞ্চিৎ উত্তেজিত। ওনার নিকটতম গরু প্রার্থী উপহাস করে বলেছেন, উনি দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারছেন না আসলে, তাই।
দর্শক এই গরুটাকে দেখুন, দেখতে শুনতে কিন্তু বেশ লাগছে।
আপনার নাম কি? আপনার রূপের এই মাজেজা কি আমাদের একটু বলবেন?
(সামনের পা দিয়ে লোম গুলো একটু নাড়িয়ে) আমার নাম গনিস গলমাস। কি যে বলেন, রূপ-টুপ (লাজুক হাসি) আমি এমনিতেই সুন্দর, গচারাল গিউটি বলতে পারেন। তবে কিছু কথা শেয়ার করা যায়, আমি সাপ্তাহে দুবার গোরচনায় যাই, ওখানে স্পা নিই, রাতে জাবর কাটার সময় ভুশি, খইল, লবণ, আর একমুট গোবর মেশানো একটা প্যাক নি। সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলি। আরেকটা কথা, শুধু ফেসের যত্ন নিলেই হবে না। সামনের, পাছনের পা, লেজ এমনকি শিং সব কিছুকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সব চেয়ে ভালো হয় মানুষের সবান, শ্যাম্পু দিয়ে যদি ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন। একটু খরচ বেশী তবে উপকার পাবেন, গায়ে আর মশা মাছি তেক্ত করবে না। আমি অবসর সময়ে গোরসনায় ধারণকৃত ভিডু দেখি, এতে মাইন্ড হেব্বি ফ্রেশ থাকে।
কুরবান চৌধুরী একটু সামনে এগিয়ে একটা জটলা দেখে, একটা গরু কয়েকটা ছাগলকে কি যেন বলছিল।
আপনার নাম কি? আপনি একটা গরু হয়ে ছাগলের দলে কি করেন?
আমার নাম গরিমল। আমি শিক্ষিত, ভালো বাংলা পারি। কিন্তু কি জানি কি হইছে আমার ইদানিং! বিশ্বাস করেন আমি নিষ্পাপ! এই ছাগল গুলান এতই আকর্ষণীয় আর এত ছোট ছোট কাপড় পড়ে ম্যা ম্যা কণ্ঠে ডাকছিল যে, আর গোয়াল ঘরে থাকতে পারলাম না। বেড়া ভাইঙ্গা ছুঁইটা চলে আসলাম। কিন্তু এখন দেখি এইটা কোরবানির হাট। আমি নাকি ছাগ টিজিং এর দায়ে কোরবানি হব !!
উফ! এই জায়গাটার অবস্থা তো বেশী খারাপ। খালি গর্ত আর গর্ত!! প্রতিবেদক খালি উস্টা খায়। একটা ছোট খাট জটলা দেখা যাচ্ছে।
গরু ভাইরা আপনারা সবাই একজট হয়ে আছেন কেন?? আমি কি আপনাদের নাম জানতে পারি? আপনাদের কার কি কোরবানি যোগ্যতা একটু জানাবেন কি?
