নিজেকেও সাজিদ সাজিদ মনে হচ্ছে।
কারন আমার অবস্থাও সাজিদের মতোই, যুক্তিতর্কের লড়াই করতে হচ্ছে টিচারদের সাথে প্রতিদিন।
একটু ভিন্নতাও আছে,
সেটা হলো সাজিদ সরাসরি নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করতো আর আমার করতে হচ্ছে নাস্তিকদের সাপোর্টার্স,
ভক্ত বা অন্ধভক্তদের সাথে।
কিন্তু এটাই কঠিন মনে হচ্ছে। নাস্তিকরা বলে তারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী না, কিন্তু নাস্তিকতাও তো একটা ধর্ম।
যারা বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে বিচার করেনা, অতবেশি বিজ্ঞান বোঝেনা বা বিজ্ঞানের আগে ধর্মকে প্রাধান্য দেয়,
নাস্তিকরা তাদের ধর্মান্ধ বলে।
কারন আমরা ধর্মান্ধরা না দেখেও আল্লাহ্ তায়ালা আছেন, তিনিই এক ও অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা বলে মনে প্রানে বিশ্বাস করি,
না দেখেও ফেরেশতা, জিন ও শয়তান আছে বলে মনে প্রানে বিশ্বাস করি, তাই আমরা ধর্মান্ধ।
কিন্তু এই আগাগোড়া বিজ্ঞানে মোড়া নাস্তিক ও নাস্তিকদের সাপোর্টার্স বা অন্ধভক্তরা ডাইনোসর না দেখেও তা বিশ্বাস করে,
এলিয়েন না দেখেও তা বিশ্বাস করে,
না দেখেই নিজেদের পূর্বপুরুষ হিসেবে কখনও বানর আবার কখনওবা নেংটি ইঁদুর এর কথা বলে,
সত্য দেখেও সত্যিটা না মেনে নিজের নাস্তিকতা ধর্মকে আঁকড়ে ধরতে চায় তারা কি ধর্মান্ধ নয়?
যার কথা বলতে চাচ্ছি তিনি শিক্ষক, নাম সাইদ (ছদ্মনাম) , মুসলিম পরিবারের ছেলে, নিজেকেও নিজে মুসলিম বলেই পরিচয় দেয়,
কিন্তু সমস্যাটা হলো নাস্তিকপ্রীতি।
ওনার সাথে আমার ২ টা বিষয়ে বিতর্ক হয়, ১) নাস্তিকতা আর ২) রাজনীতি
উভয়ক্ষেত্রেই ওনার চাটুকারিতা চোখে পড়ার মতো।
সে নাস্তিক না, কিন্তু নাস্তিকদের পক্ষে। একজন মুসলিম হুজুর ( আলেম) আর একজন নাস্তিকের মধ্যে উনি নাস্তিকের পক্ষেই থাকবেন।
কারন?
( উনি ওনার এক নাস্তিক বন্ধুকে হুজুরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন নাস্তিক বনাম আস্তিকের বিতর্ক উপভোগ করতে ) তাই
প্রথম কারন হলো হুজুর নাস্তিকের কথা শুনে মাথা গরম করে ( উত্তেজিত হয়) কেন?
- একজন খাঁটি ঈমানদারের সামনে ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কিছু বা মাথা গরম করার মতো কিছু বললেও হুজুরের মাথা গরম হবে না?
দ্বিতীয় কারনঃ নাস্তিক বিজ্ঞান দিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারে উত্তর দিতে পারে তর্ক করতে পারে, কিন্তু হুজুর নাস্তিকের মতো বিজ্ঞান দিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারে না।
কিছুটা পারে জাকির নায়েক।
- আচ্ছা, হুজুর কি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল? হুজুরতো বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে বোঝাতে বাধ্য না, আর জাকির নায়েকের কথা বললেন, স্বীকার করলেন জাকির নায়েক বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে বোঝায়,
তাহলে বোঝানোর পরেও কেন আপনারা সত্যটা মানছেন না? নাকি বিজ্ঞানও মানবেন না?
আবার আমাকে বলে, " আপনি জানেন (?) নাস্তিকরা কতো জ্ঞানী? "
শুনে আমি আমার মুচকি হাসিটা আটকাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
যতোই বোঝাই যেভাবেই বোঝাই, তিনি নাস্তিকদেরই পক্ষে, তিনি নাস্তিকদেরই ভালোবাসেন, না হলে তো আধুনিক হওয়া যাবেনা, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া যাবে না!
