মুজতবা আলীর ‘শবনম’ এর চাইতেও ভাল কোন প্রেমের উপন্যাস লিখা হয়েছে কি-না জানিনা, তবে ‘শবনম’ এর মত অন্য কোন প্রেমের উপন্যাস পড়ে আমি এতটা মুগ্ধ যে হব না এটা একশ ভাগ নিশ্চিত। অস্থিতিশীল আফগানের প্রেক্ষাপটে একটা নিখুঁত পবিত্র প্রেমের উপন্যাস। যখন এটা পড়ি তার কয়েকদিন যাবৎ অবচেতন মনে ‘শবনম’ নামটা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল। দিনের বেলা সবকিছু স্বাভাবিক চললেও রাতের স্বপ্নময় পরিবেশে অবধারিতভাবেই শবনম তার পবিত্রতা আর হেয়ালি নিয়ে উপস্থিত হত। মুখবদ্ধ যিনি লিখেছেন তিনি ‘শবনম’কে গদ্য বলতে নারাজ, একে সাহিত্যের কোন ধারায় ফেলা যায় সেটা নিয়ে তিনি কনফিউশনে আছেন। পাঠক হিসেবে আমার মনে হয় ‘শবনম’ হল গদ্যের আদলে লিখা একটা অসাধারণ প্রেমের কবিতা। ভাবের হিসাবে একে আমার কবিতা বলতেই ভাল লাগে। কবিতা পড়ে বোঝার মত বুঝদার পাঠক এখনো হয়ে উঠিনি। কিন্তু ‘শবনম’ একটা সহজ কবিতা যদিও এর ৬০% বুঝতে পেরেছি। বাদবাকী না বোঝাগুলো আমার মুগ্ধতায় বাগড়া দিতে পারে নি। কাহিনী বুঝতে কোন সমস্যা হয়নি। বর্ণনার সুবিধার্থে আমি এটাকে ‘উপন্যাস’ই বলছি। উপন্যাসের মাঝখানে বিচিত্র এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। এতদিন উপন্যাস পড়ে দুঃখে চোখে পানি আসার অভিজ্ঞতাই শুধু হয়েছে, আনন্দে চোখে পানি আসার উপক্রম হয়নি কখনো। শুনেছি শবনমের ঘটনার অধিকাংশই সত্যি। তবে এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করিনি। আমার মত হাজারো পাঠক শবনমকে কখনোই বইয়ের পাতায় আটকে থাকতে দেয়নি। আমার মনে হয় সৈয়দ মুজতবা আলীকে অমর করার জন্য ‘শবনম’ই যথেষ্ট। কিন্তু তিনি তো একটা ক্লাস। ‘শবনম’ই একমাত্র উপন্যাস যার প্রতিটি শব্দ নিয়ে তৈরি বাক্য আমাকে আলাদা আলাদাভাবে আকর্ষণ করে। ‘শবনম’ পড়ার পরের ফিলিংসটা নিয়ে আমার মনে হয় আমি একটা বই-ই লিখে ফেলতে পারব এবং সেটা যতই অখাদ্য হোক, আমি জানি আমার অনুভূতিগুলো সম্পূর্ণ খাঁটি।
একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত আফগান বড়লোকের একমাত্র মেয়ের বিপরীতে এক বাঙালী যুবকের প্রেমের কাহিনী। প্রেম বলতে সাধারণ লোকজনের মনে প্রথমে যে ধারণা হয়, সে ধারণা পোষণ করলে ‘শবনম’ হয়ত কারো পড়াই হবে না। ‘শবনম’ই সেসকল রুচিহীন লেখকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মানুষের প্রেমের সাথে পশুদের প্রেমের পার্থক্য, যারা বাস্তবতার নাম করে যে-কোন উপন্যাসে নগ্নতাকে ডেকে আনে যেন মানুষের শুধু দেহ আছে বিবেক বলে কিছু নাই, থাকলেও সেটা প্রাচীন ব্যাপার স্যাপার - জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মজনুনের প্রতি শবনমের ভালবাসার কোন তুলনা ছিল না। উপন্যাসটার ব্যাপারে মূূল্যায়ন এভাবে করা যায় - “ ‘শবনম’ মানেই হল একরাশ মুগ্ধতা যা উপলব্ধির জন্য শবনমের বর্ণিত কবিতাগুলো উপলব্ধি করা বাঞ্চনীয়।” ‘শবনম’ একবোতল অদ্ভূত শরাব যা পান করলে মরণের আগে পর্যন্ত নেশা লাগা অবশ্যম্ভাবী।