আমাদের শিক্ষা কাঠামো অনেক সুন্দর! এখানে একাডেমিক শিক্ষা অর্থ উপার্জনের বিশাল হাতিয়ার। "জ্ঞান" লাভ আমাদের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নয়। তাই হয়তো কিছু অসাধারন বিষয়ে পড়াশুনা করলেও তা শুনে কিছু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ তাদের বিশাল উঁচু নাক সিঁটকায়। এমন কোন দিন কি আসবে, যেদিন সকল বিষয় সমান মর্যাদা পাবে সবার কাছে?
পরিসংখ্যান কি বলে জানিনা, আমার ধারনা (ভুলও হতে পারে) এদেশের সিংহ ভাগ
শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশুনা করে তাদের বাবা-মা-চাচা-মামা-ভাই-খালুদের পছন্দ করে দেওয়া বিষয়ে। এদের মাঝে যাদের মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট ভাল হয়, তাদের নিকট আত্মীয়রা তাদের জন্য পড়াশুনার বিষয় হিসেবে ঠিক করে দেন "মেডিকেল"/"ইঞ্জিনিয়ারিং"।
আমার এক বোন মেডিকেলে পড়তে চেয়েছিল, তার একান্ত ইচ্ছা ছিল সে মেডিকেলে পড়বে। তার চান্স হয় ডেন্টালে। তখন আমি কিছু "আত্মীয়" দের বলতে শুনেছি..." ডেন্টালে পড়াশুনা করে কি হবে!!" সাথে সাথে আমার বোনটির হৃদয় ভেঙ্গে যায় হতাশায় (অথচ, ডেন্টালে পড়তে তার কোন আপত্তি ছিল না। তার কপাল ভাল যে তার বাবা-মা তাকে তার পছন্দের বিষয়ে পড়ার পূর্ন স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ বাবা-মা সন্তানদের এই স্বাধীনতা দেন না! আফসোস!!)
মানি আর না মানি,
সন্তানদের জীবন নিয়ে কিছু বাবা-মা এক ধরনের খেলা খেলেন! সন্তানের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটা বাবা-মা-আত্মীয়'র জন্য একটা গর্বের বিষয় (কিছু কিছু ক্ষেত্রে অহংকার+দম্ভের)।
পড়ার জন্য ডাক্তারী/ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রগুলি নিঃসন্দেহে চমৎকার। কিন্তু, বাবা-মাকে ভেবে দেখতে হবে তাদের সন্তান সত্যি এসব বিষয়ে আগ্রহী কি না!
এ ব্যাপারে বড়-বড় মানুষদের ভালকরে, বেশী বেশী কাজ করা উচিৎ। আমার পরিচিত অনেককেই আমি বলতে শুনেছি, তারা তাদের সন্তানকে, "আরবী" লাইনে পড়াবেন/ ডাক্তার বানাবেন/ ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন (এর বাইরে সর্বোচ্চ "আর্মি/নেভী/বিমান বাহিনী")।
এ কারনে আমি অনেক শিক্ষার্থীকে হতাশ হতে দেখেছি।
অনেক বাবা-মা বলেন, ডাক্তারী/ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়লে পড়াশুনা বন্ধ!! (ঘটনা সত্যি, দুঃখ জনক হলেও সত্যি)।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবগুলি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তী হতে হয় তীব্র প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। একজন শিক্ষার্থীর ইচ্ছা , মনে প্রানে ইচ্ছা সে "দর্শন" পড়বে। এ ক্ষেত্রে তার বাবা-মা তাকে বাধ্য করে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে, পরবর্তীতে তারা তাদের সন্তানকে বাধ্য করে মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং "কোচিং" এ ভর্তী হতে। বেচারা "শিক্ষার্থী" পড়ে মহা ধাঁধায়! সে মন দিতে পারেনা তার পড়াতে, ফলে সে ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পায় না, এমনকি তার পছন্দের বিষয় "দর্শনে" পড়ার সুযোগও হারায়। তারপর দীর্ঘদিন সে হতাশায় ভোগে!
বাবা-মা আমাদের অনেক ভালবাসার, অনেক প্রিয়, অনেক কাছের, অনেক নির্ভরতার। বাবা-মা'র হাজারো স্বপ্ন থাকে সন্তানকে নিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মা'র একরোখা স্বপ্ন সন্তানের জন্য তীব্র হতাশার সৃষ্টি করে।
এসব কথা অনেকেই বলে থাকেন, অনেকেই অনেক সুন্দর করে ভাবেন, নিজেদের সমাজে প্রয়োগও করেন। তবুও পুরোনো কথাগুলি আবার বললাম। কোন বাবা-মা যদি এই লেখাটি পড়েন, দয়া করে সবার সাথে এ বিষয়ে নিজেদের মতো করে আলোচনা করবেন। মানুষের জীবনে উচ্চশিক্ষার অধ্যায়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জোর করে নিজেদের পছন্দ সন্তানের উপর চাপিয়ে দিলে সন্তানের জন্য তা মঙ্গলময় নাও হতে পারে।
শিক্ষা হোক জ্ঞানের জন্য, প্রকৃত আনন্দের জন্য। যে কোন বিষয়ে (নিজেদের পছন্দের) পড়াশুনা করেই যে কেউ পৃথিবী জয় করতে পারে, যদি তারা/সে কাছের মানুষদের ভালবাসা ও সহযোগীতা পায়।