একটা সময় প্রতিদিন আমি এই চৌরাস্তার মোড়ে ঘুরে বেড়াতাম। পাখি হয়ে ছায়ারোদ পোহাতাম ধুলোজমা রাস্তার পাশের ওই নাম না জানা গাছটার সরু-ডালে। দুলে দুলে হাওয়ায় খেলা করতাম। চারপাশে ছিলো নাগরিক ভিড়। চায়ের কাপ আর চামচের টুংটাং শব্দ। মানুষের শোরগোল। রিক্সার ক্রিং ক্রিং, গাড়ির সাইলেন্সারের ঘোঘোঘো শব্দ। ছিলাম আমিও, নাগরিক সন্ন্যাসে। দেখতাম, গাড়ির পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে উড়ন্ত ধুলো-বালি। ঝরে পড়া গাছের পাতায় জীবনের কোনো কথা আছে কিনা, খুঁজতাম। আমার মনে হতো, মাথার ভিতরের অবলীলায় ঘুরে বেড়ানো স্রোতের মতো অবিন্যস্ত তরঙ্গগুলোকে আমি ধোয়ার সাথে মিশিয়ে দিবো, উড়িয়ে দিবো, এখানেই। লাল-সবুজ ফুল-পাতা ছড়িয়ে দিবো তরঙ্গের ভাজে ভাজে। এই চৌরাস্তার মোড়েই হবে শূণ্য নগরেরর ভিন্ন ইতিহাস।
সেই সকালগুলোর মতো আজ সকালেও পাখিগুলোর ডানা ঝাপটানোর শব্দ আমার মাথার ভিতরে গুনছি, শুনছি। ডানার ভরে প্রতিস্থাপিত কোমল বাতাসটা মিশে যাচ্ছে আমার শরীরে। চোখ বুজে আসছে আমার, আমি দেখতে পাই সময় প্রবাহের চিত্ররুপ। বাগানবিলাসটা অবশ্য আজই চোখে পরলো। এমন থোকায় থোকায় লাল লাল বাগানবিলাস আমি আগে কখনো কি দেখেছিলাম! একবার দেখেছিলাম, অনেক আগে। তবে সেটা অন্য আরেক শহরে। পাতার রঙ যেন রোদে পুড়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এতদিনে, মাথার ভিতরে দেখছি।
অনেকদিন পর আমার চোখ লাল লাল আনন্দগুলো দূর থেকে দেখছে। চোখের ভিতর দিয়ে আনন্দগুলো মাথায় ঢুকে যাচ্ছে। যেমন করে সেদিন রাতে তোমার চুলের গন্ধ, শাড়ির আচলে মিশে থাকা শরীরের গন্ধ আমার নাক দিয়ে মাথায় ঢুকে গিয়েছিলো, যেমন করে তোমার হাসির শব্দ আমার কান দিয়ে মাথায় ঢুকে গিয়েছিলো। আমি এসেছি তোমাদের নগরে। কেউ নেই এখানে, কেউ থাকেনা এই শহরে। একটা মানুষ কেনো, কোনো প্রাণই আর হবেনা এই শহরে। তোমাদের ইন্দ্রীয়গ্রাহী অনুভূতিগুলো ছড়িয়ে আছে আমার মাথাসর্বত্র, জীবন্ত, আমার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে, আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে একাকার হয়ে আছে। আমি জেনেছিলাম এক সত্য, তোমরা জানতে চাওনি, নয়তো ভুলে যেতে চেয়েছিলে; একদিন এই নগরের সব প্রাণ মরে যাবে, মরে যাবে সব অনুভূতি তোমাদের। আমি, মাথায় নিয়েছি সব তাই। ইচ্ছে হলেই ছুঁয়ে দেখি, ইচ্ছে হলেই গন্ধে বাঁচি।
তুমি-তোমরা শূণ্য এই শহরে আমি আছি, একা; পাখি হয়ে বিলাস লতায় দুলছি বেশ, ভাবছি, আহ! জীবন, বেশ বেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