
১/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (১ম- পর্ব)
২/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (২য়- পর্ব)
৩/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৩য়- পর্ব)
৪/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৪র্থ- পর্ব)]
৫/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৫ম- পর্ব) -দেখে নিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
.................................................................................................
ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (শেষ পর্ব)
আপনার মন্তব্যের ২য় অংশ-
এবার আপনার আশঙ্কামূলক বক্তব্যের //এটা সত্য হলে, জিনার অপবাদ আসতে পারে সাহাবীদের ওপরে এবং তাদের ওপরে যিনি আছেন তার ওপরও// উত্তর দেবার চেষ্টা করছি-
আমি রসূল (সাঃ) এর জীবনকে আলে-কোরআনের বাস্তব প্রতিফলন হিসেবেই বিশ্বাস করি। যদি গোড়াতেই গলদ ছিল বলে আমি ভাবতাম, তাহলে নিজেকে অহেতুক মুসলিম হিসেবে পরিচয়ই দিতাম না। আমি এও বিশ্বাস করি যে, রসূল সোঃ) এর জীবনে এমন কিছু বিষয় ঘটেছে যা আল-কোরআনের নির্দেশ অনুসারেই ঘটেছে এবং এমন কিছু নির্দেশ আছে যেগুলো একান্তভাবে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। পবিত্র কোরআনই তো রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ ও পবিত্র চরিত্রের বাস্তব প্রতিফলনের প্রকৃত রূপকে তুলে ধরে। নিঃসন্দেহে রসূল (সাঃ) এবং তাঁর প্রকৃত অনুগত অনুসারিদের উপর কোনরূপ অপবাদ লাগবার কোন প্রশ্নই আসেনা। কারন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সম্প্রদানের পর ডান হাতের অধিকারভুক্তদের মধ্যে কেউ ইমান আনলে তার সম্মতিতে স্বয়ং রসূল (সাঃ) যখন তাকে মনোনীত করবেন তখন সেটাই তাঁর ক্ষেত্রে বিবাহের সামিল। তেমনি সাহাবাগণের ক্ষেত্রেও সাক্ষী হিসেবে স্বয়ং রসূলের (সাঃ) উপস্থিতিতে ও কিছু শর্ত সাপেক্ষে এবং তাঁর মাধ্যমে সম্প্রদানকৃত ডান হাতের অধিকারভুক্ত ইমানদার কোন নারীর সম্মতিতে আল্লাহতায়ালার নাম নিয়ে তাকে গ্রহন করাও বিবাহের সামিল ছিল।
আমি বিশ্বাস করি যে, যতদিন পর্যন্ত রসূল (সাঃ) উপস্থিত ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর বিধানের একচুলও অন্যথা হয় নাই এবং তারপরও অর্থাৎ রসূলের (সাঃ) অনুপস্থিতিতে তাঁর অনুগত ও প্রকৃত অনুসারি সাহাবাগণ নিশ্চয় ডান হাতের অধিকারভুক্তদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনরে ক্ষেত্রে রসূলের (সাঃ) প্রদর্শিত বিবাহের বিধানই কার্যকর করেছিলেন।
সুতরাং ডান হাতের অধিকারভুক্তদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিবাহ করার প্রযোজন নেই!!! - এরূপ উদ্ভট মতবাদ কেন এবং কখন থেকে চালু হলো এবং পবিত্র কোরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও ধোঁয়াটে ও খাপছাড়াভাবে তা সংযোজিত হতে শুরু করল তা মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন।
যখন থেকে ডান হাতের অধিকারভুক্তদের সাথে তাদের অভিভাবকদের অভিভাবক সুলভ সম্পর্ক নয়, বরং প্রভু ও দাসির সম্পর্কের বন্দিশালায় বিবাহ ছাড়াই যৌন সম্পর্ক করা জায়েজ মনে করা শুরু হয়েছে, সেই সময়টাকে আমি ইসলামের অন্ধকার সময় হিসেবে মনে করি। আমাদের সেই অন্ধকার থেকে আবার আলোর পথে চলার সময় এসেছে। আল-কোরআন ও রসূল (সাঃ) এর আদর্শকে চিনে নিয়ে সকল অন্ধকার দূর করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই।
মাঝে মাঝে মনে হয়- কোন এক অজ্ঞাত মোহ ও ভীতির ঘোরে অজ্ঞ, বিজ্ঞ ও আমরা সকলেই যেন আবদ্ধ হয়ে পড়েছি!! মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, আনুগত্য, ভয়-ভীতিও কি এর কাছে কিছু নয়?
সূরা আ আ'রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ ক্রম-৩৯)
(০৭:২৮) অর্থ- তারা যখন কোন অশ্লীল কাজ করে, তখন বলে আমরা পূর্বপুরুষদেরও এমনই করতে দেখেছি এবং আল্লাহতায়ালাও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন; তুমি বল, আল্লাহ অশ্লীল কাজের আদেশ দেন না; তোমরা আল্লাহর প্রতি এমন কিছু আরোপ করছ, যা তোমরা জান না।
(০৭:২৯) অর্থ- তুমি বল, আমার প্রতিপালক তো শুধু ন্যায় ইনসাফ করারই নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি ইবাদতে তোমরা তোমাদের লক্ষ স্থির রাখবে; তাঁকেই তোমরা ডাক, নিজেদের জীবন বিধানকে একান্তভাবে তাঁর জন্য খালেস কর; তোমাদেরকে তিনি প্রথমে যেমন সৃষ্টি করেছেন, পূনর্বারও সৃজিত হবে।
(০৭:৩০) অর্থ- একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।
(০৭:৩৩) অর্থ- তুমি বলে দাও, আমার পালনকর্তা যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন, গোনাহ এবং অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করা, আল্লাহর সাথে অংশীদার করা, তিনি যার ব্যাপারে কখনো কোন সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তোমাদের এমন সব কথা বলা, যার ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞানই নাই।
একজন অমুসলিমের জুলুম করা, আর একজন মুসলিম যখন জুলুম করে- তা কখনই এক হতে পারে না। প্রকৃত অর্থে জালিম রূপী মুসলিমদের মহান স্রষ্টা পার্থিব যুদ্ধক্ষেত্রে কখনই বিজয়ী করবেন না। আপাত দৃষ্টিতে তারা বিজিত মনে হলেও ইতিহাস তাদেরকে ঠিকই আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। শুধু তাই নয়, পরকালেও তাদের কোথায় নিক্ষেপ করা হবে তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহর বিধান সঠিকভাবে জানা ও মানার নির্লিপ্ততার কারনে যতদিন পর্যন্ত না আমরা নিজেদেরকে এবং অন্যকে জালিম ও জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করার মত যেগ্যতা অর্জনের জন্য স্বচেষ্ট হবনা, ততদিন আমাদের বিজয় মিলবে না, মুক্তিও নেই। ইহকালে তো নেই, পরকালেও মুক্তি মিলবেনা কিনা তা মহান আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই (সাঃ) ভাল জানেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৫