মনজুর নামটা বার বার পড়তে খুব স্বচ্ছন্দবোদ করছি না, কঠিন লাগছে। তার চেয়ে বরং নামটা মনজু হলে পড়তে সহজ হতো। হুমায়ূন আহমেদ কেন নামটা মনজুর লিখেছেন তা আমি জানিনা। তবে জানার খুব ইচ্ছা হচ্ছে। উনার সাথে দেখা হলে অবশ্যই জিগ্যেস করতাম,"স্যার, নামটা মনজু না লিখে মনজুর লিখলেন কেন?" কিন্তু সে ইচ্ছাটা আপাতত পূরণ করা সম্ভব নয়। মানুষের অনেক ইচ্ছার-ই মৃত্যু ঘটে, সেই মৃত্যুর তালিকায় আমার এই ইচ্ছাও এখন যুক্ত হলো।
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছার মৃত্যুর সংবাদ আমরা জানতে পারিনা, সেগুলো আমাদের ফেসও করতে হয়না। তাই তাদের সান্ত্বনা দেওয়ারও প্রয়োজন পরেনা৷
কিন্তু মানুষ! যখন মানুষের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারি?
ঘড়িতে সময় সকাল ৭.১০ মিনিট, মনজুর লেপের ভিতর শুয়ে আছে। এমন সময় দরজায় কেউ শব্দ করলো। কিন্তু শীতের সময় এত ভোরবেলা কে আসতে পারে? মনজুর অনেকক্ষণ পর দরজা খুলল।
ব্যাপার কি কুদ্দুস? সাত সকালে এখানে কেন?
কুদ্দুস মনজুরের অফিসের পিওন। মনজুর কি তাকে আসতে বলেছিল? মনে পড়লো না। আজকাল কিছুই মনে থাকে না। কিডনির সঙ্গে কি স্মৃতিশক্তির কোন সম্পর্ক আছে? মনজুরের একটামাত্র কিডনি। ডান দিকের কিডনি সাত বছর আগে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাম দিকেরটাও যাই যাই করছে। মাঝে মাঝে তীব্র ব্যথা। চোখে অন্ধকার দেখার মত ব্যথা। মিলিটারি ডাক্তার ব্রিগেডিয়ার এস. মালিক গত মাসে রিপোর্ট দেখে হাসি মুখে বললেন, Outlook not so Good. মিলিটারি ডাক্তাররা বোধহয় সাধারণ ডাক্তারদের চেয়ে বোকা হয়। বোকা না হলে এই জাতীয় কথা হাসি মুখে বলে কি করে?
কুদ্দুস বললো, স্যার আমার ছোট বোনটা গতরাতে মারা গেছে।
মনজুর তাকিয়ে রইলো। ভোরবেলা কেউ মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে এলে তাকে কী বলতে হয়? সান্ত্বনার ভাষাগুলো কি হওয়া উচিত? বলার নিয়মটাই বা কী? মীরা থাকলে অবশ্য তাকে জিগ্যেস করা যেত। মীরা এর উত্তর খুব ভালো দিতে পারবে বলে মনজুরের বিশ্বাস।
আধুনিক জগতের সাত আশ্চর্যের মধ্যে আছে- রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন....। মনজুরের মতে অষ্টম আশ্চর্য হলো মীরার সাথে তার বিয়ে।
মনজুর খুব অস্বস্তি বোধ করতে লাগলে। এসব পরিস্থিতিতে কি বলতে হয় বা বলতে হয় না তার উপর বই-টই থাকা উচিত ছিল। বিদেশে নিশ্চয় আছে- "মৃত্যুশোকে কাতর মানুষকে সান্ত্বনা দেবার ১০০ টি উপায়"। আধুনিক মানুষের জন্য এ জাতীয় বই খুবই প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় বই-এ বাজার ভর্তি, প্রয়োজনীয় বই খুঁজলে পাওয়া যায় না।
কথা বলার আর্টের উপর একটা বই থাকা দরকার কেউ কেউ এত সুন্দর করে কথা বলে, কেউ কথাই বলতে পারেনা। ইচ্ছে করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেই। কথা বলার উপর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একটা কোর্স থাকলে ভালো হতো। ইনস্ট্রাকটারদের কোন ডিগ্রি থাকতে হবে না, তবে রুচিসম্মত কথা বলার ব্যাপারে তাদের হতে হবে একজন এক্সপার্ট।
এতক্ষণে আমার ইচ্ছা পূরণের একটা সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি। স্বর্গে হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার দেখা হতে পারে। তখন উনাকে জিগ্যেস করতে পারি, "স্যার, আপনি নামটা মনজু না লিখে মনজুর লিখলেন কেন?" অবশ্য সেক্ষেত্রে একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারেন। মহাজগতের সকল ইচ্ছাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করে। তাই সবসময় সবকিছু আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছেই চাওয়া উচিত।
আমার একটা মীরা নেই। থাকলে মীরাকে বলতাম-
"শুয়ে শুয়ে আকাশ পাতায়
মুমূর্ষু শিশির বলে, 'হায়,
কোনো সুখ ফুরায় নি যার
তার কেন জীবন ফুরায়?"
~মোঃ মিজানুর রহমান~
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৩৮