৭ সেপ্টেম্বর, ১৫ জিলহজ্জ্ব, বিষুদবার বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জসনে জুলুসের রুপকার , অসংখ্য মাদ্রাসা ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, "সাচ্চা আলেম তৈরী' আন্দোলনের প্রানপুরুষ, সুন্নিয়তের পূনর্জীবনদাতা , মসলকে আ'লা হযরত ও সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার মহান দিকপাল, চলতি হিজরি শতাব্দির অন্যতম সংস্কারক, মাতৃগর্ভের অলী হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাতিমান --আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (১৩৩৯/৪০ ----১৪১৩ হিজরি) হুজুর কেবলা (র) 'র ২৫ তম বার্ষিক ওরস শরিফ শুরু হবে। তাঁর ওফাত হয় ১৫ জিলহজ্জ্ব '১৪১৩ (৭ জুন, ১৯৯৩) সোমবার। পরদিন মঙ্গলবার দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফে তাঁকে তাঁর আব্বা হুজুর কেবলা শাহেনশাহে সিরিকোট আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (র) 'র মাজার কম্প্লেক্সে দাফন করা হয়। তাই, সিরিকোট দরবার শরিফে তাঁর ওরস শরিফ ১৫ জিলহজ্জ্ব শুরু হয়, এবং ১৬ জিলহজ্জ্ব জোহরের পর সমাপ্ত হয়। বাংলাদেশের প্রধান ওরস হয় চট্টগ্রামের ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া (অনার্স -মাস্টার্স) মাদ্রাসা ময়দানে ১৫ জিলহজ্জ্ব। এ দিন সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে ওরসের যাবতীয় কর্মসূচি। এর মধ্যে থাকে খতমে কোরআন, খতমে বোখারি, খতমে মজমুয়ায়ে সলাওয়াতে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (৩০ পারা দরুদ শরিফ গ্রন্হ), খতমে গাউসিয়া শরিফ, নাত -হামদ, ওলামায়ে কেরামের ওয়াজ -নসীহত, মীলাদ --মুনাজাত ও তবারুক পরিবেশন।
অসংখ্য কারামত ও লক্ষ লক্ষ মুরীদের অধিকারী হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ্ (র)'র অবদান ছিল সর্বজনবিদিত এবং যুগান্তকারী। তিনি শুধু আমাদের দেশে নয়, শরিয়ত -ত্বরিকতের জন্য তাঁর সুদুরপ্রসারী অবদানের সাক্ষী হয়ে আছে বার্মা, পাকিস্তান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইংলেন্ড, আফ্রিকা সহ বহুদেশ ও জনপদ। সেখানেও জিলহজ্জ্ব মাসব্যাপী চলবে তাঁর সালানা ওরস শরিফ। ঢাকা -মুহম্মদপুরস্হ কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া (অনার্স -মাস্টার্স) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি নিজেই ---এখানেও ১৫ জিলহজ্ব বিষুদবার সকাল থেকে, একই দিন বাদ মাগরিব ঢাকা কায়েৎটুলিস্হ খানকাহ্ এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়ায়, ১৬ জিলহজ্জ্ব জুমাবার বাদ মাগরিব চট্ট বলুয়ারদীঘি পাড়স্হ খানকাহ্ শরিফে, এবং এরপর সমগ্র মাসব্যাপী দেশের সর্বত্র গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সকল শাখায় শাখায় এ মহান ওরস শরিফ পালিত হবে। হযরত কেবলা তৈয়্যব শাহ্ (র) যতটা ছিলেন ত্বরিকতের, তারচেয়ে বেশি ছিলেন সুন্নিয়তের জন্য নিবেদিত। তাঁর অবদান ছিল সুন্নী