বর্তমানের কাবীন ফ্যাশন বন্ধ করে, ইসলামী রীতির প্রয়োগ জরুরী...
গত ৭ আগষ্ট এস আলম গ্রুপের এমডি মাসুদ সাহেবের বড় ভাই মোরশেদুল আলমের বড় ছেলের সাথে সীতাকুন্ডের এমপি দিদারুল আলমের মেয়ের আকদ অনুষ্ঠিত হয়। এ বিয়ের কাবীন নির্ধারণ করা হয় এক কোটি। ছেলে পক্ষ পাঁচ-ছয় কোটি টাকা কাবীন দিতেও নাকি প্রস্তুত ছিল। আমার কথা হচ্ছে যাদের জন্য হাজার কোটি টাকাও মামুলী, তাদের জন্য এক কোটি তো কিছুই না। এ ধরণের ধনকুবেরা যদি এক টাকা কাবীন নির্ধারণ করে নতুন প্রথা চালু করে, সেটাই হয় সমাজের জন্য শিক্ষণীয়। শিল্পপতিরা এধরণের বিলাসীতা দেখিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করার কারণে বর্তমানে দিন মজুর, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বিয়ে দিন দিন কঠিনে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে যৌতুকপ্রথা সমাজ থেকে দুরীভূত হচ্ছে না। কারণ কাবীন শুধু ফ্যাশন দেখানোর জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, কাবীন মেয়ের হক। তা আদায় করা জরুরী, আদায় না করলে বিয়ে শুদ্ধ হয় না। অথচ মানুষের সামনে বাহ্ বাহ্ পাওয়ার জন্য বর্তমানে এমন একটা রীতি চালু হয়ে গেছে যার পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই সেও বিশ-পঞ্চাশ লাখ টাকা কাবীন লিখাতে রাজী হয়ে সমাজের চোখে বাহাদুর বনে যায়। পরে বউয়ের পা ধরে নাকি কাবীন মাফ করার জন্য কান্নাকাটিও করে। যার দরুন বর্তমানের মানুষের চোখে বিয়েগুলো জায়েজ মনে হলেও প্রায় বিয়ে অশুদ্ধ থেকে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এ প্রথা থেকে আমাদের অতিসত্বর বেরিয়ে আসতে হবে। যার যে ধরণের সামর্থ সেভাবে কাবীন লিখাতে হবে এবং তা আদায়ও করতে হবে।
(অসমাপ্ত)
নিউজ:
কোটি টাকার কাবীনের গল্প:
সেদিন চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসনের একটি রুমও খালি ছিলনা।পরিপূর্ণ ছিলো চিটাগাং ক্লাব আর সিনিয়রস ক্লাবের প্রতিটি গেষ্ট হাউজ।হোটেল আগ্রাবাদ,পেনিনসুলাসহ অনেকগুলো হোটেল ছিলো বুকড।বেসরকারী পাঁচটি ব্যাংকের বোর্ড সভার আয়োজন ছিলো রেডিসনে শুধুমাত্র ভিআইপি অতিথিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্যে।উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মো: এরশাদ সহ মন্ত্রী এমপিদের সরব উপস্থিতি। পুলিশ,আর্মি,গোয়েন্দা সংস্থার ঢাকার হেড কোয়ার্টারের কর্তাব্যক্তিরাও ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। ঢাকার অনেকগুলো ব্যাংকের চেয়ারম্যান এমডি, সাবেক এমডি উপস্থিত ছিলেন।শিল্পপতিরাতো ছিলেনই। সবার উপলক্ষ একটি বিয়েতে উপস্থিতি।
গত ৭ আগষ্ট ২০১৭ ছিল সেই বিয়ের আকদ অনুষ্ঠান। যোহরের নামাজের পর বায়তুশ শরফ মসজিদে আকদ আর রাত্রে চট্টগ্রামে একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসনে আকদ পরবর্তী খাবার আয়োজন।বিয়ের কনের বাবা সীতাকুন্ড এলাকার সংসদ সদস্য দিদারুল আলম।চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী পরিবার মোস্তফা হাকিম গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সিটি কর্পোরেশনের সাবেক বিএনপি সমর্থিত মেয়র মনজুর আলমের নাতনি। এই পরিবারের মূল সিদ্ধান্ত বস্তুত মনজু সাহেবেই দিয়ে থাকেন।এমপি দিদার মনজু সাহেবের বড় ভাই তাহের সাহেবের বড় ছেলে।যেহেতু লেডিস ফার্ষ্ট তাই কনের পরিচয় আগে দিলাম। আর বর হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমানে আলোচিত ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি সাইফুল আলম মাসুদ সাহেবের বড় ভাই মোরশেদ আলমের বড় ছেলে। এই পরিবারে মাসুদ সাহেবের মা এখনো পারিবারিক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। বিয়ের ঘটকালি করেন আমেরিকা প্রবাসী মোরশেদ নামে দু পক্ষের খুব কাছের একজন লোক।
গত মাসের শুরুতে একদিন মাসুদ সাহেবের মা গেলেন মেয়ে দেখতে মনজু সাহেবের বাসায়। সাথে গেলো পরিবারের এক বিশাল বহর। মনজু সাহেব নাকি মনে করেছিলেন মেয়ে দেখে চা নাস্তা খেয়ে চলে যাবেন। তবুও ৫০ জনের মতো রাতের খাবার রেডি রেখেছিলেন। মেয়ে পছন্দ হলে হয়তো পরে সময় নির্ধারণ হবে পরবর্তী কথার বা পদক্ষেপের। কিন্তু না।ঐ বসাতেই আকদ,গায়ে হলুদ,বিয়ে সবকিছুর তারিখ ঠিক করার প্রস্তাব দিয়ে বসেন মাসুদ সাহেব।এতে অনেকটা অপ্রস্তুত ছিলেন মনজু পরিবার। কত টাকা কাবিন দিতে হবে জানতে চাইলেন মাসুদ সাহেব।প্রথমে বলতে চাননি মনজু সাহেব। তারপরও মাসুদ সাহেবের পিড়াপিড়িতে অনেক হিসেব নিকেশ করে মনজু সাহেব বললেন এক কোটি হলে কেমন হয়? মাসুদ সাহেব বললেন, আমিতো মনে করেছিলাম ৫/৬ কোটি টাকা বলবেন। যাক আলহামদুলিল্লাহ। আর মেয়ে দেখে নগদে একটি বিদেশী অলংকার সেট তুলে দিলেন মনজু সাহেবের হাতে যার বাজার মূল্য অর্ধকোটি টাকার বেশি। মাসুদ সাহেবের এমন আচরণে কোন কথা বলার বস্তুত সুযোগ ছিলো না।আর সেখানে ঠিক করা হয় আগামী ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ ১০ হাজার অতিথির আয়োজনে ধুমধারাক্কা বিয়ের আয়োজন। এখনো বাকী রয়ে গেছে দুপক্ষের গায়ে হলুদ আর বৌভাত। ২৪,২৫ ডিসেম্বর গায়ে হলুদ। রয়েছে বৌভাত অনুষ্টান যা এস আলম গ্রুপই করবে।
এদিকে মনজু সাহেবের পরিবারে খাবারের ধুম পড়েই আছে বলে জানান কনের পিতা দিদারুল আলম। বায়তুশ শরফে আকদ অনুষ্ঠান শেষে বেরোবার সময় যে এমপি দিদারের মানসিক অবস্থা বিমর্ষ দেখেছিলাম সেই দিদার এখন অনেক খুশি মনে হচ্ছ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২০