নাস্তিক ঠিক, হুজুর ভুল। নাস্তিক নিষ্পাপ, হুজুর জঙ্গি ( পেট্রল বোমা মারে, জিহাদের অপব্যাখ্যা করে....).......
যতদোষ নন্দঘোষ (হুজুর) ?
ব্যাপারটা বর্তমানে চলমান দলকানা নোংরা রাজনীতির মতো, আমার দলের নেতারা নিষ্পাপ, আমার দলের লোক হলে সাতখুন মাফ, ধর্ষন, নির্যাতন, গুম হত্যা, দুর্নীতি, চুরি বা চাঁদাবাজি যতবড় অপরাধই হোক না কেন!
আপনারাও তেমনি আপনাদের নাস্তিকদের প্রতি অন্ধভক্ত, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা তাদের জন্য, তাদের কোন ভুল/দোষ/অপরাধ স্বীকার করতে বা মানতে চান না।
হুজুররা জঙ্গি, পেট্রল বোমা মারে?
আচ্ছা আপনার ঘটনাটা দিয়েই বোঝাই.....
আপনি একটা ঘটনা বলেছিলেন,
" অনেক আগে আমরা যখন ভার্সিটিতে রাজনীতি করতাম, তখন সারাদেশে একটা দাবী নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছিল, তখন আমরাও সেখানে গিয়েছিলাম আন্দোলন করতে,
পুলিশের ডিজি আসছিল আমাদের আন্দোলন থামাতে, আমরা পেছনে ছিলাম, পেছন থেকে আমরা ইটা ছুড়ে মারলাম পুলিশদের গায়ে,
সামনে ছিল শিবিরের পোলাপাইন, পুলিশ তাদের ইচ্ছামত বাইড়াইছে ( পিটিয়েছে) "....
তাহলে বলেন তো দোষ করে কারা দোষী হয় কারা আর মাইর খায় কারা?
আপনারা দোষ করলে যদি শিবিরের ছেলেদের নাম হয়, আপনারা অপরাধ করলে যদি শিবিরের ছেলেদের শাস্তি পেতে হয়, তাহলে পেট্রল বোমার ব্যাপারটা হুজুরদের ঘাড়ে চাপানোটা কি অস্বাভাবিক বা অসম্ভব?
যতদোষ হুজুরঘোষ?
এখন বলবেন, " যা রটে তার কিছুতো ঘটে.... " এইতো?
আচ্ছা, আবারও আপনার বলা একটা ঘটনা দিয়েই আপনাকে বোঝাই?
" আপন জুয়েলার্স এর ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ব্যাপারটা, আসলে ব্যাপারটা এমন না, এর পেছনে গোপন একটা কাহীনি আছে, এখানে বলা যাবেনা, আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম, রাজনৈতিক..........."
তাহলে হুজুরদের পেট্রল বোমা মারার এই ব্যাপারটাও কি এমন হতে পারে না? হুজুরদের ব্যাপারে অপবাদ হতে পারে না? এর পেছনে রাজনীতি থাকতে পারে না?
যতদোষ হুজুরঘোষ?
পেট্রলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা অবশ্যই জঘন্য অপরাধ, এই অপরাধের অপরাধীর ফাসি চাই আমি, আমরা সবাই।
আবারও বলছি, অপরাধীর ফাসি চাই। যারা অপরাধী, যারা অপরাধ করেছে তাদের ফাসি চাই। কিন্তু যারা অপরাধ করেনি, যাদের উপর অপরাধের অপবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে,
তাদের ফাসি চাই না। অপবাদ দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে ফাসি দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিজেদের রাস্তা পরিষ্কার করার পরিকল্পনার বিরোধিতা ও তীব্রনিন্দা জানাই, ঘৃণাও করি।
এখন বলবেন, " মিডিয়া কি মিছা কতা কয়? " এইতো ???
আচ্ছা বর্তমান সময়ের সর্বশেষ ঘটনা কি?
কোটা সংস্কার না?
বিটিভি আর একাত্তর টিভির সংবাদ দেখেছিলেন? না দেখলে মিস করেছেন।
যখন সারাদেশে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় ছাত্র আন্দোলন চলছিল, তখন বিটিভির খবরে বলা হচ্ছিল " এবার দিনাজপুরে বাতাবিলেবুর ব্যাপক ফলন হয়েছে, কৃষকেরা আনন্দে আত্মহারা.... ",
অথচ আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা,মামলা, রাবারবুলেট, টিয়ারশেল,গরমপানি,লাঠিপেটা ও অমানবিক নির্যাতন এর ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক বোঝানো হচ্ছিল,
কিন্তু ভিসির বাড়িতে হামলা-আগুন-ভাংচুর এর খবর কিন্তু প্রচারিত হয়েছে, তাইনা?