জাগরণী। জসনে জুলুসকে তিনি সর্বজনীন রুপ দিয়েছিলেন বলেই তা আজ এতটুকু ব্যাপকতা লাভ করে বাংলাদেশের সর্বস্তরের সুন্নিদের গর্বের সংস্কার ও সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। তরজুমান 'এ আহলে সুন্নাত ' নামে যেমন, কাজেও তেমন সুন্নিয়তের মুখপত্রের মর্যাদা পেয়েছে। তাঁর মাদ্রাসাগুলো আজ সুন্নিয়তের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত (শহীদ মৌ ফারুকির শেষ ভাষন সূত্রে)। মসলকে আ'লা হযরত তাঁর হাত ধরেই এদেশ, বার্মা সহ বহু জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। তাঁর হাতে কাদেরিয়া ত্বরিকা পেয়েছে নতুন প্রান, জেগে ওঠেছে সুন্নি জামাত। তিনি ছিলেন সুন্নি ঐক্যের প্রতীক, সুন্নিয়তের সাংগঠনিক অপরিহার্যতার প্রচারকারী ও পথনির্দেশক। তিনি যেখানে গেছেন, যে দেশ সফর করেছেন সেখানেই মাদ্রাসা তৈরীর পদক্ষেপ নিয়েছেন। বার্মার রেঙ্গুনে থাকা একমাত্র সুন্নি মাদ্রাসাটিও তাঁর অবদানের সাক্ষী। আজমির শরিফেও ১৯৭৯ তে সফরের সময়, তাঁর মুরিদ ও মাজারের খাদেম সৈয়্যদ
আলাউদ্দিন চিশতিকে সেখানে মাদ্রাসা বানানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের করাচিতে তাঁর রয়েছে অন্তত ৪ টি মাদ্রাসা। নিজ দরবার সিরিকোট শরিফের তৈয়্যবুল উলুম মাদ্রাসা আজ সেখানে প্রকৃত দ্বীনি শিক্ষার এক অনন্য বাতিঘর। চট্টগ্রামের জামেয়ার এশিয়া বিখ্যাত মর্যাদা তাঁরই অবদান। তাঁর দক্ষ পরিচালনায়, সেখানকার হরিপুর ইসলামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা (১৯০২)'র খ্যাতি লাভ করে বহুগুণ। যেভাবে আজ তাঁর অবদানের সাক্ষী শত শত, সেভাবে তাঁর কাশফ -কারামতের ঘটনাও সাক্ষী আছে হাজার হাজার। যদিও, কারামতের চেয়ে আজ আমাদের কাছে বড় বেশি প্রয়োজন এবং প্রাসঙ্গিক হলো তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক অবদানগুলো। তিনি নিজে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক অবদান রেখে দায়িত্ব শেষ করেননি, বরং এমন প্রেরনা দিয়ে গেছেন যে ----আজ সে প্রেরণায় জন্মেছে শত শত মাদ্রাসা -মসজিদ, আর সুন্নি সংগঠনগুলো লাভ করেছে নবজীবন। সুন্নিয়তের উক্তসব সংগঠনের চেতনার উৎস হয়ে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকা হুজুর তৈয়্যব শাহ্ (র) 'র নিজস্ব আধ্যাত্মিক সংগঠন হলো ---গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ --যা আজ বিশ্বময় সুন্নিয়তের মশাল হাতে চষে বেড়াচ্ছে। হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ্ (র) বলেছেন -----"মেরে বাচ্চে মাহদী (আ) কা ফৌজ বনেগা, আউর দাজ্জ্বালকা সাত জেহাদ করেগা " ----ইনশাল্লাহ্, সেদিন বেশি দূরে নয়, যে, এই গাউসিয়তের কাফেলা সেই ইমাম মাহদীর অভিযানে মিলিত হয়ে বিশ্বজয় করবে।
আসুন, "আল জাজাউল ইহসান ইল্লাল ইহসান '--এই আয়াতে পাকের অনুসরন করে, হুজুরের অবদানকে স্মরণ করি ----ওরস শরিফে শরিক শামিল ও সহযোগিতা করি। আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