(খুব হাসি দিয়ে )আমি গবুল গোসেন। আমি কিন্তু একজন গোড়বিদ। এইখানের কেও আমারে গোড়ে গিফিট দিতে পারবে না। দরকার পরলে আমার রাখাল রে জিগাইতে পারেন। আর আমার আরেকটা কোয়ালিটি আছে, আমার গায়ে ম্যালা চর্বি, আমার চামড়া গণ্ডার থেকেও শক্ত আর মোডা। এই হাটে আমার চেয়ে গণ্ডার থুক্কু গরু উপযুক্ত আর কেউ নাই।
পাশেই একজন বলে বসলেন, ওই তোর ভেটকা হাসি থামাবি, নাকি লাথি দিয়া দুই ফুট সরামু। সমবাদিক শোন, আমার নাম গাজাহান গালি। আমার তেজ দেখছ কি তুমি?? ওরে চালাই আমি। যা হাম্বানোর আমার লগে হাম্বাও। উল্টা সিধা কিছু কইলে কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকার গানহানি গামলা কইরা দিমু নে।
ও হো! আপনারা একটু শান্ত হন, আমার নাম গিপু গনি। আমি বিশ্ব গরু শান্তিতে বিশ্বাস করি, আর তাই প্রতি মাসেই আমি দেশের বাইরে যাই। ফ্রিতে বিশ্বের বিভিন্ন গোয়াল ঘর, গো খাদ্য, আর মল মুত্র দিয়ে কি করা যায়, এই বিষয়ে আইডিয়া নিতে বিভিন্ন দেশ চরাই। অচিরেই সেঞ্চুরি করতাম কিন্তু কারা যেন ঠেলে এইখানে নিয়া আসছে।
ওই ফেত্নি, নিজেরে কি গবনে গতুতা ভাবস?? এত চরানো স্বভাব কেন তুর?? যা হোক, আমার নাম গাহারা গাতুন। এইযে হাটের গাইন- গ্রিঙ্খলা এত সুন্দর দেখতাচেন যে, সবডি আমার অবদান। এইখানে বসন্ত চলতেছে! কুতাও কোন গুতাগুতি, শিং মারামারি, লাথি- লালা ছিটাছিটি নাই। সব গান্ডার গন্ট্রোল! (বলার সাথেই ইন্ডিয়ান এক গরু দেশী এক গরু রে এক লাথি দিসে)
একজন মুবুব্বি গোসের গরুর দেখা পেলাম। আপনি চুপচাপ কেন? এই বিষয়ে কিছু বলেন।
Well, I don’t want to say anything in this matter. আমার নাম গাল-গুহিত। আমি কিছু বললেই গরু বাজারে fire জ্বলে উঠে। and I really don’t know how to handle it !
এই যে ভাই শুনে যান, এদিক আসেন। এইসব সব গরকারী গালাল। আসল খবর এদিক পাবেন, আমরা গিরোধী দল। তারা গরু সমাজটার গোতন্ত্র এক্কেরে ধ্বংস করে দিসে। এই সমাজ আজ তাদের আকাম কুকামে কলঙ্কিত। গত তিন বছরেও তারা গরু সমাজের কোন উন্নতি করতে পারে নাই। নিজেরা ভুশি, খর, খইল, ফেন, মাড় সব লুত্তাচে সমানে। আমাদের মা বোনরা নিরাপদে বাইর হতে পারে না তাগ গুল আর গন্ত্রাসী গরু গুলার জন্য। তার উপর তারা আমাদের ওটি বুঝরগ কিছু গরু কে গুদ্ধ গফরাধে বন্দী করে রাখছে!! এডি কি ঠিক কন? এই গালিম গরকার কে হটানোর জন্য আমরা কুরবানির পরেই গং মার্চে বিচরণ করবো।
যাক একটু বিদেশী মেহমান দের সাথে বাৎচিত করি। ইন্ডিয়া থেকে প্রচুর গরু ছাগল এসেছেন, এবং সুদূর আবর থেকে কিছু খাস মেহমান উটও আছেন। চলুন তাদের সাথে কথা বলি।
ইন্ডিয়া থেকে এসেছেন কেমন লাগছে?
হ্যাম ঠিক হ্যাঁয়। লেকিন ইহা টিভির বেবস্থা নাই হে। হ্যাম লোক হামারা সিরিয়াল দেখতে নেহি পারতা হ্যাঁয়!! আরেকটা অভিযোগ আমাদের জলপান পরিমানে কম দেয়া হচ্ছে। শুনতে পেলুম, তিস্তার পানির ভাগ দেয়া হয়নি দেখে দাদা রা অমনটা করছেন!
উট ভাই কাইফা হালুকা?
(বেশ সময় নিয়ে জবাব আসলো) আলহামদুলিল্লাহ্, ফি সাবিলিল্লাহ, আমরা সবসময় ইন্নানিনল্লা হবার জন্য রেডি থাকি। চাইলে আপনি প্রকাশ্যেও কোরবানি দিতে পারেন। তবে এক কোপে মাথা কাটতে পারার মতো অভিজ্ঞ কষাই সৌদি থেকে আনতে পারলে ভালো হইত! এইখানের কষাই গুলার হাত কাঁপে, সাহস নাই।
গলায় মালা, বডি ফিটিং টাইট সালা পরা, লোমে স্পাইক করা এক আধুনিক গরু দেখা যাচ্ছে। চলুন কথা বলি। আপনার নাম? আপনাকে স্মার্ট দেখা যাচ্ছে।
আমি গাহাদাত গোসেন। গড়ুদের জাতীয় ক্রিকেটে ভালো গেস গলিং করি। দেখেছেন কিনা জানি না, আমি ছফুট লম্বা কিন্তু গুঁজা হয়ে থাকি না। শিনা অলয়েস টান থাকে। ওই দেখেন কতুগুলা গাভি লাইন মারতাচে! কোন মেকাপ ও করি নাই। শুধু গাফ্রিদি, গ্রেট গি ভাইরে ফলো করি।
বেশ লাল সাদা সুন্দরী মেয়ে গরুর কাছেই দেখতে কিঞ্চিৎ বানর সদৃশ কিন্তু তিনি গরু। চলুন তার সাথে হাম্বাই। আপনি কে ভাই?
আমার নাম গরশাদ। আমার আজীবন একটা আফচুচ রয়ে গেল, অন্য গরুরা আমারে বলে আমি নাকি খাশি! আমার নাকি কোন বাছুর হয় নাই!! সব অপপ্রচার! ষড়যন্ত্র! কয়টা গরু আইনা দেন পারলে, একদিনেই গাভী কইরা দিমুনে। দেশটা গচিকাঁচার মেলা করে দিব।
সবশেষে বেশ ভাব নিয়ে গেপটপ সামনে নিয়ে এক গরু বসে আছে। চলুন দেখি। বন্ধু আপনার নাম?
আমার নাম জিগান?? আমি একজন বিখ্যাত গ্লগার- হাম্বা ৪২০। আমারে চিনে না এমন কেও নাই গারচুয়াল সমাজে। গামু, গুপ্তধারা, গ্রথম গালো, গচলায়তন সহ এক ডজন গ্লগে আমি হাম্বাই !! আমার এক একটা গোস্টে শত শত গমেন্ট আর গাইক পড়ে!! গেসবুকে ডেলি একশ শেয়ার পড়ে!! সবাই আমারে প্রিয় তে নিয়া রাকচে! আমার গি এফ লালি কেন প্রসব যন্ত্রণায় ডেড হইল, স্বামী কালু গরু তোমার জবাব চাই, এটাতে একহাজার গমেন্ট পরছিল। এছাড়া আধুনিক সমাজে গো মল মুত্রের অবদান শীর্ষক আমার লাস্ট গোস্টটা পরছেন? ঐটা গিস্টি করা হইছিল।
বাট কেডা জানি আমারে টাইনা এইখানে নিয়ে আসছে!! আমার মতন একটা রত্ন রে কোরবানির হাটে আনসে, বুঝেন তো!!**
আমাদের বিশেষ প্রিতিবেদন এইখানেই শেষ করতে হচ্ছে। কারণ প্রতিবেদক কুরবান চৌধুরীর গায়ে বিপরীত দিকে থাকা একটা লাল গরু জল ত্যাগের সহিত শিট বর্ষণ করেছে। নতুন জায়গার নতুন খাবার খেয়ে তার আবার হজমে কিঞ্চিৎ সমস্যা ছিল।
পদটিকাঃ এটি একটি কাল্পনিক রম্য রচনা। বাস্তবের কারও সাথে এর কোন মিল নেই। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। “ঈদ মোবারাক”