এখানে এসে আমি একটা ঘটনা বলতে চাই, আমি গ্রামে খুব বেশি যাই না, তবে কয়েকবছর আগে আমাদের দেশে একটা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলো খুবই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল,
আমাদের গ্রামেও অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গিয়েছিল। সরকারের থেকে ত্রান দেয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াদের পাকা ঘর তৈরি করে দেয়ার ঘোষনা এসেছিল।
ঐসময় আমি আমাদের গ্রামেই ছিলাম, সবাই জানতো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে সব বাড়িতেই পরিদর্শক আসবে, ক্ষতির পরিমান দেখেশুনে তাদের নামে ঘর বানিয়ে দেয়া হবে কিনা তা রিপোর্ট করবেন।
তাই দেখলাম অনেকেই তাদের পুরনো ভালো ঘর স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে তার টিন গুলো খুলে খুলে আড়ালে রাখছিলেন এই জন্যে যে পরিদর্শক এসে দেখবেন যে ঝড়ে ঘর ভেঙ্গে গিয়েছে, টিন উড়ে গিয়েছে, থাকার জায়গা নেই, তাই ঘরের খুবই দরকার।
আর যারা ধরি মাছ না ছুই পানি টাইপের বুদ্ধিমান, তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন, পরিদর্শক ও উক্ত প্রজেক্টে নিয়োজিতদের পকেটভারী করে নিজেদের নামে ঘর বানিয়েছিলেন প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও!
কারন? কোথায় যেন শুনেছিলাম "বাঙালি ফ্রী পাইলে আলকাতরাও ছাড়ে না"। স্বার্থ , হ্যাঁ ! স্বার্থ আছে এখানে, রহস্যও আছে আড়ালে ।
তো? ...
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে ভিসির কোন শত্রুতা ছিল?
না।
তাহলে তারা কেন এসব করবে?
আই মিন ভিসির বাড়িতে হামলা-আগুন-ভাংচুর যাই বলেন এটা কেন করবেন তারা? কি লাভ? কোটার সাথে ভিসি সাহেবের কোন সম্পর্ক ছিল ?
হামলার বর্ণনা শুনেও আমার কাছে ব্যাপারটা নাটক মনে হচ্ছিল, উপরের ঘটনার মতো ঘর ভেঙ্গে পাকাঘর পাওয়ার জন্য, অথবা বীমার টাকার জন্য নিজের গাড়িতে নিজেরাই আগুন দেয়ার মতো।
জাস্ট ফাঁসিয়ে দেয়া, আন্দোলনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়ার জন্য, ঐযে শুরুর দিকে বলেছিলাম দোষ করে একজন, নাম হয় অন্যজনের, তেমন।
এছাড়াও আরও অনেক কিছুই আছে, যেমন হঠাৎ পল্টি নেয়া, আন্দোলনকারীদের রাজাকার ও রাজাকারের বাচ্চা উপাধি দেয়া এবং দেখে নেয়ার হুমকি, পানি খেতে চাইলে সেভেন আপ দিয়ে দেয়ার মতো আরও অনেককিছু।
যাইহোক, শেষে কি হলো?
রাতুল ভাই শিবির, মাদকাসক্ত, তার বাবা রক রাজাকার!
আর রাশেদ ভাই? রাশেদ ভাই শিবিরের সক্রিয় কর্মী, এটা রাজনৈতিক আন্দোলন, আরও কত কি!
আবার শিবির আবার হুজুর!
দেখলেন শুরুটা হয়েছিল হুজুর আর নাস্তিকতা দিয়ে, পৌঁছে গেলাম এখানে! কেউ ফাঁসিয়ে দেয়, কেউ ফেঁসে যায়, এমনটাই তো চলছে :-)
আরও কিছু বলবো পরবর্তী পোষ্টগুলোতে।
কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন। আমি কোন দলের না। আমি সাধারণ নাগরিক, আমার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার চর্চা করছি, কোন দল বা কোন ব্যক্তির চাটুকারিতা নয়।
ধন্যবাদ সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩১