এ বছর চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেলেন জাপানের বিজ্ঞানী ইওশিনোরি ওশুমি। জীবজগতের কোষের পুনর্ব্যবহার সংক্রান্ত ‘অটোফেগি’র উপর গবেষণার জন্য তিনি এ পুরস্কার পান। কোষের পুনর্ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক নাম অটোফেগি। অটোফেগি, দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে, অটো মানে ‘নিজে’, ফাগেইন মানে ‘খাওয়া’। কোষের মধ্যে নিজেকেই নিজে খেয়ে ফেলার পদ্ধতিটি অটোফেগি নামে পরিচিত। সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট গতকাল সোমবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন। নোবেল কমিটি বরাতে বলা হয়েছে, ঠিক কোন জটিলতার কারণে ক্যান্সার থেকে শুরু করে পারকিনসন্স ডিজিজের মত জটিল রোগ হয়, তা বুঝতে ইওশিনোরির গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অটোফেগি কিংবা কোষের এই আত্মভক্ষণ কিন্তু কোষের কোন ক্ষতি করে না। বরং কোষকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। আর এই আত্মভক্ষণে কোনো সমস্যা হলে পার্কিনসন্স, ক্যানসার, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো নানা রোগের উৎপত্তি হতে পারে। আত্মভক্ষণ বিষয়টি একটি জটিল প্রক্রিয়া। ১৯৬০ এর দশকে প্রথম এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয় যখন গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেন যে, কোষ তার নিজের চারপাশে মেমব্রেন দিয়ে ঘিরে ফেলে থলির মতো তৈরি করে। যে থলিগুলো তারপর ভাসতে ভাসতে কোষের পুনর্ব্যবহারের কারখানা লিসোজোমে চলে যায়। সেখানেই কোষটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু এই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করার কাজটি বেশ কঠিন। জাপানে নিজের গবেষণাগারে ইস্ট- এর কোষে প্রথম ওসুমি এই প্রক্রিয়াটির জন্য দায়ী জিনকে চিহ্নিত করেন। পরে ইস্ট কিভাবে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে তা দেখান। তারপর মানবদেহের কোষেও এই জটিল প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করেন। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল রিসার্চের উপপরিচালক ডেভিড রুবিনস্টেইন বলেন, ওশুমি বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের হাতে ‘গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ’ তুলে দিয়েছেন। এটি ব্যবহার করে বোঝা যাবে কীভাবে বিঘ্নিত অটোফেগি বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে শুরু করে ক্যানসার এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
অটোফেগিজম প্রক্রিয়া
ওশুমির আবিষ্কার কিভাবে একটি সেল তার নিজের দেহের অভ্যন্তরস্থ উপাদানসমূহকে পুনর্ব্যবহার করে এটির একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অটোফেগির মৌলিক গুরুত্বসমূহকে প্রকাশ করার পথটিও উন্মুক্ত হলো। যেমন অনাহারে থাকা অবস্থায় শরীর অভিযোজন করে কিভাবে, রোগের সংক্রমণে শরীর কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় ইত্যাদি। আবার অটোফেগির প্রক্রিয়াটি ক্যান্সার ও স্নায়বিক রোগসহ বিভিন্ন রোগের সাথে জড়িত। গবেষকরা অটোফেগির সাথে জড়িত রোগমুক্তির পথ্য আবিষ্কারের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আবিষ্কারটির মাধ্যমে তাদের এই কাজটির গতি তীব্রভাবে ত্বরান্বিত হবে। এই অসাধারণ আবিষ্কারের জন্য নোবেল কমিটি এ বছরের ৩ অক্টোবর চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদানের জন্য ওশুমিকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করেন। পুরস্কার বাবদ তিনি পাচ্ছেন ৮০ লাখ সিস ক্রোনার বা ৭ লাখ ১৮ হাজার ডলার। নোবেল পুরস্কার পাবার পর স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে ওশুমি বলেছেন, পুরস্কারটি পেয়ে তিনি ‘অত্যন্ত সম্মানিত’ বোধ করছেন। তিনি বরাবরই এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন, যা অন্যরা করবে না। ভেবেছিলেন, কোষের ভাঙন একটা আকর্ষণীয় বিষয়। তাই সেটা নিয়েই কাজ শুরু করেন।
ওশুমির গবেষণা: Stages of autophagosome formation
ইওশিনোরি ওশুমি জাপানের ফুকুওকায়ে ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। নিউ ইয়র্কে রকফেলার ইউনিভার্সিটিতে তিন বছর কাটানোর পর তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। যেখানে তিনি ১৯৮৮ সালে একটি গবেষণার দল গঠন করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে একজন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