ছায়াঘেরা চিকন মেঠোপথ ধরে হেঁটে চলেছি। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। কিছুদূর হাঁটার পরেও দেখা গেল জরাজীর্ণ সাইনবোর্ড: পিঠাভোগ রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা ও সংগীত একাডেমি। আর এখানেই নাকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষের জন্মভূমি!
কুশারী বংশের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: খ্রিষ্টীয় ১০০০ সালে বা তারও আগে হিন্দুধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কয়েকজন ব্রাক্ষণ বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা এলাকায় আসেন। তাঁদের বংশধরেরা তৎকালীন স্থানীয় শাসক কতৃক কর আদায়কারী হিসেবে নিয়োজিত হন। তাদেরই একজন কুশ নামের গ্রামের অধিকার পেয়ে কুশারী নামধারণ করে কুশারী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
কুশারী বংশের এক সন্তান পরবর্তীতে কলকাতার কাছাকাছি এক গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং ব্যবসা বিস্তার করেন। সেসময় ঐ গ্রামে সবাই নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিল এবং কুশারীরাই ছিল একমাত্র ব্রাক্ষণ। কেবল ব্রাক্ষণরাই পূজা করতে পারত বলে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ব্রাক্ষণদেরকে "ঠাকুর" বলে ডাকত। আর এভাবেই কুশারী থেকে বংশের নাম "ঠাকুর" হয়ে গেল। এই ঠাকুর পরিবারেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম। অন্যদিকে, মূল কুশারী বংশের অন্যান্য উত্তরসূরি খুলনার পিঠাভোগেই বসবাস করতে লাগল। তাদের কেউ কেউ এখন প্রবাসী আবার কেউ চিংড়ী রপ্তানি ব্যবসার সাথে জড়িত।
পিঠাভোগ রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা, খুলনা:
এখনও খুলনার রূপসা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কুশারী বংশের বিভিন্ন উত্তরসূরী বসবাস করেন। মূল বাড়ীটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পর নতুন একটি বাড়ী নির্মান করা হয়। ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের সংস্ক্বতি মন্ত্রনালয় বাড়ীর সংলগ্ন উঠানে একটি একতলা তিন কক্ষবিশিষ্ট মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স নির্মান করেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ মুর্তি নির্মান করা হয়েছে। আরও আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু ঐতিহাসিক ছবি। সবচেয়ে আকর্ষনীয় ব্যপার হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের হাতে আঁকা বেশকিছু ছবিও সংরক্ষণ করা আছে এখানে যার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্নপ্রতিকৃতিও আছে।
এ্যাকটিভিটিস: প্রতিবছর ২২শে শ্রাবণে এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রসংগীত শেখানোর ব্যবস্থা থাকলেও সেটা এখন অনিয়মিত।
কিভাবে যাবেন:
খুলনা জেলার যেকোন যায়গা থেকে আপনাকে প্রথমে রূপসা ফেরীঘাটে আসতে হবে। এরপর ৫ টাকা দিয়ে ট্রলার পার হয়ে আসল রূপসা উপজেলায় আসতে হবে। এখান থেকে রূপসা উপজেলা কমপ্লেক্স বা আলাইপুরের অটোরিক্সা পাওয়া যায়। জনপ্রতি ২০ টাকা করে দিয়ে আপনি আলাইপুর আসবেন। সেখান থেকে ৭ টাকা দিয়ে ভ্যানে পিঠাভোগ গ্রাম। নেমে কিছুদুর হাঁটলেই আপনি সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার মোটরসাইকেল থাকে। তাহলে আপনি পথে জিগাসা করতে করতেই আসতে পারবেন।
আর আপনি যদি বাগেরহাট জেলা বা মংলা বা গোপালগন্জ থেকে খুলনার দিকে আসেন, তাহলে আর আপনাকে খুলনা শহর পর্যন্ত যেতে হবেনা। আপনি রুপসায় নেমে যেতে পারবেন।
এখান থেকেই জানতে পারি, খুলনার আরেকটি উপজেলা ফুলতলায় আছে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ী। আগামী পর্বে দেখবেন আমার ফুলতলা যাত্রা...
রূপসায় আসলে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর আর বীর বিক্রম মহিবুল্লার কবর দেখে যেতে ভুলবেন না।
তথ্যগুলো ঊইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। যেকোন তথ্যে ভুল মনে হলে সংশোধন করে দেওয়া হবে।
মূল লেখাটি এখানে প্রকাশিত: Offroad Blog
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০