যে কারো মৃত্যুতেই মন খারাপ হতে পারে। তবে কারো কারো মৃত্যুতে বুক ফাটা মন খারাপ হয়।
আমরা মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ইনসিডেন্ট মনে করি। পরিবারের কেউ, কাছের বন্ধু বা কোন আপনজনের মৃত্যুতে মনে হয়, লোকটি কেন চলে গেল! তার সাথে থাকা স্মৃতিগুলোর এখন কী হবে! বুক ফেটে যায়। জমাট কান্না গলার নিচে আটকে যায়। জীবনকে অর্থহীন মনে হয়।
.
আজ সকালে গাড়ী একসিডেন্টে খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন। তাঁকে বিশেষণ দেওয়ার যোগ্য আমি কোনভাবেই নই। স্যারকে আমি কত ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি তা এই বুকফাটা দুর্ঘটনার পরেই বুঝছি। না তাঁর ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তাঁর সাথে আমার বিশেষ কোন স্মৃতিও নেই। যশোর মনিরামপুর থাকাকালীন একবার শুধু তাঁর মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। তাঁর অনেক গল্প আমি শুনেছি। আমি যে প্রতিষ্ঠানে পড়তাম তাঁর কর্মজীবনের প্রথমদিকে তিনি তার দায়িত্বে ছিলেন।
.
তাঁর জন্য এত খারাপ লাগছে কেন!
স্যারকে আমি ভালবাসতে শুরু করি তাঁর লেখা বইগুলো পড়া শুরু করে। ইউটিউবে তাঁর অসংখ্য লেকচার আমি শুনেছি। সেগুলো দেখে বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। উম্মাহর এই ক্রান্তিকালে তিনি যে নিখুত ইমেজ ধরে রেখে নিখুতভাবে দীন বিশ্লেষণের মাধ্যমে উম্মাহর উপকার করছিলেন তা অসমাপ্ত অবস্হায়ই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলেন। আমার কোন মাসয়ালায় দ্বিধা তৈরী হলে আমি তার লেখা বইগুলো দেখি, তার লেকচার শুনি। তার যে কোন লেখাই ছিল সন্তোষজনক দলীলের ভান্ডার।
আমাদের উপমহাদেশে প্রচুর জাল হাদীস প্রচলিত আছে। তাঁর লেখা "হাদীসের নামে জালিয়াতি" বইটি যে কারো চোখ খুলে দিবে। তাছাড়া সমগ্র দেশব্যাপী সর্বোপরী দেশের বাইরে তিনি স্বচ্ছভাবে দীনের যে খেদমত করেছেন তা আমাদের অবাক করে দেয়। আমাদের সে মানুষটিকেই নিষ্ঠুরভাবে হারাতে হল।
.
তাকে আমরা হারালাম সড়ক দুর্ঘটনায়। ইস। এমন একটা মহান মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু আমরা দেখতে পারলাম না। এই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রত্যেকদিনই দেশের কোথাও কোথাও কেউ মারা যাচ্ছেই। আমরা শুধু দেখছি!
.
আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই স্যারকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করবেন। তিনি সদকায় জারিয়ার যে ব্যবস্থা করে রেখে গেছেন তা-ই আমাদের জন্য পাথেয়। আল্লাহ, তুমিই তোমার প্রিয় বান্দাদের জন্য যথেষ্ট। তুমি উত্তম প্রতিদান দানকারী। তুমি তোমার বান্দাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করো। আমীন।।